হাযির-নাযির’ বিষয়ক হাদীছ সমূহের বর্ণনা

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

(‘হাযির-নাযির’ বিষয়ক হাদীছ সমূহের বর্ণনা)


এখানে সে সমস্ত হাদীছের উলে­খ করা হবে, যেগুলি ‘ইলমে-গায়ব’ এর মাসআলায় পূর্বেই আলোচিত হয়েছে। সে সব হাদীছের মধ্যে হাদীছ নং ৬, ৭, ৮ ও ৯ বিশেষ উলে­খযোগ্য। সেগুলোর মূল কথা হলো সমস্ত জগতকে আমি হাতের তালুর মত স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।’ ‘আমার উম্মতকে তাদের নিজ নিজ আকৃতিতে আমার নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল, আমি তাদের নাম, তাদের বাপ-দাদাদের নাম, এমন কি, তাদের ঘোড়াসমূহের বর্ণ সম্পর্কেও জ্ঞাত’ ইতাদি ....। এভাবে ওসব হাদীছের ব্যাখ্যায় হাদীছবেত্তাগণের যে সব উক্তি পূর্বে উলে­খিত হয়েছে, সেগুলো বিশেষ করে, ‘মিরকাত’, ‘যুরকানী’ ইত্যাদি গ্রন্থের ইবারতসমূহও এখানে বর্ণিত হবে। এছাড়া নিম্নে বর্ণিত হাদীছ সমূহও এখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে।


❏ সুবিখ্যাত হাদীছ গ্রন্থ ‘মিশকাত’ শরীফের ‘ইছবাতু আযাবিল কবর’ শীর্ষক অধ্যায়ে (হযরত আনাস বিন মালেক  (رضي الله عنه) হতে) বর্ণিত আছেঃ


(১)فَيَقُولَانِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ


-‘‘মুনকার-নকীর ফিরিশতাদ্বয় কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন, ওনার [মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)] সম্পর্কে তুমি কি ধারণা পোষন করতে?  

{ক. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ১/৪৫ পৃ. হাদিসঃ ১২৬

খ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ৪/২২০০ হাদিসঃ ১৮৭০

গ. বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৩/২০৫, হাদিসঃ ১৩৩৮

ঘ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/৪৪২ হাদিসঃ ৭০

ঙ. নাসায়ীঃ সুনানে কোবরাঃ ৪/৯৭ পৃ. হাদিসঃ ২০৫১

চ. আবু দাউদঃ আস্-সুনানঃ ৫/১১৪ পৃ. হাদিসঃ ৪৭৫২}

 

❏ হাদীছের সুবিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আশিআতুল লুমআত’ এ উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ


 يعنى هذا الرجل كه فى گويند انحضرت رامى خواهند


অর্থাৎ هَذَا الرَّجُلِ দ্বারা হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র গুণাবলী সত্ত্বার প্রতিই নির্দেশ করা হয়ে থাকে।

{শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীঃ আশিয়াতুল লুমআতঃ ১/১১৫ পৃ.}


❏ উক্ত ব্যাখ্যাগ্রন্থে এ হাদীছের ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছেঃ


ياباحضار ذات شريف وى در عيانے به ايںطريق كه در قبر مثالے دے عليه السلام حاضر ساخته باشند ودريں جابشارتے است عظيم مر مشتاقان غمزده راه كه اگر براميدايںشادى جان دهنده وزنده در گوروند جائے دارد


কিংবা কবরের মধ্যে হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র সত্ত্বাকে দৃশ্যতঃ উদ্ভাসিত করা হয়। এটা এভাবেই হয় যে, কবরে তাঁর জিসমে মিছালীকে উপস্থাপন করা হয়। এখানে নবী (ﷺ) এর দীদারের প্রত্যাশী চিন্তিত ব্যক্তিবর্গের জন্য এটাই শুভ সংবাদ যে, তাঁরা যদি এ প্রত্যাশিত সাক্ষাতের আশায় প্রাণ বিসর্জন দিয়ে কবরে চলে যান, তাহলে তাঁদেরও এ সুযোগ রয়েছে।

{শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীঃ আশিয়াতুল লুমআতঃ ১/১১৫-১১৬ পৃ.}

 

❏ ‘মিশকাত’ শরীফের হাশিয়ায় সে একই হাদীছের ব্যাখ্যায় উলে­খিত আছেঃ


قِيْلَ يَكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حتَّى يَرَى النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلامُ وَهِىَ بُشْرَى عَظِيْمَةُ


-‘‘বলা হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির দৃষ্টি থেকে আবরণ উঠিয়ে নেয়া হয়, যার ফলে সে নবী করীম (ﷺ)কে দেখতে পায়। এটা তার জন্য বড়ই শুভ সংবাদ।’’

{হাশীয়ায়ে মেখাতঃ ২৪ পৃ. নূর মুহাম্মদ কুতুবখানা, করাচী।}

 

❏ সুপ্রসিদ্ধ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘কুস্তালানী’র ৩য় খন্ডের ৩৯০ পৃষ্ঠায় ‘কিতাবুল জানায়েযে’ বর্ণিত আছেঃ


فَقِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرْىَ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ وَهِىَ بَشْرَى عَظِيْمَةُ لِلْمُؤْمِنِ اِنْ صَحَّ


-‘‘এও বলা হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির দৃষ্টির আবরণ অপসারণ করা হয়, যার দরুণ সে নবী আলাইহিস সালামকে দেখতে পায়। এটি মুসলমানদের জন্য বড় সুখের বিষয়, যদি সে সঠিক পথে থাকে।’’

{ইমাম কুস্তালানীঃ ইরশাদুস্-সারীঃ ২/৪৬৪পৃ.}


কেউ কেউ উক্ত হাদীছে উলে­খিতঃ هَذَا الرَّجُلِ (এ ব্যক্তি) বলে হৃদয় ফলকে অংকিত হুজুর (ﷺ) এর মানসিক প্রতিচ্ছবির প্রতি ইঙ্গিত করা হয় বলে মতে পোষণ করেন। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তিকে ফিরিশতাগণ জিজ্ঞাসা করেনঃ তোমার অন্তরে যে মহান সত্ত্বার প্রতিচ্ছবি বিদ্যমান রয়েছে, তাঁর সম্পর্কে তুমি কি ধারণা পোষণ করতে?’ কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। কেননা সে ক্ষেত্রে মৃত কাফির ব্যক্তিকে এ প্রশ্ন করার যৌক্তিকতা থাকেনা। কারণ, কাফিরের অন্তরে হুজুর (ﷺ) সম্পর্কে কোনরূপ ধারণা থাকার কথা নয়। অধিকন্তু, তা যদি হত, মৃত কাফির সে প্রশ্নের উত্তরে বলত না ‘আমি জানি না’, বরং বলতে ‘আপনারা কার কথা জিজ্ঞাসা করছেন?’ উত্তরে তার لاَاَدْرِىْ (আমি জানি না) বলার ব্যাপার থেকে জানা যায় যে, সেও হুযুর আলাহিস সালামকে স্বপক্ষে দেখে, তবে চিনতে বা পরিচয় করতে পারে না। সুতরাং, উক্ত প্রশ্নে মানসিক কোন প্রতিচ্ছবির কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, বরং প্রকাশ্যে বিরাজমান সেই মহান সত্ত্বার প্রতি ইঙ্গিত করেই প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।


এ হাদীছ ও সংশি­ষ্ট উদ্ধৃতিসমূহ থেকে জানা যায় যে, কবরের মধ্যে হুজুর (ﷺ) এর দীদার লাভের সুবন্দোবস্ত করেই আলোচ্য প্রশ্নের অবতারণা করা হয়। জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘এ শামসুদ্দোহা বদরুদ্দুজা (ﷺ) যিনি তোমার সামনেই দৃশ্যমান আছেন, তাঁর সম্পর্কে তোমার কি মত?’ هَذَا (এই) সর্বনাম দ্বারা নিকটবর্তী ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়ে থাকে। এতে বোঝা যায়, হুজুর (ﷺ)কে দেখিয়ে ও নিকটে উপস্থাপন করেই উক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। এজন্য সুফীয়ানে কিরাম ও আশেকগণ মৃত্যুর প্রত্যাশা করে থাকেন ও কবরের প্রথম রজনীকে বরের সঙ্গে প্রত্যাশিত সাক্ষাতের রাত রূপে গণ্য করেন। যেমন


❏ আ’লা হযরত (رحمة الله) বলেনঃ


جان توجاتے ہی جائيگى قيامت يه بے – كه يماں مرنے په هبراهے نظاره تيرا


অর্থাৎ প্রাণতো চলে যাবেই। এ প্রাণ যাবার ব্যাপারটি হচ্ছে ‘কিয়ামত’। তবুও সুখের বিষয় যে, এরপর প্রিয় নবী (ﷺ) এর সাক্ষাত লাভের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করার সুবন্দোবস্ত রয়েছে।


❏ মৌলানা আসী বলেনঃ


آج پهولے نه سمائيں گے كفن ميں آسى

جس کے جوياں تهے هے اس گل كى ملاقات كى رات


অর্থাৎ কবরে গমনের প্রথম রাতে কাফন পরিহিত অবস্থায় এজন্য গর্ববোধ করব যে, যে ফুলের (প্রিয়নবী (ﷺ)] সান্নিধ্য লাভের সারাজীবন প্রত্যাশী হয়ে আসছি, আজ রাতই হচ্ছে সে ফুলের সংস্পর্শে আসার প্রকৃষ্ট সময়।


❏ আমি আমার রচিত ‘দীওয়ানে সালেক’ কাব্য গ্রন্থে লিখেছিঃ


مرقد كى پهلى شب ہے دو لها كى شب

اس شب کے عيدصد قے اس كا جواب كيسا


অর্থাৎ কবরের প্রথম রাত হচ্ছে সে মহান বরের (প্রিয়নবী (ﷺ)] দর্শন লাভের সৌভাগ্য রজনী। একজন আশেক এর জন্য ঈদের আনন্দও এ রাত্রির অপূর্ব আনন্দের কাছে মূল্যহীন। এ রাতেই প্রিয়জনের সান্নিধ্য লাভের অনাস্বাদিত সুখানুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না।


এ জন্যই বুযুর্গানে দ্বীনের পরলোক গমনের দিনকে বলা হয় ‘উরসের দিন’। ‘উরসে’ শব্দের অর্থ হলো শাদী বা আনন্দ। ঐ দিনই হচ্ছে দু‘জাহানের ‘দুলহা’ عروس হুজুর (ﷺ) এর দর্শন লাভের দিন।


লক্ষ্যণীয় যে, একই সময় হাজার হাজার মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করা হয়ে থাকে। হুজুর (ﷺ) যদি ‘হাযির-নাযির’ না হয়, তাহলে প্রতিটি কবরে তিনি উপস্থিত থাকেন কি রূপে? অতএব, প্রমাণিত হলে যে, আমাদের দৃষ্টির উপরই আবরণ বা পর্দা রয়েছে, ফিরিশতাগণ এ পর্দা অপসারণ করে দেন। যেমন, কেউ দিনে তাবুর মধ্যে অবস্থান করছে বিধায় সূর্য তার দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না, এমন সময় কেউ এসে উপর থেকে তাবু হটিয়ে তাকে সূর্য দেখিয়ে দিল।


(২) মিশকাত শরীফের بَابُ التَّحْرِيضِ عَلَى قِيَامِ اللَّيْلِ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত উম্মে সালমা  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছেঃ


اسْتَيْقَظَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً فَزِعًا يَقُولُ: سُبْحَانَ اللَّهِ مَاذَا أُنْزِلَ اللَّيْلَةَ مِنَ الْخَزَائِنِ؟ وَمَاذَا أُنْزِلَ مِنَ الْفِتَنِ؟


-‘‘এক রাতে হুজুর (ﷺ) ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় ঘুম থেকে জাগরিত হলেন, বিস্ময়াবিভূত হয়ে বলতে লাগলেন ‘সুবহানাল্লা! আজ রাত কতই না ঐশ্বর্য সম্ভার ও ফিতনা (বালা, মুসীবত ইত্যাদি) অবতীর্ণ করা হলো!।’’

{ক. খতিব তিবরিযীঃ মিশকাতঃ ১/১০৯ পৃ. হাদিসঃ ১২২২

খ. ইমাম ইবনুল বার্ঃ আত্-তামহীদঃ ২৩/৪৪৮ পৃ.

গ. ইমাম বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৩/১০ পৃ. হাদিসঃ ১১২৬

ঘ. তিরমিজীঃ আস-সুনানঃ ৪/৪২২ পৃ. হাদিসঃ ২১৯৬

ঙ. ইমাম মালেকঃ আল-মুয়াত্তাঃ ২/৯১৩ পৃ. হাদিসঃ ৮, কিতাবুল লিবাস}


এ থেকে জানা যায় যে, ভবিষ্যতে যে সব ‘ফিতনা’ আত্মপ্রকাশ করবে, সেগুলো তিনি স্বচক্ষে অবলোকন করেছিলেন।


(৩) মিশকাত শরীফের المعجزات শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আনাস  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছেঃ


أَنَسٍ قَالَ نَعَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَيْدًا وَجَعْفَرًا وَابْنَ رَوَاحَةَ لِلنَّاسِ قَبْلَ أَن يَأْتِيهِ خَبَرُهُمْ فَقَالَ أَخْذَ الرَّايَةَ زِيدٌ فَأُصِيبَ ثُمَّ أَخَذَ جَعْفَرٌ فَأُصِيبَ ثُمَّ أَخَذَ ابْنُ رَوَاحَةَ فَأُصِيبَ وَعَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ حَتَّى أَخَذَ الرَّايَةَ سَيْفٌ من سيوف الله حَتَّى فتح الله عَلَيْهِم. رَوَاهُ البُخَارِيّ


-‘‘হযরত যায়েদ, জা’ফর ও ইবন রাওয়াহা (রিদওয়ানুল্লাহে আলাইহিম আজমায়ীন) প্রমুখ সাহাবীগণের শাহাদত বরণের সংবাদ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আসার আগেই হুজুর (ﷺ) মদীনার লোকদেরকে উক্ত সাহাবীগণের শহীদ হওয়ার কথা জানিয়ে দেন। তিনি বলেনঃ পতাকা এখন হযরত যায়দের  (رضي الله عنه) হাতে, তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহর তলোয়ার’ উপাধিতে ভূষিত সাহাবী হযরত খালেদ বিন ওয়ালীদ  (رضي الله عنه) ঝান্ডা হাতে নিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তাঁকে জয় যুক্ত করলেন।’’

{ক. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ৪/৩৮৪ পৃ. হাদিসঃ ৫৮৮৯

খ. বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৭/৫১২ পৃ. হাদিসঃ ৪২৬২}


এতে বোঝা গেল, মদীনা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত যুদ্ধ ক্ষেত্র ‘বে’রে মউনা’য় যা কিছু হচ্ছিল, হুজুর (ﷺ) তা’ সুদূর মদীনা থেকে অবলোকন করছিলেন।


(৪) মিশকাত শরীফের ২য় খন্ডের بَاب الكرامات অধ্যায়ের পর وَفَاةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত উকবা বিন আমের  (رضي الله عنه) হতে উলে­খিত আছেঃ


وَإِنَّ مَوْعِدَكُمُ الْحَوْضُ وَإِنِّي لَأَنْظُرُ إِلَيْهِ من مَقَامِي


-‘‘তোমাদের সঙ্গে আমার পুনরায় সাক্ষাতকারের জায়গা হল ‘হাউজে কাউছার’ যা আমি এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছি।’’

{ক. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ৪/৪০২ পৃ. হাদিসঃ ৫৯৫৮

খ. বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৭/৩৪৮ হাদিসঃ ৪০৪২

গ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ৪/১৭৭৫ হাদিসঃ ২২৯৬

ঘ. নাসায়ীঃ সুনানে কোবরাঃ ৪/৬১ পৃ. হাদিসঃ ১৯৫৪

ঙ. আহমদ ইবনে হাম্বলঃ আল-মুসনাদঃ ৪/১৪৮

চ. মুসলিমঃ আস্-সহীহঃ প্রথম খন্ডঃ হাদিসঃ৩০}

 


(৫) মিশকাত শরীফের بَاب تَسْوِيَة الصَّفّ শিরোনামের অধ্যায়ে আনাস  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছেঃ


أَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ وَتَرَاصُّوا فَإِنِّي أَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِي


-‘‘নামাযে তোমাদের কাতার সোজা রাখ’ জেনে রাখ, আমি তোমাদেরকে পেছনের দিক থেকেও দেখতে পাই।’’

{ক. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ১/২১৭ পৃ. হাদিসঃ ১০৮৬

খ. বুখারীঃ আস-সহীহঃ কিতাবুস্-সালাতঃ ২/২০৮ হাদিসঃ ৭১৯

গ. আবু নঈমঃ দালায়েলুল নবুয়তঃ পৃ. ৭১, হাদিসঃ ৫৬

ঘ. আবু আওয়ানাহঃ আল-মুসনাদঃ ১/৪৬২, হাদিসঃ ১৭১৭

ঙ. আবু আওয়ানাহঃ আল-মুসনাদঃ ১/৪৬২, হাদিসঃ ১৭১৫

চ. আবু আওয়ানাহঃ আল-মুসনাদঃ ১/৪৬১, হাদিসঃ ১৭০৭

ছ. আল-মাকদাসীঃ আল-আহাদিসুল মুখতারঃ ৬/১০৪ হাদিসঃ ২০৯২

জ. ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তীঃ জামেউস-সগীরঃ ১/৮৫ হাদিসঃ ১৩৭০-১৩৭২

ঝ. ইউসূফ নাবহানীঃ ফতহুল কবীরঃ ১/২০৮ হাদিসঃ ২২৫৮

ঞ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/৩২৪ পৃ. হাদিসঃ ৪৩৪ এবং ১২৫

ট. নাসায়ীঃ আস-সুনানুল কোবরাঃ ২/৯২ পৃ. হাদিসঃ ৮১৪}

 


(৬) সুপ্রসিদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ ‘তিরমিযী শরীফ’ ২য় খন্ডের ‘বাবুল ইলম’ এর অন্তভুর্ক্ত مَا جَاءَ فِىْ ذَهَابِ الْعِلْمِ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আবু দারদা  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে-


كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَشَخَصَ بِبَصَرِهِ إِلَى السَّمَاءِ ثُمَّ قَالَ: هَذَا أَوَانُ يُخْتَلَسُ العِلْمُ مِنَ النَّاسِ حَتَّى لَا يَقْدِرُوا مِنْهُ عَلَى شَيْءٍ


-‘‘একদা আমরা হুজুর (ﷺ) এর সাথেই ছিলাম। তিনি আসমানের দিকে দৃষ্টি করে বললেনঃ ইহা সে সময়, যখন জনগণ থেকে জ্ঞান ছিনিয়ে নেয়া হবে। শেষ পর্যন্ত তারা এ জ্ঞানের কিছুই ধারণ করতে পারবে না।’’

{ ইমাম তিরমিজীঃ কিতাবুল ইলমঃ ৫/৩১ হাদিসঃ ২৬৫৩}

 

এ হাদীছের ব্যাখ্যায় হাদীছের সুবিখ্যাত ভাষ্যকার মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) তাঁর বিরচিত “মিরকাত” এর ‘কিতাবুল ইলম’ এ বলেছেনঃ


قَالَ الطِّيبِيُّ: فَكَأَنَّهُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ لَمَّا نَظَرَ إِلَى السَّمَاءِ كُوشِفَ بِاقْتِرَابِ أَجَلِهِ فَأَخْبَرَ بِذَلِكَ


-‘‘ইমাম তিব্বী (رحمة الله) বলেন, হুজুর (ﷺ) যখন আসমানের দিকে তাকালেন, তখন তাঁর নিকট প্রকাশ পায় যে তাঁর পরলোক গমনের সময় ঘনিয়ে আসছে। তখনই তিনি সে সংবাদ দিয়েছিলেন।’’

{মোল্লা আলী ক্বারীঃ মেরকাতঃ ১/৩২০পৃ. হাদিসঃ ২৪৫}


(৭) মিশকাত শরীফের ‘বাবুল ফিতান’ এর প্রারম্ভে প্রথম পরিচ্ছেদে হযরত উসামা ইবনে যায়েদ  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছেঃ হুজুর (ﷺ) একদা মদীনা মুনাওয়ারার এক পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে সাহাবায়ে কিরামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমি যা কিছু দেখতে পাচ্ছি, তা তোমরাও কি দেখছ?’ আরয করলেনঃ ‘জি, না। তখন তিনি ইরশাদ করেনঃ


فَإِنِّي لَأَرَى الْفِتَنَ تَقَعُ خِلَالَ بُيُوتِكُمْ كَوَقْعِ الْمَطَرِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ


-‘‘আমি তোমাদের বাড়ীতে ফিতনাসমূহ একটি পর একটি বৃষ্টির মত পতিত হতে দেখতে পাচ্ছি।’’

{এখানে ইবারতে ভুল হয়েছে, মূলত হবে-


فإنى لأرى الفتن تقع خلال بيوتكم كوقع المطر


ক. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ৪/৪৬২

খ. বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৪/৯৪ হাদিসঃ ১৮৭৮

গ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ৪/২২১১ পৃ. হাদিসঃ ২৮৮৫

ঘ. আহমদ ইবনে হাম্বলঃ আল-মুসনাদঃ ৫/২০০ পৃ.

ঙ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ হাদিসঃ ৯}


বোঝা গেল যে, কুখ্যাত ইয়াযীদ ও হাজ্জাজের শাসনামলে তথা হুযুর (ﷺ) এর ইনতিকালের পরে যে সব ফিৎনা-ফ্যাসাদ সংঘটিত হবার ছিল, সেগুলো তিনি অবলোকন করেছিলেন। এগুলিই একটির পর একটি আত্মপ্রকাশ করতে দেখতে পাচ্ছিলেন।

উলে­খিত হাদীছ সমূহের আলোকে একথাই জানা গেল যে, হুজুর (ﷺ) তাঁর সত্যদর্শী দৃষ্টিতে ভবিষ্যতের ঘটনাবলী, দুরের ও নিকটের যাবতীয় অবস্থা, হাউজে কাউছার, বেহেশত-দোযখ ইত্যাদি অবলোকন করেন। তাঁরই বদৌলতে তাঁর ভক্ত ও অনুরক্ত খাদিমগণকেও আল্লাহ তা’আলা এ শক্তি ও জ্ঞান দান করে থাকেন।


(৮) মিশকাত শরীফের ২য় খন্ডের باب الكرامات শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছেঃ হযরত উমর  (رضي الله عنه) হযরত সারিয়া  (رضي الله عنه) কে এক সেনা বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে ‘নেহাওয়ানন্দ’ নামক স্থানে পাঠিয়েছিলেন। এরপর একদিন হযরত উমর ফারুক  (رضي الله عنه) মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পাঠের সময় চিৎকার করে উঠলেন। হাদীছের শব্দগুলো হলঃ


فَبَيْنَمَا عُمَرُ يَخْطُبُ، فَجَعَلَ يَصِيحُ: يَا سَارِيَ! الْجَبَلَ


-‘‘হযরত উমর  (رضي الله عنه) মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পড়ার সময় চিৎকার করে বলে উঠলেন ‘ওহে সারিয়া! পাহাড়ের দিকে পিঠ দাও।’’


বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত সেনাবাহিনী থেকে বার্তা বাহক এসে জানানঃ আমাদিগকে শত্রুরা প্রায় পরাস্ত করে ফেলেছিল। এমন সময় কোন এক আহ্বানকারীর ডাক শুনতে পেলাম। উক্ত অদৃশ্য আহ্বানকারী বলেছিলেনঃ ‘সারিয়া! পাহাড়ের শরণাপন্ন হও।’ তখন আমরা পাহাড়কে পিঠের পেছনে রেখে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলাম। এরপর আল্লাহ আমাদের সহায় হলেন, ওদেরকে পযুর্দস্ত করে দিলেন।

{ক. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ৪/৪৪৬ পৃ. হাদিসঃ ৫৯৫৪

খ. বায়হাকীঃ দালায়েলুল নবুয়তঃ ৬/৩৭০ পৃ.

গ. শায়খ ইউসূফ নাবহানীঃ হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীনঃ ৬১২-৬১৩ পৃ.

ঘ. আবু নঈম ইস্পহানীঃ দালায়েলুল নবুয়তঃ পৃ. ৫১৮-৫১৯

ঙ. মুত্তাকী হিন্দীঃ কানযুল উম্মালঃ ৫৭১ পৃ. হাদিসঃ ৩৫৭৮৮

চ. বায়হাকীঃ কিতাবুল ই’তিকাদঃ ২০৩ পৃ.

ছ. ইমাম ত্ববারীঃ তারীখে ত্ববারীঃ ৩/২৫৪ পৃ.

জ. ইবনে হাজার আসকালানীঃ ইসাকাঃ ৩/৬ হাদিসঃ ৩০৩৬

ঝ. ইমাম গাজ্জালীঃ ইহইউ লুমুদ্দীনঃ ৩/২৫ পৃ. আহলে হাদিস আলবানী তার সিলসিলাতুল সহিহার ৩/১০১পৃ. হাদিস নং.১১১০}

 

(৯)হযরত হারিছ ইবনে নুমান  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন, একবার আমি (হারিছ) হুজুর (ﷺ) এর খিদমতে উপস্থিত হই। সরকারে দু’জাহান আমাকে জিজ্ঞাস করলেন, ‘হে হারিছ, তুমি কোন অবস্থায় আজকের এ দিনটিকে পেয়েছ?” আরয করলামঃ খাঁটি মুমিন। পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার ঈমানের স্বরূপ কি? আরয করলামঃ


وَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى عَرْشِ رَبِّي بَارِزًا، وَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى أَهْلِ الْجَنَّةِ يَتَزَاوَرُونَ فِيهَا، وَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى أَهْلِ النَّارِ يَتَضَاغَوْنَ فِيهَا.


-‘‘আমি যেন খোদার আরশকে প্রকাশ্যে দেখছিলাম। জান্নাতবাসীদেরকে পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাত করতে এবং দোযখবাসীদেরকে অসহনীয় যন্ত্রণায় হট্টগোল করতে দেখতে পাচ্ছিলাম।’’

{ইমাম আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৬/১৭০পৃ. হাদিসঃ ৩০৪২৩-২৫, মাকতাবাতুর রাশাদ, রিয়াদ, সৌদি, ইমাম আব্দুর রায্যাক, জামেউ মা‘মার বিন রাশাদ, ১১/১২৯পৃ. হাদিসঃ ২০১১৪, ইবনে মোবারক, আয্-যুহুদ ওয়াল রিকাক, ১/১০৬পৃ. হাদিসঃ ৩১৪, ইবনে আরাবী, মু‘জাম, ১/১৩০পৃ. হাদিসঃ ২০৬, বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ১৩/১৫৯পৃ. হাদিসঃ ১০১০৭ ও ১০১০৮, ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এ হাদিসটির আকেটি সুত্র সাহাবি হযরত আনাস বিন মালেক  (رضي الله عنه) হতে সংকলন করেন ( শুয়াবুল ঈমান, ১৩/১৫৮পৃ. হাদিসঃ ১০১০৬) ইমাম তাবরানী, মু’জামুল কবীরঃ ৩/২৬৬ হাদিসঃ ৩৩৬৭}


❏ এ কাহিনীটি প্রসিদ্ধ ‘মছনবী শরীফে’ ও সুন্দরভাবে বিধৃত হয়েছেঃ


ہشت جنت هفت دوزخ پيش من

ہست پيدا همچوں بت پيش ثمن

يك بيك دامى شنا سم خلق را

ہمچو گندم من زجودر آسيا

كه بهشتى كه دزيگا نه كى است

پيش من پيدا چو مورد ماهى است

من بگو يميافر د بندم نفس

لب گز يد ش مصطفے يعنى كه بس


ভাবার্থঃ হযরত হারিছ  (رضي الله عنه) বলেছিলেন আমার দৃষ্টির সামনে আটটি বেহেশত ও সাতটি দোযখ এমনভাবে উদ্ভাসিত, যেমন হিন্দুদের সামনে তাদের প্রতিমা বিদ্যমান রয়েছে। সৃষ্টির প্রত্যেক ব্যক্তি ও প্রত্যেকটি বস্তুকে এমনভাবে চিনতে পারছিলাম, যেমন গম চূর্ণ করার সনাতন চাক্কীর মধ্যে গম ও যবকে স্পষ্টরূপে চিনা যায়। জান্নাতবাসী দোযখবাসী মাছ ও পিঁপড়ার মত স্পষ্টরূপে আমার সামনে উদ্ভাসিত ছিল ইয়া রাসূলুল্লাহ! এখানেই ক্ষান্ত হব, না আরো কিছু বলব? হুযুর (ﷺ) তাঁর মুখ চেপে ধরে বললেন, আর কিছু বলার দরকার নেই।


এখন লক্ষ্যণীয় যে, সূর্যের পরমাণু সদৃশ সাহাবীগণের দৃষ্টিশক্তির এ অবস্থা যে, বেহেশত-দোযখ, আরশ-পাতালপুরী, জান্নাতবাসী ও দোযখবাসীকে স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছেন, তাহলে দু’জাহানের সূর্য সদৃশ নবী করীম (ﷺ) এর দৃষ্টিশক্তি কোন আপত্তি তোলার অবকাশ আছে কি?

━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah 
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।

No comments

Powered by Blogger.