যাদু-টোনা কি?
প্রশ্নঃ যাদু-টোনা কি? শুনেছি কোন এক মহিলা যাদু-টোনার দ্বারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা‘র ক্ষতি করেছিল; এটা কতটা সত্য। যাদু-টোনা দ্বারা নর-নারীর বিয়ে বন্ধ করে রাখা বা মানুষের অন্য কোন ক্ষতি করা কি সম্ভব? যাদু-টোনা দ্বারা যারা মানুষের ক্ষতি করে তাদের জন্য মহান আল্লাহ্ কি শাস্তি রেখেছেন। বিস্তারিত আলোচনা করে চিরবাধিত করবেন।
উত্তরঃ যাদু-টোনা আরবীতে সেহর (سِحْرٌ) বলা হয়। সেহেরের প্রকৃত সংজ্ঞা সম্পর্কে তাজুল উরূস গ্রন্থ প্রণেতা বলেন:
واصل السحر صرف الشئ عن الحقيقة الى غيره فكان الساحر لما ارى الباطل فى صورة الحق وحيل الشئ على غير حقيقه فقد سحر الشئ عن وجهه اى صرفه
অর্থাৎ ‘‘সেহের বা যাদুর প্রকৃত অর্থ হল কোন কিছুর প্রকৃতি পরিবর্তন করে দেয়া। যখন যাদুকর মিথ্যাকে সত্য করে দেখায় অথবা কোন কিছু আপন প্রকৃতির বিপরীত দৃষ্টিগোচর হয়, তখন যাদুকর ওই বস্তুর প্রকৃত (হাকীকত) পরিবর্তন করে দিয়েছে বলে মনে করতে হবে।
কোরআন-হাদীসের পরিভাষায়, যাদু এমন অদ্ভুত কর্মকাণ্ড, যাতে কুফর, শির্ক এবং পাপাচার অবলম্বন করে জ্বীন ও শয়তানকে সন্তুষ্ট করে তাদের সাহায্য নেয়া হয়। যেহেতু সর্বপ্রথম পৃথিবীতে যাদুবিদ্যা শয়তানই মানুষকে শিক্ষা দিয়েছে, সেহেতু যাদুর কুপ্রভাব বিদ্যমান। তাই, যেসব যাদুতে ঈমানের পরিপন্থী কথাবার্তা এবং কাজকর্ম অবলম্বন করা হয়, তা অবশ্যই কুফর। তাই এ প্রকার যাদুবিদ্যা শিক্ষা করা হারাম। আর যাদুর প্রভাব বিনষ্ট করার জন্য, মানবজাতির কল্যাণের নিয়্যতে যাদুবিদ্যা শিক্ষা করা জায়েয, তবে এতে কুফরী শব্দাবলী থাকতে পারবে না। যাদু দ্বারা মানুষকে কষ্ট দেয়া কবীরা গুনাহ। ইমামে আযম রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মতে যাদুকরের শাস্তি প্রাণদণ্ড। তার তাওবা কবূল করা হবে না। যেমন রূহুল মাআনীতে উল্লেখ আছে যে, المشهور عنه ان الساحر ليقتل مطلقا … ولايقبل قوله اتوب عنه অর্থাৎ ইমাম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে এ বর্ণনা প্রসিদ্ধি আছে যে, যাদুকরকে কতল করা হবে। তার তাওবাহ্ কবূল করা হবে না।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সাতটি কবীরাহ্ গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তন্মধ্যে যাদুও একটি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন حد الساحر ضربه بالسيف অর্থাৎ ‘যাদুকরের শাস্তি হল তরবারি দিয়ে হত্যা করা’ (তিরমিযী)। হযরত আবু মূসা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন ثلاثة لايدخلون الجنة مدمن خمر وقاطع رحم ومصدق بالسحر অর্থাৎ তিন শ্রেণীর মানুষ বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবে না। ১. শরাবখোর বা মদ্যপায়ী। ২. রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্নকারী এবং ৩. যাদুর প্রতি আস্থা স্থাপনকারী। -[মুসনাদে আহমদ]
সুতরাং, যাদু নিজে করা, অন্যের ফৎতূগ্ধফ যাদু করানো উভয় হারাম ও কবীরাহ্ গুনাহ্। এমনকি শবে কদর ও শবে বরাতের মত পূণ্যময় রাতেও যাদুকরের গুনাহ্ ক্ষমা করা হয় না। আল্লাহর দরবারে তার তাওবা কবূল হয় না। যদি শবে বরাত ও শবে কদরের পূর্বে খালিস নিয়্যতে তাওবা না করে। তাই বান-টোনা, যাদু ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য বাঞ্ছনীয়।
উল্লেখ্য যে, পবিত্র কোরআনের আয়াত অথবা আল্লাহর নামে তাবিজ, ঝাড়-ফুঁক ইত্যাদি যা মানুষের উপকারার্থে করা হয় তা যাদু-টোনার অন্তর্ভূক্ত নয়। তা করা জায়েয।
হিজরী ৭ম সালে হুদায়বিয়ার সন্ধির পর ইহুদী নেতৃবৃন্দ লবীদ ইবনে আসাম ও তার কন্যাগণের মাধ্যমে হুজূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে যাদু করেছিল। যাদুর প্রভাবে হুজূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায়, এ অসুখ ছ’মাস পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। আল্লাহ্ তাঁ‘আলা তাঁর প্রিয় রসূলকে ইহুদীদের এ যাদুর কথা জানিয়ে দেন। হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম আল্লাহর পক্ষ হতে সূরা নাস ও সূরা ফালাক্ব নিয়ে অবতীর্ণ হন। এ দু’টি সূরার মাধ্যমে যাদুর প্রভাব থেকে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্তি লাভ করেন।
সুতরাং নবীর শরীর মোবারকেও যাদুর প্রভাব পড়া নুবুয়্যতের মর্যাদার পরিপন্থী নয়। এটা তীর-বল্লম ও তালোয়ারের আঘাতের মতই। সুতরাং, যাদুর প্রভাব দূরীভূত করার জন্য তাবীজ- দুআর আশ্রয় নেয়াও জায়েয। তদুপরি হুজূরে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর নূরানী শরীরে যাদুর কুপ্রভাব প্রতিফলন হওয়া উম্মতের তাজ্ঞলীম বা শিক্ষার জন্য। যেমন রসূলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর খানা-পিনা, ঘর-সংসার ইত্যাদি করা উম্মতের তাজ্ঞলীম তথা শিক্ষার জন্যই।
[তাফসীরে রূহুল মা'আনী, তাফসীরে খাযাইনুল ইরফান, তাফসীরে নূরুল ইরফান, তাফসীরে জিয়াউল কোরআন, কিতাবুল কাবায়ির কৃত ইমাম আয্-যাহাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং আহকামুল কোরআন কৃত ইমাম আবু বকর জাস্সাস রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি।]
[সূত্র. যুগ-জিজ্ঞাসা, পৃ. ২৯-৩০]
উত্তরঃ যাদু-টোনা আরবীতে সেহর (سِحْرٌ) বলা হয়। সেহেরের প্রকৃত সংজ্ঞা সম্পর্কে তাজুল উরূস গ্রন্থ প্রণেতা বলেন:
واصل السحر صرف الشئ عن الحقيقة الى غيره فكان الساحر لما ارى الباطل فى صورة الحق وحيل الشئ على غير حقيقه فقد سحر الشئ عن وجهه اى صرفه
অর্থাৎ ‘‘সেহের বা যাদুর প্রকৃত অর্থ হল কোন কিছুর প্রকৃতি পরিবর্তন করে দেয়া। যখন যাদুকর মিথ্যাকে সত্য করে দেখায় অথবা কোন কিছু আপন প্রকৃতির বিপরীত দৃষ্টিগোচর হয়, তখন যাদুকর ওই বস্তুর প্রকৃত (হাকীকত) পরিবর্তন করে দিয়েছে বলে মনে করতে হবে।
কোরআন-হাদীসের পরিভাষায়, যাদু এমন অদ্ভুত কর্মকাণ্ড, যাতে কুফর, শির্ক এবং পাপাচার অবলম্বন করে জ্বীন ও শয়তানকে সন্তুষ্ট করে তাদের সাহায্য নেয়া হয়। যেহেতু সর্বপ্রথম পৃথিবীতে যাদুবিদ্যা শয়তানই মানুষকে শিক্ষা দিয়েছে, সেহেতু যাদুর কুপ্রভাব বিদ্যমান। তাই, যেসব যাদুতে ঈমানের পরিপন্থী কথাবার্তা এবং কাজকর্ম অবলম্বন করা হয়, তা অবশ্যই কুফর। তাই এ প্রকার যাদুবিদ্যা শিক্ষা করা হারাম। আর যাদুর প্রভাব বিনষ্ট করার জন্য, মানবজাতির কল্যাণের নিয়্যতে যাদুবিদ্যা শিক্ষা করা জায়েয, তবে এতে কুফরী শব্দাবলী থাকতে পারবে না। যাদু দ্বারা মানুষকে কষ্ট দেয়া কবীরা গুনাহ। ইমামে আযম রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মতে যাদুকরের শাস্তি প্রাণদণ্ড। তার তাওবা কবূল করা হবে না। যেমন রূহুল মাআনীতে উল্লেখ আছে যে, المشهور عنه ان الساحر ليقتل مطلقا … ولايقبل قوله اتوب عنه অর্থাৎ ইমাম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে এ বর্ণনা প্রসিদ্ধি আছে যে, যাদুকরকে কতল করা হবে। তার তাওবাহ্ কবূল করা হবে না।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সাতটি কবীরাহ্ গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তন্মধ্যে যাদুও একটি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন حد الساحر ضربه بالسيف অর্থাৎ ‘যাদুকরের শাস্তি হল তরবারি দিয়ে হত্যা করা’ (তিরমিযী)। হযরত আবু মূসা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন ثلاثة لايدخلون الجنة مدمن خمر وقاطع رحم ومصدق بالسحر অর্থাৎ তিন শ্রেণীর মানুষ বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবে না। ১. শরাবখোর বা মদ্যপায়ী। ২. রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্নকারী এবং ৩. যাদুর প্রতি আস্থা স্থাপনকারী। -[মুসনাদে আহমদ]
সুতরাং, যাদু নিজে করা, অন্যের ফৎতূগ্ধফ যাদু করানো উভয় হারাম ও কবীরাহ্ গুনাহ্। এমনকি শবে কদর ও শবে বরাতের মত পূণ্যময় রাতেও যাদুকরের গুনাহ্ ক্ষমা করা হয় না। আল্লাহর দরবারে তার তাওবা কবূল হয় না। যদি শবে বরাত ও শবে কদরের পূর্বে খালিস নিয়্যতে তাওবা না করে। তাই বান-টোনা, যাদু ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য বাঞ্ছনীয়।
উল্লেখ্য যে, পবিত্র কোরআনের আয়াত অথবা আল্লাহর নামে তাবিজ, ঝাড়-ফুঁক ইত্যাদি যা মানুষের উপকারার্থে করা হয় তা যাদু-টোনার অন্তর্ভূক্ত নয়। তা করা জায়েয।
হিজরী ৭ম সালে হুদায়বিয়ার সন্ধির পর ইহুদী নেতৃবৃন্দ লবীদ ইবনে আসাম ও তার কন্যাগণের মাধ্যমে হুজূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে যাদু করেছিল। যাদুর প্রভাবে হুজূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায়, এ অসুখ ছ’মাস পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। আল্লাহ্ তাঁ‘আলা তাঁর প্রিয় রসূলকে ইহুদীদের এ যাদুর কথা জানিয়ে দেন। হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম আল্লাহর পক্ষ হতে সূরা নাস ও সূরা ফালাক্ব নিয়ে অবতীর্ণ হন। এ দু’টি সূরার মাধ্যমে যাদুর প্রভাব থেকে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্তি লাভ করেন।
সুতরাং নবীর শরীর মোবারকেও যাদুর প্রভাব পড়া নুবুয়্যতের মর্যাদার পরিপন্থী নয়। এটা তীর-বল্লম ও তালোয়ারের আঘাতের মতই। সুতরাং, যাদুর প্রভাব দূরীভূত করার জন্য তাবীজ- দুআর আশ্রয় নেয়াও জায়েয। তদুপরি হুজূরে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর নূরানী শরীরে যাদুর কুপ্রভাব প্রতিফলন হওয়া উম্মতের তাজ্ঞলীম বা শিক্ষার জন্য। যেমন রসূলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর খানা-পিনা, ঘর-সংসার ইত্যাদি করা উম্মতের তাজ্ঞলীম তথা শিক্ষার জন্যই।
[তাফসীরে রূহুল মা'আনী, তাফসীরে খাযাইনুল ইরফান, তাফসীরে নূরুল ইরফান, তাফসীরে জিয়াউল কোরআন, কিতাবুল কাবায়ির কৃত ইমাম আয্-যাহাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং আহকামুল কোরআন কৃত ইমাম আবু বকর জাস্সাস রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি।]
[সূত্র. যুগ-জিজ্ঞাসা, পৃ. ২৯-৩০]
No comments