সহীহ হাদিসের আলোকে নামাজে হাত কোথায় বাঁধতে হবে?

আজকের  আলোচ্য বিষয় সহি হাদিসের আলোকে হাত কোথায় বাধতে হবেঃ
ঈমাম আবু হানিফার মতে নাভির নিচে হাত বাধ আসুন্নাত।ইমাম শাফেয়ির মতে নাভীর উপরে বুকের নিচে হাত রাখা সুন্নাত এবং এটাই তার বিশুদ্বতম মত। ইমাম মালীকের মতে হাত না বেধে ছেড়ে দেয়া সুন্নাত। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের মতে নাভীর উপরে বা নিচে যে কোন এক জায়গায় রাখলে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।।আলবানী মাজহাব অনুসারে হাত বাধতে হবে বুকের ঊপরে,উপমহাদেশে এরা আহলে হাদিস নামে পরিচিত আর আরবে  মাদখালি নামে পরিচিত
হাত বাধা সংক্রান্ত হাদিসগুলিঃ
হাত কোথায় বাধতে হবে সুস্পষ্টভাবে কোন হাদিস বুখারী-মুসলিমে নেই। যা আছে ত হল কোন হাতের উপরে কোন হাত রাখতে হবে কতখানি রখতে হবে।আহলে হাদীছ গংএরা বুখারী শরিফের নামে মানুষদেরকে ধোঁকা দিয়ে থাকে।চলুন হাদিসগুলি দেখে নেই তাহলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে।
عن ابي حازم عن سهل بن سعد (رض) قال كان ناس يومرون ان يضع الرجل اليد اليمني علي ذراعه اليسري في الصلاة قال ابو حازم لا أعلمه ألا ينمي ذلك الي
النبي صلي الله عليه وسلم
হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. বলেন, লোকদেরকে আদেশ করা হত, পুরুষ যেন নামাযে ডান হাত বাম বাহুর উপর রাখে।’-সহীহ বুখারী ১/১০৪
হযরত হুলব আতত্বয়ী রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ইমাম হতেন এবং তাঁর ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন। كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يؤمنا فيأخذ شماله بيمينه. رواه الترمذي وقال : حديث حسن. -জামে তিরমিযী ১/৩৪; ইবনে মাজাহ ৫৯
উক্ত হাদিছে ডান হাত কে বাম যিরার উপর রাখতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু হাত কোথায় রাখবে, নাভির উপরে না নাভীর নিচে, সে সম্পর্কে। উক্ত হাদিসে কিছু বলা হয়নি। এখন আমাদের বুঝা দরকার যে আরবী তে “যিরা” শব্দের অর্থ কি? কনুই থেকে মধ্যমা আঙুল পর্যন্ত অংশ কে আরবি তে যিরা বলা হয়।(মিছবাহুল লুগাত,মুজামুল ওয়াসিত,আল মুনযিদ)। সে হিসাবে উক্ত হাদিসটি কোনভাবেই হানাফি মাযহাবের বিরোধী নয়, কারণ আমরা নাভীর নিচে ডান হাত কে বাম হাতের কব্জির উপর রাখি এবং কবজি নিংসন্দেহে “যিরা” এর অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং কোন ভাবেই উক্ত হাদিস আমাদের বিরোধী নয় এবং আমরা উক্ত হাদীস মতি আমল করে থাকি। তবে যেহেতু উক্ত হাদিসে স্পষ্ট করে হাত কোথায় রাখা উচিত তা বলা হয়নি, সে জন্য আমাদের কে এ ব্যপারে সুস্পষ্ট হাদিস এবং সাহাবায়ে কেরাম এর আমল দেখতে হবে। আহলে হাদিস গংরা এই হাদিসটি দিয়েই অপপ্রচার চালায় নামাজে বুকের উপর হাত রাখাকে সুন্নাত, অথচ দেখুন উক্ত  হাদিসে উক্ত হাদিসে বুকের উপর হাত রাখা বিষয়ক কোন শব্দও নেই।
সাহল বিন সাদ রাযি এর হাদীসের ব্যাপারে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ভাষ্যকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন –
         “বাহুর কোন জায়গায় রাখতেন সেটা এই হাদীসে অস্পষ্ট। আবূ দাউদ ও নাসাঈ বর্ণিত ওয়াইল রাযিঃ এর হাদীসে বলা হয়েছে- ‘অতঃপর তিনি তাঁর ডান হাত বাম হাতের তালুর পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখলেন।’ ইবনে খুজাইমা রহঃ প্রমুখ এটিকে সহিহ বলেছেন। সালাত অধ্যায়ের শেষে দিকে হযরত আলী রাযিঃ এর অনুরূপ আছার (হাদীস) এর উল্লেখ আসছে। (ফতহুল বারী২/২৭৫)।
         হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ এ বিষয়ে মূল মর্ম বর্ণনার ক্ষেত্রে বললেন – “সালাত অধ্যায়ের শেষে দিকে হযরত আলী রাযিঃ এর অনুরূপ আছার (হাদীস) এর উল্লেখ আসছে।” (ফতহুল বারী২/২৭৫)
        তাহলে এবার আমরা আলী রাযিঃ এর আমালটি বুখারি শরিফ থেকে দেখি- “আলী রাযিঃ (সালাতে) সাধারণত তার (ডান হাতের) পাঞ্জা বাম হাতের কব্জির উপর রাখতেন।” (বুখারী ১/১৫৯,ইফা ২/৩৩০)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত বুখারী শরিফ ২য় খন্ড ৩৩০ পৃষ্ঠা।
তো এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে হাত বাঁধতেন এবং কিভাবে বাধতেন,সাহাবায়ে কেরামও হাত বাঁধতেন। এখন প্রশ্ন হল, কোথায় তাঁরা হাত বাঁধতেন? মৌখিক বর্ণনায় হাত বাঁধার মূল প্রসঙ্গ যত পরিষ্কারভাবে এসেছে কোথায় বাঁধতেন তা সেভাবে আসেনি। কেন আসেনি? আসার প্রয়োজন হয়নি। কারণ সবাই হাত বাঁধছেন। কোথায় বাঁধছেন তা সবার সামনেই পরিষ্কার। কাজেই তা মুখে বর্ণনা করার প্রয়োজন হয়নি। তো যে সুন্নাহ কর্মে ও অনুসরণে ব্যাপকভাবে রয়েছে তা মৌখিক বর্ণনায় সেভাবে নেই। এ ধরনের ক্ষেত্রে পরের যুগের লোকদের জন্য সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাঁরা ঐ সময়ের কর্ম ও অনুশীলনের প্রত্যক্ষদর্শী
নাভীর নিচে হাত বাঁধাঃ
কেউ বলতে পারেন- এখানে তো স্পষ্ট করে তো ‘নাভির নিচে’ বলা হয়নি! তাছাড়া এ হাদীছ তো ডান হাতকে বাম হাতের কব্জির ওপর রেখে বুকের ওপর স্থাপন করাকে অস্বীকার করে না। শুধু বুকের ওপরে কেন ? নাভি থেকে পেট, বুক ও থুতনী কোন অঙ্গকেই ইনকার করেনা। তবে উপরোক্ত হাদীছসমূহের সাথে আরো কয়েকটি হাদীছ যুক্ত করুন। তখন নাভীর নিচে হাত বাঁধাই যর্থাথ প্রতীয়মান হবে iইনশাল্লাহ 
১.হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সুন্নাহ হচ্ছে নামাযে হাতের পাতা হাতের পাতার উপর নাভীর নিচে রাখা।’-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৮৭৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬৬ সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই- حدثنا محمد بن محبوب، حدثنا حفص بن غياث، عن عبد الرحمن بن إسحاق، عن زياد بن زيد، عن أبي جحيفة أن عليا رضي الله عنه قال : السنة وضع الكف على الكف في الصلاة تحت السرة. قال المزي في تحفة الأشراف ٨/٤٥٨، هذا الحديث في رواية ابي سعيد بن الأعرابي، وابن داسة وغير واحد عن أبي داود، ولم يذكره أبو القاسم.
২.আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘নামাযে হাতের পাতাসমূহ দ্বারা হাতের পাতাসমূহ নাভীর নীচে ধরা হবে।’ সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই- حدثنا مسدد، حدثنا عبد الواحد بن زياد، عن عبد الرحمن بن إسحاق الكوفي، عن سيار أبي الحكم، عن أبي وائل قال : قال أبو هريرة رضي الله عنه : أخذ الأكف على الأكف في الصلاة تحت السرة. -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৮, তাহকীক : শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ; তুহফাতুল আশরাফ, হাদীস : ১৩৪৯৪
৩.হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নীচে রেখেছেন। সনদসহ রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই- حدثنا وكيع، عن موسى بن عمير، عن علقمة بن وائل بن حجر، عن أبيه قال : رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يضع يمينه على شماله في الصلاة تحت السرة. -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৫১ সনদ সহীহ। ইমাম কাসেম ইবনে কুতলূবুগা রাহ. (৮৭৯ হি.) বলেন-وهذا إسناد جيد এটি একটি উত্তম সনদ।
বুকের উপরে হাত রাখাঃ
সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগ থেকে হাত বাঁধার দুটো নিয়ম চলে আসছে : বুকের নীচে হাত বাঁধা ও নাভীর নীচে হাত বাঁধা। মুসলিম উম্মাহর বিখ্যাত মুজতাহিদ ইমামগণও এ দুটো নিয়ম গ্রহণ করেছেন।নিকট অতীতে হাত বাঁধার নতুন কিছু নিয়ম আবিষ্কৃত হয়েছে, যা সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগে ছিল না এবং কুরআন-সুন্নাহর প্রাজ্ঞ মনীষী ও মুজতাহিদগণের সিদ্ধান্তেও তা পাওয়া যায় না। বলাবাহুল্য, এসব নিয়ম ‘শুযুয’ ও বিচ্ছিন্নতা বলে গণ্য, যা দ্বীন ও শরীয়তের বিষয়ে সম্পূর্ণ বর্জনীয়।কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা এই যে, সম্প্রতি এইসব বিচ্যুতি ও বিচ্ছিন্নতাকেই ‘সুন্নাহ’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে এবং চরম দায়িত্বহীনতার সাথে সাধারণ মানুষের মাঝেও তা প্রচার করা হচ্ছে।তেমনি একটি মত হল বুকের উপর হাত রাখা।
বুকের উপর হাত রাখা সংক্রান্ত হাদিস ও সনদেরর মানগুলি দেখে নেই তাহলে বুঝতে হবে।
1.
علي يده اليسري علي صدره ১. “ওয়াইল ইবনে হাজর (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রসুল (স) এর সাথে নামায পরেছি। তিনি বুকের উপর ডান হাতের উপর বাম হাত কে রেখেছেন”। (ছহীহ ইবনে খুযাইমা ১ম খণ্ড ২৪৩পৃ)
উক্ত হাদিস সমবন্ধে মুহাদ্দিসিনে কেরাম কালাম করেছেন এবং উক্ত হাদিস্টি কে সনদ হিসাবে খুবই দুর্বল হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। নিচে আমি সে সম্পর্কে আলোচনা করছি। (বুকের উপর) শব্দটি বাস্তবে হাদিসে নেই।علي صدرهবলেন আল্লামা নিমী কারণ উক্ত হাদিসটি মোট সাত টি সুত্রে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ বিভিন্নজন হাদিসটিকে বিভিন্ন সুত্রে বর্ণনা করেছেন।
১ ইমাম আহমদ তার মুসনাদে আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়ালিদের সুত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
২ ইমাম নাসায়ী “জায়েদা” এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন।
৩ ইমাম আবু দাউদ বশর ইবনে মুফাদ্দাল এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন।
৪ ইবনে মাজাতে আব্দুল্লাহ ইবনে ইদ্রিস এবং বশর ইবনে মুফাদ্দাল এর সুত্রে বর্ণনা এসেছে।
৫ আহমদ আব্দুল ওয়াহিদ,জুহাইর এবং এবং শুবা এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন।
৬ “মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালসি” তে সালাম ইবনে সালিম এর সুত্রে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে।
৭ ছহীহ ইবনে হাব্বানে শু’বা এর সুত্রে হাদিস টি বর্ণিত হয়েছে। উপরের সাতটি সুত্রের কোনটি তে علي صدره বা বুকের উপর হাত রাখা শব্দটি নেই। একমাত্র মোমিল ইবনে ইস্মাইল এর সুত্রে
বর্ণনাকৃত হাদিসে “বুকের উপর হাত রাখা” শব্দটি আছে।মানে প্রথম সাতটি সুত্রে বুকের উপর কথাটি ছিল না মোমিলের কাছে  এসে হঠাত বুকের উপর কথাটি যোগ হয়।বুঝতেই পারছেন হাদিসটির অবস্থা।তাছাড়া উপরোক্ত রাবীগণ মুমিলের চেয়ে অধিকক গ্রহণযোগ্য।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম বলেন একমাত্র মুমিল ইবনে ইস্মাইল ব্যতিত অন্য কেহ বুকের উপর হাত রাখা শব্দটি বর্ণনা করেনি। একমাত্র তিনিই উক্ত শব্দটি বৃদ্বি করেছেন। সুতরাং সমস্ত রাবীর বিপরিতে মোমিলের মত একজন দুর্বল রাবীর বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। (এলামুল মুয়াক্কিয়িন ২য় খন্ড ৩১২পৃ,তালিকুল হাসান ১ম খন্ড ৬৫পৃ)

2.
الصلاة رواه البـيهقي في سننه
“ইবনে আব্বাস (র) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি উক্ত আয়াতের তাফসিরে বলেন নামাযে বুকের কাছে ডান হাত কে বাম হাতের উপর রাখবে”। (বায়হাকী শরীফ)
হাদিওসটির বিষয়ে মন্তব্যঃআল্লামা ইবনে হাব্বান বলেন  উক্ত হাদিসের সনদে “রুহ ইবনুল মুসাইয়য়াব” নামে একজন দুর্বল রাবি আছেন যিনি হাদিস শাস্ত্রে পরিত্যক্ত। আল্লামা ইবনে হাব্বান বলেন তিনি জাল হাদিস বর্ণনা করেন। সুতরাং তার হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লামা ইবনে আদি বলেন তার হাদিসগুলো সংরক্ষিত নয়
3.
عن هلب رض كان النبي صلي الله عليه وسلم ينصرف عن يمينه وعن شماله ويضع هذه علي صدره
হুলুব (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রসুল (স) বুকের উপর হাত রেখেছিলেন।
আল্লামা নিমি “আসারুস সুনান” নামক কিতাবে শক্তিশালী দলীল দিয়ে এ কথা প্রমান করেছেন যে উক্ত বর্ণনার শব্দে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আসল করা হয়েছে। সুতরাং উক্ত ويضع هذه علي صدره যেটাকে ভূলে يضع هذه علي هذه বর্ণনা দ্বারা দলীল দেওয়া ঠিক হবেনা। সুতরাং নামাযে বুকের উপর হাত রাখার যে তিনটি দলীল বর্ণিত হয়েছে তিনটি হাদিসেই সনদের দিক দিয়ে অত্যান্ত দুর্বল
হাত কোথায় বাঁধতে হবেঃ
সাহাবায়ে কেরাম এবং ইসলামের স্বর্ণ যুগ তথা কুরুনে সালাসার আমল দেখলে আমরা এ ব্যপারে দু ধরণের আমল দেখতে পাই। প্রথমটি হল নাভীর নিচে হাত বাধা এবং দ্বিতীয়টি হল নাভীর উপর বুকের নিচে হাত বাধা। উভয়টি সালাফ থেকে প্রমাণিত তবে নাভীর নিচে হাত বাধার দলীল অধিক শক্তিশালী যা উপরে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।।নামাযে হাত বাঁধার সুন্নাহর উপর সাহাবা-তাবেয়ীন কীভাবে আমল করেছেন-এ বিষয়ে ইমাম তিরমিযী রাহ. (২৭৯ হি.) সমাধান দেন-
والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم والتابعين ومن بعدهم، يرون أن يضع الرجل يمينه على شماله في الصلاة، ورأى بعضهم أنيضعهما فوق السرة، ورأى بعضهم أن يضعهما تحت السرة، وكل ذلك واسع عندهم.
অর্থাৎ আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন ও তাঁদের পরবর্তী মনীষীগণ এই হাদীসের উপর (ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরা) আমল করেছেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত এই ছিল যে, নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে হবে। তাঁদের কেউ নাভীর উপর হাত রাখার কথা বলতেন, আর কেউ নাভীর নিচে রাখাকে (অগ্রগণ্য) মনে করতেন। (তবে) দুটো নিয়মই তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল।-জামে তিরমিযী ১/৩
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া নামাযে হাত বাঁধার নিয়ম সম্পর্কে বলেনঃ ‘তাকবীর সমাপ্ত হওয়ার পর দুই হাত ছেড়ে দিবে এবং ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর এমন ভাবে রাখবে যে, ডান হাত দ্বারা কব্জির গোড়ার হাড় পেঁচিয়ে ধরবে কিংবা ডান হাত কব্জির উপর এমন ভাবে বিছিয়ে দিবে যে, হাতের আঙ্গুলি সমূহ যিরার দিকে (ছড়ানো) থাকে। ডান হাত যদি কব্জির ওপরের দিকে (যিরার উপর) কিংবা কব্জির  নিচে বাম পাতার উপর রাখে তবে সেটাও জায়েয।’
এরপর তিনি হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস,যাইদা ইবনে কুদামার বর্ণনা,সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসও হুলবরা.-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে উদ্ধৃত করেছেন। (শরহুল উমদা পৃ. ৬৫-৬৬)
ইমাম নববী রাহ. (৬৭৬ হি.) শাফেয়ী মাযহাবের মনীষীদের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছেন যে, ‘সুন্নাহ হচ্ছে,তাকবীরে (তাহরীমার) পর দুই হাত নামিয়ে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখবে এবং ডান হাতের পাতা দ্বারা বাম হাতের পাতার গোড়া এবং কব্জি ও বাহুর কিছু অংশ ধরবে। কাফফাল বলেছেন, ডান হাতের আঙ্গুল আড়াআড়ি ভাবে কব্জির উপর রাখা বা বাহুর উপর ছড়িয়ে দেওয়া দুটোরই অবকাশ আছে। (শরহুল মুহাযযাব’’গ্রন্থে ৪/৩২৭ )
উপরের আলোচনার দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে নাভীর নিচে অথবা নাভীর উপরে (বুকের নিচে) হাত হাত বাধা সাহাবা-তাবেয়ীনের যমানা থেকে এ দুটি নিয়মই চলে আসছে। পরবর্তীতে জুমহূর ফকীহ ও মুজতাহিদ ইমামগণ এ দুই নিয়ম গ্রহণ করেছেন।প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এভাবেই চলে আসছে।বুকের উপরে হাত বাধা কোন কালেই গ্রহণযোগ্য ছিল না,এটি ছিল একটি পরিত্যক্ত মতবাদ যা এখন সহিহ বলে প্রচারনা চলাচ্ছে উপমাহদেশেড় আলবাণীর মুরিদ আহলেহাদিস গ্রোষ্ঠী আরবে মদখালি গংরা।
বিখ্যাত সালাফি শায়খ বকর বিন আবদুল্লাহ আবু যায়েদ এই আলবনীর মুরিদ আহলে হাদিস ও মাদখালিদের সম্পর্কে বলেনঃ
‘আমরা দেখেছি, কিছু লোক কোনো শায ও বিচ্ছিন্ন মত গ্রহণ করে তার প্রচারে কিংবা কোনো দুর্বল রুখসত ও অবকাশ গ্রহণ করে তার প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়োজিত করে। এদের খন্ডনের জন্য মনীষী আলিমদের এই নীতিই যথেষ্ট যে, ‘ইলমের ক্ষেত্রে কোনো বিচ্ছিন্ন মত এবং (বিধানের ক্ষেত্রে) কোনো অপ্রমাণিত অবকাশ সম্পূর্ণ বর্জনীয়। ‘কিন্তু সম্প্রতি যে দলটির উদ্ভব ঘটেছে, তাদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের প্রতিদিনের ইবাদত-বন্দেগীর ওয়াজিব-মুস্তাহাব বিষয়ে, যে ইবাদত-বন্দেগী ইসলামের মহান নিদর্শন ও প্রতীকও বটে, এমন সব ধারণার বিস্তার ঘটছে যেগুলোর সাথে কোনো যুগে আলিমসমাজের কোনো পরিচিতি ছিল না। অতিনমনীয় ভাষায় বললে, এসব ধারণার কোনো কোনোটির সূত্র হচ্ছে বহুকাল আগের বর্জিত কিছু মত। ‘আর কোনো ধারণা পরিত্যক্ত হওয়ার জন্য তো এ-ই যথেষ্ট যে, তা সকল আলিমের মতামত থেকে বিচ্ছিন্ন।
এই লেখায় যা প্রমাণীত হলঃ
১. নাভীর নিচে ও উপরে হাত বাধা দুটিই সহিহ
২.বুকের উপরে হাত বাধা ভ্রান্ত পরিত্যাক্ত মতবাদ
৩. এক্ষেত্রে সকল মাজহাবীরা সুন্নতের উপর আমলকারী
৪. সকল আলবানীর মুরিদেরা বিদাতের বিদাতের উপর আমলকারী
৫.আহলে হাদিস একটি প্রথভষ্ট  ভ্রান্ত ফিরকা

7 comments:

  1. Sihi hadise je ache boker upor hat badchen nobiji tahole?

    ReplyDelete
  2. তুমি কেরে ভাই আলবানিকে নিয়ে কথা বলো।আলবানি কে তুমি জানো?আগে জানো তার পর কথা বইলো

    ReplyDelete
    Replies
    1. হুম ভাই, আলবানী হাদীস বিকৃত্ব করতে ওস্তাদ

      Delete
  3. ভাই আপনি নাভীর নিচের যেসকল হাদিস গুলা উল্ল্যেখ করেছেন সব গুলাই যইফ হাদিস,একটাও সহিহ হাদিস নাই।মিলিয়ে দেখলাম।কিন্তু আবু দাউদে ৭৫৯ নাম্বার হাদিসে বুকের উপর বাধার কথা বলা আছে।এতদিন হানাফি মাযহাবদের সত্য মনে করতাম,আর আজকে আপনার এইটা পড়ে ঘাটাঘাটি করে বুঝলাম,এরাই মিথ্যুক।

    ReplyDelete
  4. হাদিসের সাথে মিলিয়ে দেখলাম 🙂
    নাভীর নিচের হাদিসগুলো দুর্বল/যইফ
    বুকের উপর বাধার একটা হাদিস পাওয়া যায় সহিহ সনদে সেটা হলো _ আবু-দাউদ/২৫৯
    এই পোস্টে সহিহ কিছু বলা হয়নি বরং পক্ষপাতিত্ব করা হয়ে হয়েছে 🙃
    আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুক।

    ReplyDelete

Powered by Blogger.