ইমাম মুসলিমের ছেলেদের শাহাদাত

"কারবালার করুণ কাহিনী-৭"

--মজলুমের ছেলেদ্বয়ের শাহাদাত--

হযরত ইমাম মুসলিম (রাদি আল্লাহ আনহু) কূফা যাবার সময় তাঁর আদরের শিশু সন্তান হযরত ইব্রাহিম ও হযরত মুহাম্মদ (রাদি আল্লাহ আনহু) কেও সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইবনে যিয়াদ ইমাম মুসলিমকে কতলের পর জানতে পারলো যে ইমাম মুসলিমের দু’ছেলে এই শহরে রয়েছে। ইবনে যিয়াদ সঙ্গে সঙ্গে ফরমান জারী করলো যে, যে মুসলিম ছেলেদ্বয়কে ঘরে স্থান দিবে ওকে কতল করা হবে। এ সময় ছেলেদ্বয় কাজী শরীহের ঘরে ছিল। কাজী সাহেব ছেলেদ্বয়কে সামনে ডাকলেন এবং অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। ছেলেদ্বয় জিজ্ঞেস করলেন, জনাব আপনি কাঁদছেন কেন? আমরা কি এতিম হয়ে গেছি? কাজী সাহেব কান্না সংবরণ করে বল্লেন, আল্লাহ্ তোমাদের ধৈর্য দান করুক, বাস্তবিকই তোমরা এতিম হয়ে গেছ। এ খবর শুনে শিশুদ্বয় চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। কাজী সাহেব ওদেরকে সান্তনা দিয়ে বললেন,বাবারা নিশ্চুপ থেকো,ইবনে যিয়াদের লোকেরা তোমাদের তালাশে আছে, আমি আমার ও তোমাদের নিরাপত্তার ভয় করছি। আমি তোমাদেরকে কারো সাথে মদিনা মনোয়ারা পাঠিয়ে দিতে মনস্থ করছি । ছেলেদ্বয় একথা শুনে ইবনে যিয়াদের ভয়েচুপ হয়ে গেল।
কাজী সাহেবের তাঁর ছেলে আসাদকে ডেকে বললেন,আজ একটি কাফেলা ইরাকী গেইট দিয়ে মদীনা যাচ্ছে। তুমি ছেলেদ্বয়কে নিয়ে কাফেলার কোন একজন ভালো মানুষের হাতে দিয়ে এসো যেন ওদেরকে মদিনা পৌছে দেয়। আসাদ যখন ছেলেদ্বয়কে নিয়ে ইরাকী গেটে গেল, তখন কাফেলা ইরাকী গেইট অতিক্রম করে চলে গিয়েছিল। অবশ্য কাফেলার মশাল দেখা যাচ্ছিল। আসাদ ছেলেদ্বয়কে বললো, ঐ কাফেলা দেখা যাচ্ছে, তোমরা দৌঁড়ে গিয়ে ওদের সাথে মিলিত হও। অসহায় ছেলেদ্বয় কাফেলার দিকে দৌঁড় দিলেন কিন্তু কাফেলা অনেক দূরে চলে গিয়েছিল। ফলে ছেলেদ্বয় কাফেলার নাগাল পেল না, রাত্রির অন্ধকারে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিল। সারা রাত এদিক ওদিক ঘুরতে রইল। ভোর হয়ে আসলে একটি ঝর্ণা তাদের নজরে পড়ে। তারা ক্লান্ত হয়ে ঝর্ণার পাশে বসে পড়লো। ঘটনাক্রমে এক বাঁদী সেই ঝর্ণা থেকে পানি নিতে এসে তাদের দেখে ফেললো এবং যখন জানতে পারলো যে এরা ইমাম মুসলিমের অসহায় এয়াতীমের ছেলেদ্বয়, তখন সে ওদের প্রতি বড় সহানুভূতিশীল হলো এবং বললো আমার সাথে চলো। আমার গৃহকর্তী আহলে বায়াতের ভক্ত,তোমাদেরকে পেয়ে দারুন খুশী হবেন। কোন ভয় কর না, আমার সাথে চলো। অনিদ্রা ও অনাহারে কাতর ছেলেদ্বয় ওর সাথে গেল। যখন ঘরে পৌঁছলো এবং গৃহকর্তী জানতে পারলো যে এরা মুসলিমের এতিম সন্তান তখন দৌঁড়ে এসে ওদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরে ওদের এই দুর্দশার জন্য কেঁদে দিল। অতঃপর ওদেরকে পানাহার করায়ে একটি কামরায় শোয়ায়ে দিল।
খোদার কি লীলা! মহিলাটা ছিল খোদাভীরু ও আহলে বায়েতের প্রতি অনুরক্ত কিন্তু হারেছ নামে ওর স্বামীটা ছিল খোদাদ্রোহী ও আহলে বায়তের দুশমন। ইবনে যিয়াদ থেকে পুরস্কারের লালসায় সে সারা দিন ছেলে দুইটির সন্ধানে ছিল। কী অদ্ভুত ব্যাপার! যে ছেলেদ্বয় সন্ধানে সে সারা দিন ব্যস্ত ছিল সে ছেলেদ্বয় ওর ঘরে আরাম করছে। রাতে যখন এ জালিম ঘরে এলো ওর স্ত্রী তারাহুরা করে খাবার দিল, যাতে সাহসা শুয়ে পড়ে এবং ছেলেদ্বয়ের ব্যাপারে কোন কিছু টের না পায়। সারাদিনের ক্লান্তিতে বিছানায় শোয়া মাত্র সে ঘুমিঢে পড়লো।
কিছু রাত পাড় হওয়ার পর বড় ভাই ছোট ভাইকে জাগিয়ে বললো,ভাই আমি এখন স্বপ্ন দেখলাম যে আমাদের আব্বাজান বেহেস্তে হুজুর নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে ঘুরা ফেরা করছেন এবং হুজুর নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওনাকে বলছেন, হে মুসলিম তুমি নিজে চলে এলে কিন্তু ছেলেদ্বয়কে জালিমের মধ্যে ছেড়ে আসলে? আব্বাজান আরজ কররেন ইয়া রাসূলাল্লাহ্! ওরাও আসতেছে সকাল হবার আগেই এসে পৌঁছাবে।
ছোট ভাই বললো, ভাইজান আমিও একই স্বপ্ন দেখেছি। তখন উভয়ে আত্মহারা হয়ে কেঁদে উঠলো। ওদের কান্নায় হারেছের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ওই জালিম জেগে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলো,কান্নার আওয়াজ কোথা থেকে আসছে? ঘরে কী কেউ লুকিয়ে আছে? স্ত্রী হতভম্ব হয়ে গেল এবং ঘাবড়িয়ে গেল আল্লাহই জানে এখন সে কি করে? হারেছ উঠলো এবং বাতি জ্বালিয়ে ভিতরের কামরায় গেল এবং ইয়াতীম ছেলেদ্বয়কে ক্রন্দনরত অবস্হায় দেখে জিজ্ঞেস করলো,তোমরা কে? ছেলেদ্বয় পরিস্কার বলে দিল। আমরা ইমাম মুসলিমের সন্তান। হারেছতো আশ্চর্য ও আনন্দে আত্মহারা। কারণ যাদের সন্ধানে সে সারা দিন ব্যস্ত, তারা আরামে তার ঘরে শায়িত। এ জালিম আর দেরী করেনি, ওদেরকে টেনে ঘর থেকে বের কররলো। ওর স্ত্রী বেচারী ওর হাত পা ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করলো ছেলেদ্বয়কে রক্ষা করতে কিন্তু জালিম কোন কথাথা শুনলো না। সে জালিম ওদেরকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ফোরাদ নদীর দিকে নিয়ে গেল। ছেলেদ্বয় যখন বুঝতে পারলো যে এ জালিম ওদেরকে হত্যা করবে, তখন তারা বললো, আমরা প্রবাসী এয়াতীম, আমরা কি আপরাধ করেছি আমাদেরকে হত্যা করছছ? এ জালিম কোন কথা শুনলো না। একে একে উভয়কে শহীদ করে দিল। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলািহে রাজেউন)
---(তাজকিরা-৪৮পৃঃ)

No comments

Powered by Blogger.