আহলে বায়ত ও আওলাদে রসূলগণের ফযীলত


জুমার খুতবা
মুহাররম, ১৪৩৯ হিজরি. অক্টোবর-২০১৭.
===========

আহলে বায়ত ও আওলাদে রসূলগণের ফযীলত:
****************************************
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আযহারী
(বিএ. অনার্স, আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর। এম.এ. এম.ফিল. কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়, মিশর। পিএইচ.ডি গবেষক,চ.বি.)
সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ. খতীব, মুসাফির খানা জামে মসজিদ, নন্দন কানন, চট্টগ্রাম।

بسم الله الرحمن الرحيم. الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين, أما بعد!
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন:
ذَلِكَ الَّذِي يُبَشِّرُ اللَّـهُ عِبَادَهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى وَمَن يَقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهُ فِيهَا حُسْنًا إِنَّ اللَّـهَ غَفُورٌ شَكُورٌ ﴿ الشورى-২৩﴾
“এরই সুসংবাদ দেন আল্লাহ তার সেসব বান্দাকে, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে। হে আমার হাবীব! আপনি (উম্মতদেরকে) বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাই না। তবে আমার নিকটজন তথা পবিত্র আহলে বাইতদের প্রতি তোমরা সদাচরণ করবে। যে কেউ উত্তম কাজ করে, আমি তার জন্যে তাতে পুণ্য বাড়িয়ে দেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকারী, উত্তম প্রতিদান দাতা।” (সূরা শূরা, আয়াত- ২৩)
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا ﴿٣٣﴾ وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَى فِي بُيُوتِكُنَّ مِنْ آيَاتِ اللَّـهِ وَالْحِكْمَةِ إِنَّ اللَّـهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا ﴿الأحزاب ৩৩-৩৪﴾
তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে। আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানগর্ভ কথা, যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয় তোমরা সেগুলো স্মরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ¥দর্শী, সর্ববিষয়ে খবর রাখেন। (সূরা আল আহযাব- ৩৩)
روى الإمامُ مُسْلِمٌ في (صحيحهِ) عن أُمِّ المؤْمنينَ عَائِشَةَ رضي الله عنها أنها قَالَتْ : خَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وآله وسلم غَدَاةً ، وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مُـرَحَّـلٌ مِنْ شَعْرٍ أَسْوَدَ ، فَجَاءَ الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ فَأَدْخَلَهُ ، ثُمَّ جَـاءَ الحُسَيْنُ فَدَخَـلَ مَعَهُ ، ثُمَّ جَـاءَتْ فَاطِمَـةُ فَأَدْخَلَهَا ، ثُمَّ جَـاءَ عَلِيٌّ فَأَدْخَلَهُ، ثُمَّ قَالَ : إِنَّمَـا يُرِيدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا ( )
“হযরত আয়েশা ছিদ্দীক্বা বলেন,একদা ভোরবেলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একখানা কাল বর্ণের পশমী কম্বল শরীর মুবারকে জড়িয়ে বের হলেন। এমন সময় হযরত ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সেখানে আসলেন, তিনি তাঁকে কম্বলের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। তারপর হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আসলেন, তাঁকেও ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর সাথে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতঃপর হযরত ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা আসলেন তাঁকেও তাতে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। তারপর হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আসলেন, তাঁকেও তার ভিতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতঃপর নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন: হে আমার রব! এরা আমার আহলে বাইত, তাদেরকে সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রেখে পবিত্র করার মত পবিত্র কর। অতঃপর নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন শরীফের এই আয়াতখানা তেলাওয়াত করলেন, “হে আমার আহলে বাইত! আল্লাহ তা’য়ালা আপনাদেরকে সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রেখে পবিত্র করার মত পবিত্র করবেন।”( )

আহলে বাইত ও আওলাদে রসূলগণের পরিচয়:
————————————————
قال رسول الله صلّى الله عليه وسلّم : كُلُّ بَنِيْ أُنْثى فَإِنَّ عَصَبَتَهُمْ ِلأَبِيْهِمْ مَاخَلاَ وَلَدَ فَاطِمَةَ فَإِنِّيْ أَنَا عَصَبَتُهُمْ وَأَنَا أَبُوْهُمْ . ( )
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,“আমার বংশ জারী থাকবে আমার মেয়ে হযরত ফাতিমাতুয যাহর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার মাধ্যমে। অর্থাৎ জান্নাতের যুবকগণের সাইয়্যিদ হযরত ইমাম হাসান এবং হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমার মাধ্যমে।( ) তাঁদের বংশোদ্ভূত সন্তানগণই সাইয়্যিদ বা আওলাদে রসূল নামে পরিচিত।
আহলে বাইতের ফযীলত: আহলে বাইতের ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। তন্মধ্যে কতিপয় হাদীছ শরীফ বর্ণনা করা হলো:
أنا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللَّهِ فيه الْهُدَى وَالنُّورُ فَخُذُوا بِكِتَابِ اللَّهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ فَحَثَّ على كِتَابِ اللَّهِ وَرَغَّبَ فيه ثُمَّ قال وَأَهْلُ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمْ اللَّهَ في أَهْلِ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمْ اللَّهَ في أَهْلِ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمْ اللَّهَ في أَهْلِ بَيْتِي( )

“হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,“আমি তোমাদের মাঝে দু’টি মূল্যবান সম্পদ রেখে যাচ্ছি। তন্মধ্যে প্রথমটি হল,আল্লাহর কিতাব,এর মধ্যে রয়েছে হিদায়ত ও নূর। অতএব,তোমরা আল্লাহর কিতাবকে খুব মজবুতভাবে আঁকড়ে ধর এবং দৃঢ়তার সাথে তার বিধি-বিধান মেনে চল। অতঃপর বললেন,আর দ্বিতীয়টি হলো; আমার আহলে বাইত। আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বাইত সম্পর্কে আল্লাহর তরফ থেকে বিশেষ নছীহত করছি। আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বাইত সম্পর্কে আল্লাহর তরফ থেকে বিশেষ নছীহত করছি। তাঁদের ব্যাপারে তোমাদের সতর্ক করছি। তাঁদের ব্যাপারে তোমাদের সতর্ক করছি।( )”
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قال رسول الله صلّى الله عليه وسلّم: إِنِّي تَارِكٌ فِيكُمْ مَا إِنْ تَمَسَّكْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا بَعْدِي أَحَدُهُمَا أَعْظَمُ مِنْ الْآخَرِ كِتَابُ اللَّهِ حَبْلٌ مَمْدُودٌ مِنْ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ وَعِتْرَتِي أَهْلُ بَيْتِي ، وَإِنَّهُمَا لَنْ يَتَفَرَّقَا حَتَّى يَرِدَا عَلَيَّ الْحَوْضَ فَانْظُرُوا كَيْفَ تَخْلُفُونِي فِيهِمَا . ( )
ইমাম মুসলিম, তিরমিযী এবং হাকেম হযরত যায়দ ইবনে আরক্বাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আমি তোমাদের নিকট ওই দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যদি তোমরা তা মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধর তাহলে আমার পরে তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। আর এ দু’টির মধ্যে একটি হলো আল্লাহ তা‘আলার কিতাব এবং অপরটি হলো আমার ‘ইত্রত’ তথা আমার আহ্লে বাইত। আর মহান দয়ালু প্রজ্ঞাময় আল্লাহ আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, এ দুটি কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না, এ পর্যন্ত যে, উভয়ে আমার নিকট আমার ‘হাওযে কাওসার’-এ অবতরণ করবে। তাই তোমাদের ভেবে দেখা উচিৎ তোমরা আমার পরে তাদের ব্যাপারে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছ।( )
اخرج الترمذي والطبراني عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” أَحِبُّوا اللَّهَ لِمَا يَغْذُوكُمْ بِهِ مِنْ نِعَمِهِ ، وَأَحِبُّونِي لِحُبِّ اللَّهِ ، وَأَحِبُّوا أَهْلَ بَيْتِي لِحُبِّي ” قال : وحسنه الترمذي . ( )
ইমাম তিরমিযী, ইমাম তাবরানী ও হাকিম হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহ তা‘আলা কে ভালবাস তোমাদেরকে তিনি যে অগণিত নি’মাত দিচ্ছেন তার শুকরিয়া স্বরূপ এবং আমাকে ভালবাস আল্লাহর ভালবাসার খাতিরে। আর আমার আহলে বাইতকে ভালবাস আমার ভালবাসার কারণে।
اخرج البخاري عَنْ اِبْنِ عُمَرَ عَنْ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ ، قَالَ:”يَا أَيُّهَا النَّاسُ، ارْقُبُوا مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أَهْلِ بَيْتِهِ ( )
ইমাম বোখারী হযরত ইবনে ওমর তিনি হযরত আবূ বকর সিদ্দিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে পর্যবেক্ষণ কর তিনি তাঁর পবিত্র বংশধরদের মধ্যে।
أخرج الطبراني عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ” بُغْضُ بَنِي هَاشِمٍ وَالأَنْصَارِ كُفْرٌ ، وَبُغْضُ الْعَرَبِ نِفَاقٌ ” ( )
ইমাম তাবরানী হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন। বনী হাশেম (হযরত আবদুল মুত্তালিবের পিতা হযরত হাশেমের বংশধর) ও আনসারীগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফ্রী এবং আরবদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা মুনাফেক্বী।
اخرج ابن عدي في الإكليل عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” مَنْ أَبْغَضَنَا أَهْلَ الْبَيْتِ فَهُوَ مُنَافِقٌ ” ( )
ইবনু আদী তাঁর রচিত ‘আল্ ইকলীল’ নামক কিতাবে হযরত আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যারা আমাদেরকে তথা আহলে বাইতকে অপছন্দ করবে তারা মুনাফিক্ব।
اخرج الطبراني في الأوسط عن الحسن بن علي رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: الْزَمُوا مَوَدَّتَنَا أَهْلَ الْبَيْتِ ، فَإِنَّهُ مَنْ لَقِيَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَهُوَ يَوَدُّنَا دَخَلَ الْجَنَّةَ بِشَفَاعَتِنَا ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ، لا يَنْفَعُ عَبْدًا عَمَلُهُ إِلا بِمَعْرِفَةِ حَقَّنَا . ( )
ইমাম তাবরানী তার ‘আওসাত্ব’-এ হযরত ইমাম হাসান ইবনে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আমাদের তথা আহলে বাইতের ভালবাসাকে অন্তরে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর। কেননা, যে ব্যক্তি তার হৃদয়ে আমাদের প্রতি ভালবাসা নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে সে আমাদের সুপারিশ দ্বারা বেহেশতে প্রবেশ করবে। যাঁর কুদরতের হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি- কোন বান্দার সারা জীবনের কোন আমল কোন কাজে আসবে না যতক্ষণনা সে আমাদের হক্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হয়।( )
اخرج بن أبي شيبة ومسدد في مسنديهما والحكيم الترمذي في نوادر الأصول وأبو يعلى والطبراني عن سلمة بن الأكوع قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ” النُّجُومُ أَمَانٌ لأَهْلِ السَّمَاءِ ، وَأَهْلُ بَيْتِي أَمَانٌ لأُمَّتِي “. ( )
ইবনু আবী শাইবা ও মুসাদ্দাদ তাঁদের ‘মুসনাদ’-এ হাকীম তিরমিযী তাঁর ‘নাওয়াদেরুল উসূল’-এ এবং আবূ ইয়া’লা ও তাবরানী হযরত সালমাহ্ ইবনে আকওয়া’ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তারকারাজি আসমানবাসীর জন্য নিরাপত্তা এবং আমার আহলে বাইত হলেন আমার উম্মতের জন্য নিরাপত্তা বা রক্ষা কবচ।
اخرج البزار عن عبد الله بن الزبير رضي الله عنهما قال: أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إِنَّمَا مَثَلُ أَهْلِ بَيْتِي فِيكُمْ كَمَثَلِ سَفِينَةِ نُوحٍ ، مَنْ رَكِبَهَا نَجَا وَمَنْ تَخَلَّفَ عَنْهَا غَرِقَ . ( )
ইমাম বায্যার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়র থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আমার আহলে বাইত-এর উদাহরণ হলো- হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম-এর কিশ্তী বা জাহাজের মতো। যারা এতে আরোহন করেছে তারা মুক্তি পেয়েছে। আর যারা তা থেকে পেছনে পড়ে রয়েছে তারা ডুবে গিয়েছে।

اخرج ابن النجار في تاريخه عن الحسن بن علي رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لِكُلِّ شَي ءٍ أساسٌ ، و أساسُ الدّينِ حُبُّنا أهلَ البَيتِ ( )
ইবনুন্ নাজ্জার তাঁর ‘তারীখ’-এ হযরত হাসান ইবনে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, প্রত্যেক কিছুর একটি ভিত্তি বা বুনিয়াদ আছে। আর ইসলামের ভিত্তি বা বুনিয়াদ হলো- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম এবং তাঁর পবিত্র বংশধরদের ভালবাসা।
اخرج الطبراني في الأوسط عن جابر بن عبد الله رضي الله عنه انه سمع عمر بن الخطاب رضي الله عنه يقول للناس حينما خطب بنت علي رضي الله عنه: ألا تهنئوني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: ” كُلُّ سَبَبٍ وَنَسَبٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَنْقَطِعُ , إلَّا سَبَبِي وَنَسَبِي ” ( )
ইমাম তাবরানী তাঁর ‘মু’জাম আল-আওসাত’-এ হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু যখন হযরত আলী ও হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমার মেয়ে (উম্মে কালসূম ফাতেমা)কে বিবাহ করলেন তখন আমি তাঁকে লোক সমক্ষে বলতে শুনেছি: তোমরা কি আমাকে শুভেচ্ছা জানাবে না? কেননা আমি রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- ‘ক্বিয়ামত দিবসে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে সকল অবলম্বন বা উপায় এবং বংশীয় সম্পর্ক- একমাত্র আমার অবলম্বন এবং আমার বংশীয় সম্পর্ক ব্যতিরেকে।
اخرج الطبراني عن بن عباس رضي الله عنهما قال, قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: كُلُّ نَسَبٍ وَصِهْرٍ مُنْقَطِعٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ , إلَّا نَسَبِي , وَصِهْرِي ( )
ইমাম তাবরানী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, প্রত্যেক অবলম্বন, বংশীয় সম্পর্ক এবং গোত্রীয় মর্যাদা ছিন্ন হয়ে যাবে ক্বিয়ামত দিবসে একমাত্র আমার অবলম্বন এবং আমার বংশীয় ও বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়া।
الخطيب البغدادي في تاريخه عن علي رضي الله عنه قال: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” شَفَاعَتِي لأُمَّتِي مَنْ أَحَبَّ أَهْلَ بَيْتِي. ( )
খতিব আল-বাগদাদী তাঁর ‘তারীখে বাগদাদ’-এ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আমার শাফা‘আত আমার উম্মতদের মধ্যে একমাত্র তাদের জন্য, যারা আমার আহলে বাইতকে ভালবাসে।
اخرج الطبراني عن المطلب بن عبد الله بن حنطب عن أبيه قال: خطبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم بالجحفة فقال ألست أولى بكم من أنفسكم قالوا : بلى يارسول الله قال فإني سَائِلُكُمْ عَنِ اثْنَيْنِ : عَنِ الْقُرْآنِ ، وَعَنْ عِتْرَتِي. ( )
ইমাম ত্বাবরানী হযরত মুত্তালিব ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হানত্বাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জুহ্ফা নামক স্থানে খোতবা প্রদান করলেন এবং বললেন, ‘‘আমি কি তোমাদের নিকট তোমাদের জীবনের চেয়েও প্রিয় নই? ‘‘তখন সাহাবীগণ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম বললেন, ‘‘হাঁ, অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ্।’’ তখন প্রিয়নবী এরশাদ করলেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে (ক্বিয়ামত দিবসে) দু’টি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবঃ ক্বোরআনুল করীম সম্পর্কে এবং আমার ‘ইতরত’ তথা আহলে বায়ত সম্পর্কে।
اخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أثبتكم على الصراط أشدكم حبا لأهل بيتي وأصحابي. ( )
ইমাম দাইলামী হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে ক্বিয়ামত দিবসে পুলসিরাতের উপর ওই ব্যক্তিই সর্বাধিক অটল, অবিচল ও স্থির থাকতে পারবে, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার আহলে বায়ত এবং আমার সাহাবায়ে কেরামের প্রতি ভালবাসায় অধিক অনড় ও অবিচল থাকবে।
اخرج الديلمي عن أبي سعيد رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اِشتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلى مَن آذاني في عِترَتي. ( )
ইমাম দাইলামী হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধ কঠোর ভাবে আপতিত হবে তাদের উপর, যারা আমাকে কষ্ট দেবে আমার আহলে বায়তকে নিয়ে। অর্থাৎ আমার আহলে বায়তকে কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে আমাকে কষ্ট দেবে।
اخرج أبو نعيم عن عثمان بن عفان رضي الله عنه قال : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” مَنْ أَوْلَى رَجُلا مِنْ بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ مَعْرُوفًا فِي الدُّنْيَا فَلَمْ يَقْدِرِ الْمُطَّلِبِيُّ عَلَى مُكَافَأَتِهِ ، فَأَنَا أُكَافِئُهُ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ” . ( )
ইমাম আবূ নু‘আয়ম হযরত ওসমান ইবনে আফ্ফান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, হযরত আবদুল মুত্তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর বংশধরের প্রতি যে কেউ এ দুনিয়াতে যে কোন ধরনের উপকার করবে, আর আবদুল মুত্তালিবের বংশীয়রা যদি তার প্রতিদান শোধ করতে নাও পারে; কিন্তু আমি ক্বিয়ামত দিবসে ওই ব্যক্তিকে তাঁদের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করব।
اخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: خير الناس العرب وخير العرب قريش وخير قريش بنو هاشم. ( )
ইমাম দাইলামী হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো আরবজাতি। আর আরব জাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো ক্বোরাইশ এবং ক্বোরাইশদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো হাশেমী বংশীয়রা।
وفي صحيح الترمذي عن جابر بن عبد الله الأنصاري قال : رأيت رسول الله صلى الله عليه وآله في حجته يوم عرفة ، وهو على ناقته القصوى ، يخطب فسمعته يقول : ( يا أيها الناس ، يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنْ أَخَذْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا: كِتَابَ اللَّهِ، وَعِتْرَتِي أَهْلَ بَيْتِي ( )
“হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি, তিনি বিদায় হজ্জে আরাফাতের দিন তাঁর “কাসওয়া” নামক উষ্ট্রীর উপর সওয়ার অবস্থায় খুৎবা দান করছেন। আমি শুনেছি, তিনি খুৎবায় বলেছেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি,তোমরা যদি তাকে শক্তভাবে ধরে রাখ,তবে কখনও গোমরাহ হবেনা। তা হলো আল্লাহ পাকের কিতাব ও আমার ইতরত বা আহলে বাইত।” (তিরমিযী শরীফ)
حَدَّثَنَا تَلِيدُ بْنُ سُلَيْمَانَ ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو الْحَجَّافِ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : نَظَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى عَلِيٍّ ، وَالْحَسَنِ ، وَالْحُسَيْنِ ، وَفَاطِمَةَ ، فَقَالَ: أَنَا حَرْبٌ لِمَنْ حَارَبَكُمْ ، وَسِلْمٌ لِمَنْ سَالَمَكُمْ ( )
হযরত ইমাম আলী, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম: “হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন,নিশ্চয়ই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, হযরত ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা, হযরত ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সম্পর্কে বলেছেন, যারা তাঁদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করবে,আমি তাদের শত্রু। পক্ষান্তরে যে তাঁদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে,আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবো।” ( )
عَنِ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِنَّ فَاطِمَةَ بِضْعَةٌ مِنِّي ، فَمَنْ أَغْضَبَهَا أَغْضَبَنِي ” . وَقَالَ ابْنُ سِيَاوشَ : فَقَدْ أَغْضَبَنِي .
“হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হযরত ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা আমার (দেহ মুবারকেরই) একটি টুকরা। যে তাঁকে রাগান্বিত করবে, সে আমাকেই রাগান্বিত করলো। ” (বুখারী, মুসলিম)
وأخرج ابن سعد عن عمران بن سليمان قال: الحسن والحسين اسمان من أسماء أهل الجنّة ما سميت العرب بهما في الجاهلية.
‘হাসান ও হুসাইন জান্নাতী নামসমূহের দু’টি নাম।‘এর আগে আরবের জাহিলিয়াত যুগে এ দু’নামের প্রচলন ছিল না।
فقد ورد في مسند الإمام أحمد وعند الترمذي وابن ماجه والنسائي عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الْجَنَّةِ.
“হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হযরত ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু দু’জনই জান্নাতী যুবকগণের সাইয়্যিদ।” (তিরমিযী শরীফ)
عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ وَسَأَلَهُ عَنْ الْمُحْرِمِ قَالَ شُعْبَةُ أَحْسِبُهُ يَقْتُلُ الذُّبَابَ فَقَالَ أَهْلُ الْعِرَاقِ يَسْأَلُونَ عَنْ الذُّبَابِ وَقَدْ قَتَلُوا ابْنَ ابْنَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُمَا رَيْحَانَتَايَ مِنْ الدُّنْيَا
“হযরত ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা হতে বর্ণিত যে,রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হযরত হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এবং হযরত হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তাঁরা দু’জনেই দুনিয়াতে আমার দু’টি ফুলস্বরূপ।( )
حدثني إبراهيم بن موسى أخبرنا هشام بن يوسف عن معمر عن الزهري عن أنس وقال عبد الرزاق أخبرنا معمر عن الزهري أخبرني أنس قال لَمْ يَكُنْ أَحَدٌ أَشْبَهَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ ( )
“হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেছেন, হযরত হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হলেন (চেহারা-আকৃতি-অবয়বে) মাথা মুবারক হতে বক্ষ মুবারক পযর্ন্ত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সদৃশ। আর হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হলেন বক্ষ মুবারক হতে নীচ পযর্ন্ত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামর সদৃশ। (তিরমিযী শরীফ)
عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنْ هَانِئٍ ، عَنْ عَلِيٍّ ، قَالَ : ” الْحَسَنُ أَشْبَهُ النَّاسِ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا بَيْنَ الصَّدْرِ إِلَى الرَّأْسِ ، وَالْحُسَيْنُ أَشْبَهُ النَّاسِ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا كَانَ أَسْفَلَ مِنْ ذَلِكَ .
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন অবস্থায় বাইরে তাশরীফ আনলেন যে, উনার এক কাঁধের উপর হযরত ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কে এবং অন্য কাঁধের উপর হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কে বসিয়ে ছিলেন। এভাবে আমাদের সামনে তাশরীফ আনলেন এবং ইরশাদ করলেন-‘যে তাঁদের দু’জনকে মুহব্বত করলো, সে আমাকে মুহব্বত করলো। আর যে তাঁদের সাথে দুশমনী করলো, সে আমার সাথে দুশমনী করলো।’
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالْ : خَرَجْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي طَائِفَةٍ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ ، حَتَّى أَتَى سُوقَ بَنِي قَيْنُقَاعٍ ، لَا يُكَلِّمُنِي وَلَا أُكَلِّمُهُ ، ثُمَّ أَتَى فِنَاءَ عَائِشَةَ ، أَوْ قَالَ : فِنَاءَ فَاطِمَةَ ، فَقَالَ : ” أَثَمَّ حَسَنٌ ؟ فَظَنَنْتُ أَنَّ أُمَّهُ حَبَسَتْهُ تُغْسِلُهُ ، أَوْ تُلْبِسُهُ سَخَابًا ، فَلَمْ نَلْبَثْ أَنْ طَلَعَ الْحَسَنُ يَجْرِي ، فَاعْتَنَقَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَ : ” اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُ فَأَحِبَّهُ ، وَأَحِبَّ مَنْ أَحَبَّهُ ” .
“হযরত বারা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি যে, তিনি হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কে নিজের কাঁধের উপর রেখে বলছেন, হে আল্লাহ পাক! আমি তাঁকে মুহব্বত করি,আপনিও তাঁকে মুহব্বত করুন।” (বুখারী, মুসলিম)
فإنه قد صح عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: حُسَيْنٌ مِنِّي وَأَنَا مِنْ حُسَيْنٍ أَحَبَّ اللَّهُ مَنْ أَحَبَّ حُسَيْنًا حُسَيْنٌ سِبْطٌ مِنْ الْأَسْبَاطِ ( )
“হযরত ইয়া’লা ইবনে মুররাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হযরত হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আমার থেকে আর আমি হযরত হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে। যে ব্যক্তি হযরত হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে মুহব্বত করবে আল্লাহ পাক তাকে মুহব্বত করবেন। (তিরমিযী শরীফ)

হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এর শাহাদাত:

হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এর বিলাদত শরীফ-এর কিছু দিন পরই উনার শাহাদাতের কথা সবার কাছে জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত হযেছে। হযরত উম্মুল ফজল রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন,
وروى البيهقي عن الحكم وغيره، عن أبي الأحوص، أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ الْجَوْهَرِيُّ بِبَغْدَادَ، ثَنَا أَبُو الْأَحْوَصِ مُحَمَّدُ بْنُ الْهَيْثَمِ الْقَاضِي، ثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُصْعَبٍ، ثَنَا الْأَوْزَاعِيُّ، عَنْ أَبِي عَمَّارٍ شَدَّادِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أُمِّ الْفَضْلِ بِنْتِ الْحَارِثِ، أَنَّهَا دَخَلَتْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ‏:‏ يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي رَأَيْتُ حُلْمًا مُنْكَرًا اللَّيْلَةَ، قَالَ‏:‏ ‏”‏ مَا هُوَ‏؟‏ ‏”‏ قَالَتْ‏:‏ إِنَّهُ شَدِيدٌ، قَالَ‏:‏ ‏”‏ مَا هُوَ‏؟‏ ‏”‏ قَالَتْ‏:‏ رَأَيْتُ كَأَنَّ قِطْعَةً مِنْ جَسَدِكَ قُطِعَتْ وَوُضِعَتْ فِي حِجْرِي، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ‏:‏ ‏”‏ رَأَيْتِ خَيْرًا، تَلِدُ فَاطِمَةُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ غُلَامًا، فَيَكُونُ فِي حِجْرِكِ ‏”‏ فَوَلَدَتْ فَاطِمَةُ الْحُسَيْنَ فَكَانَ فِي حِجْرِي كَمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ، فَدَخَلْتُ يَوْمًا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ فَوَضَعْتُهُ فِي حِجْرِهِ، ثُمَّ حَانَتْ مِنِّي الْتِفَاتَةٌ، فَإِذَا عَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ تُهْرِيقَانِ مِنَ الدُّمُوعِ، قَالَتْ‏:‏ فَقُلْتُ‏:‏ يَا نَبِيَّ اللَّهِ، بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي مَا لَكَ‏؟‏ قَالَ‏:‏ ‏”‏ أَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ، فَأَخْبَرَنِي أَنَّ أُمَّتِي سَتَقْتُلُ ابْنِي هَذَا ‏”‏، فَقُلْتُ‏:‏ هَذَا‏!‏ فَقَالَ‏:‏ ‏”‏ نَعَمْ، وَأَتَانِي بِتُرْبَةٍ مِنْ تُرْبَتِهِ حَمْرَاءَ ‏”‏‏.‏
আমি একদিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার খিদমতে উপস্থিত হয়ে হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কে কোলে দিলাম। এরপর আমি দেখলাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামর চোখ মুবারক থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, এর কারণ কী? ইরশাদ করলেন, আমার কাছে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে এ খবর দিয়ে গেলেন ‘নিশ্চয়ই আমার উম্মত আমার এ শিশুকে শহীদ করবে।’ হযরত উম্মুল ফজল রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! এ শিশুকে শহীদ করবে? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,‘হ্যাঁ। হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম শাহাদাত স্থলের লাল মাটিও এনেছেন। “আমার ছেলে (দৌহিত্র) হযরত ইমাম হুসাইনকে ফোরাত নদীর তীরে যে জায়গায় শহীদ করা হবে, সে জায়গার নাম কারবালা।’((হাকেম, ৩/১১৬-১১৭))

আর সত্যি সত্যিই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার ভবিষ্যদ্বাণী মুতাবিক হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন।

কুরআন ও সুন্নাহর উপরোক্ত বর্ণনা থেকে আহলে বাইত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ যে সীমাহীন ফযীলত, মর্তবা, বুযূর্গী ও সম্মানের অধিকারী তা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সাথে সাথে এটাও ফুটে উঠেছে যে, আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি হাছিল করতে হলে আহলে বাইতগণের প্রতি সুধারণা পোষণ করা,তাঁদেরকে মুহব্বত করা এবং ইজ্জত-সম্মান করতে হবে। তাঁদের মুহব্বত সকলেরই নাযাতের কারণ। যে যতটুকু মুহব্বত করবে,সে ততটুকু সম্মান লাভ করবে।

وصلى الله على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين. والحمد لله رب العالمين.

No comments

Powered by Blogger.