মীলাদ শরীফে কিয়াম প্রসংগে আপত্তি ও এর জবাব
দ্বিতীয় অধ্যায়
মীলাদ শরীফে কিয়াম প্রসংগে আপত্তি ও এর জবাব
১ নং আপত্তিঃ যেহেতু মীলাদ শরীফে কিয়াম করাটা প্রথম তিন যুগে ছিল না, সেহেতু এটা বিদ্আত এবং বিদ্আত মাত্রই হারাম। হুযুর আলাইহিস সালামের প্রতি আমাদের থেকে সাহাবায়ে কিরামের কি বেশি মুহাব্বত ছিল না? যখন তাঁরা কিয়াম করেননি, আমরা কেন করতে যাব?
উত্তরঃ বিদ্আত সম্পকর্থি উত্তর অনেক বার দেয়া হয়েছে যে প্রত্যেক বিদ্আত হারাম নয়। বাকী রইল তাদের বক্তব্য- হুযুর আলাইহিস সালামকে এ ধরনের সম্মান করা হবে, যা সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত। এ নীতিটা কি কেবল হুযুর আলাইহিস সালামের সম্মানের বেলায় প্রযোয্য, নাকি দেওবন্দী উলামা ও অন্যান্যদের বেলায়ও প্রযোয্য? কেননা আলিম, কিতাব, মাদ্রসা ও অন্যান্য সমস্ত জিনিসের ও ধরনের সম্মান চাই, যা সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত। তাহলে দেওবন্দী আলিমদের আগমন উপলক্ষে ষ্টেশনে যাওয়া, ওদেরকে মাল্যদান করা, তাদের জন্য মিছিল বের করা, পতাকা দ্বারা রাস্তা ও সভার স্থানকে সাজানো, চেয়ার বসানো, বক্তুতার সময় ‘জিন্দাবাদ’ শ্লোগান দেওয়া, মঞ্চ তৈরী করা, কার্পেট বিছানো ইত্যাদি বিভিন্ন রকম সম্মান প্রদান করার এমন কোন প্রমাণ কি পেশ করতে পারবেন যে সাহাবায়ে কিরাম হুযুর আলাইহিস সালামের প্রতি এ ধরনের সম্মান করেছিলেন? কখনই পারবেন না। তাহলে বলুন, এধরনের তাযীম হারাম হবে, না কি হালাল? সুতরাং আপনাদের ফর্মুলা গলদ। বরং হারামকৃত রুকু সিজ্দা ব্যতীত যে দেশে যে রকম সম্মান প্রদর্শনের প্রচলন, সে রকম সম্মান জায়েয, মনের আবেগ যে দিকে পরিচালিত করে, সেটা ইবাদত। লক্ষেèৗতে মেথর বলা হয় নিম্ন শ্রেণীর ঝাড়–দারকে। কিন্তু ফার্সীতে, কোন কোন জায়গায় উর্দুতেও মেথর সর্দার বা নেতা অর্থে ব্যবহৃত হয়। লক্ষ্মৌতে মেথর শব্দটি যদি কেউ কোন নবীর শানে ব্যবহার করে, সে কাফির হয়ে যাবে। কিন্তু সুতরাল বা পারস্যে ব্যবহার করলে কাফির হবে না। এক এক দেশের এক এক রীতি।
هندياں را اصطلاح هند مدح - سند هياں را اصطلاح سنده قدح
-‘‘হিন্দী ভাষা-ভাষীদের পরিভাষায় হিন্দী প্রশংসনীয়, সিন্ধু বাসীদের পরিভাষায় সিন্ধু প্রশংসনীয়। মিরকাত ও আশ্আতুল লুমআতের ভূমিকায় ইমাম মালিক (رضي الله عنه) এর জীবনী বর্ণনা প্রসংগে লিখেছেন যে, তিনি মদীনা শরীফের পবিত্র যমীনে কখনো কখনো ঘোড়ায় আরাহণ করেননি। যখন হাদীস র্বণনা করতেন, এর আগে গোসল করে নিতেন, ভাল কাপড় পড়তেন, সুগন্ধি লাগাতেন এবং ভীতি ও গাম্ভীর্য সহকারে বসতেন। বলুন মদীনায়ে পাক বা হাদীস শরীফের প্রতি এ ধরনের সম্মান সাহাবীগণ কি করেছিলেন? না করেননি। কিন্তু এটা ইমাম মালিক (رضي الله عنه) এর মনের আবেগ তাড়িত বিধায় ছওয়াবের কাজ হিসেবে ধরা হবে।
❏ তাফসীরে রূহুল বয়ানে-مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ আয়াতটির প্রেক্ষাপটে ৮৩
➥{সূরা আহযাব, আয়াত নং-৪০}
বর্ণনা করা হয়েছে যে আয়াযের সন্তানের নাম ছিল মুহাম্মদ। সুলতান মাহমুদ তার নাম ধরে ডাকতেন। একদিন সুলতান মাহমুদ গোসল খানায় গিয়ে ডাক দিলেন -হে আয়াযের ছেলে, পানি নিয়ে এসো। আয়ায আরয করলো, হুযুর, কি অপরাধ হলো ছেলের যে নাম নিলেন না? তিনি বললেন, ও সময় আমি বেওযু ছিলাম, এবং বে-ওযু এ পবিত্র নাম আমি কখনো উচ্চারণ করি না।
هزار بار بشويم دهن بمشك وگلاب
هنوز نام توگفتن كمال بے ادبى است
অর্থাৎ মেশমক ও গোলাপজল দিয়ে মুখকে হাজার বার ধৌত করার পরও তাঁর পবিত্র নাম নেয়া বে-আদবী মনে হয়।
বলুন, এ ধরনের তাযীমের কি প্রমাণ আছে? রসূল আলাইহিস সালামের প্রতি সুলতান মাহমুদ ও ইমাম মালিক (رضي الله عنه) এর মুহাব্বত কি সাহাবায়ে কিরাম থেকে বেশি ছিল?
২ নং আপত্তিঃ যদি রসূল আলাইহিস সালামের যিকরের তাযীম করতে হয়, তাহলে প্রত্যেক যিকরের সময় দাঁড়িয়ে থাকুন এবং মীলাদ শরীফের প্রথম থেকে দাঁড়িয়ে থাকুন। এটা কোন্ ধরনের সম্মান যে প্রথম ও শেষে বসে থাকা আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাওয়া?
উত্তর: এটাতো কোন আপত্তি হলো না। যদি কাউকে আল্লাহ তাওফিক দেয় এবং সে যদি প্রত্যেক যিকর দাঁড়িয়ে পাঠ করে, আমরা নিষেধ করবো না। সব সময় দাঁড়িয়ে থাকুন বা কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়ান প্রত্যেক রকম জায়েয। আলা-হযরত (কুঃ সিঃ) হাদীছ গ্রন্থ সমূহ দাঁড়িয়ে পড়াতেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাকে বলেছেন যে, তিনি নিজেও দাড়াঁতেন এবং ছাত্ররাও দাঁড়াতেন। তাঁর এ কাজটা খুবই মুবারক ছিল। কিন্তু মীলাদ শরীফে যেহেতু প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ লোকের জন্য কষ্টকর, সেহেতু কেবল পবিত্র বেলাদতের বর্ণনার সময় দাঁড়নো হয়। অধিকন্তু বসে থাকতে থাকতে লোকের ঘুম এসে যায়। তাই দাঁড়িয়ে সালাত ও সালাম পাঠ করুন, যাতে ঘুমের আবেগ কেটে যায়। এ জন্যই ওই সময় গোলাপজল ইত্যাদি ছিটানো হয়, যেন ঘুমের ভাব চলে যায়। কেন জনাব! নামাযের মধ্যেওতো আপনি কতেক যিকর দাঁড়িয়ে করেন, আবার কতেক যিকর রুকু, সিজদা ও বসে করেন। প্রত্যেক যিকর দাঁড়িয়ে করেন না কেন? আবার তাশাহুদের মধ্যে যখন أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ পড়েন, তখন আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করার নির্দেশ আছে। কিন্তু অন্যান্য সময় এ কালেমা পাঠ করার সময় আঙ্গুল কেন নাড়েন না? সুফিয়ানে কিরাম কতক আমলের ক্ষেত্রে আঙুল দ্বারা ইশারা করার শর্তারোপ করেন। যেমন-কোন মামলা উপলক্ষে যখন বিচারকের সামনে যাবেন, তখন كهيعص এভাবে পাঠ করবেন, যেন প্রতি বর্ণ উচ্চারণ করার সময় এক একটি আঙুল বন্ধ করেন, যেমন كاف বলার সময় এক আঙুল ه বলার সময় এক আঙুল এভাবে। অতঃপর حمعسق পাঠ করবেন এবং এর প্রতি বর্ণ উচ্চারণ করার সময় এক আঙুল খুলবেন। এর পর বিচারকের দিকে ফুঁক দিবেন। কিন্তু কুরআন পাঠ করার সময় যখন এ শব্দগুলো আসে, তখন কেন ওই ধরনের ইশারা করা হয় না? আর এ ধরনের আমলের ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরাম থেকে কি প্রমাণ আছে? হিজবুল বাহার ইত্যাদি ওজীফা পাঠকগণ কতেক জায়গায় বিশেষ ইশারা করে থাকেন কিন্তু অন্যান্য সময় কেন করেন না? কাবা শরীফ তওয়াফ করার সময় প্রথমে তওয়াফের চার চক্করে ইযতিবাহ করতে হয় এবং রমলও করতে হয় কিন্তু এর পরে কেন করে না? এ ধরনের শত শত প্রশ্ন করা যায়। ইমাম বুখারী কতেক হাদীছ সনদসহকারে বর্ণনা করেছেন আবার কতেক হাদীছ বর্ণনা করেছেন অন্যটার সঙ্গে সংযুক্তভাবে। সবগুলো একই রকম কেন বর্ণনা করলেন না? তাদের যুক্তি মতে এগুলোকেও তাহলে হারাম প্রমাণ করা যেতে পারে।
৩ নং আপত্তি: জনগণ মীলাদ শরীফে কিয়াম করাটাকে জরুরী বলে ধরে নিয়েছেন, যারা করে না, তাদেরকে সমালোচনা করে থাকেন। তাই অনাবশ্যককে আবশ্যক মনে করাটা নাজায়েয। সুতরাং কিয়াম নাজায়েয।
উত্তরঃ এটা মুসলমানদের প্রতি নিছক অপবাদ যে, এরা মীলাদকে ওয়াজিব মনে করেন। কোন আলিমে দ্বীন এরকম কোন কিতাব লিখেননি যে কিয়াম ওয়াজিব এবং এরূপ কোন ওয়াজ নসীহতেও বলেননি। সাধারণ লোকেরাও এটাই বলে যে কিয়াম ও মীলাদ শরীফ ছওয়াবের কাজ। এরপরও আপনারা তাদের প্রতি কিভাবে অভিযোগ আনয়ন করেন যে তারা ওয়াজিব মনে করেন? যদি কেউ ওয়াজিব মনে করেও থাকে তাহলে এ মনে করাটা পাপ হবে, কিন্তু মূল কিয়াম হারাম হবে না। ইমাম শাফেঈ (رضي الله عنه) নামাযে দরূদ শরীফ পড়াটা জরুরী মনে করেন, কিন্তু হানাফীরা দরূদ শরীফ পড়াটা জরুরী মনে করেন না। তাই আমাদের মাযহাব অনুসারে ইমাম শাফেঈ (رضي الله عنه) এর উক্তি সঠিক হবে না। কিন্তু নামাযে দরূদ নিষেধ বলা যাবে না। হাজী ইমদাদুল্লাহ সাহেব তাঁর রচিত ‘হাফতে মাসায়েল’ পুস্তিকায় এর সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন। এখন তাঁদের সেই কথাটার উত্তর বাকী রইলো যে মুসলমানগণ একে রুটিন মাফিক করে থাকেন এবং যারা করে না, তাদেরকে ওহাবী বলেন। এ ধরনের বলাটা একেবারে ন্যায় সংগত।
❏ মিশকাত শরীফে القصد فى العمل শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
أَحَبُّ الْأَعْمَالِ إِلَى الله أدومها وَإِن قل
-আল্লাহর কাছে ভাল কাজ হচ্ছে সেটাই, যা সব সময় হয়, যদিওবা অল্প হোক।
➥{ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৫৪০ পৃঃ হা/৭৮২-৭৮৩, পরিচ্ছেদ: بَابُ فَضِيلَةِ الْعَمَلِ الدَّائِمِ مِنْ قِيَامِ اللَّيْلِ وَغَيْرِهِ , ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৩৯১ পৃঃ হা/১২৪২}
প্রত্যেক সৎ কাজকে নিয়মিতভাবে করাটা মুস্তাহাব। মুসলমানগণ প্রত্যেক ইদে ভাল কাপড় পরিধান করে, প্রত্যেক শুক্রবার গোসল করে, সুগন্ধি লাগায়, শিক্ষা প্রতিষ্টানে প্রতি রমযান মাসে ও শুক্রবারে ছুটি হয়, প্রতি বৎসর পরীক্ষা নেয়া হয়, মুসলমান প্রতি রাতে ঘুম যায়, প্রত্যেক মধ্যাহ্ন খাবার খায়। তাই বলে কি এগুলোকে ওয়াজিব মনে করে বা নিয়মিত করাটা কি ওয়াজিব হওয়ার লক্ষণ? এখন উত্তর দেয়া বাকী রইল সেই প্রসঙ্গটা যারা কিয়াম করে না, তাদেরকে ওহাবী মনে করা। এর কারণ হচ্ছে, ইদানিং হিন্দুস্থানে এটা ওহাবীদের লক্ষণে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেক যুগে ইমানদারদের লক্ষণসমূহের ভিন্নতা রয়েছে। তাই যুগ অনুযায়ী কাফিরদের লক্ষণসমূহ থেকে দূরে থাকা এবং ঈমানদারদের লক্ষণ সমূহ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ইসলামের যুগে বলা হয়েছিল, যে لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ বলেছে, সে জান্নাতী হয়ে গেছে।’’ ৮৫
➥{খতিব তিবরিযি, মিশকাত কিতাবুল ঈমান, ১/১৭ পৃঃ হা/৩৭,
☞মূলত হাদিসটি হল-
وَعَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রمَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ- رَوَاهُ مُسلم
-‘‘হযরত উসমান (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে এ জেনে (لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ) মৃত্যু বরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ (ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, হা/)
☞ইমাম আবু দাউদ তায়লসী (رحمة الله) আবু যার গিফারী হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) তাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন-
يَا أَبَا ذَرٍّ بَشِّرِ النَّاسَ أَنَّهُ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ
-‘‘হে আবু যার! তুমি মানুষদেরকে এ সুসংবাদ জানিয়ে দাও যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ (মুসনাদে আবি দাউদ তায়লসী, ১/৩৫৬ পৃঃ হা/৪৪৫)
☞ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) হাদিসটি সংকলন করেছেন এভাবে-
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَانَ آخِرُ كَلَامِهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ
-‘‘হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যার শেষ বাক্য হয়েছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ (ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৩/১৯০ পৃঃ হা/৩১১৬) }
কেননা ওই সময় কালেমা পড়াটাই ছিল ঈমানদারদের লক্ষণ। পরবর্তীতে কালেমা পাঠকারদের মধ্যে যখন মুনাফিকদের সৃষ্টি হলো, তখন কুরআন পাক ইরশাদ করেন, আপনার সামনে মুনাফিক এসে বলে যে আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি আল্লাহর রাসূল (ﷺ); আল্লাহও জানেন যে, আপনি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)। কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে (তারা) মুনাফিকরা মিথ্যুক। বলুন, তারা কথাতো সত্যই বলেছে কিন্তু তারা মিথ্যুক। হাদীছ শরীফে উলেখিত আছে যে, একটি কওম খুবই ধর্মপরায়ণ হবে। কিন্তু তারা ধর্ম থেকে এমনভাবে দূরে সরে যাবে, যেমনি করে তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। হাদীছ শরীফে আরো উলেখিত আছে যে, খারেজীদের চিহ্ন হলো হলো মাথা মুন্ডানো। ৮৬
➥{হাদীছদ্বয় মিশকাত শরীফের কিতাবুল কিসাস, قتل اهل الردة শীর্ষক অধ্যায়ে রয়েছে। বিস্তারিত দেখুন- ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, কিতাবুয-যাকাত, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৭৪৫, হাদিস-১০৬৫, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৫, হাদিস-১১৩১, আব্দুল্লাল্লাহ ইবনে আহমদ, আস্-সুন্নাহ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৬২২, হাদিস-১৪৮২।}
তিনটি যুগের পরিপ্রেক্ষিতে এ তিনটি আলামত বা চিহ্ন বর্ণিত হয়েছে। ‘শরহে ফিক্হ আকবর’ গ্রন্থে মোল্লা আলী কারী বর্ণনা করেছেন যে কোন এক ব্যক্তি ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) এর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিল, সুন্নীর আলামত কি? এর উত্তরে তিনি বলেছিলেন
حُبُّ الخَتَنَيْن تَفْضِيْلَ الشَّيْخَيْنِ وَ الْمَسْحُ عَلَى الْخُفُّيْنِ
-‘‘দুই ইমাম অর্থাৎ হযরত আলী ও ইছমান (رضي الله عنه) এর প্রতি মুহাব্বত রাখা, শায়খাইন অর্থাৎ হযরত সিদ্দীক ও ফারুক (رضي الله عنه) কে সবার থেকে আফযল মনে করা এবং চামড়ার তৈরী মোজার উপর মাসেহ করা।’’
❏ তাফসীরাতে আহমদীয়ায় সূলা আন-আমের ১৫৩ নং আয়াত-
وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا
এর ব্যাখ্যা প্রসংগে আছে যে সৈয়্যদেনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন যার ব্যাখ্যা প্রসংগে বর্ণিত দশটি অভ্যাস থাকবে, তিনি সুন্নী বলে গণ্য হবেন। এগুলো হচ্ছে-
تَفْضِيْلَ الشَّيْخَيْنِ- تَوْقِيْرُ الْخُتْنَيْن- تَعْظِيْمُ الْقِبْلَتَيْنِ الصَّلَوةٌ عَلَى الجَنَازَتَيْنِ. الصَّلوةَ خَلْفَ الِامَامَيْنِ- تَرْكُ الْخُرُوْج عَلَى الاِمَامَيْنِ- الْمَسْحُ عَلى الخُفين- وَالْقَوْلُ بِالتَّعديرين- وَالْاِمْسَاكُ عَنِ الشَّهَادَتَيْنِ- وَاَدَاءُ الفَرَيْضَتَيْنِ
-‘‘(১) শায়খাইন অর্থাৎ হযরত সিদ্দীক ও ফারুক (رضي الله عنه) কে সবার থেকে আফযল জ্ঞান করা,
(২) ইমামাইন অর্থাৎ সৈয়্যদেনা হযরত আলী ও উছমান (رضي الله عنه) এর সাথে মুহাব্বত রাখা,
(৩) দুই কিবলা অর্থাৎ মক্কা ও বায়তুল মুকাদ্দসের প্রতি সম্মান করা,
(৪) দুই জানাযায় অর্থাৎ ফাসিক ও নেকবান্দার জানাযায় শরীক হওয়া,
(৫) দুই ইমামের অর্থাৎ ফাসিক ও নেককার ইমামের পিছনে নামাজ পড়া,
(৬) ন্যায় বিচারক বা জালিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা থেকে বিরত থাকা,
(৭) সফর ও মুকিম অবস্থায় দুই মোজায় মাসেহ করা,
(৮) ভাল মন্দ উভয় তাকদীর আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বলে স্বীকার করা,
(৯) কাউকে বেহেশতী বা দোযখী বলা থেকে বিরত থাকা,
(১০) দুই ফরয অর্থাৎ নামায ও যাকাত আদায় করা।’’
(মোল্লা জিওন, তাফসিরে আহমদিয়্যাহ, পৃষ্ঠা-৪০৮)
❏ মিরকাতের প্রারম্ভে بَاب الْمسْح على الْخُفَّيْنِ শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
سُئِلَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ عَنْ عَلَامَاتِ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ؟ فَقَالَ: أَنْ تُحِبَّ الشَّيْخَيْنِ، وَلَا تَطْعَنَ الْخَتَنَيْنِ، وَتَمْسَحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ.
-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালিককে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আলামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তখন তিনি ফরমান-শায়খাইন অর্থাৎ হযরত সিদ্দীক ও ফারুক (رضي الله عنه) কে মুহাব্বত করা, হযরত আলী ও উছমান (رضي الله عنه) এর সমালোচনা না করা এবং চামড়ার মোজাদ্বয়ের মাসেহ করা।’’ ৮৮
➥{মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৭২, হাদিস-৫১৭}
❏ দুররুল মুখতারে المياه অধ্যায়ে উলেখিত আছে -
وَالتَّوَضُّؤُ مِنْ الْحَوْضِ أَفْضَلُ مِنْ النَّهْرِ رَغْمًا لِلْمُعْتَزِلَةِ.
-‘‘মুতাযিলাদেরকে উত্তেজিত করার জন্য হাউজের পানি দ্বারা ওযু করা আফযল।’’ ৮৯
➥{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৮৬।}
❏ একই জায়গায় ফত্ওয়ায়ে শামীতে উলেখিত আছে
لِأَنَّ الْمُعْتَزِلَةَ لَا يُجِيزُونَهُ مِنْ الْحِيَاضِ فَنُرْغِمُهُمْ بِالْوُضُوءِ مِنْهَا.
-‘‘মুতাযিলাগণ হাউজ থেকে ওযু করাকে নাজায়েয বলে। তাই আমরা হাউজ থেকে ওযু করে তাদেরকে উত্তেজিত করবো।’’ ৯০
➥{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৮৬।}
দেখুন হাউজ থেকে ওযু করা, চামড়ার মোজায় মাসেহ করা ইত্যাদি ওয়াজিব নয়, কিন্তু যেহেতু সেই যুগে এগুলোর অস্বীকারকারীর আবির্ভাব হয়েছিল, সেহেতু এগুলো সুন্নীদের লক্ষণ সাব্যস্ত করা হয়েছিল। অনুরূপ, কিয়াম, মীলাদ, ফাতিহা ইত্যাদি ওয়াজিব সমূহের অন্তর্ভূক্ত নয়। কিন্তু যখন এসবের অস্বীকারকারী সুষ্টি হয়ে গেছে, তাই বর্তমানকালে হিন্দুস্থানে এগুলো সুন্নী হওয়ার লক্ষণ এবং মীলাদ মাহফিলে কিয়ামের সময় একাকী বসে থাকা দেওবন্দী হওয়ার লক্ষণ।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.
-‘‘যে যেই কওমের সাথে সাদ্রশ্য রাখে, সে ওদেরই অন্তুর্ভূক্ত।’’ ৯১
➥{ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৪/৪৪ পৃঃ হা/৪০৩১, পরিচ্ছেদ: بَابٌ فِي لُبْسِ الشُّهْرَةِ , এমনকি আহলে হাদিস আলবানীও এটিকে হাসান, সহীহ বলেছেন।}
সুতরাং এর থেকে মুক্ত থাকা চাই। ফত্ওয়ায়ে শামী থেকে এটা বোঝা গেল, যদি কেউ কোন জায়েয বা মুস্তাহাব কাজ বিনা কারণে বাধা দেয়, তাহলে ওটা নিশ্চয় করে। বর্তমান হিন্দুস্থানে হিন্দুরা গাভী দ্বারা রুরবানী করা থেকে বাধা দেয়। কিন্তু মুসলমানগণ স্বীয় রক্ত দিয়ে একে চালু রেখেছেন, যদিওবা কেবল গাভী দ্বারা কুরবানী ওয়াজিব নয়। মীলাদ মাহফিল, কিয়াম ইত্যাদিও তদ্রুপ। ফিক্হ শাস্ত্রবিদগণের মতে পৈতা বাঁধা, হিন্দুদের মত মাথায় ঠিকি রাখা, ময়লা আর্বজনায় কুরআন শরীফ রাখা কুফরী, কেননা এগুলো কাফিরদের মাযহাবী লক্ষণ।
বিঃ দ্রঃ- এ প্রশ্নটা (৩নং) দেওবন্দীরা প্রায় সময় করে থাকে এবং ফাতিহা, উরস, মীলাদ ইত্যাদি সব কিছুকে হারাম বলে। এটাও বলে, আপনারা নিজেরাই সুন্নী হওয়ার লক্ষণ আবিষ্কার করলেন। অথচ হাদীস-কুরআনে এসব লক্ষণের কোন উলেখ নেই। সব ক্ষেত্রে উপরোক্ত জবাব দেয়া যাবে। এতে অনেক উপকার হবে, ইনশা-আল্লাহ।
৪ নং আপত্তিঃ
কারো সম্মানে দাঁড়ানো নিষেধ। যেমন, মিশকাত শরীফের باب القيام এ আছে-
وَكَانُوا إِذَا رَأَوْهُ لَمْ يَقُومُوا لِمَا يَعْلَمُونَ مِنْ كَرَاهِيَتِهِ لِذَلِكَ.
-‘‘সাহাবায়ে কিরাম হুযুর আলাইহিস সালামকে দেখতেন, দাড়াঁতেন না, কেননা তাঁরা জানতেন, এটা হুযুর আলাইহিস সালামের কাছে অপছন্দ।’’ ৯২
➥{টিকাঃ
ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৯০ পৃঃ হা/২৭৫৪, পরিচ্ছেদ: بَابُ مَا جَاءَ فِي كَرَاهِيَةِ قِيَامِ الرَّجُلِ لِلرَّجُلِ , ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৩৩১ পৃঃ হা/৪৬৯৮,
এ হাদিসটি এ দিক থেকে (হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে)
মাওকুফ, যা মারফু হাদিসের মোকাবেলায় গ্রহণযোগ্য নয়। অপরদিকে বর্ণনার দিক থেকে এটি গরীব; সনদ ইমাম তিরমিযি যদিও তিরমিযি হাসান, সহীহ বলেছেন। কিন্তু তিনি কিন্তু শেষে বলেছেন এটি বর্ণনার দিক থেকে গরীবও। অপরদিকে এ সনদে হাম্মাদ বিন সালামা নামক রাবীর শেষ বয়সে স্মৃতিশক্তি খারাপ হয়ে গিয়েছিল, ইমাম ইবনে হিব্বান বলেছেন, তিনি হাদিসে ভুল করতেন। তার বিষয়ে জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ দ্বিতীয় খন্ডের ২৪৪-২৪৯ পৃষ্ঠায় দেখুন।
এছাড়া আফ্ফান যার মূল নাম (عفان ابن مسلم ابن عبد الله الباهلي أبو عثمان الصفار) তার বিষয়ে আপত্তি আছে। তার বিষয়ে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন-
قال ابن المديني كان إذا شك في حرف من الحديث تركه وربما وهم
-‘‘ইমাম ইবনে মাদীনী বলেন,.......তিনি হাদিসে ভুল করতেন।’’ (তাক্বরিবুত তাহযিব, ৩৯৩ পৃঃ ক্রমিক- ৪৬২৫) তাই এ হাদিসকে সহীহ বলা সন্দাহতীত।}
❏ একই অধ্যায়ে আরো বর্ণিত আছে-
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَتَمَثَّلَ لَهُ الرِّجَالُ قِيَامًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
-‘‘যিনি পছন্দ করে যে লোক তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকুক, সে যেন দোষখে তার ঠিকানা অনুসন্ধান করে।’’ ৯৩
➥{ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৯০ পৃঃ হা/২৭৫৫, পরিচ্ছেদ: بَابُ مَا جَاءَ فِي كَرَاهِيَةِ قِيَامِ الرَّجُلِ لِلرَّجُلِ , ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৩৩১ পৃঃ হা/৪৬৯৯, হাদিসটি আমীরে মুয়াবীয়া (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।}
❏ মিশকাত শরীফের সেই একই অধ্যায়ে আরও এক জায়গায় আছে (হযতে আবু উমামা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন রাসূল ইরশাদ (ﷺ) করেন)-
لَا تَقُومُوا كَمَا تَقُومُ الْأَعَاجِمُ، يُعَظِّمُ بَعْضُهَا بَعْضًا
-‘‘আজমী (যারা আরবী নয়) লোকদের মত দাঁড়িও না।’’ ৯৪
➥{টিকাঃ
ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৪/৩৫৮ পৃঃ হা/৫২৩০, পরিচ্ছেদ: بَابٌ فِي قِيَامِ الرَّجُلِ لِلرَّجُلِ , খতিব তিবরিযি, মিশকাত, বাবুল কিয়াম, ৩/১৩৩২ পৃঃ হা/৪৭০০
☞এ হাদিসটি অত্যন্ত যঈফ। স্বয়ং আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম আলবানী মিশকাতের এবং সুনানে আবি দাউদের তাহকীকে একে যঈফ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এ হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন-
بِأَنَّهُ حَدِيثٌ ضَعِيفٌ مُضْطَرِبُ السَّنَدِ فِيهِ مَنْ لَا يُعْرَفُ
-‘‘নিশ্চয় এই হাদিসটি সনদের দিক থেকে যঈফ এবং মুযত্বারিব, কেননা সনদে এমন রাবী রয়েছেন যাদেরকে চিনা যায় না।’’ (ইবনে হাজার, ফতহুল বারী, ১১/৫০ পৃঃ )
☞উসূলে হাদিসের দৃষ্টিতে মুযত্বারিব শরিয়তের দলিল নয়। এ নীতিমালা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ দ্বিতীয় খন্ডের ৭৪৮-৭৫০ পৃষ্ঠায় দেখুন। তাই এই হাদিস দিয়ে কিয়ামের বিরোদ্ধে দলিল দেয়ার কোন সুযোগ নেই।}
এ হাদীস সমূহ থেকে বোঝা গেল, কোন বড় লোক যদি কোন স্থানে আগমন করেন, তাঁর সম্মানে দাড়ঁবেন না। মীলাদ শরীফতো হুযুর আলাইহিস সালাম আসেনওনা, তথাপি তাযীমী কিভাবে জায়েয হতে পারে?
উত্তর: উপরোক্ত হাদীস সমূহ সব কিয়ামের ব্যাপারে নিষেধ করা হয়নি, কেবল যারা নিজের জন্য অন্যদের দন্ডায়মান হওয়া কামনা করে, জনগণ বিনীতভাবে দাঁড়িয়ে রইল আর নেতাজী মাঝখানে বসে রইলেন, এ ধরনের দাঁড়ানো নিষেধ। তা না হলে প্রথম অধ্যায়ে আমি যে সব হাদীস সমূহ ও ফকীহগণের উক্তি উদ্ধৃতি করেছি, এর বিপরীত হবে। আমিও লিখেছি, ওই দু’ধরনের দন্ডায়মান নিষেধ।
❏ প্রথম হাদীছের প্রেক্ষাপটে আশআতুল লুমআতে লিখা হয়েছে-
وحاصل انكه قيام وترك قيام بحسب زمان واحوال واشخاص مختلف گردد وازيں جا است كه گاهے كردند گاهے نه كرد ند.
সারকথা হলো, তাযীমী কিয়াম করা ও না করাটা যুগ, অবস্থা এবং ব্যক্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন হয়ে থাকে। অনুরূপ সাহাবায়ে কিরাম হুযুরের জন্য কোন সময় কিয়াম করেছেন আবার কোন সময় করেননি।’’ এতে বোঝা গেল, সাহাবায়ে কিরাম হুযুর আলাইহিস সালামের তশরীফ আনয়নে কোন সময় দাঁড়িয়ে যেতেন এবং কোন সময় দাঁড়াতেন না। না দাঁড়ানোর কথা এখানে উলেখিত হয়েছে এবং দাঁড়ানোর কথা ইতোপূর্বে উলেখিত করা হয়েছে। তিনি (ﷺ) কিয়ামকে অপছন্দ করেছেন বিনয় ও ভদ্রতা হিসেবে। সুতরাং এখানে কিয়ামকে সার্বিকভাবে নিষেধ করেননি, সব সময় দাঁড়িয়ে থাকাকে নিষেধ করা হয়েছে।
❏ উপরোক্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় হাদীছ প্রসংগে ‘আশ্ আতুল লুমআতে’ আছে-
قيام مكرده بعينه نيست بلكه مكروه محبت قيام است اگروے محبت قيام نه دارد قيام برائے دے مكروه نيست. قاضى عياض مالكى گفته كه قيام منهى در حق كسى است كه سته باشد وايستاده باشند پيش دے ودر قيام تعظيم برائے اهل بجهت دنيائے ايشاں وعيد دارد شد ومكروه است.
-‘‘কিয়াম মাকরূহ নয় বরং কাম্য করাটা মাকরূহ। যদি কেউ কিয়াম কামনা না করে, তাহলে তার সম্মানে কিয়াম করা মাকরূহ নয়। কাজী আয়ায বলেছেন-কিয়াম ওই ব্যক্তির জন্য নিষেধ, যিনি নিজে বসে রইলেন আর লোকেরা দাঁড়িয়ে রইলো এবং দুনিয়াদারী ব্যক্তির জন্য তাযীমী কিয়াম করা সম্পর্কে সাবধানবাণী এসেছে এবং এটা মাকরূহ।’’
❏ অনুরূপ মিশকাত শরীফের কিতাবুল জিহাদ حكم الاسرار শীর্ষক অধ্যায়ের হাশিয়ায় قُومُوا إِلَى سَيِّدِكُمْ হাদীস প্রসংগে লিপিবদ্ধ আছে (মূলত এই ইবারতটি মিশকাতের হাশীয়াকারী আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারীর মিরকাত গ্রন্থ হতে নেয়া হয়েছে)-
قَالَ النَّوَوِيُّ: فِيهِ إِكْرَامُ أَهْلِ الْفَضْلِ وَتَلَقِّيهِمْ وَالْقِيَامُ لَهُمْ إِذَا أَقْبَلُوا وَاحْتَجَّ بِهِ الْجُمْهُورُ، وَقَالَ الْقَاضِي عِيَاضٌ: لَيْسَ هَذَا مِنَ الْقِيَامِ الْمَنْهِيِّ عَنْهُ، وَإِنَّمَا ذَاكَ فِيمَنْ يَقُومُونَ عَلَيْهِ وَهُوَ جَالِسٌ، وَيَتَمَثَّلُونَ قِيَامًا طُولَ جُلُوسِهِ.
-‘‘ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, বুর্যুগানে কিরামের প্রতি তাযীম, তাঁদের সাথে দেখা করা এবং তাঁদের জন্য দাঁড়ানো এ হাদীছ থেকে প্রমাণিত। অধিকাং উলামায়ে কিরাম এর দলীল থেকে দলীল পেশ করেন। এ কিয়ামটা নিষিদ্ধ কিয়াম সমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়। নিষিদ্ধ কিয়াম হচ্ছে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে রইলো আর তিনি বসে আছেন এবং তাঁর বসে থাকা পর্যন্ত লোক দাঁড়িয়ে রইলো।’’ ৯৫
➥{আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৬/২৫৪৭ পৃঃ হা/৩৯৬৩ এর ব্যাখ্যা, আরও দেখুন হাশীয়ে মেশকাত, কিতাবুল জিহাদ, পরিচ্ছেদ: হুকুমুল ইসরা, পৃষ্ঠা-৩৪৪, নূর মোহাম্মদ কুতুবখানা, করাচী, পাকিস্তান।}
এসব ভাষ্য থেকে বোঝা, ওই হাদীস দুটি দ্বারা বিশেষ কিয়াম নিষেধ করা হয়েছে। মীলাদ মাহফিলের কিয়াম এর অন্তর্ভুক্ত। অধিকন্তু যদি তাযীমী কিয়াম নিষেধ হয়, তাহলে দেওবন্দী উলেমা ও অন্যান্যদের আগমনে জনগণ যে সশরেির দাঁড়িয়ে যান, তা কেন জায়েয হবে?
━━━━━━━━━━
No comments