আল্লাহর ওলীগণের কাছ হতে সাহায্য প্রার্থনা প্রসঙ্গে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের বিবরণ)
দ্বিতীয় অধ্যায়
(আল্লাহর ওলীগণের কাছ হতে সাহায্য প্রার্থনা প্রসঙ্গে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের বিবরণ)
এ বিষয়ে ভিন্নমতাবলম্বীগণ কর্তৃক কয়েকটি বহুল প্রচারিত আপত্তি উত্থাপিত হয়ে থাকে, যা’ তারা সব জায়গায় উত্থাপিত করে থাকেন।
১নং আপত্তিঃ
❏সুবিখ্যাত মিশকাত শরীফে ‘বাবুল ইনযার ওয়াত তাহযীর’ শীর্ষক অধ্যায়ে আছে, হুযুর (ﷺ) হযরত ফাতিমা যুহরা (رضي الله عنه) এর উদ্দেশ্যে বলেছেনঃ
لاَاَغْنِىْ عَنْكِ مِنَ اللهِ شَيْئًا
-‘‘আমি তোমাকে সাহায্য করে আল্লাহর আযাব থেকে রেহাই দিতে পারি না।’’
{ক. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ৪/২৭৬ পৃ. হাদিসঃ ৫৩৭৩
খ. বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৫/৩৮২, হাদিসঃ ২৭৫৩
গ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/১৯২ পৃ. হাদিসঃ ২০৪ এবং ৩৪৮
ঘ. তিরমিজীঃ আস-সুনান. ৫/৩১৬ পৃ. হাদিসঃ ৩১৮৫}
যখন রাসূল (ﷺ) দ্বারা হযরত ফাতিমা-তুয-যুহরার (رضي الله عنه) উপকার সাধিত হচ্ছে না, এমতাবস্থায় অন্যান্যদের বেলায় তাঁর কীই বা করার আছে?
উত্তরঃ এ উক্তিটি ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকের ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এ হাদীছের গুঢ়ার্থ হচ্ছে, হে ফাতিমা (رضي الله عنه), তুমি যদি ঈমান না আন, তাহলে আমি খোদার প্রতিদ্বন্দী হয়ে তোমাকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারব না। হযরত নুহ (عليه السلام) এর পুত্রের ঘটনার কথা স্মরণ করুন। এজন্যই তো এখানে ‘মিনাল্লাহ’ (আল্লাহর তরফ থেকে) কথাটি বলেছেন। মুসলমানদেরকে তিনি সব জায়গায় সাহায্য করবেন।
❏মহান প্রতিপালক ইরশাদ করেছেনঃ
الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ
-‘‘শেষ বিচারের দিন খোদা ভীরু লোক ব্যতীত সমস্তু বন্ধু-বান্ধব পরস্পর পরস্পরের শত্রু হয়ে যাবে।’’
{সূরাঃ যুখরুফ, আয়াতঃ ৬৭, পারাঃ ২৫}
হুযুর (ﷺ) সেদিন বড় বড় পাপীদেরও (শরীয়তের পরিভাষায় যেসব পাপ কাজ ‘কবীরাহ গুনাহ’ বলে অভিহিত হয়, সে সব পাপ কর্ম সম্পাদনকারী) সুপারিশ করবেন; পতিতদেরকে রক্ষা করবেন। সুপ্রসিদ্ধ ‘ফত্ওয়ায়ে শামী’ প্রসঙ্গে ‘বাবু গোসলিল মাইয়েতি’ শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে, হুযুর (আলাইহিসসালাতু ওয়াস সালাম) ইরশাদ করেছেন শেষ বিচারের দিন আমার বংশের সাথে সম্পৃক্ততা ও আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছাড়া অন্য সব আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে। আসলে হুযুর (আলাইহিস সালাম) দেওবন্দীদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াবেন না। আমরা যেহেতু খোদার ফজলে মুসলমান, সেহেতু আমাদেরকে অবশ্যই সাহায্য করবেন।
২নং আপত্তিঃ
❏কুরআনে আছেঃ
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
-‘‘আমরা তোমরাই ইবাদত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি।’’
{সূরাঃ ফাতেহা, আয়াতঃ ৪, পারাঃ ১}
এ আয়াত থেকে বোঝা গেল, ইবাদতের মত সাহায্য প্রার্থনার ব্যাপারটিও খোদার জন্য ‘খাস’। খোদা ভিন্ন অন্য কারো ইবাদত কারা যেমন ‘শিরক’, অন্য কারো কাছ হতে সাহায্য প্রার্থনা করাও তেমনি ‘শিরক’।
উত্তরঃ এখানে সাহায্য বলতে যথার্থ প্রকৃত সাহায্যের কথা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মূলতঃ তোমাকেই প্রকৃত সাহায্যকারী হিসেবে বিশ্বাস করি তোমার কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করি। এখন রইল বান্দার কাছ হতে সাহায্য চাওয়ার ব্যাপারটি। বান্দার কাছ হতে সাহায্য ভিক্ষা করা হয় তাঁদেরকে ফরযে ইলাহী লাভেল মাধ্যমরূপে বিশ্বাস করে।
❏যেমন কুরআনে আছে-
اِنِ الْحُكْمُ اِلاَّ لِلَّهِ
-‘‘আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম করার অধিকার নেই।’’
{সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ৫৭, পারাঃ ৭}
❏অন্যত্র আছেঃ
أَنَّ اللَّهَ لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ
-‘‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ আসমান-যমীনে যা কিছু আছে, সবকিছুর মালিক।’’
{সূরাঃ বাক্বারা, আয়াতঃ ১০৭, পারাঃ ১}
তারপরেও আমরা শাসকবর্গের আদেশ মান্য করি, নিজেদের জিনিসের উপর মালিকানা দাবী করি। সুতরাং, বোঝা যায় যে, উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে হুকুম ও মালিকানা বলতে প্রকৃত হুকুম ও প্রকৃত মালিকানাকে বুঝনো হয়েছে। বান্দাদের হুকুম ও মালিকানা খোদা প্রদত্ত।
তাছাড়া আপনার উপস্থাপিত আয়াতে যে ইবাদত ও সাহায্য প্রার্থনার বিষয়টি একত্রে সন্নিবেশিত হয়েছে, এ দু’এর মধ্যে সম্পর্ক কি তা’ নির্ণয় করুন। এ দু’টি বিষয়ের মধ্যে যে সম্পর্কটুকু আছে, তা হচ্ছে, আল্লাহকে প্রকৃত সাহায্যের উৎস হিসেবে বিশ্বাস করে সাহায্য প্রার্থনা করাও ইবাদতের একটি শাখা। মূর্তি পূজারীগণ মূর্তি-পূজার সময় সাহায্যের আবেদন সম্বলিত শব্দাবলীও উচ্চারণ করে থাকে। যেমন “মা কালী, তোমার দোহাই ইত্যাদি। এ উদ্দেশ্যেই অর্থাৎ আল্লাহকে প্রকৃত সাহায্যের উৎস জ্ঞান করার জন্য আয়াতে ইবাদত ও সাহায্য প্রার্থনা-কথা দু’টির একত্রে সমাবেশ ঘটানো হয়েছে। আয়াতের লক্ষ্যার্থ যদি এ হয়ে থাকে খোদা ভিন্ন অন্য কারো কাছ হতে যে কোন ধরনের সাহায্য প্রার্থনা ‘শিরক’, তাহলে পৃথিবীর বুকে কেউ মুসলমান থাকতে পারে না, না সাহাবায়ে কিরাম, না কুরআন অনুযায়ী আমলকারী, না স্বয়ং ভিন্নমতাবলম্বীগণ। এর প্রমাণাদি আমি আগেই সূচারূরূপে উপস্থাপন করেছি। এখনও মাদ্রাসার চাঁদার জন্য ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের সাহায্য ভিক্ষা করা হয়। মানুষ তার জন্মলগ্ন থেকে কবরস্থ হওয়া পর্যন্ত; এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত বান্দাদের সাহায্যের মুখাপেক্ষী। ধাত্রীর সাহায্যে জন্মগ্রহণ করেছে, মাতা-পিতার সাহায্যে লালিত-পালিত হয়েছে, শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে জ্ঞান অর্জন করেছে। ধনীদের অনুকূল্যে জীবন অতিবাহিত করেছে, আত্মীয়-স্বজনদের তলকীনের ফলে (মৃত্যুর সময় কলেমা শাহাদাতের তলকীন) ঈমান রক্ষা করে ইহজগৎ থেকে বিদায় নিচ্ছে। তারপর গোসলদাতা ও দর্জির সাহায্য নিয়ে যথাক্রমে গোসল করানো ও কাফন পরানো হচ্ছে। কবর খননকারীর সাহায্যে কবর খনন করা হচ্ছে, অপরাপর মুসলমানদের সহায়তায় মাটির নিচে সমাহিত হচ্ছে। এরপর আবার আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্যে তার রুহের উপর ছওয়াব রসানী করা হচ্ছে। আমরা কোন মুখে বলতে পারি যে, আমরা কারো সাহায্যের মুখাপেক্ষী নই? উক্ত আয়াতে তো বিশেষ কারো সাহায্য বা বিশেষ কোন সময়ের সাহায্যের কথা বুঝানোর জন্য বিশেষত্ব জ্ঞাপক কোন শর্ত জুড়ে দেয়া হয়নি।
৩নং আপত্তিঃ
❏মহান প্রতিপালক ইরশাদ করেছেনঃ
وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ
-‘‘তোমাদের একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন অভিভাবক বা সাহায্যকারী নেই।’’
{সূরাঃ বাক্বারা, আয়াতঃ ১০৭, পারাঃ ১}
এ থেকে বুঝা গেল যে, আল্লাহ ছাড়া কোন অভিভাবক নেই, কোন সাহায্যকারীও নেই।
উত্তরঃ এ আয়াতে আল্লাহর ওলীগণকে অস্বীকার করা হয়নি, বরং আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীন ব্যক্তি বা বস্তুর অস্বীকৃতিই জ্ঞাপন করা হয়েছে। যাদেরকে / যেগুলোকে কাফিরগণ নিজেদের সাহায্যকারী ও হিতসাধনকারীরূপে মেনে নিয়েছে অর্থাৎ প্রতিমা ও শয়তানদের কথা বলা হয়েছে, আল্লাহর ওলীদের কথা বলা হয়নি এখানে। আল্লাহর ওলী হচ্ছেন তিনি যাকে আল্লাহ তা’আলা স্বীয় বান্দাদের সাহায্যকারী মনোনীত করেছেন। ব্রিটিশ আমলে ভাইসরয় লন্ডন থেকে মনোনীত হয়ে ভারত শাসন করতে আসতেন। যদি কেউ নিজে অন্য কাউকে শাসক মনোনীত করে নিত, তাহলে সে অপরাধী বলে গণ্য হত। কারণ সম্রাটের নির্দেশ ছিল সরকারী শাসকবর্গের মেনে চল, নিজেদের মনোনীত শাসকগণ থেকে দূরে থাক। এরূপ আয়াতের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে খোদার মনোনীত শাসকগণের দ্বারস্থ হও, নিজের গড়া তথাকথিত সাহায্যকারীদের থেকে দূরে থাকো।
❏হযরত মুসা (عليه السلام) কে মহান প্রতিপালক নির্দেশ দিলেন-
اذْهَبْ إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى
-‘‘ফিরাউনের কাছে যান, সে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে।’’
{সূরাঃ ত্বহা, আয়াতঃ ২৪, পারাঃ ১৬}
❏হযরত মুসা (عليه السلام) আরয করলেনঃ
وَاجْعَلْ لِي وَزِيرًا مِنْ أَهْلِي- هَارُونَ أَخِي - اشْدُدْ بِهِ أَزْرِي
-‘‘মওলা, আমার ভাই হারুন (عليه السلام) কে আমার উযীর মনোনীত করে আমার বাহুবল বাড়িয়ে দিন।’’
{সূরাঃ ত্বহা, আয়াতঃ ২৯-৩১, পারাঃ ১৬}
হযরত মুসা (عليه السلام) এর এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহাপ্রভু একথা বলেন নি আপনি আমি ছাড়া অন্যের সাহায্যের মুখাপেক্ষী হচ্ছেন কেন? বরং তাঁর আবেদন মনজুর করলেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, আওলিয়ার সাহায্য গ্রহণ নবীগণের অনুসৃতনীতি বা সুন্নাত।
৪নং আপত্তিঃ
❏প্রসিদ্ধ ‘দুররুল মুখতার’ গ্রন্থের ‘বাবুল মুরতাদ্দ’ শীর্ষক অধ্যায়ে ‘কারামাতুল আউলিয়া’ শিরোনামের বর্ণনায় আছেঃ
شَيْئًا لِلَّهِ قَوْلُهُ قِيلَ بِكُفْرِهِ
-‘‘আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু দাও এরূপ উক্তি কুফর।’’
{ইবনে আবেদীন শামীঃ রুদ্দুল মুখতারঃ ৪/২৫৯ পৃ.}
তাই يَا عَبْدَ قَادِرْ جِيْلاَنِىْ شَيْئًا لِلَّهِ হে আবদুল কাদির জ্বিলানী (رحمة الله) আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু দিন এরূপ বলাও কুফর।
উত্তরঃ এখানে ‘শাইয়ান লিল্লাহ’ এর অর্থ হল, ‘আল্লাহর অভাব পূরণ করার উদ্দেশ্যে কিছু দাও, মহাপ্রভু তোমার মুখাপেক্ষী।’ যেমন বলা হয়ে থাকে ইয়াতীমের জন্য কিছু দিন। এ ধরনের ভাব প্রকাশক কথা বাস্তবিকই কুফর। এ কথাটির ব্যাখ্যায় স্বনামধন্য
❏আল্লামা শামী (رحمة الله) বলেছেনঃ
أَمَّا إنْ قَصَدَ الْمَعْنَى الصَّحِيحَ فَالظَّاهِرُ أَنَّهُ لَا بَأْسَ بِهِ
-‘‘যদি এ উক্তি দ্বারা এর বিশুদ্ধ মর্মার্থের নিয়ত থাকে আল্লাহর ওয়াস্তে তথা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমাকে কিছু দিন, তাহলে এরূপ বলা জায়েয হবে বৈকি। আমাদের ‘শাইয়ান লিল্লাহ’ এর লক্ষ্যার্থও এটিই।’’
{ইবনে আবেদীন শামীঃ রুদ্দুল মুখতারঃ ৪/২৫৯ পৃ.}
৫নং আপত্তিঃ এ আপত্তিটি
❏উর্দু ভাষায় পদ্যাকারে উত্থাপিত হয়ে থাকেঃ
وه كيا هے جو نهيں ملتا خداسے
جسے تم ما نگتے هو اولياءسے
অর্থাৎ- খোদার কাছে পাওয়া যায় না এমন কি আছে, যা তোমরা আল্লাহর ওলীগণের কাছ থেকে ভিক্ষা করছ?
উত্তরঃ এর উত্তরও উদুর্ পদ্যাকারে দেয়া হলঃ
وه چنده هے جو نهيں ملتا خدا سے
جسےتم مانگتے هو اغنياء سے
تو سل كر نہيں سكتے خدا سے
اسے هم ما نگتے هيں او لياسے
অর্থাৎ- আল্লাহর কাছে যা পাওয়া যায় না তা’ হচ্ছে চাঁদা, যা’ আপনার ধনীদের কাছ থেকে ভিক্ষা করে নেন। খোদাকে ওসীলারূপে গ্রহণ করতে পারি না; তাই এ ওসীলাই ওলীগণ থেকে ভিক্ষা করি।
৬নং আপত্তিঃ ‘খোদার বান্দা হয়ে অপরের কাছে কেন যাব? আমরা যেহেতু তারই বান্দা, তাঁর কাছ হতেই আমাদের সাহায্য প্রার্থনা করা চাই আমাদের নাানবিধ উদ্দেশ্যে পূরণের জন্য।’
(তাকবিয়াতুল ঈমান’ গ্রন্থ।)
উত্তরঃ আমরা খোদার বান্দা, তাঁরই হুকুমে তাঁর মনোনীত ও প্রিয় বান্দাদের শরণাপন্ন হই। কুরআনই আমাদের তাঁদের কাছে পাঠাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আমার পূর্ববর্তী বক্তব্যসমূহ পর্যালোচনা করুন। আর খোদা তা’আলাই এ উদ্দেশ্যেই তো তাঁদেরকে পাঠাচ্ছেন।
❏কি সুন্দর কথাই না বলা হয়েছে কবিতার এ চরণটিতেঃ
حاكم حكيم دارو دوا دين يه كچه نه ديں
مردود يه مراد کس آيت خبر كى هے
অর্থাৎ- বিচারক সুবিচার দিয়ে হিতসাধন করেন, হাকী/ ডাক্তার অষুধ দিয়ে সুস্থতা দান করেন; আর ওনারা কিছুই দেন না? ওহে মরদুদ! একথা কোন্ আয়াতে বা কোন্ হাদীছে বলা হয়েছে?
৭নং আপত্তিঃ কুরআন কাফিরদের কুফর সম্পর্কে এও উলেখ করেছে যে, এরা মৃতদের কাছ হতে সাহায্য চায়। ওরা মূর্তিদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছে বলেই মুশরিকে পরিণত হয়েছে। তাই আপনারাও ওলীগণ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করেন বিধায় মুশরিক হয়ে গেছেন।
উত্তরঃ তা’হলে তো আপনারাও পুলিশ, ধনী ও শাসকের সাহায্য চান বিধায় মুশরিক হয়ে গেছেন। ওলীগণের কাছ থেকে চাওয়া আর মূর্তির কাছ হতে চাওয়ার মধ্যে কি পার্থক্য আছে, সে প্রসঙ্গে আমি আগেই আলোকপাত করেছি। (সাহায্য প্রার্থনার যুক্তিসঙ্গত প্রমাণাদি দ্রষ্টব্য)।
❏মহান প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ
وَمَنْ يَلْعَنِ اللَّهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ نَصِيرًا
-‘‘আল্লাহ যা’র উপর অভিসম্পাত করেন, তাঁকে সাহায্য করার মত কাউকে পাবে না।’’
{সূরাঃ নিসা, আয়াতঃ ৫২, পারাঃ ৫}
মু‘মিনদের উপর খোদার রহমত আছে, তাই মহাপ্রতিপালক তাঁদের জন্য অনেক সাহায্যকারী নিযুক্ত করেছেন।
━━
৮নং আপত্তিঃ
❏‘শরহে ফিক্হ আকবর’ গ্রন্থে মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) লিখেছেন,
হযরত ইব্রাহীম খলীল (عليه السلام) অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ্ত হবার প্রাক্কালে হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) কর্তৃক সাহায্যের প্রয়োজন আছে কিনা জিজ্ঞাসিত হয়েও হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) থেকে কোনরূপ সাহায্য চাননি। বরং বলেছেন, ওহে জিব্রাইল, আপনার কাছে আমার হাজত নেই, যদি সাহায্য চাওয়া বৈধই হত তা’হলে এহেন বিপদের সময়ও হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) এর নিকট তিনি সাহায্য চান নি কেন?
উত্তরঃ তখন ছিল পরীক্ষার সময়। আশংকা ছিল, কোন অভিযোগের কথা মুখ থেকে বের করলেই প্রতিপালক অসন্তুষ্ট হয়ে যেতে পারেন। সে জন্য ঐ সময় তিনি আল্লাহর কাছেও কোন দু’আ করেন নি; বরং তিনি বলেছিলেন, ওহে জিব্রাইল, আপনার কাছে আমার চাওয়ার মত কিছুই নেই; যার কাছে চাওয়ার আছে, তিনিই তো নিজেই ওয়াকিবহাল আছেন। যেমন, হুযুর (ﷺ) হযরত হুসাইন (رضي الله عنه) এর শাহাদত বরণের ভবিষ্যৎবাণী করলেন, কিন্তু তখন সেই মুসীবৎ থেকে তার পরিত্রাণ লাভের জন্য কেউ প্রার্থনা করলেন না-না মুস্তাফা (আলাইহিস সালাম), না হযরত আলী মুরতাযা (رضي الله عنه) এমনকি হযরত ফাতিমা যুহরাও (رضي الله عنه) না।
৯নং আপত্তিঃ জীবিতদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া জায়েয, কিন্তু মৃতদের কাছ থেকে জায়েয নয়। কেননা, জীবিতদের মধ্যে সাহায্য করার ক্ষমতা আছে, কিন্তু মৃতের সে ক্ষমতা নেই, ‘অতএব তা’ শির্ক।
উত্তরঃ
❏কুরআনে আছেঃ
وَإِيَّاكَ نَسْتَعِين
-‘‘আমরা তো’মা থেকেই সাহায্য প্রার্থনা করি।’’
{সূরাঃ ফাতেহা, আয়াতঃ ৪, পারাঃ ১}
এখানে জীবিত ও মৃতের পার্থক্য কোথায়? তাহলে কি জীবিতের ইবাদত জায়েয আর মৃতের ইবাদত করা না জায়েয? খোদা ভিন্ন অন্য কারো জীবিত হোক বা মৃত হোক, ইবাদত যেরূপ নিঃশর্তভাবে শির্ক, তদ্রুপ সাহায্য প্রার্থনার ব্যাপারও শর্তহীনভাবে শির্ক হওয়া চাই।
হযরত মুসা (عليه السلام) তাঁর ওফাতের আড়াই হাজার বছর পর উম্মতে মুস্তাফা (ﷺ) কে এতটুকু সাহায্য করেছেন যে, মিরাজের রাতে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাযের স্থলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই নির্ধারণ করিয়েছেন। মহাপ্রতিপালক জানতেন যে, পাঁচবার নামাযই ধার্য হবে, কিন্তু বুযুর্গানে দ্বীনের অবদানের উদাহরণ সৃষ্টি করার জন্য পঞ্চাশবার নামায নির্ধারণ করেন। আল্লাহর ওলীদের কাছ হতে সাহায্য প্রার্থনার ব্যাপারটি যারা অস্বীকার করেন, তাঁদের উচিত দিনে পঞ্চাশবার নামায পড়া। কারণ পাঁচ বার নামায ধার্যকরণের ক্ষেত্রে খোদা ভিন্ন অন্যের সাহায্য অন্তভুর্ক্ত রয়েছে।
কুরআন করীমতো ইরশাদ করছে, আল্লাহর ওলীগণ জীবিত, তাঁদেরকে মৃত বল না ও মৃত মনে কর না।
কুরআন করীমতো ইরশাদ করছে, আল্লাহর ওলীগণ জীবিত, তাঁদেরকে মৃত বল না ও মৃত মনে কর না।
وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَكِنْ لَا تَشْعُرُونَ
-‘‘আল্লাহর পথে যারা নিহত হয়েছেন তাঁদেরকে মৃত বল না, তাঁরা বরং জীবিত’ কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পার না।’’
{সূরাঃ বাক্বারা, আয়াতঃ ১৫৪, পারাঃ ১}
যেহেতু ওলীগণ, জীবিত, সেহেতু তাঁদের কাছে সাহায্য প্রার্থনাও বৈধ হবে। কেউ কেউ আবার বলেন, আয়াতে উলেখিত বক্তব্য ওসব শহীদের বেলায় প্রযোজ্য, যাঁরা খোদার রাস্তায় তরবারীর আঘাতে নিহত হন। কিন্তু এরূপ উক্তি অহেতুক বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা, আয়াতের মধ্যে লৌহনির্মিত তরবারীর উলেখ নেই। সুতরাং, যাঁরা ইশকে ইলাহীর তরবারীতে নিহত হয়েছে তাঁরাও শহীদের অন্তভুর্ক্ত
(তাফসীরে ‘রুহুল বয়ান’ দ্রষ্টব্য)।
এজন্য হাদীছে পাকে বর্ণিত হয়েছে, যে পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে, পেগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে’ যে স্ত্রী প্রসবকালে মারা যাবে’ বিদ্যান্বেষী, মুসাফির প্রভৃতি সবাই শহীদ বলে গণ্য হবে। আর যদি কেবল তরবারী দ্বারা নিহত ব্যক্তিই শহীদ তথা জীবিত হন এবং বাকী সব মৃত হন, তাহলে নবী করীম (ﷺ) ও হযরত সিদ্দীক আকবর (رضي الله عنه) কেও ‘মাআযাল্লাহ’ অবশ্রাম্ভাবীরূপে মৃত মানতে হবে। অথচ সর্বসম্মত আকীদা হচ্ছে তাঁরা পরিপূর্ণ জীবনের বৈশিষ্ট্য সহকারে জীবিত আছেন। এছাড়া জীবিত ও মৃতদের কাছ হতে সাহায্য চাওয়া প্রসঙ্গে সাহায্য প্রার্থনার স্বীকৃতি জ্ঞাপক প্রমাণাদির বর্ণনায় আগেই বলেছি, হযরত ইমাম গায্যালী (رحمة الله) বলেছেনঃ যার কাছে জীবিতাবস্থায় সাহায্য চাওয়া যায়, ওফাতের পরেও তাঁর কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা যাবে। এর আরও কিছু বিশেষণ করা হবে ইনশাল্লাহ ‘তবাররুকাত চুম্বন’ ও ‘কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর’ প্রসঙ্গের অবতারণায়।
❏ইমাম সাভী আল-মালেকী (رحمة الله) তাঁর ‘তাফসীরে সা‘বী’তে সুরা কাসাসের ৮৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সাভী বলেন-
فِخِيْنَئِذٍ فَلَيْسَ فِى الْاَيَةِ دَلَيْلٌُ عَلَي مَا زَعَمَهُ الْخَوَارِجُ مِنْ اَنَّ الطَّلَبَ مِنَ الْغَيْرِ حَيَّا اَوْ مَيِّتَا شِرْكَ فَاِنَّهُ جَهْلً مُرَكَّبٌُ لِاَنَّ سُوَالَ الْغَيْرِ مِنْ اجْرَ آءِ اللهِ النَّفَعَ او النضَّرَّ عَلَي يَدَه قَدْيَكُونُ وَاجِبًا لِاَنَّهُ مِنَ الَتَّمَسُّكِ بِالْاَسْبَابِ وَالاَيُنْكِرُ الْاَسْبَابَ اِلاَّ جُحُودًا اَوْ جَهُوْلاً
-‘‘এখানে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, ‘পূজা কর না।’ সুতরাং, আয়াতে সেই খারেজীদের বদ্ধ মূল ধারণার অনুকূলে কোন প্রমাণ নেই যারা এ ধারণা পোষণ করে যে, খোদা ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে হোক না সে জীবিত বা মৃত, সাহায্য চাওয়া ‘শিরক’।
খারেজীদের এ বাজে প্রলাপ তাদের অজ্ঞতারই ফলশ্রুতি। কেননা, খোদা ছাড়া অন্য কারো কাছ হতে এ মর্মে সাহায্য প্রার্থনা করা যে, প্রতিপালক তার মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থীর কোন উপকার বা অপকার করবেন, কোন সময় অত্যাবশ্যকীয় বা ‘ওয়াজিব’ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এরূপ সাহায্য প্রার্থনার ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য পূরণের সহায়ক উপকরণসমূহই তলব করা হয়ে থাকে। এ উপকরণ সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তার কথা একমাত্র অজ্ঞ ও কট্টর অস্বীকারকারী ছাড়া আর কেউ অস্বীকার করবে না।’’
{ইমাম সাভীঃ তাফসীরে সাভীঃ ৪/৩০৫ পৃ.}
এ ইবারত থেকে তিনটি বিষয় জানা গেল-
(১) খোদা ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়া শুধু যে জায়েয তা নয় বরং কখনও তা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে।
(২) মকসুদ হাসিলের সহায়ক উপকরণসমূহ তালাশ করার প্রয়োজনীয়তা খারেজী মতাবলম্বীরাই অস্বীকার করে।
(৩) لاَ تَدْعُ ‘লাতাদউ’ শব্দ দ্বারা পূজা করার অস্বীকৃতিই জ্ঞাপন করা হয়েছে, কাউকে আহবান করা বা কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনার অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়নি উক্ত আয়াতে।
১০ নং আপত্তিঃ বুজুর্গানে দ্বীনকে দেখা যায়, তাঁরা বার্ধক্যে উপনীত হলে বার্ধক্যজনিত কারণে চলাফেরা করতে পারেন না; আর ওফাতের পরতো অবশ্যই হাত-পা বিহীন হয়ে যাবেন। তাই এরূপ দুর্বল ব্যক্তিদের কাছ হতে প্রার্থনা করা মূর্তিদের কাছে সাহায্য চাওয়ার মতই অর্থহীন।
❏প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলা এর অক্ষমতাই পরিস্ফুট করেছেনঃ
وَإِنْ يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لَا يَسْتَنْقِذُوهُ مِنْهُ
-‘‘মাছি যদি ওদের থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়, তাহলে মাছির কাছ থেকেও তা পুনরুদ্ধার করতে পারে না।’’
{সূরাঃ হজ্জ, আয়াতঃ ৭৩, পারাঃ ১৭}
এ ওলীগণও তাঁদের কবরের উপর থেকে মাছিকে তাড়াতে পারেন না। এমতাবস্থায় আমাদের কীই বা সাহায্য করবেন?
উত্তরঃ বুড়ো বয়সে মাটির শরীরে ওসব দুর্বলতা এজন্যই দেখা যায় যে, রুহের সাথে এর সম্পর্ক অনেকটা শিথিল হয়ে যায়। রুহের মধ্যে কোনরূপ দুর্বলতা নেই, বরং ওফাতের পর রুহের শক্তি আরও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। কবরের ভিতর থেকে বাহিরের সবাইকে দেখতে পান, পায়ের আওয়াজ শুনতে পান। বিশেষ করে নবীগণের রূহ সমূহের বেলায় এ গুণাবলী আরও ব্যাপক আকারে প্রযোজ্য।
❏প্রতিপালক বলছেনঃ
وَلَلْآخِرَةُ خَيْرٌ لَكَ مِنَ الْأُولَى
-‘‘আপনার জীবনের পূর্ববর্তী মুহুর্তগুলোর তুলনায় পরবর্তী মুহুর্তগুলো অধিকতর উত্তম। ’
{সূরাঃ দোহা, আয়াতঃ ৪, পারাঃ ৩০}
এ যে সাহায্য চাওয়া হয়, তা’ ওলীর রূহ থেকে চাওয়া হয়, তার পার্থিব শরীর থেকে নয়। কাফিরগণ যাদের কাছ হতে সাহায্য চাওয়া চায়, ওদের রূহানী শক্তি বলতে কিছুই নেই। অধিকন্তু তারা পাথরগুলোকেই তাদের সাহায্যকারী বলে বিশ্বাস করে, যা’র রূহ বলতে কিছুই নেই।
❏তাফসীরে ‘রূহুল বয়ানে’ ১০ম পারার আয়াতঃ
{সূরাঃ তাওবাহ, আয়াতঃ ৩৭, পারাঃ ১০}
يُحِلُّوْنَهُ عَامًا وَّيَحَرِّ مُوْنَهُ عَامًا
এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উলেখিত আছে হযরত খালিদ (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه) বিষ পান করেছিলেন। হুযুর (ﷺ) খায়বরে বিষ পান করেছিলেন। কিন্তু শুধু ওফাতের সময়ই বিষের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছিল। এর কারন হল, তাঁরা ‘মকামে হাকীকাতে’ (প্রকৃত সত্বার স্তর) থেকেই বিষ পান করেছিলেন; ‘হাকীকতের উপর বিষের প্রতিক্রিয়া হয় না। আর ওফাতের সময় মানবীয় প্রকৃতিই বিকশিত ছিল, কারণ মানবীয় প্রকৃতির সাথেই মৃত্যুর সম্পর্ক। তাই, ওফাতের সময় বিষক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছিল। আর এসব বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কবরে মাছি কেন, সমগ্র পৃথিবীকে উলটিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু সে দিকে মনোযোগ নেই।
কাবা ঘরে তিনশ’ বছর যাবৎ মূর্তি বিদ্যমান ছিল, প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলা এগুলির অপসারণ করেন নি। তিনিও কি এত দুর্বল ছিলেন যে নিজের ঘর থেকে অপবিত্রতা দূরীভূত করতে পারলেন না? আল্লাহ ওঁদের মধ্যে শুভবুদ্ধি উদয় করুন এই কামনা করি।
{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ৩/ ৫৪২ পৃ.}
১১নং আপত্তিঃ হযরত আলী (رضي الله عنه) ও ইমাম হুসাইনের (رضي الله عنه) যদি কোন ক্ষমতা থাকত, তাহলে তাঁরা নিজেরাই কেন দুশমনের হাতে শহীদ হলেন? ওনারা যখন নিজেদের বিপদ দূর করতে পারেন নি, তখন আপনাদের বিপদাপদ কিরূপে দূরীভূত করবেন?
❏আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন,
“ওদের কাছ থেকে মাছি কিছু ছিনিয়ে নিলে ওরা মাছির কাছ থেকে তা পুনরুদ্ধার করতে পারেন না।
উত্তরঃ তাঁদের বিপদ নিবারণের ক্ষমতা ছিল, কিন্তু তা’প্রয়োগ করেন নি। কারণ আল্লাহর মর্জি ছিল সেরূপ। হযরত মুসা (عليه السلام) এর লাঠি ফিরাউনকে গিলে ফেলতে পারত, কিন্তু সে উদ্দেশ্যে লাঠি ব্যবহার করেন নি।
হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) এরও এরূপ ক্ষমতা ছিল যে, কারবালা প্রান্তরে ফোরাত নদীর নয়, হাউজে কাউছারের পানিও আনয়ন করতে পারতেন। কিন্তু তা’না করে খোদার ইচ্ছাতেই রাযী ছিলেন।
দেখুন, রমজানের সময় আমাদের কাছে পানি থাকে, কিন্তু খোদার নির্দেশের কারণে দিনের বেলায় তা পান করি না। আর মূর্তিদের বেলায় কোনরূপ ক্ষমতার প্রশ্নই আসে না। সুতরাং, উক্ত আয়াতটিকে নবী ও ওলীগণের ব্যাপারে প্রয়োগ করাটাই ধর্মহীনতা। তা কেবল মূর্তিসমূহের বেলায় প্রযোজ্য হবে।
প্রথম খন্ডের প্রথমাংশ সমাপ্ত
No comments