ইসকাত (নামায রোজার কাফফারা) এর আলোচনা

ইসকাত (নামায রোজার কাফফারা) এর আলোচনা

        

এখানে তিনটি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে-ইসকাতের অর্থ ইসকাত করার সঠিক নিয়ম এবং এর প্রমাণ। যেহেতু কতেক লোক ইসকাতকে সম্পুর্ণ অস্বীকার করে এবং নানা রকম আপত্তি উত্থাপন করে, সেহেতু এ আলোচনাকেও দু’টি অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে উপরোক্ত তিনটি বিষয়ে আলোকপাত এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে উত্থাপিত আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে।

প্রথম অধ্যায়

ইসকাতের নিয়ম ও এর প্রমাণ

        

এ অধ্যায়ে ইসকাতের অর্থ, এর সঠিক নিয়ম, এর উপকার এবং এর প্রমাণ-এ চারটি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ইসকাতের শাব্দিক অর্থ হলো-ফেলে দেয়া। ফিকহ শাস্ত্রের পারিভাষিক অর্থ হলো মইয়তের জিম্মায় যে সব আহকামে শরীয়ত অনাদায়ী রয়ে যায় এগুলো থেকে ওকে দায় মুক্ত করা।


✧ যেমন- وجيزالصراط গ্রন্থে উল্লে­খিত আছে-

اسقاط آں چيز است كه دور كرده شود از ذمه ميت به ايں قدر كه ميسرشود

-মইয়তকে যতটুকু সম্ভব দায়মুক্ত করাকে ইসকাত বলা হয়।’’

ইসকাতের উপকার হলো- মুসলমানের জিম্মায় শরীয়তের অনেক আহকাম ইচ্ছাকৃত কারণে, অবহেলা জনিত বা ভুলবশতঃ থেকে যায়, যা সে স্বীয় জীবনে আদায় করতে পারেনি এবং মৃত্যুর পর শাস্তির সন্মুখীন হয়েছে। তখন তো আর আদায় করার ক্ষমতা নেই এবং রেহাই পাবারও উপায় নেই। পবিত্র শরীয়ত এ অসহায় মৃত ব্যক্তির সাহায্যার্থে কিছু নিয়ম বর্ণনা করেছেন। যদি মৃত ব্যক্তির অলী সেই নিয়ম অনুসারে আমল করে, তাহলে মৃত বেচারা পেতে পারে। এ নিয়মটার নাম ইসকাত। এটা আসলে মইয়তের জন্য এক প্রকার সাহায্য। দেওবন্দী ওহাবীরা যেভাবে জীবিত মুসলমানের শত্রু, তদ্রুপ মৃতদেরও শত্রু। তারা মইয়তের উপকার করা থেকে লোকদেরকে বাধা দেয়। মোট কথা মৃত্যুর পরও তাদের পিছু ছাড়ে না। ইসকাতের নিয়ত হচ্ছে-প্রথমে মৃত ব্যক্তির বয়স ব্যক্তির নির্ণয় করুন। অতঃপর এর থেকে মহিলার বেলায় নয় বছর এবং পুরুষের বেলায় বার বছর বাদ দিন। এখন যত বছর অবশিষ্ট আছে, এতে হিসাব করে দেখুন কত দিন সে বেনাযামী বা বেরোযাদার ছিল। অথবা নামাযের উপযুক্ত হওয়ার পর কি পরিমাণ সে নামায পড়েনি এবং এর কাযা আদায় করেনি। এর একটা আনুমানিক হিসাব নির্ণয় করুন। সেই হিসাব অনুপাতে প্রতি ওয়াক্ত নামাযের জন্য ১৭৫ টাকায় যতগুলো আট আনি হয়, সেই ওজনের গম দান করে দিন। অর্থাৎ ফিতরার জন্য যে হার নির্ধারিত, নামায-রোযার ফিদয়ার জন্যও তা প্রযোজ্য। তাহলে এক দিনে ছয় নামাযের (পাঁচ ফরয, এক ওয়াজিব-বিতির) জন্য ফিদয়া আসে প্রায় সের গম, এক মাসের জন্য আসে প্রায় নয় মণ গম এবং বছরের জন্য আসে প্রায় ১০৮ মণ গম। যদি কারো জিম্মায় বিশ বছরের নামায অনাদায় থেকে যায়, তাহলে কয়েক হাজার মণ গম খয়রাত করতে হবে। হয়ত কোন বড় ধনীর পক্ষে তা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু গরীবের জন্য তা অসম্ভব। তাদের জন্য একটি উপায় হলো মইয়তের অলি সামর্থানুসারে গম বা এর সমতুল্য টাকা নিবে এবং কোন মিসকিনকে দিয়ে দিবে। সেই মিসকিন আবার অন্য মিসকিনকে বা স্বয়ং মালিককে দান করবে। সে পুনরায় সেই ফকীরকে সাদকা দিবে। প্রত্যেক বার সাদকায় এক মাসের নামাযের ফিদায়া আদায় হয়ে যাবে। এ ভাবে ১২ বার সদকা করলে, এক বছরের ফিদয়া আদায় হয়ে গেল। এভাবে কয়েকবার আদান প্রদান করলে সম্পূর্ণ ফিদয়া আদায় হয়ে যাবে। নামাযের ফিদায়া আদায় করার পর এভাবে রোযার ফিদয়া আদায় করুন। এতে আশা করা যায় দয়াময় আল্লাহ তা’আলা মাফ করবেন। এটাই হচ্ছে ইসকাতের সঠিক নিয়ম। পাঞ্জাবে সাধারণভাবে একটি প্রথা প্রচলিত আছে যে মসজিদ থেকে এক কপি কুরআন শরীফ সংগ্রহ করে এর উপর একটি টাকা রাখে এবং কয়েক জন লোক এতে হাত লাগায়। অতঃপর পুনরায় কুরআন শরীফটা মসজিদে ফেরত দেয়। এ রকম করার দ্বারা নামাযের ফিদয়া আদায় হবে না। কুরআন অমূল্যবান। যদি কুরআন শরীফের একটি কপি খয়রাত করে দেয়া হয়, তাহলে সব নামাযের ফিদয়া আদায় হয়ে গেল। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। কেননা এখানে তো কুরআনের কাগজ ও মুদ্রণ খরচটাই বিবেচ্য। যদি এ কপিটার দাম দুই টাকা হয়, তাহলে দু’টাকা দানেরই ছওয়াব পাবে। তা নাহলে ওই সমস্ত ধনীরা যাদের হাজার হাজার টাকা যাকাত ওয়াজিব হয়, তারা এত টাকা খরচ করতে যাবে কেন, কেবল একটি কুরআন শরীফ দান করে দিলেই হলো। মোট কথা হলো এ নিয়ম বিশুদ্ধ নয়। অর্থাৎ এর দ্বারা ইসকাতের উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে না। তবে একে হারাম বলা যাবে না। কোন কিছুকে বিনা দলীলে কেবল নিজস্ব রায় দ্বারা হারাম বলা দেওবন্দী মহারথীদের কাজ।

        

বিঃদ্রঃ-আমি ফিদয়ার যে পরিমাণ বর্ণনা করেছি অর্থাৎ ছয় নামাযের জন্য বার সের গম, তা প্রত্যেক জায়গার জন্য প্রযোজ্য নয়। এক নামাযের ফিদয়া হচ্ছে ১৭৫ টাকা পরিমাণ আট আনি ওজনের গম। সেই অনুপাতে নিজ নিজ এলাকায় প্রচলিত পরিমাপ মুতাবিক আদায় করতে হবে।

        

ইসকাতের প্রথম অধ্যায়কে তিনটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম পরিচ্ছেদে হারাম থেকে রেহাই, ছওয়াব অর্জন বা শরীয়তের কোন প্রয়োজনীয় কাজ পূর্ণ করার জন্য শরয়ী হীলা জায়েযের প্রমাণ।

        

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে নামাযের ফিদয়া জিনিস দ্বারা আদায় হওয়ার প্রমাণ এবং তৃতীয় পরিচ্ছেদে স্বয়ং ইসকাতের প্রমাণ দেয়া হয়েছে।


No comments

Powered by Blogger.