ইয়া নবী সালাম আলাইকা বলা শরীয়ত সম্মত
ওহাবী দেওবন্দী বাতিল মতবাদ প্রচারের
ক্ষেত্রে “নুরুল ইসলাম ওলিপুরী” বর্তমানে তাদের
দলের কাছে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। সে তাঁর
ওয়াজ ও তাফসীর মাহফিল নামে আয়োজিত সভায়
যে সব বক্তব্য উপস্থাপন করে থাকে, তা পুস্তক
আকারে এবং অডিও ক্যাসেটের মাধ্যমে তার দলীয়
লোকেরা প্রচার করে থাকে। বিগত ২৭/১০/
১৯৯৯ইং তারিখে সিলেটের গোলাপগন্ঞ্জ থানার
অন্তর্গত বাটুলগন্ঞ্জ মাদ্রাসার যেসব ওয়াজ পেশ
করেছিলো তাঁর সাথে আরো কিছু কথা একত্রিত
করে “ইয়া নবী সালাম আলাইকা” নামে একটি পুস্তক
প্রকাশ করা হয়েছে। এই পুস্তকের
রচয়িতা তালিবউদ্দিন আহমদ।
বইটিতে পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কেও বিভিন্ন ধরনের
কটুক্তি, কোরআন, হাদিস ও আরবী গ্রামারের ভুল
ব্যাখ্যাসহ উদ্ভট যুক্তিতে ভরপুর। মিলাদ শরীফের
মাহফিল পঠিত “ইয়ানবী সালামু আলাইকা,
ইয়া রাসূল সালামু আলাইকা, ইয়া হাবীব সালামু
আলাইকা, সালাওয়াতুল্লা আলাইকা” এ রূপ ছান্দিক
সালাত ও সালাম পাঠ করাতে ভুল প্রমান করার অশুভ
উদ্দেশ্য নিয়ে, তথাকথিত তালিবউদ্দিন তাঁর
লিখিত বইয়ে, ওলিপুরী সাহেবের প্রদত্ত তথ্য
মোতাবেক “ফতোয়ায়ে শামী” কিতাবের এবারতের
বরাত দিয়ে যে দাবী উপস্থাপন করেছে,
তাতে নিজেই ভুলের আবর্তনে ঘুরপাক খাচ্ছেন।
কারণ, আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রহঃ)
মুসলমানের পরস্পর সাক্ষাতে প্রদেয়, সালামের
পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে এ নিয়ম লিখেছেন। আর
তালিবউদ্দিন সাহেব “ওলীপুরীর” এ ভুল
তথ্যকে প্রচার করে মুসলিম
সমাজকে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার
লক্ষ্যে আল্লামা শামীর এবারতের
অপব্যাখ্যা করে মুসলমানের পরস্পরের
সাক্ষাতী সালামের বিধি নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ব্যাপারে উল্লেখ
করে নিজেই পথভ্রষ্ট হয়েছে। অথচ আল্লাহ পাক তাঁর
হাবীবের খেদমতে সালাত ও সালাম পেশ করার
তাকিদ দিতে গিয়ে স্বতন্ত্র
আয়াতে কারীমা নাজিল করেছেন: হে ঈমানদারগণ,
তোমরা আমার হাবীব (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ
করো এবং তাঁর খেদমতে সালাম পেশ করো। অর্থাত্,
প্রেম ও শ্রদ্ধায় পরিপূর্ণ সালাম পেশ করার মত করো।
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
খেদমতে কিয়ামত পর্যন্ত ঈমানদারগণ সালাত ও
সালাম পেশ করতে থাকবেন।(আল কুরআন)
অন্যদিকে মুসালমানগণ
একে অন্যকে সাক্ষাতে সালাম দিবেন
যা সুন্নতরুপে পরিগণিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,
আল্লাহর হাবীব (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে পৃথিবীর যে কোন
ভাষায়ই সালাম প্রদানের বৈধতা রয়েছে। যেহেতু
আল্লাহ পাক মতলকান নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খেদমতে “সালাম” পেশ
করার জন্য কালামে নির্দেশ দিয়েছেন। পক্ষান্তরে,
মুসলমানগণ একে অপরকে শুধুমাত্র আরবী ভাষায় ও
আরবী তারকীবে সালাম আদান প্রদান করতে হবে।
অনারবীয় তরকীবে অন্য কোন ভাষায় পরস্পর সালাম
আদান প্রদান করলে তা শুদ্ধ হবে না। মুসলমানদের
পারস্পরিক সাক্ষাতের সালামের যে বিধান
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী বর্ণনা করেছেন,
তা নিম্নরূপ: (ফতোয়ায়ে শামী ৬ষ্ঠ
খণ্ডের ৪১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে) “সালাম আলাইকুম”
বলে সালাম দিলে এর জওয়াব দেওয়া ওয়াজিব নয়।
কারণ এটি সুন্নাতের পরিপন্হী। আর সুন্নাত হচ্ছে,
আরবী তারকীবে বা গ্রামার মোতাবেক “সালাম”
প্রদান করা। আল্লামা শামীর উপরোক্ত এবারত
দ্বারা এ কথাই বুঝাচ্ছেন যে, মুসলমানগণ
একে অপরকে “সালাম” দিতে হবে আরবী তারকীব
তথা বাক্যের আরবী সংযুক্তিতে বা আরবী গ্রামার
মোতাবেক,অন্যথায় তা সুন্নাতে পরিপন্থী হবে।
অতঃপর আল্লামা শামী (রহঃ) কয়েক লাইন
পরে আরো উল্লেখ করেনঃ- সালাম আলাইকুম
বলে সালাম দিলে এ সালাম শুদ্ধ হবে না। এরূপ
সালাম দেওয়া মূর্খদের কাজ। সর্বক্ষেত্রে সালাম
প্রদানে দুটি মাত্র পদ্ধতি রয়েছে। একটি হচ্ছে,
“আসসালামু আলাইকুম”,
অপরটি হচ্ছে, “সালামুন আলাইকুম”।
(ফতোয়ায়ে শামী ৬ষ্ঠ খন্ড পৃঃ-৪১৬) এ
দুটি পদ্ধতি ব্যতীত সালাম দিলে তা সালাম
হিসাবে গন্য হবে না। আল্লামা শামী (রহঃ)
উম্মতে মুহাম্মদীর পরস্পরের সালামের বিধান
বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, সালাম
হবে আরবী ভাষায় ও আরবী তারকীব
অনুযায়ী যা সুন্নাত রূপে পরিগণিত, অন্যথায়
তা সালামই হবে না। মূল কথা হলো, আল্লাহর হাবীব
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-
কে যে ভাষায়ই সালাম প্রদান করা হোক না কেন
তা শুদ্ধ হবে।
অপর দিকে উম্মতে মুহাম্মদীর পরস্পরের “সালাম”
একমাত্র আরবী তরকীবেই হতে হবে। “উপরোক্ত
পার্থক্যটুকু তথাকথিত তালিবউদ্দিন ও তাঁর পরম
শ্রদ্ধার পাত্র মিঃ “ওলীপুরী”
দ্বারা বুঝে উঠা সম্ভব নহে যেহেতু তাদের উদ্দেশ্য
অশুভ। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রহঃ)-এর
সালাম আদান প্রদানের বিধানাবলীর ইতিবাচক
বিশ্লেষণকে নিজের
মনগড়া ব্যাখ্যা মতো নেতিবাচক
রূপে বর্ণনা করে তদীয় “ইয়া নবী সালাম আলাইকা”
নামক পুস্তিকায় ৮৬ ও ৮৭ পৃষ্টায়
নির্লজ্জভাবে উল্লেখ করেছে যথাঃ-
বিদয়াতীরা তাদের মনগড়া প্রচলিত মিলাদের
অনুষ্ঠানে নবীয়ে করিম (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সালাম দেওয়ার
নামে বলে থাকে সালাম আলাইকা। (মাজাল্লাহ),
(তাদের মনগড়া বক্তব্য যা উপরোক্ত দুটি পদ্ধতির
কোন একটিরও অন্তর্ভূক্ত নয়)। উক্ত পুস্তকের ৮৬/৮৭
পৃষ্টায় ইয়া নবী সালামু
আলাইকা বাক্যটি সম্পর্কে বলা হয়েছে:- প্রথমত,
এটা আরবী গ্রামার মতে ভুল হয়। দ্বিতীয়ত,
সুন্নাতের পরিপন্থী হয়। তৃতীয়ত, এভাবে ভুল
উচ্চারণের মাধ্যমে সালাম করলে তা সালাম হয় না।
চতুর্থত, এ ভুল উচ্চারিত সালামের জবাব
দেয়া ওয়াজিব
হয় না। পঞ্চমত, এভাবে ভুল উচ্চারণের সালাম
করা জাহিল মূর্খদের কাজ। তালিবউদ্দিন সাহেবের
উপরোল্লেখিত লেখনীর মর্মার্থ
আল্লামা শামী (রহঃ) এর বক্তব্যের সম্পূর্ণই
বিপরীত, যা ইতিপূর্বে আমি আল্লামা শামী (রহঃ)-
এর এবারতের মূল ভাষ্য সহ এর যথাযথ ব্যাখ্যা ও এর
সঠিক অর্থ আলোচনা করেছি।
মীলাদ শরীফের মাহফিলে পঠিত সালাত ও সালাম
হলোঃ-(ইয়া নবী সালামু আলাইকা, ইয়া রাসূল
সালামু আলাইকা, ইয়া হাবীব সালামু
আলাইকা,সালাওয়াতুল্লাহ আলাইকা) ইহা কবিতার
পংক্তিতে এ ধরনের সালাত ও সালাম
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
শানে প্রদান করা শরীয়ত সম্মত। বুজুর্গানে দ্বীন এ
ধরনের সালাত ও সালাম
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
শানে পেশ করে আসছেন। এ প্রসঙ্গে শেখ আব্দুল হক
মোহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রাহমাহ) “জযবুল
কুলুব” নামক কিতাবের (উর্দ্দু) ২৮৭ পৃষ্টায় উল্লেখ
করেন:- “হাদীস শরীফে আছে তোমরা যখন আমার
প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করবে তখন উহাকে সুন্দর
করে তৈরী করে পড়বে। কতেক
মুফাচ্ছিরানে কেরামগণ (ওয়া-কুলুলিন্নাস)
আয়াতে করীমার ব্যাখ্যায় বলেছেন (নাছ)
দ্বারা মুরাদ হচ্ছে, নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং (কাওলে হাছন)
দ্বারা মুরাদ হচ্ছে, তাঁর প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করা।
হযরত সুদ্দী (রাঃ) একদল সাহাবায়ে কেরাম
এবং অন্যান্য (তাবেয়ীন, তবয়ে তাবেয়ীন)
থেকে বর্ণনা করেছেন,
যাকে আল্লাহতায়া’লা চমত্কার বর্ণনা বিশুদ্ধ
অর্থপূর্ণ ও প্রান্ঞ্জল শব্দাবলী প্রয়োগের
ক্ষমতা দান করেছেন, যদি সে ব্যক্তি উপরোক্ত
আয়াত শরীফের গুরুত্বের প্রেক্ষিতে দুরূদ ও সালাম
নিজে রচনা ও আবিস্কার করতঃ উহা প্রকাশ করে,
তাতে সেও ঐ আয়াতে করীমার আমলকারীদের
মধ্যে এবং অত্র নিয়ামতের মর্যাদাকারীদের
অন্তর্ভুক্ত হবে। দুরূদ ও সালাম সম্বলিত কোন কোন
শব্দাবলী ফযীলতের দিক দিয়ে উত্তম, এ
রেওয়ায়েতটি হলো এর ভিত্তি। এ কারণেই
পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বুর্জুগানে দ্বীন কর্তৃক বর্ণিত
প্রান্ঞ্জল ভাষায় বিভিন্ন দরূদ শরীফ ও সালাম
লিপিবদ্ধ রয়েছে। উপরোক্ত বর্ণনা থেকে একটি বিষয়
পরিস্কার যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
নির্দেশানুসারে প্রান্ঞ্জল ও শ্রুতি-মধুর যে কোন
ছন্দে, যে কোন ভাষায় সালাত ও সালাম পেশ
করা সম্পূর্ণ শুদ্ধ রয়েছে।
আমাদের আলোচ্য বিষয় মিলাদ শরীফে পঠিত
সালাত ও সালাম-এর অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
এতদসত্ত্বে নুরুল ইসলাম ওলীপুরীর বক্তব্যকে প্রচার
করতে গিয়ে তথাকথিত তালিবউদ্দিন তাঁর
বইয়ে “ইয়া নবী সালাম আলাইকা” পাঠ করাকে অশুদ্ধ
ও নবীর শানে বেয়াদবী বলে বার বার উল্লেখ
করেছেন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের
বিদয়াতী ওহাবী দেওবন্দীদের প্রধান প্রাণকেন্দ্র
হাটহাজারী থেকে প্রকাশিত ক্বারী রশিদ আহমদ
কর্তৃক রচিত, মুফতী ফয়জুল্লাহ মেখলী, হাটহাজারী ও
মুফতী আজিজুল হক পটিয়া কর্তৃক প্রশংসিত
“রেসালায়ে হাতেফ”
নামক পুস্তকে ৮ম পৃষ্ঠা থেকে ১০ম পৃষ্ঠা পর্যন্ত
স্বরচিত কবিতার ফাঁকে ফাঁকে
“ইয়া নবী সালামু আলাইকা”
“ইয়া রাসূল সালামু আলাইকা”
“ইয়া হাবীব সালামু আলাইকা”
“সালাওয়াতুল্লা আলাইকা”
বার বার উল্লেখ করেছেন। “রেসালায়ে হাতেফ”
নামক পুস্তক থেকে কয়েকটি কবিতা নিম্নে প্রদত্ত
হলো:
তালিব উদ্দিনের অন্যতম বরেণ্য নুরুল ইসলাম
ওলীপুরীর প্রাণপ্রিয় ওস্তাদ ও লালবাগ মাদ্রাসার
স্বনামধন্য মুহাদ্দিস মাওলানা আজিজুল হক সাহেব
তদীয় বোখারী শরীফ
(বাংলা তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা) পঞ্চম খণ্ড
দ্বিতীয় সংস্করণের ৪৯ ও ৫০ পৃষ্ঠায় লিখেন:
সৃষ্টির প্রাণ পেয়ারা রাসূল
মুস্তফা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-
এর আবির্ভাব ও শুভাগমনে
আনন্দের হিল্লোল উঠিল সমগ্র ধরনীতে,
যাহার জন্য সমস্ত মাখলুকাতের সৃষ্টি,
যাহার জন্য আরশ-কুরছি, লৌহ-কলম, আসমান-জমীন,
মানুষ, ফেরেস্তা;
আজ তিনি আসিয়াছেন শত উর্ধের উর্ধ্ব হইতে এই
ধুলির ধরণীতে,
তাই হর্ষে ও আনন্দে সমাদৃত করিয়াছে,
তাহাকে নিখিল সৃষ্টি,
অভিনন্দন জানাইয়াছে তাহাকে সমস্ত প্রকৃতি,
বহিয়াছে সকলের উপর আনন্দের বন্যাধারা।
ইয়া নবী সালামু আলাইকা
আল্লার নবী তুমি, তোমাকে সালাম।
ইয়া রাসূল সালামু আলাইকা,
আল্লার রসূল তুমি, তোমাকে সালাম।
ইয়া হাবীব সালামু আলাইকা,
আল্লার হাবীব তুমি,
তোমাকে সালাম।
সালাওয়াতুল্লাহ আলাইকা,
তোমার স্মরণে সদা সালাম,
সালাম।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ!
দেখলেন তো ঢাকা লালবাগ মাদ্রাসার
মুহাদ্দিস,মাওলানা আজিজুল হক সাহেব কী সুন্দর
করে বাংলা উচ্চারণে “ইয়া নবী সালামু আলাইকা”
লিখেছেন। পক্ষান্তরে বিদয়াতী তালিবউদ্দিন তাঁর
তদীয় “ইয়া নবী সালাম আলাইকা” পুস্তকের ১১২
পৃষ্টায় লিখেছে:
“ওলীপুরী সাহেবের বক্তব্যের মূল কথা ছিল পবিত্র
কোরআন-হাদিসে, “ইয়া নবী”, “ইয়া রাসূল” নাই।
আরবী গ্রামারের দৃষ্টিতে এভাবে আমাদের
নবীজিকে ডাকলে সাব্যস্ত হয় যে, সম্বোধনের
পূর্বে তিনি অপরিচিত ছিলেন। অথচ
এটা যে নবী সমস্ত জগদ্বাসীর কাছে সুপরিচিত তাঁর
শানে অবমাননা করা।”
উল্লেখিত বক্তব্যের সার কথা হলো, “ইয়া নবী”,
“ইয়া রাসূল” বলা আমাদের নবীর
শানে অবমাননা করা ও বেআদবী। এ তথ্য “নুরুল
ইসলাম ওলীপুরী” সাহেবের গ্রামার শিখার
বদৌলতে আবিস্কার করেছেন। এমন
কি যারা “ইয়া নবী সালাম আলাইকা” বলেন
তারা নবীর শানে কি পরিমান বে-আদবী করেছেন,
তা হিসাব করে দেখার নির্দেশও
ওলীপুরী সাহেব দিয়েছেন। অপর দিকে মজার
ব্যাপার হলো, ওলীপুরী সাহেব ঢাকা লালবাগ
মাদ্রাসায় কিছুদিন লেখাপড়া করেছেন। এ
হিসাবে মুহাদ্দিস আজিজুল হক সাহেব তাঁর ওস্তাদ
বা শিক্ষা গুরু বটে।
এখন আমাদের জিজ্ঞাসা, যেসব
ওস্তাদের কাছ থেকে ওলীপুরী সাহেব
আরবী গ্রামার শিখে এ অদ্ভুত তথ্য আবিস্কার করে,
“ইয়া নবী সালাম
আলাইকা” বলাকে বিদয়াতীদের উক্তি এবং নবীর
শানে অবমাননা ও বে- আদবী সাব্যস্ত করে, যেসব
ওস্তাদের মধ্যে অন্যতম লালবাগ মাদ্রাসার
মুহাদ্দিস মাওলানা আজিজুল হক
সাহেবও “ইয়া নবী সালামু আলাইকা” লিখেছেন,
বলেছেন, প্রকাশও করেছেন,
তিনি কী (ওলীপুরী সাহেবের) নব্য
ফতওয়া দ্বারা বিদয়াতী ও নবীর
শানে অবমাননাকারী ও বে-আদব সাব্যস্ত হন নাই???
সুতরাং “রেসালায়ে হাতেফ” লেখক ও সমর্থক রশিদ
আহমদ চাটগামী, ফয়জুল্লাহ মেখলী, বিদয়াতী হন না,
আমরা পড়লে বিদয়াতী।
“ইয়া নবী সালামু আলাইকা” বলা কি আসলেই অশুদ্ধ?
কুল মাখলুকাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বপ্রধান সৃষ্টি হলেন
আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী সরকারে দু’জাহান হযরত
মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। সমগ্র সৃষ্টি কুলের রহমত
পেয়ারা নবী সকলের কাছে সুপরিচিত, সমাদৃত।
প্রিয়নবীকে “ইয়া নবী সালামু আলাইকা” সম্বোধন
করে সালাম ও সম্মান প্রদর্শন করা শরীয়ত ও
আরবী গ্রামারের বিধি অনুসারে সম্পূর্ণ সঠিক।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, তথাকথিত আলেম
নামধারী মুফতী উপাধিধারী কিছু সংখ্যক
বাঙ্গালী মৌলভী উক্ত সঠিক ও শুদ্ধ ছন্দ সম্বলিত
”সালাত” ও “সালাম”-কে অশুদ্ধ ও আরবী গ্রামারের
পরিপন্থী বলে নতুন অপপ্রচার শুরু করেছে, যা রাসূল-
প্রেমিক মু’মিন মুসলমানদের অন্তরে আঘাত
সৃষ্টি করেছে। নব্য ওহাবী ওলীপুরীর
দোসর সেজে তথাকথিত
নামধারী মুফতী মিঃ তালিবউদ্দিন উক্ত সশ্রদ্ধ
সালামের বিরূপ সমালোচনা করে, তাঁর
বিভ্রান্তিকর পুস্তক “ইয়ানবী সালাম আলাইকা”-এর
২৫ পৃষ্ঠায় লিখেছে:
”কাজেই নবী শব্দের সাথে ‘ইয়া’ যুক্ত করে ‘ইয়া নবী’
বললে এবং রাসূল শব্দের সাথে ‘ইয়া’ যুক্ত
করে ‘ইয়া রাসূল’ বললে মারেফা হয় বটে, কিন্তু তখন
কথা দাঁড়ায় নবী বা রাসূল শব্দদ্বয় শুধুমাত্র ‘ইয়া’
যুক্ত হওয়ার কারণে অথবা সম্বোধন করার
কারণে মারেফা হলো। এর আগে নাকেরা ছিল।
কিন্তু আমাদের মহানবী এমন নন যে তাঁকে সম্বোধন
করার কারণে পরিচিত হয়েছেন। বরং আমাদের
নবীকে ‘ইয়া নবী’ বলে সম্বোধন করার পূর্ব থেকেই
তিনি সমস্ত জগতবাসীর কাছে সুপরিচিত, কাজেই
তাঁকে “ইয়া নবী” বলে সম্বোধন করা তাঁর
শানে খেলাফ।”
অতঃপর তাঁর এ ভ্রান্ত উক্তিকে প্রমাণ করার জন্য
উক্ত পুস্তকের ২৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করেছে:
”অনুরূপভাবে উক্ত শরহে জামী গ্রন্থের ২৭০ পৃষ্ঠার
১১নং পার্শ্বটিকায় উল্লেখ আছে যে, (ইয়া রাজুল)
মূলতঃ ছিলো (ইয়া আইয়ুহার রাজুল), এ কথার
নির্ভরযোগ্য দলিল প্রকাশ পায় নাই।
আসলে (ইয়া রাজুল) শব্দটা মা’রেফা হওয়ার কারণ
এটা নয় যে এটা মূলত ইয়া আইয়ূহার রাজুল ছিল।
বরং ‘ইয়া রাজুল’ মা’রেফা হওয়ার ভিন্ন কারণ
রয়েছে যা নির্ভরযোগ্য।… ‘ইয়া নবী’
বাক্যটা মূলতঃ ‘ইয়া আইয়ূহান্নাবী’ ছিল বলে প্রমাণ
করার চেষ্টা করেছেন সে যুক্তিটাকেই
আরবী গ্রামারের তত্ত্ববিদগণ নড়বড়ে বলে নাকচ
করে দিয়েছেন।”
বাহ! কী অদ্ভুত যুক্তি! কী আজগুবি দলিল! তথাকথিত
নামধারী তালিবউদ্দিন, ওলীপুরীর
পক্ষে উকালতী করতে গিয়ে নজদী ওহাবী চিন্তাধারার
চশমা চোখে নিয়ে শরীয়তসম্মত
মাহফিলে মিলাদ শরীফে পঠিত সালাত ও
সালামের সুন্দর বিশুদ্ধ ছন্দকে ভুল প্রমাণ করার
নিমিত্তে কতো না আদাজল খেয়ে লেগেছেন। বড়ই
পরিতাপের বিষয় এখানে লিখক,
“শরহে জামী” কিতাবের ২৭০ পৃষ্ঠায় শুধু
১১নং পার্শ্বটিকার কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু মূল
কিতাবের আরবী এবারত উল্লেখ করেননি। কারণ
কিতাবের মূল এবারত উল্লেখ
করলে একদিকে অর্থকে বিকৃত করা যাবে না,
অপরদিকে সরলমনা সুন্নী মুসলমানকে বিভ্রান্ত
করাও সহজ হবে না। এহেন কু-চিন্তার তাড়নায় সু-চতুর
লেখক মূল আরবী এবারত উল্লেখ না করে বরং মূল
এবারতের অর্থকে বিকৃত করে হাস্যকর
বাহাদুরী প্রদর্শন করেছেন।
পাঠকগণের সুবিধার্থে আমরা “শরহে জামী”
কিতাবের ২৭০ পৃষ্ঠার মূল এবারত
এবং ১১নং হাশিয়া বা পার্শ্বটীকার এবারত
নিম্নে পেশ করলাম। যথা: (নেদা) বা সম্বোধনসূচক
শব্দ দ্বারা (মুনাদা) বা সম্বোধনকৃত ব্যক্তি/বস্তু
তখনই মারেফা হয়ে থাকে, যখন এ (নেদা)
বা সম্বোধনসূচক শব্দ দ্বারা (মুনাদা) বা সম্বোধনকৃত
ব্যক্তি/বস্তুকে নির্দিষ্ট
করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়ে থাকে। যেমন
(ইয়া রাজুলু); তবে (ইয়া রাজুলান) এর ব্যতিক্রম,
কেননা এখানে (মুনাদা) বা সম্বোধনকৃত ব্যক্তি/
বস্তুকে অনির্দিষ্ট রাখা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, কারণ
এটা নাকেরা বা অনির্দিষ্ট। এটি মুতায়াখখিরীন
বা পরবর্তী নাহুবিদগণের অভিমত। পক্ষান্তরে,
মুতাকাদ্দিমীন বা পূর্ববর্তী নাহুবিদগণ (মুয়াররফ
বিন নেদা) অর্থাত্, হরফে নেদার
দ্বারা নাকেরা যে মারেফা করা হয় তা উল্লেখ
করেন নাই। কারণ পূর্ববর্তী নাহুবিদগণের
মতে (ইয়া রাজুলু) মূলত (ইয়া আয়্যুহার রাজুলু) ছিলো,
এর দিকে তারা রুজু
করেছেন। অর্থাত্, পূর্ববর্তী নাহুবিদগণ (ইয়া রাজুলু)
মধ্যে যে (রাজুলু) শব্দটি রয়েছে তা মূলতঃ (আররাজুলু)
ছিল বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
(শরহে জামী-২৭০পৃঃ দ্রঃ)
এ প্রসঙ্গে শরহে জামী কিতাবের ২৭০পৃষ্ঠায়
১১নং পার্শ্বটিকায় আরো লিখা রয়েছে: যেমন
(ইয়া রাজুলু) মূলত (ইয়া আইয়্যুহার রাজুলু) ছিল।
(আররাজুলু)-এর পূর্বে হরফে নেদা (ইয়া) আসার
কারণে আরবী গ্রামারের কায়দা মোতাবিক নেদা ও
মুনাদার মধ্যখান (আইয়্যুহা) যুক্ত করা হয়েছিল।
(ইয়া আইয়্যুহার রাজুলু) রূপধারণ করলো। অতঃপর
(আররাজুলু)-এর আলিফ ও লাম এবং (আইয়্যু)
শব্দকে বিলুপ্ত করা হয়েছে – (লিকাছ রাতিল
ইছতেমাল) অধিক ব্যবহারের কারণে। অতএব,
(ইয়া আইয়্যুহার
রাজুলু) থেকে (ইয়া রাজুলু) হয়ে গেল। উল্লেখ্য যে,
“হেদায়াতুন্নাহু” আরবী শরাহ “দারায়েতুন্নাহু”
নামক গ্রন্থের ১৮৩ পৃষ্ঠায়ও অনুরূপ
কায়দা লিখা রয়েছে। অর্থাত্, (ইয়া রাজুলু) যেহেতু
মূলত (ইয়া আয়্যুহার রাজুলু) ছিলো,
সে কারণে মুতাকাদ্দিমীন বা পূর্ববর্তী নাহুবিদগণ
(মুয়াররফ বিন নেদা)-কে মারেফা-এর
প্রকারভেদে উল্লেখ করেন নাই।
সূধী পাঠকবৃন্দ! উপরোক্ত আরবী গ্রামারের
দলিলভিত্তিক এবারত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত
হলো যে (ইয়া রাজুলু) মুলত ছিলো (ইয়া আয়্যুহান
রাজুলু); ঠিক তেমনিভাবে (ইয়া নবী) মূলত ছিল
(ইয়া আয়্যুহান্নাবীউ); এয়া রাসূলু মূলত ছিল
(ইয়া আয়্যুহার রাসূলু)। এটাই হলো আরবী গ্রামারের
তত্ববিদগণের পরিভাষা।
এটাকে বিনা দলিলে নড়বড়ে বলা অথবা খোঁড়া যুক্তির
জোড়াতালি বলে উপহাস করা নিরেট মূর্খ
বা জাহিলের কাজ। কোন আলেমের কাজ
হতে পারেনা। সত্যিকার আলেমের কাজ
হলো নির্ভরযোগ্য দলিল দিয়ে নিজ দাবী প্রমাণ
করা। দলিলবিহীন কারো কোন
দাবী বা কথা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
দেওবন্দী ওহাবী ওলীপুরীর দোসর তথাকথিত,
নামধারী মুফতী তালিবউদ্দিন সাহেব
“ইয়া নবী সালাম আলাইকা” পুস্তকের ২৮ পৃষ্ঠায়
প্রসিদ্ধ আরবী গ্রামারের কিতাব “শরহে জামী”-এর
ব্যাখ্যাগ্রন্থ “সাওয়ালে বাসূলী” গ্রন্থের ৫৭৭ পৃষ্ঠার
যে এবারতটুকু উল্লেখ করেছেন, তাতেও তাঁর এ
দাবী প্রমাণিত হয় না। কারণ
তিনি “সাওয়ালে বাসূলী” কিতাবের এবারতের
অপব্যাখ্যা করে তাঁর দাবী প্রমাণ করার ব্যর্থ
চেষ্টা করেছেন। নিম্নে ’সাওয়ালে বাসূলী’-এর সঠিক
ব্যাখ্যা প্রদত্ত হলো: অর্থাত্, বাসূলী গ্রন্থকার
বলেন, নাহুবিদগণের
(ইছতেলাহ) বা পরিভাষা হলো, (ইয়া রাজুলু) মূলত
ছিলো, (ইয়া আইয়্যুহার রাজুলু) কিন্তু এ কায়দার
হাকীকত সম্বন্ধে আমাদের কোন জ্ঞান নেই যে,
(ইয়া রাজুলু) মূলত যে ছিলো (ইয়া আইয়্যুহার রাজুলু)।
উপরোক্ত বাসূলী গ্রন্থকার এ দাবী করেন নাই
যে নাহুবিদগণের (ইছতেলাহ)
বা পরিভাষা (ইয়া রাজুলু) মূলতই
যে ছিলো (ইয়া আইয়্যুহার রাজুলু) ইহা অশুদ্ধ।
বরং তিনি শুধু এতটুকু বলেছেন যে, এ কায়দা উনাদের
জানা নেই। তদুপুরি তিনি ইহা নাহুবিদগণের
পরিভাষা বলেও স্বীকার করেছেন। উপরন্ত
“শরহে জামী”
গ্রন্থের ২৭০ পৃষ্ঠায় ১১নং পার্শ্বটীকার মূল
আরবী এবারতে যা রয়েছে,
তা আমরা ইতিপূর্বে স্ববিস্তার আলোচনা করেছি।
তাঁর মূল কায়দা হলো, (লিকাছরাতিল ইছতেমাল)
অর্থাত্, অধিক ব্যবহারের কারণে, (ইয়া আইয়্যুহার
রাজুলু)-কে (ইয়া রাজুলু) বলা হয়ে থাকে।
নাহুবিদগণের ইস্তেলা বা পরিভাষা (রাজুল)
বলতে ইহা (আররাজুল)’ই ছিলো,যা পূর্ব থেকেই
মা’রেফা। এখন একটি প্রশ্ন আসতে পারে,
পরবর্তী নাহুবিদগণ (উররিফা বিননেদা) যেমন,
নেদা দ্বারা নাকেরা মা’রেফা হয়ে থাকে বলে মা’রেফার
প্রকারভেদে গণ্য করবেন কেন? এতে কি পূর্ববর্তী ও
পরবর্তী নাহুবিদগণের মধ্যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত
হয়? না, নিশ্চয়ই হয় না, এজন্য যে,
পরবর্তী নাহুবিদগণের দৃষ্টিতে মুনাদা মা’রেফা হয়
শর্ত সাপেক্ষে, অপর দিকে বিশেষ
ক্ষেত্রে মুনাদা নাকেরাও হয়ে থাকে। যেমন,
(ইয়া রাজুলান খুজ-বিয়াদী)। দেখুন, এখানে “ইয়া”
হরফে নেদা আসার পরও মুনাদা (রাজুলান)
মা’রেফা হয় নাই, বরং নাকেরাই রয়ে গেলো।
পক্ষান্তরে, (ইয়া রাজুলান)-এর মধ্যে “ইয়া”
হরফে নেদা আসার কারণ (রাজুল) মুনাদাকে এই
শর্তে মা’রেফার মধ্যে গণ্য করা হলো, মুতাকাল্লিম
বা বক্তা (রাজুল)-কে মা’রেফা বা নির্দিষ্ট
ইচ্ছা পোষণ করার কারণে। এজন্যই,
মুল্লা জামী শরহে জামীতে লিখেছেন, যখন
বক্তা তাঁর মুখাতাব বা সম্বোধনকৃত ব্যক্তি নির্দিষ্ট
করার ইচ্ছা পোষণ করে থাকে। যেমন, (রাজুল)
বলতে এখানে (আররাজুল)’ই ছিলো।
তবে পরবর্তী নাহুবিদগণ (উররিফা বিননেদা)-
কে মা’রেফা-এর প্রকারভেদে শর্তাধীন উল্লেখ
করেছেন,যাতে একে মা’রেফা বলে বুঝতে সহজ হয়।
অন্যথায় মুতাকাদ্দিমীন বা পূর্ববর্তী নাহুবিদগণ
“নেদা”
দ্বারা মুনাদা যে মা’রেফা হয়ে থাকে তা মা’রেফার
প্রকারভেদে উল্লেখই করেন নাই। নাহু-
শাস্ত্রে তথা আরবী গ্রামারে যাদের পরিপূর্ণ
জ্ঞান নেই, তারাই কেবল আদার
বেপারী হয়ে জাহাজের খবর রাখার মত আচরণ করে,
তাই এ সহজ বিষয়টিও তাদের
বোধগম্য নয়। অবাক লাগে তার পরেও আবার
পাণ্ডিত্যের বাহাদুরী! এতে হাঁসি পায়, পাশা-
পাশি লজ্জাও লাগে। অতএব, পূর্ববর্তী নাহুবিদগণের
মতেই, “ইয়া নবী” “ইয়া রাসূল” বলা মুনাদা হবার
কারণে শুধু মারেফা হয়নি, বরং পূর্ব থেকেই
মারেফা হিসেবে ছিল। মুতায়াখখিরীনগণ শুধু
বুঝানোর জন্য তাকে “ইয়া” যুক্ত করার
পূর্বে নাকারা বলেছেন। কিন্তু মুতাকাদ্দিমীন
বা পূর্ববর্তীগণের কথাই আমাদের নিকট অগ্রগণ্য। এ
হিসেবে মীলাদ শরীফে পঠিত সালাত ও সালামের
শ্লোকে অধিক ব্যবহার করার দরুণ “ইয়া নবী”
“ইয়া রাসুল”
বলা হয়ে থাকে। তার মর্ম পূর্ব থেকেই
মারেফা বা সুপরিচিত। আরবি গ্রামারের এরূপ
একটি সূক্ষ্ম ব্যাপারে পূর্ববর্তী নাহুবিদগণের
মতামতকে উপেক্ষা করে এবং পরবর্তী নাহুবিদগণের
মতামতকে বিকৃত
করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা কাদিয়ানী দোসর
কাজ্জাব ওলীপুরী ওহাবীদের কাজ। কারণ
তারা বেশী বেশী দরূদ ও সালাম পড়তে অনাগ্রহী ও
নারাজ। এ জন্যই “দেওবন্দীরা” বিভিন্ন অজুহাতও
তালাশ করে।
নাহু-ছরফ তথা আরবী গ্রামারে জ্ঞানী আমাদের
অনেক সুন্নী ওলামায়ে কেরাম পৃথিবীতে এখনও
বেঁচে আছেন। আশা করি একটু তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিলেই
“ওলীপুরী – তালিবউদ্দীন”গংদের
প্রতারণা ধরা পড়বে। কেননা, হক্বকে কোনো দিন
গোপন রাখা যায় না। এই পোষ্টের
মাধ্যমে “ইয়া নবী সালামু আলাইকা” বিষয়ক
আলোচনা এবং দলিল-আদিল্লাহ
সংক্ষিপ্তভাবে শেষ হলো। যদি আরো প্রয়োজন হয়
ইনশাআল্লাহুতা’লা এই বিষয়
নিয়ে আরো আলোচনা পেশ করবো।
সবাইকে ধন্যবাদ।
ক্ষেত্রে “নুরুল ইসলাম ওলিপুরী” বর্তমানে তাদের
দলের কাছে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। সে তাঁর
ওয়াজ ও তাফসীর মাহফিল নামে আয়োজিত সভায়
যে সব বক্তব্য উপস্থাপন করে থাকে, তা পুস্তক
আকারে এবং অডিও ক্যাসেটের মাধ্যমে তার দলীয়
লোকেরা প্রচার করে থাকে। বিগত ২৭/১০/
১৯৯৯ইং তারিখে সিলেটের গোলাপগন্ঞ্জ থানার
অন্তর্গত বাটুলগন্ঞ্জ মাদ্রাসার যেসব ওয়াজ পেশ
করেছিলো তাঁর সাথে আরো কিছু কথা একত্রিত
করে “ইয়া নবী সালাম আলাইকা” নামে একটি পুস্তক
প্রকাশ করা হয়েছে। এই পুস্তকের
রচয়িতা তালিবউদ্দিন আহমদ।
বইটিতে পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কেও বিভিন্ন ধরনের
কটুক্তি, কোরআন, হাদিস ও আরবী গ্রামারের ভুল
ব্যাখ্যাসহ উদ্ভট যুক্তিতে ভরপুর। মিলাদ শরীফের
মাহফিল পঠিত “ইয়ানবী সালামু আলাইকা,
ইয়া রাসূল সালামু আলাইকা, ইয়া হাবীব সালামু
আলাইকা, সালাওয়াতুল্লা আলাইকা” এ রূপ ছান্দিক
সালাত ও সালাম পাঠ করাতে ভুল প্রমান করার অশুভ
উদ্দেশ্য নিয়ে, তথাকথিত তালিবউদ্দিন তাঁর
লিখিত বইয়ে, ওলিপুরী সাহেবের প্রদত্ত তথ্য
মোতাবেক “ফতোয়ায়ে শামী” কিতাবের এবারতের
বরাত দিয়ে যে দাবী উপস্থাপন করেছে,
তাতে নিজেই ভুলের আবর্তনে ঘুরপাক খাচ্ছেন।
কারণ, আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রহঃ)
মুসলমানের পরস্পর সাক্ষাতে প্রদেয়, সালামের
পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে এ নিয়ম লিখেছেন। আর
তালিবউদ্দিন সাহেব “ওলীপুরীর” এ ভুল
তথ্যকে প্রচার করে মুসলিম
সমাজকে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার
লক্ষ্যে আল্লামা শামীর এবারতের
অপব্যাখ্যা করে মুসলমানের পরস্পরের
সাক্ষাতী সালামের বিধি নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ব্যাপারে উল্লেখ
করে নিজেই পথভ্রষ্ট হয়েছে। অথচ আল্লাহ পাক তাঁর
হাবীবের খেদমতে সালাত ও সালাম পেশ করার
তাকিদ দিতে গিয়ে স্বতন্ত্র
আয়াতে কারীমা নাজিল করেছেন: হে ঈমানদারগণ,
তোমরা আমার হাবীব (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ
করো এবং তাঁর খেদমতে সালাম পেশ করো। অর্থাত্,
প্রেম ও শ্রদ্ধায় পরিপূর্ণ সালাম পেশ করার মত করো।
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
খেদমতে কিয়ামত পর্যন্ত ঈমানদারগণ সালাত ও
সালাম পেশ করতে থাকবেন।(আল কুরআন)
অন্যদিকে মুসালমানগণ
একে অন্যকে সাক্ষাতে সালাম দিবেন
যা সুন্নতরুপে পরিগণিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,
আল্লাহর হাবীব (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে পৃথিবীর যে কোন
ভাষায়ই সালাম প্রদানের বৈধতা রয়েছে। যেহেতু
আল্লাহ পাক মতলকান নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খেদমতে “সালাম” পেশ
করার জন্য কালামে নির্দেশ দিয়েছেন। পক্ষান্তরে,
মুসলমানগণ একে অপরকে শুধুমাত্র আরবী ভাষায় ও
আরবী তারকীবে সালাম আদান প্রদান করতে হবে।
অনারবীয় তরকীবে অন্য কোন ভাষায় পরস্পর সালাম
আদান প্রদান করলে তা শুদ্ধ হবে না। মুসলমানদের
পারস্পরিক সাক্ষাতের সালামের যে বিধান
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী বর্ণনা করেছেন,
তা নিম্নরূপ: (ফতোয়ায়ে শামী ৬ষ্ঠ
খণ্ডের ৪১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে) “সালাম আলাইকুম”
বলে সালাম দিলে এর জওয়াব দেওয়া ওয়াজিব নয়।
কারণ এটি সুন্নাতের পরিপন্হী। আর সুন্নাত হচ্ছে,
আরবী তারকীবে বা গ্রামার মোতাবেক “সালাম”
প্রদান করা। আল্লামা শামীর উপরোক্ত এবারত
দ্বারা এ কথাই বুঝাচ্ছেন যে, মুসলমানগণ
একে অপরকে “সালাম” দিতে হবে আরবী তারকীব
তথা বাক্যের আরবী সংযুক্তিতে বা আরবী গ্রামার
মোতাবেক,অন্যথায় তা সুন্নাতে পরিপন্থী হবে।
অতঃপর আল্লামা শামী (রহঃ) কয়েক লাইন
পরে আরো উল্লেখ করেনঃ- সালাম আলাইকুম
বলে সালাম দিলে এ সালাম শুদ্ধ হবে না। এরূপ
সালাম দেওয়া মূর্খদের কাজ। সর্বক্ষেত্রে সালাম
প্রদানে দুটি মাত্র পদ্ধতি রয়েছে। একটি হচ্ছে,
“আসসালামু আলাইকুম”,
অপরটি হচ্ছে, “সালামুন আলাইকুম”।
(ফতোয়ায়ে শামী ৬ষ্ঠ খন্ড পৃঃ-৪১৬) এ
দুটি পদ্ধতি ব্যতীত সালাম দিলে তা সালাম
হিসাবে গন্য হবে না। আল্লামা শামী (রহঃ)
উম্মতে মুহাম্মদীর পরস্পরের সালামের বিধান
বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, সালাম
হবে আরবী ভাষায় ও আরবী তারকীব
অনুযায়ী যা সুন্নাত রূপে পরিগণিত, অন্যথায়
তা সালামই হবে না। মূল কথা হলো, আল্লাহর হাবীব
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-
কে যে ভাষায়ই সালাম প্রদান করা হোক না কেন
তা শুদ্ধ হবে।
অপর দিকে উম্মতে মুহাম্মদীর পরস্পরের “সালাম”
একমাত্র আরবী তরকীবেই হতে হবে। “উপরোক্ত
পার্থক্যটুকু তথাকথিত তালিবউদ্দিন ও তাঁর পরম
শ্রদ্ধার পাত্র মিঃ “ওলীপুরী”
দ্বারা বুঝে উঠা সম্ভব নহে যেহেতু তাদের উদ্দেশ্য
অশুভ। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রহঃ)-এর
সালাম আদান প্রদানের বিধানাবলীর ইতিবাচক
বিশ্লেষণকে নিজের
মনগড়া ব্যাখ্যা মতো নেতিবাচক
রূপে বর্ণনা করে তদীয় “ইয়া নবী সালাম আলাইকা”
নামক পুস্তিকায় ৮৬ ও ৮৭ পৃষ্টায়
নির্লজ্জভাবে উল্লেখ করেছে যথাঃ-
বিদয়াতীরা তাদের মনগড়া প্রচলিত মিলাদের
অনুষ্ঠানে নবীয়ে করিম (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সালাম দেওয়ার
নামে বলে থাকে সালাম আলাইকা। (মাজাল্লাহ),
(তাদের মনগড়া বক্তব্য যা উপরোক্ত দুটি পদ্ধতির
কোন একটিরও অন্তর্ভূক্ত নয়)। উক্ত পুস্তকের ৮৬/৮৭
পৃষ্টায় ইয়া নবী সালামু
আলাইকা বাক্যটি সম্পর্কে বলা হয়েছে:- প্রথমত,
এটা আরবী গ্রামার মতে ভুল হয়। দ্বিতীয়ত,
সুন্নাতের পরিপন্থী হয়। তৃতীয়ত, এভাবে ভুল
উচ্চারণের মাধ্যমে সালাম করলে তা সালাম হয় না।
চতুর্থত, এ ভুল উচ্চারিত সালামের জবাব
দেয়া ওয়াজিব
হয় না। পঞ্চমত, এভাবে ভুল উচ্চারণের সালাম
করা জাহিল মূর্খদের কাজ। তালিবউদ্দিন সাহেবের
উপরোল্লেখিত লেখনীর মর্মার্থ
আল্লামা শামী (রহঃ) এর বক্তব্যের সম্পূর্ণই
বিপরীত, যা ইতিপূর্বে আমি আল্লামা শামী (রহঃ)-
এর এবারতের মূল ভাষ্য সহ এর যথাযথ ব্যাখ্যা ও এর
সঠিক অর্থ আলোচনা করেছি।
মীলাদ শরীফের মাহফিলে পঠিত সালাত ও সালাম
হলোঃ-(ইয়া নবী সালামু আলাইকা, ইয়া রাসূল
সালামু আলাইকা, ইয়া হাবীব সালামু
আলাইকা,সালাওয়াতুল্লাহ আলাইকা) ইহা কবিতার
পংক্তিতে এ ধরনের সালাত ও সালাম
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
শানে প্রদান করা শরীয়ত সম্মত। বুজুর্গানে দ্বীন এ
ধরনের সালাত ও সালাম
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
শানে পেশ করে আসছেন। এ প্রসঙ্গে শেখ আব্দুল হক
মোহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রাহমাহ) “জযবুল
কুলুব” নামক কিতাবের (উর্দ্দু) ২৮৭ পৃষ্টায় উল্লেখ
করেন:- “হাদীস শরীফে আছে তোমরা যখন আমার
প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করবে তখন উহাকে সুন্দর
করে তৈরী করে পড়বে। কতেক
মুফাচ্ছিরানে কেরামগণ (ওয়া-কুলুলিন্নাস)
আয়াতে করীমার ব্যাখ্যায় বলেছেন (নাছ)
দ্বারা মুরাদ হচ্ছে, নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং (কাওলে হাছন)
দ্বারা মুরাদ হচ্ছে, তাঁর প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করা।
হযরত সুদ্দী (রাঃ) একদল সাহাবায়ে কেরাম
এবং অন্যান্য (তাবেয়ীন, তবয়ে তাবেয়ীন)
থেকে বর্ণনা করেছেন,
যাকে আল্লাহতায়া’লা চমত্কার বর্ণনা বিশুদ্ধ
অর্থপূর্ণ ও প্রান্ঞ্জল শব্দাবলী প্রয়োগের
ক্ষমতা দান করেছেন, যদি সে ব্যক্তি উপরোক্ত
আয়াত শরীফের গুরুত্বের প্রেক্ষিতে দুরূদ ও সালাম
নিজে রচনা ও আবিস্কার করতঃ উহা প্রকাশ করে,
তাতে সেও ঐ আয়াতে করীমার আমলকারীদের
মধ্যে এবং অত্র নিয়ামতের মর্যাদাকারীদের
অন্তর্ভুক্ত হবে। দুরূদ ও সালাম সম্বলিত কোন কোন
শব্দাবলী ফযীলতের দিক দিয়ে উত্তম, এ
রেওয়ায়েতটি হলো এর ভিত্তি। এ কারণেই
পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বুর্জুগানে দ্বীন কর্তৃক বর্ণিত
প্রান্ঞ্জল ভাষায় বিভিন্ন দরূদ শরীফ ও সালাম
লিপিবদ্ধ রয়েছে। উপরোক্ত বর্ণনা থেকে একটি বিষয়
পরিস্কার যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
নির্দেশানুসারে প্রান্ঞ্জল ও শ্রুতি-মধুর যে কোন
ছন্দে, যে কোন ভাষায় সালাত ও সালাম পেশ
করা সম্পূর্ণ শুদ্ধ রয়েছে।
আমাদের আলোচ্য বিষয় মিলাদ শরীফে পঠিত
সালাত ও সালাম-এর অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
এতদসত্ত্বে নুরুল ইসলাম ওলীপুরীর বক্তব্যকে প্রচার
করতে গিয়ে তথাকথিত তালিবউদ্দিন তাঁর
বইয়ে “ইয়া নবী সালাম আলাইকা” পাঠ করাকে অশুদ্ধ
ও নবীর শানে বেয়াদবী বলে বার বার উল্লেখ
করেছেন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের
বিদয়াতী ওহাবী দেওবন্দীদের প্রধান প্রাণকেন্দ্র
হাটহাজারী থেকে প্রকাশিত ক্বারী রশিদ আহমদ
কর্তৃক রচিত, মুফতী ফয়জুল্লাহ মেখলী, হাটহাজারী ও
মুফতী আজিজুল হক পটিয়া কর্তৃক প্রশংসিত
“রেসালায়ে হাতেফ”
নামক পুস্তকে ৮ম পৃষ্ঠা থেকে ১০ম পৃষ্ঠা পর্যন্ত
স্বরচিত কবিতার ফাঁকে ফাঁকে
“ইয়া নবী সালামু আলাইকা”
“ইয়া রাসূল সালামু আলাইকা”
“ইয়া হাবীব সালামু আলাইকা”
“সালাওয়াতুল্লা আলাইকা”
বার বার উল্লেখ করেছেন। “রেসালায়ে হাতেফ”
নামক পুস্তক থেকে কয়েকটি কবিতা নিম্নে প্রদত্ত
হলো:
তালিব উদ্দিনের অন্যতম বরেণ্য নুরুল ইসলাম
ওলীপুরীর প্রাণপ্রিয় ওস্তাদ ও লালবাগ মাদ্রাসার
স্বনামধন্য মুহাদ্দিস মাওলানা আজিজুল হক সাহেব
তদীয় বোখারী শরীফ
(বাংলা তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা) পঞ্চম খণ্ড
দ্বিতীয় সংস্করণের ৪৯ ও ৫০ পৃষ্ঠায় লিখেন:
সৃষ্টির প্রাণ পেয়ারা রাসূল
মুস্তফা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-
এর আবির্ভাব ও শুভাগমনে
আনন্দের হিল্লোল উঠিল সমগ্র ধরনীতে,
যাহার জন্য সমস্ত মাখলুকাতের সৃষ্টি,
যাহার জন্য আরশ-কুরছি, লৌহ-কলম, আসমান-জমীন,
মানুষ, ফেরেস্তা;
আজ তিনি আসিয়াছেন শত উর্ধের উর্ধ্ব হইতে এই
ধুলির ধরণীতে,
তাই হর্ষে ও আনন্দে সমাদৃত করিয়াছে,
তাহাকে নিখিল সৃষ্টি,
অভিনন্দন জানাইয়াছে তাহাকে সমস্ত প্রকৃতি,
বহিয়াছে সকলের উপর আনন্দের বন্যাধারা।
ইয়া নবী সালামু আলাইকা
আল্লার নবী তুমি, তোমাকে সালাম।
ইয়া রাসূল সালামু আলাইকা,
আল্লার রসূল তুমি, তোমাকে সালাম।
ইয়া হাবীব সালামু আলাইকা,
আল্লার হাবীব তুমি,
তোমাকে সালাম।
সালাওয়াতুল্লাহ আলাইকা,
তোমার স্মরণে সদা সালাম,
সালাম।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ!
দেখলেন তো ঢাকা লালবাগ মাদ্রাসার
মুহাদ্দিস,মাওলানা আজিজুল হক সাহেব কী সুন্দর
করে বাংলা উচ্চারণে “ইয়া নবী সালামু আলাইকা”
লিখেছেন। পক্ষান্তরে বিদয়াতী তালিবউদ্দিন তাঁর
তদীয় “ইয়া নবী সালাম আলাইকা” পুস্তকের ১১২
পৃষ্টায় লিখেছে:
“ওলীপুরী সাহেবের বক্তব্যের মূল কথা ছিল পবিত্র
কোরআন-হাদিসে, “ইয়া নবী”, “ইয়া রাসূল” নাই।
আরবী গ্রামারের দৃষ্টিতে এভাবে আমাদের
নবীজিকে ডাকলে সাব্যস্ত হয় যে, সম্বোধনের
পূর্বে তিনি অপরিচিত ছিলেন। অথচ
এটা যে নবী সমস্ত জগদ্বাসীর কাছে সুপরিচিত তাঁর
শানে অবমাননা করা।”
উল্লেখিত বক্তব্যের সার কথা হলো, “ইয়া নবী”,
“ইয়া রাসূল” বলা আমাদের নবীর
শানে অবমাননা করা ও বেআদবী। এ তথ্য “নুরুল
ইসলাম ওলীপুরী” সাহেবের গ্রামার শিখার
বদৌলতে আবিস্কার করেছেন। এমন
কি যারা “ইয়া নবী সালাম আলাইকা” বলেন
তারা নবীর শানে কি পরিমান বে-আদবী করেছেন,
তা হিসাব করে দেখার নির্দেশও
ওলীপুরী সাহেব দিয়েছেন। অপর দিকে মজার
ব্যাপার হলো, ওলীপুরী সাহেব ঢাকা লালবাগ
মাদ্রাসায় কিছুদিন লেখাপড়া করেছেন। এ
হিসাবে মুহাদ্দিস আজিজুল হক সাহেব তাঁর ওস্তাদ
বা শিক্ষা গুরু বটে।
এখন আমাদের জিজ্ঞাসা, যেসব
ওস্তাদের কাছ থেকে ওলীপুরী সাহেব
আরবী গ্রামার শিখে এ অদ্ভুত তথ্য আবিস্কার করে,
“ইয়া নবী সালাম
আলাইকা” বলাকে বিদয়াতীদের উক্তি এবং নবীর
শানে অবমাননা ও বে- আদবী সাব্যস্ত করে, যেসব
ওস্তাদের মধ্যে অন্যতম লালবাগ মাদ্রাসার
মুহাদ্দিস মাওলানা আজিজুল হক
সাহেবও “ইয়া নবী সালামু আলাইকা” লিখেছেন,
বলেছেন, প্রকাশও করেছেন,
তিনি কী (ওলীপুরী সাহেবের) নব্য
ফতওয়া দ্বারা বিদয়াতী ও নবীর
শানে অবমাননাকারী ও বে-আদব সাব্যস্ত হন নাই???
সুতরাং “রেসালায়ে হাতেফ” লেখক ও সমর্থক রশিদ
আহমদ চাটগামী, ফয়জুল্লাহ মেখলী, বিদয়াতী হন না,
আমরা পড়লে বিদয়াতী।
“ইয়া নবী সালামু আলাইকা” বলা কি আসলেই অশুদ্ধ?
কুল মাখলুকাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বপ্রধান সৃষ্টি হলেন
আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী সরকারে দু’জাহান হযরত
মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। সমগ্র সৃষ্টি কুলের রহমত
পেয়ারা নবী সকলের কাছে সুপরিচিত, সমাদৃত।
প্রিয়নবীকে “ইয়া নবী সালামু আলাইকা” সম্বোধন
করে সালাম ও সম্মান প্রদর্শন করা শরীয়ত ও
আরবী গ্রামারের বিধি অনুসারে সম্পূর্ণ সঠিক।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, তথাকথিত আলেম
নামধারী মুফতী উপাধিধারী কিছু সংখ্যক
বাঙ্গালী মৌলভী উক্ত সঠিক ও শুদ্ধ ছন্দ সম্বলিত
”সালাত” ও “সালাম”-কে অশুদ্ধ ও আরবী গ্রামারের
পরিপন্থী বলে নতুন অপপ্রচার শুরু করেছে, যা রাসূল-
প্রেমিক মু’মিন মুসলমানদের অন্তরে আঘাত
সৃষ্টি করেছে। নব্য ওহাবী ওলীপুরীর
দোসর সেজে তথাকথিত
নামধারী মুফতী মিঃ তালিবউদ্দিন উক্ত সশ্রদ্ধ
সালামের বিরূপ সমালোচনা করে, তাঁর
বিভ্রান্তিকর পুস্তক “ইয়ানবী সালাম আলাইকা”-এর
২৫ পৃষ্ঠায় লিখেছে:
”কাজেই নবী শব্দের সাথে ‘ইয়া’ যুক্ত করে ‘ইয়া নবী’
বললে এবং রাসূল শব্দের সাথে ‘ইয়া’ যুক্ত
করে ‘ইয়া রাসূল’ বললে মারেফা হয় বটে, কিন্তু তখন
কথা দাঁড়ায় নবী বা রাসূল শব্দদ্বয় শুধুমাত্র ‘ইয়া’
যুক্ত হওয়ার কারণে অথবা সম্বোধন করার
কারণে মারেফা হলো। এর আগে নাকেরা ছিল।
কিন্তু আমাদের মহানবী এমন নন যে তাঁকে সম্বোধন
করার কারণে পরিচিত হয়েছেন। বরং আমাদের
নবীকে ‘ইয়া নবী’ বলে সম্বোধন করার পূর্ব থেকেই
তিনি সমস্ত জগতবাসীর কাছে সুপরিচিত, কাজেই
তাঁকে “ইয়া নবী” বলে সম্বোধন করা তাঁর
শানে খেলাফ।”
অতঃপর তাঁর এ ভ্রান্ত উক্তিকে প্রমাণ করার জন্য
উক্ত পুস্তকের ২৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করেছে:
”অনুরূপভাবে উক্ত শরহে জামী গ্রন্থের ২৭০ পৃষ্ঠার
১১নং পার্শ্বটিকায় উল্লেখ আছে যে, (ইয়া রাজুল)
মূলতঃ ছিলো (ইয়া আইয়ুহার রাজুল), এ কথার
নির্ভরযোগ্য দলিল প্রকাশ পায় নাই।
আসলে (ইয়া রাজুল) শব্দটা মা’রেফা হওয়ার কারণ
এটা নয় যে এটা মূলত ইয়া আইয়ূহার রাজুল ছিল।
বরং ‘ইয়া রাজুল’ মা’রেফা হওয়ার ভিন্ন কারণ
রয়েছে যা নির্ভরযোগ্য।… ‘ইয়া নবী’
বাক্যটা মূলতঃ ‘ইয়া আইয়ূহান্নাবী’ ছিল বলে প্রমাণ
করার চেষ্টা করেছেন সে যুক্তিটাকেই
আরবী গ্রামারের তত্ত্ববিদগণ নড়বড়ে বলে নাকচ
করে দিয়েছেন।”
বাহ! কী অদ্ভুত যুক্তি! কী আজগুবি দলিল! তথাকথিত
নামধারী তালিবউদ্দিন, ওলীপুরীর
পক্ষে উকালতী করতে গিয়ে নজদী ওহাবী চিন্তাধারার
চশমা চোখে নিয়ে শরীয়তসম্মত
মাহফিলে মিলাদ শরীফে পঠিত সালাত ও
সালামের সুন্দর বিশুদ্ধ ছন্দকে ভুল প্রমাণ করার
নিমিত্তে কতো না আদাজল খেয়ে লেগেছেন। বড়ই
পরিতাপের বিষয় এখানে লিখক,
“শরহে জামী” কিতাবের ২৭০ পৃষ্ঠায় শুধু
১১নং পার্শ্বটিকার কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু মূল
কিতাবের আরবী এবারত উল্লেখ করেননি। কারণ
কিতাবের মূল এবারত উল্লেখ
করলে একদিকে অর্থকে বিকৃত করা যাবে না,
অপরদিকে সরলমনা সুন্নী মুসলমানকে বিভ্রান্ত
করাও সহজ হবে না। এহেন কু-চিন্তার তাড়নায় সু-চতুর
লেখক মূল আরবী এবারত উল্লেখ না করে বরং মূল
এবারতের অর্থকে বিকৃত করে হাস্যকর
বাহাদুরী প্রদর্শন করেছেন।
পাঠকগণের সুবিধার্থে আমরা “শরহে জামী”
কিতাবের ২৭০ পৃষ্ঠার মূল এবারত
এবং ১১নং হাশিয়া বা পার্শ্বটীকার এবারত
নিম্নে পেশ করলাম। যথা: (নেদা) বা সম্বোধনসূচক
শব্দ দ্বারা (মুনাদা) বা সম্বোধনকৃত ব্যক্তি/বস্তু
তখনই মারেফা হয়ে থাকে, যখন এ (নেদা)
বা সম্বোধনসূচক শব্দ দ্বারা (মুনাদা) বা সম্বোধনকৃত
ব্যক্তি/বস্তুকে নির্দিষ্ট
করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়ে থাকে। যেমন
(ইয়া রাজুলু); তবে (ইয়া রাজুলান) এর ব্যতিক্রম,
কেননা এখানে (মুনাদা) বা সম্বোধনকৃত ব্যক্তি/
বস্তুকে অনির্দিষ্ট রাখা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, কারণ
এটা নাকেরা বা অনির্দিষ্ট। এটি মুতায়াখখিরীন
বা পরবর্তী নাহুবিদগণের অভিমত। পক্ষান্তরে,
মুতাকাদ্দিমীন বা পূর্ববর্তী নাহুবিদগণ (মুয়াররফ
বিন নেদা) অর্থাত্, হরফে নেদার
দ্বারা নাকেরা যে মারেফা করা হয় তা উল্লেখ
করেন নাই। কারণ পূর্ববর্তী নাহুবিদগণের
মতে (ইয়া রাজুলু) মূলত (ইয়া আয়্যুহার রাজুলু) ছিলো,
এর দিকে তারা রুজু
করেছেন। অর্থাত্, পূর্ববর্তী নাহুবিদগণ (ইয়া রাজুলু)
মধ্যে যে (রাজুলু) শব্দটি রয়েছে তা মূলতঃ (আররাজুলু)
ছিল বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
(শরহে জামী-২৭০পৃঃ দ্রঃ)
এ প্রসঙ্গে শরহে জামী কিতাবের ২৭০পৃষ্ঠায়
১১নং পার্শ্বটিকায় আরো লিখা রয়েছে: যেমন
(ইয়া রাজুলু) মূলত (ইয়া আইয়্যুহার রাজুলু) ছিল।
(আররাজুলু)-এর পূর্বে হরফে নেদা (ইয়া) আসার
কারণে আরবী গ্রামারের কায়দা মোতাবিক নেদা ও
মুনাদার মধ্যখান (আইয়্যুহা) যুক্ত করা হয়েছিল।
(ইয়া আইয়্যুহার রাজুলু) রূপধারণ করলো। অতঃপর
(আররাজুলু)-এর আলিফ ও লাম এবং (আইয়্যু)
শব্দকে বিলুপ্ত করা হয়েছে – (লিকাছ রাতিল
ইছতেমাল) অধিক ব্যবহারের কারণে। অতএব,
(ইয়া আইয়্যুহার
রাজুলু) থেকে (ইয়া রাজুলু) হয়ে গেল। উল্লেখ্য যে,
“হেদায়াতুন্নাহু” আরবী শরাহ “দারায়েতুন্নাহু”
নামক গ্রন্থের ১৮৩ পৃষ্ঠায়ও অনুরূপ
কায়দা লিখা রয়েছে। অর্থাত্, (ইয়া রাজুলু) যেহেতু
মূলত (ইয়া আয়্যুহার রাজুলু) ছিলো,
সে কারণে মুতাকাদ্দিমীন বা পূর্ববর্তী নাহুবিদগণ
(মুয়াররফ বিন নেদা)-কে মারেফা-এর
প্রকারভেদে উল্লেখ করেন নাই।
সূধী পাঠকবৃন্দ! উপরোক্ত আরবী গ্রামারের
দলিলভিত্তিক এবারত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত
হলো যে (ইয়া রাজুলু) মুলত ছিলো (ইয়া আয়্যুহান
রাজুলু); ঠিক তেমনিভাবে (ইয়া নবী) মূলত ছিল
(ইয়া আয়্যুহান্নাবীউ); এয়া রাসূলু মূলত ছিল
(ইয়া আয়্যুহার রাসূলু)। এটাই হলো আরবী গ্রামারের
তত্ববিদগণের পরিভাষা।
এটাকে বিনা দলিলে নড়বড়ে বলা অথবা খোঁড়া যুক্তির
জোড়াতালি বলে উপহাস করা নিরেট মূর্খ
বা জাহিলের কাজ। কোন আলেমের কাজ
হতে পারেনা। সত্যিকার আলেমের কাজ
হলো নির্ভরযোগ্য দলিল দিয়ে নিজ দাবী প্রমাণ
করা। দলিলবিহীন কারো কোন
দাবী বা কথা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
দেওবন্দী ওহাবী ওলীপুরীর দোসর তথাকথিত,
নামধারী মুফতী তালিবউদ্দিন সাহেব
“ইয়া নবী সালাম আলাইকা” পুস্তকের ২৮ পৃষ্ঠায়
প্রসিদ্ধ আরবী গ্রামারের কিতাব “শরহে জামী”-এর
ব্যাখ্যাগ্রন্থ “সাওয়ালে বাসূলী” গ্রন্থের ৫৭৭ পৃষ্ঠার
যে এবারতটুকু উল্লেখ করেছেন, তাতেও তাঁর এ
দাবী প্রমাণিত হয় না। কারণ
তিনি “সাওয়ালে বাসূলী” কিতাবের এবারতের
অপব্যাখ্যা করে তাঁর দাবী প্রমাণ করার ব্যর্থ
চেষ্টা করেছেন। নিম্নে ’সাওয়ালে বাসূলী’-এর সঠিক
ব্যাখ্যা প্রদত্ত হলো: অর্থাত্, বাসূলী গ্রন্থকার
বলেন, নাহুবিদগণের
(ইছতেলাহ) বা পরিভাষা হলো, (ইয়া রাজুলু) মূলত
ছিলো, (ইয়া আইয়্যুহার রাজুলু) কিন্তু এ কায়দার
হাকীকত সম্বন্ধে আমাদের কোন জ্ঞান নেই যে,
(ইয়া রাজুলু) মূলত যে ছিলো (ইয়া আইয়্যুহার রাজুলু)।
উপরোক্ত বাসূলী গ্রন্থকার এ দাবী করেন নাই
যে নাহুবিদগণের (ইছতেলাহ)
বা পরিভাষা (ইয়া রাজুলু) মূলতই
যে ছিলো (ইয়া আইয়্যুহার রাজুলু) ইহা অশুদ্ধ।
বরং তিনি শুধু এতটুকু বলেছেন যে, এ কায়দা উনাদের
জানা নেই। তদুপুরি তিনি ইহা নাহুবিদগণের
পরিভাষা বলেও স্বীকার করেছেন। উপরন্ত
“শরহে জামী”
গ্রন্থের ২৭০ পৃষ্ঠায় ১১নং পার্শ্বটীকার মূল
আরবী এবারতে যা রয়েছে,
তা আমরা ইতিপূর্বে স্ববিস্তার আলোচনা করেছি।
তাঁর মূল কায়দা হলো, (লিকাছরাতিল ইছতেমাল)
অর্থাত্, অধিক ব্যবহারের কারণে, (ইয়া আইয়্যুহার
রাজুলু)-কে (ইয়া রাজুলু) বলা হয়ে থাকে।
নাহুবিদগণের ইস্তেলা বা পরিভাষা (রাজুল)
বলতে ইহা (আররাজুল)’ই ছিলো,যা পূর্ব থেকেই
মা’রেফা। এখন একটি প্রশ্ন আসতে পারে,
পরবর্তী নাহুবিদগণ (উররিফা বিননেদা) যেমন,
নেদা দ্বারা নাকেরা মা’রেফা হয়ে থাকে বলে মা’রেফার
প্রকারভেদে গণ্য করবেন কেন? এতে কি পূর্ববর্তী ও
পরবর্তী নাহুবিদগণের মধ্যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত
হয়? না, নিশ্চয়ই হয় না, এজন্য যে,
পরবর্তী নাহুবিদগণের দৃষ্টিতে মুনাদা মা’রেফা হয়
শর্ত সাপেক্ষে, অপর দিকে বিশেষ
ক্ষেত্রে মুনাদা নাকেরাও হয়ে থাকে। যেমন,
(ইয়া রাজুলান খুজ-বিয়াদী)। দেখুন, এখানে “ইয়া”
হরফে নেদা আসার পরও মুনাদা (রাজুলান)
মা’রেফা হয় নাই, বরং নাকেরাই রয়ে গেলো।
পক্ষান্তরে, (ইয়া রাজুলান)-এর মধ্যে “ইয়া”
হরফে নেদা আসার কারণ (রাজুল) মুনাদাকে এই
শর্তে মা’রেফার মধ্যে গণ্য করা হলো, মুতাকাল্লিম
বা বক্তা (রাজুল)-কে মা’রেফা বা নির্দিষ্ট
ইচ্ছা পোষণ করার কারণে। এজন্যই,
মুল্লা জামী শরহে জামীতে লিখেছেন, যখন
বক্তা তাঁর মুখাতাব বা সম্বোধনকৃত ব্যক্তি নির্দিষ্ট
করার ইচ্ছা পোষণ করে থাকে। যেমন, (রাজুল)
বলতে এখানে (আররাজুল)’ই ছিলো।
তবে পরবর্তী নাহুবিদগণ (উররিফা বিননেদা)-
কে মা’রেফা-এর প্রকারভেদে শর্তাধীন উল্লেখ
করেছেন,যাতে একে মা’রেফা বলে বুঝতে সহজ হয়।
অন্যথায় মুতাকাদ্দিমীন বা পূর্ববর্তী নাহুবিদগণ
“নেদা”
দ্বারা মুনাদা যে মা’রেফা হয়ে থাকে তা মা’রেফার
প্রকারভেদে উল্লেখই করেন নাই। নাহু-
শাস্ত্রে তথা আরবী গ্রামারে যাদের পরিপূর্ণ
জ্ঞান নেই, তারাই কেবল আদার
বেপারী হয়ে জাহাজের খবর রাখার মত আচরণ করে,
তাই এ সহজ বিষয়টিও তাদের
বোধগম্য নয়। অবাক লাগে তার পরেও আবার
পাণ্ডিত্যের বাহাদুরী! এতে হাঁসি পায়, পাশা-
পাশি লজ্জাও লাগে। অতএব, পূর্ববর্তী নাহুবিদগণের
মতেই, “ইয়া নবী” “ইয়া রাসূল” বলা মুনাদা হবার
কারণে শুধু মারেফা হয়নি, বরং পূর্ব থেকেই
মারেফা হিসেবে ছিল। মুতায়াখখিরীনগণ শুধু
বুঝানোর জন্য তাকে “ইয়া” যুক্ত করার
পূর্বে নাকারা বলেছেন। কিন্তু মুতাকাদ্দিমীন
বা পূর্ববর্তীগণের কথাই আমাদের নিকট অগ্রগণ্য। এ
হিসেবে মীলাদ শরীফে পঠিত সালাত ও সালামের
শ্লোকে অধিক ব্যবহার করার দরুণ “ইয়া নবী”
“ইয়া রাসুল”
বলা হয়ে থাকে। তার মর্ম পূর্ব থেকেই
মারেফা বা সুপরিচিত। আরবি গ্রামারের এরূপ
একটি সূক্ষ্ম ব্যাপারে পূর্ববর্তী নাহুবিদগণের
মতামতকে উপেক্ষা করে এবং পরবর্তী নাহুবিদগণের
মতামতকে বিকৃত
করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা কাদিয়ানী দোসর
কাজ্জাব ওলীপুরী ওহাবীদের কাজ। কারণ
তারা বেশী বেশী দরূদ ও সালাম পড়তে অনাগ্রহী ও
নারাজ। এ জন্যই “দেওবন্দীরা” বিভিন্ন অজুহাতও
তালাশ করে।
নাহু-ছরফ তথা আরবী গ্রামারে জ্ঞানী আমাদের
অনেক সুন্নী ওলামায়ে কেরাম পৃথিবীতে এখনও
বেঁচে আছেন। আশা করি একটু তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিলেই
“ওলীপুরী – তালিবউদ্দীন”গংদের
প্রতারণা ধরা পড়বে। কেননা, হক্বকে কোনো দিন
গোপন রাখা যায় না। এই পোষ্টের
মাধ্যমে “ইয়া নবী সালামু আলাইকা” বিষয়ক
আলোচনা এবং দলিল-আদিল্লাহ
সংক্ষিপ্তভাবে শেষ হলো। যদি আরো প্রয়োজন হয়
ইনশাআল্লাহুতা’লা এই বিষয়
নিয়ে আরো আলোচনা পেশ করবো।
সবাইকে ধন্যবাদ।
No comments