দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

(অদৃশ্য বিষয়াদির জ্ঞানের অস্বীকৃতিসূচক হাদীছসমূহের বর্ণনা)



ভিন্নমতাবলম্বীগণ অদৃশ্য জ্ঞানের অস্বীকৃতির সমর্থনে অনেক হাদীছ উপস্থাপন করে থাকেন। সে সমস্ত দলীলের সার্বিক মোটামুটি উত্তর হলো, সেই হাদীছসমূহে  রাসূল (ﷺ) কোথাও একথা বলেন নি যে, আল্লাহ তা’আলা আমাকে অমুক বিষয়ের জ্ঞান দান করেন নি। বরং,


❏ কোন হাদীছে আছে اَللهُ اَعْلَمُ (আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত), কোন জায়গায় আছে- ‘আমি কি জানি?’


❏ কোন জায়গায় উল্লেখিত আছে- ‘অমুক বিষয় সম্পর্কে  রাসূল (ﷺ) কিছুই বলেন নি,


❏ আবার কোন জায়গায় আছে- ‘ রাসূল (ﷺ) অমুক ব্যক্তির নিকট একথাটি জিজ্ঞাসা করেছিলেন।


এসব উক্তি থেকে ইলমে গায়েবের অস্বীকৃতি প্রকাশ পায় না। কোন কথা না বলা বা কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা বা ‘আল্লাহই অধিক জ্ঞাত’ বলার মধ্যে অনেক কল্যাণময় উদ্দেশ্য নিহিত থাকতে পারে। এমন অনেক বিষয় আছে, যা আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের কাছে ব্যক্ত করেন নি, এমনকি প্রশ্ন করার পরেও সরাসরি উত্তর না দিয়ে গোপন রেখেছেন। আবার অনেক বিষয় সম্পর্কে বিশ্বপ্রতিপালক ফিরিশতাদেরকেও জিজ্ঞাসা করেন। তাহলে কি আল্লাহরও জ্ঞান নেই? দেখি, এমন একটি অকাট্যের মর্যাদাপ্রাপ্ত সহীহ হাদীছ উপস্থাপন করুন, যেখানে ইলমে গায়ব প্রদান করার বিষয়টির অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, তারা কখনও উপস্থাপন করতে পারবেন না। এতটুকু উত্তরই যথেষ্ট ছিল। তবুও তাদের উল্লেখিত ‘মশহুর’ হাদীছসমূহ উল্লেখপূর্বক পৃথক পৃথকভাবে উত্তর প্রদানে প্রয়াস পাচ্ছি। وَبِا للهِ التَّوْفِيْقِ (আল্লাহর কাছে এর তওফীক প্রার্থনা করছি।

বিঃ দ্রঃ যে হাদীছ তাবেয়ী এবং তৎপরবর্তী অসংখ্য বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন, যাঁদের সংখ্যাধিক্যের বিচার করলে উক্ত হাদীছের বিশুদ্ধতা সুনিশ্চিত হয় এবং তাতে সন্দেহের অবকাশ থাকে না, এ ধরনের হাদীছকে ‘হাদীছে মশহুর’ বলা হয়।


১নং আপত্তিঃ


❏ ‘মিশকাত শরীফের’ ইলানুন নিকাহ اعلان النكاح অধ্যায়ের প্রথম হাদীছে হযরত রুবীয়া (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে,  রাসূল (ﷺ) কোন এক বিবাহ অনুষ্ঠানে তাশরীফ নিয়েছিলেন, তথায় আনসারের কিশোরীগণ দফ বাজিয়ে বদর যুদ্ধে নিহত ব্যক্তিবর্গের শোকগাঁথার গান গাচ্ছিল। তাদের মধ্যে কেউ এ পংক্তিটিও আবৃত্তি করেঃ


وَفِيْنَا نَبِىٌُّ يَعْلَمُ مَا فِىْ غَدٍ


-‘‘আমাদের মধ্যে এমন এক নবীও আছেন, যিনি আগামীকাল কি হবে, তা’ও জানেন।

তখন  রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করলেন- ‘একথা বাদ দাও, ওটাই গাইতে থাক, যা প্রথমে গাচ্ছিলে’।  

{ক. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ২/৫৭৭ পৃ. হাদিসঃ ৩১৪০

খ. তিরমিজীঃ আস-সুনানঃ ৩/৩৯৯ হাদিসঃ ১০৯০

গ. ইবনে মাজাহঃ আস-সুনানঃ কিতাবুন-নিকাহঃ ১/৬১১ হাদিসঃ ১৮৯৭

ঘ. ইবনে হিব্বানঃ আস-সহীহঃ ১৩/১৮৯ পৃ. হাদিসঃ ৫৮৭৮

ঙ. আবু দাউদঃ আস-সুনানঃ ৪/২৮১ হাদিসঃ ৪৯২২

চ. ইমাম নাসায়ীঃ সুনানে কোবরাঃ ৩/৩৩২ হাদিসঃ ৫৫৬৩

ছ. ইমাম বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৯/২০২ পৃ. হাদিসঃ ৫১৪৭}


এ হাদীছ থেকে বোঝা গেল যে,  রাসূল (ﷺ)-এর ইলমে গায়ব ছিল না। যদি থাকতো তাহলে ওই মেয়েদের সে কথা বলার সময় বাঁধা দিতেন না। সত্যি কথা বলতে বাধা দিলেন কেন?


উত্তরঃ 


প্রথমতঃ চিন্তা করা দরকার যে, এ পংক্তিটি সে সব মেয়েরা নিজেরাই রচনা করেনি। কেননা ওই কন্যাদের পক্ষে কবিতা রচনা সম্ভব পর নয়। আর কোন কাফির বা মুশরিকও সেটি রচনা করেনি। কেননা, ওরা তো  রাসূল (ﷺ)কে নবী হিসেবে মানতো না। তাই নিঃসন্দেহে এটি কোন সাহাবীর রচিত কবিতারই পংক্তি হবে। এখন বলুন, ঐ কবিতা রচয়িতা সাহাবী (মা’আযাল­) মুশরিক কিনা? আর রাসূল (ﷺ) উক্ত কবিতা রচয়িতাকে মন্দও বলেন নি, কিংবা কবিতারও বিরূপ কোন সমালোচনা করেন নি। ওটা গাইতে বারণ করেছেন মাত্র। প্রশ্ন হলো, কেন বারণ করলেন? এর পেছনে চারটি কারণ রয়েছে।


প্রথমতঃ কেউ যদি আমাদের সামনে আমাদের প্রশংসা করে, তখন বিনয়াবনত কণ্ঠে আমরা বলি “আরে মিঞা! এ সব কথা বাদ দিন, অন্য কথা বলুন”। এখানেও রাসূল (ﷺ) বিনয় প্রকাশার্থে উপরোক্ত উক্তি করেছেন।


দ্বিতীয়তঃ হাস্য-কৌতুক ও গান-বাজনার পরিবেশের মধ্যে নাত’বা তাঁর প্রশংসাসূচক কবিতা পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। ‘নাত’ পাঠ এর জন্য আদব ও ভক্তির প্রয়োজন।


তৃতীয়তঃ গায়বকে তার নিজের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্বন্ধিত করাটাই তার পছন্দ হয়নি।

চতুর্থতঃ আজকাল যেমন ‘নাত’ আবৃত্তিকারীগণ ‘নাত’ ও শোকগীতি এক সাথে মিলিয়ে পাঠ করে, সেরূপ শোকগীতির মধ্যখানে নাত পড়াটাই তাঁর অপছন্দ ছিল।


❏ মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘মিরকাতে’ উক্ত হাদীছ প্রসঙ্গে লিখা হয়েছেঃ


لِكَرَاهَةِ نِسْبَةِ عِلْمِ الْغَيْبِ إِلَيْهِ لِأَنَّهُ لَا يَعْلَمُ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ وَإِنَّمَا يَعْلَمُ الرَّسُولُ مِنَ الْغَيْبِ مَا أُخْبِرَهُ أَوْ لِكَرَاهَةِ أَنْ يَذْكُرَ فِي أَثْنَاءِ ضَرْبِ الدُّفِّ وَأَثْنَاءِ مَرْثِيَّةِ الْقَتْلَى لِعُلُوِّ مَنْصِبِهِ عَنْ ذَلِكَ


-‘‘তার নিজের সত্ত্বার প্রতি ইলমে গায়বকে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত করাতে রাসূল (ﷺ) তা নিষেধ করেছিলেন। কেননা অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে খোদা ব্যতীত অন্য কেউ জানে না; রাসূল জানেন সে সমস্ত অদৃশ্য বিষয় বা বস্তু, যা আল্লাহ অবহিত করেন। বা দফ বাজিয়ে অথবা নিহত ব্যক্তিবর্গের শোক গাঁথা গেয়ে তাঁর প্রশংসা করাটাই তাঁর অপছন্দ ছিল। কেননা, তাঁর মান মর্যাদা সে পরিবেশে প্রশংসিত হওয়ার সম্মানের চাইতে আরো অনেক বেশী।’’

{আল্লামা মোল­ আলী ক্বারীঃ মেরকাতঃ ৬/২১০ পৃ.}

 

❏ ‘আশিয়াতুল লুম’আত’ গ্রন্থে এ হাদীছের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে-


گفته اند كه منع آنحضرت ازيں قول بجهت آست كه دروے اسناد علم غيب است به آنحضرت را ناخوش آمد وبعضے گوئيند كه بجهت آں است كه ذكر شريف وے در اثنا لهو منا سب نه


 باشر অর্থাৎ ভাষ্যকারগণ বলেন,  রাসূল (ﷺ) ওটাকে এ জন্যই নিষেধ করেছেন যে, উক্ত পংক্তিতে ইলমে গায়বকে সরাসরি হুযুরের সহিত সম্বন্ধিত করা হয়েছে। সুতরাং, এটা তাঁর পছন্দ হয়নি। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, হাস্য কৌতুকের পরিবেশে রাসূল (ﷺ) প্রশংসা সূচক উল্লেখ সমীচীন নয়।

{শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীঃ আশিয়াতুল লুমআতঃ ৩/১১৭ পৃ.}

 


২নং আপত্তিঃ 


মদীনা শরীফে আনসারের লোকেরা বাগানের মদ্দা খেজুর গাছের শাখা-প্রশাখা মাদ্দী গাছের সঙ্গে লাগিয়ে দিতেন, যাতে ফলন বেশী হয়।  রাসূল (ﷺ) তাঁদেরকে এ কাজ করতে বারণ করেছিলেন। (এ কাজকে আরবীতে ‘তালকীহ’ تلقيخ বলা হয়।) তখন তাঁরা এ পদ্ধতি (তালকীহ) ছেড়ে দিলেন। খোদার কি শান! ফলন কম হলো। এর অভিযোগ তাঁর সমীপে পেশ করা হলে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেনঃ


اَنْتَمْ اَعْلَمُ بِاُمُوْرِ دُنْيَا كُمْ


অর্থাৎ- তোমাদের পার্থিব বিষয়াবলীতে তোমরাই অধিক জ্ঞাত।

{ক. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ১/৫০ পৃ. হাদিসঃ ১৪৭

 খ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ৪/১৩৫ঃ হাদিসঃ ২৩৬২

 গ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ২/২৬৪ পৃ. হাদিসঃ ১৪০}


বোঝা গেল ‘তালকীহ’ করা থেকে বিরত রাখলে যে ফসল কম হবে, সে জ্ঞান তার (ﷺ) ছিল না। অধিকন্তু আনসারদের জ্ঞান যে তাঁর থেকে বেশী, তাই প্রমাণিত হলো।

উত্তরঃ  রাসূল (ﷺ) কর্তৃক ‘তোমাদের পার্থিব কাজকর্মে তোমরা অধিক জ্ঞাত’ একথা বলার মধ্যে বিরক্তি বা অসন্তোষই প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলতে চেয়েছেন, যখন তোমরা ধৈর্যধারণ করছ না, তোমরাই তোমাদের ব্যাপারে ভাল জান। যেমন আমরা কাউকে কোন কথা বললে সে যখন এতে সাত পাঁচ চিন্তা করতে থাকে, তখন আমরা বলি, ভাই, তোমার ব্যাপার তুমিই জান। এরূপ উক্তির লক্ষ্যার্থ জ্ঞানের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন নয়।


❏ ‘শরহে শিফা’ মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) ‘মু’জিযাত’ শীর্ষক বর্ণনায় লিখেছেনঃ


وَخَصَّهُ اللهُ مِنْ اَلاِطِّلاَعِ عَلَى جَمِيْعِ مَصَالِحِ الدُّنْيَا وَالدِّيْنِ وَاسْتُشْكِلَ بِاَنَّهُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ وَجَدَ الْاَ نْصَارَ يَلَقِّحُوْنَ النَّخْلَ فَقَالَ لَوْ تَرَكْتُمُوْهُ فَتَرَ كُوْهُ فَلَمْ يَخْرُجْ شَيْئًا – اَوْخَرَجَ شَيْصًا فَقَالَ اَنْتُمْ اَعْلَمُ بِاُمُوْرِ دُنْيَاكُمْ قَالَ الشَّيْخُ السِنَّوْسِيُّ اَرَادَ اَنْ يَحْمِلَهُمْ عَلَى خَرْقِ الْعَوَ ائِدِ فِىْ ذَالِكَ اِلَى بَابِ التَّوَكُّلِ وَاَمَّا هُنَا كَ فَلَمْ يَمْتَثِلُوْ فَقَالَ اَنْتُمْ اَعْرَفُ بِدُنْيَا كُمْ وَلَوِ اَمْتَثَلُوْا وَتَحَمًلُوْا فِىْ سَنَةٍ اَوْ سَنِيْنَ لَكُفُوْ اَمْرَ هَذِهِ الْمِحْنَةِ


অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা  রাসূল (ﷺ)কে দ্বীন-দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণময় বিষয় সম্পর্কে অবহিত করার জন্য মনোনীত করেছে। এ নিয়ে এখন আপত্তি হচ্ছে যে, তিনি আনসারের লোকদের বৃক্ষরাজির তালকীহ করতে দেখে বলেছিলেন, এ অভ্যাস পরিত্যাগ করাই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক। তাই তাঁরা এ প্রথা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এতে কোন ফলন হলো না। বা ফলন কম হলো। তখনই তাঁদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাসূল (ﷺ) বলেছিলেনঃ তোমাদের দুনিয়াবী ব্যাপারে তোমরাই ভাল জান।’


❏ শাইখ সিন্নোসী (رحمة الله) বলেছেন, রাসূল (ﷺ) চেয়েছিলেন- তাঁদের চিরাচরিত অভ্যাসের বিপরীত কাজ করে তাদেরকে নির্ভরশীল তার তোরণদ্বারে পৌঁছিয়ে দিতে। কিন্তু তাঁরা ধৈর্যধারণ করলেন না। তাই তিনি বলেছিলেন, ‘তোমরাই জান।’ যদি তাঁরা এটি মেনে নিতেন এবং দু’ এক বছর ক্ষতি স্বীকার করতেন, তাহলে এ অহেতুক পরিশ্রম থেকে রেহাই পেয়ে যেতেন।

{আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারীঃ শরহে শিফাঃ ৩/২২৩ পৃ.}

 

❏ আল্লামা মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) একই ‘শরহে শিফার’ দ্বিতীয় খন্ডের ২৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেনঃ


وَلَوْ ثَبَتُوْا عَلَى كَلاَمِهِ لَفَاقُوْا فِى الْفَنِّ وَلاَرْتَفَعُ عَنْهُمْ كُلْفَةُ الْمَعَالَجَةِ


অর্থাৎ- যদি তাঁরা  রাসূল (ﷺ)-এর কথায় অবিচল থাকতেন, তাহলে সে বিষয়ে (ক্ষেতে উৎপাদনের) অনেক দূর এগিয়ে যেতেন এবং ‘তাঁদের এ ‘তলকীহ’ এর কষ্টও দূরীভূত হয়ে যেতো।


❏ সু-প্রসিদ্ধ فصل الخطاب কিতাবে আল্লামা কায়সারী (رحمة الله) এর বরাত দিয়ে উদ্ধৃত করা হয়েছেঃ


وَلاَ يَعْذُبُ عَنْ عِلْمِهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِى الْاَرْضِ وَلاَفِى السَّمَاءِ مِنْ حَيْثُ مَرْتَبَتِهِ وَاِنْ كَانَ يَقُوْلُ اَنْتُمْ اَعْلَمُ بِامُوْرِ دُنْيَاكُمْ


অর্থাৎ- যমীন ও আসমানে পরমাণুসম কোন বস্তুও হুযুর (ﷺ) এর ব্যাপক জ্ঞানের পরিধি বহির্ভূত নয়। যদিও বা তিনি বলতেন দুনিয়াবী ব্যাপারে তোমরাই জান।


হযরত ইউসুফ (عليه السلام) কখনও কৃষি কাজ করেন নি, কৃষকদের সংশ্রবেও ছিলেন না। কিন্তু দুর্ভিক্ষের শিকার হওয়ার আগেই তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন বেশী করে গম চাষ করার জন্যে। আরও বলেছিলেনঃ


فَمَا حَصَدْتُمْ فَذَرُوهُ فِي سُنْبُلِهِ


-‘‘যা কর্তন করবে, তা খোসা ছাড়ানো ছাড়াই রক্ষিত করে রাখবে।

{ সূরাঃ ইউসূফঃ আয়াতঃ ৪৭, পারাঃ ১২}


অর্থাৎ কৃষকদেরকেও গম সংরক্ষণের পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন। এখনও গমকে ভুষির মধ্যে রেখেই হিফাজন করা হয়। কৃষি কাজের এ গোপন বিষয় সম্পর্কে কিভাবে তিনি জ্ঞাত হলেন? তিনি বলেছিলেনঃ


اجْعَلْنِي عَلَى خَزَائِنِ الْأَرْضِ إِنِّي حَفِيظٌ عَلِيمٌ


-‘‘যমীনের ধনভান্ডারের দায়িত্বে আমাকে নিয়োজিত করুন, আমি এর হিফাজতকারী ও সংশি­ষ্ট প্রত্যেক কাজকর্ম সম্পর্কে জ্ঞাত।’’  

{সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ৫৫, পারাঃ ১৩}

 

এ সমস্ত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা ও সংশি­ষ্ট বিষয়াদি কার থেকে শিখলেন তিনি?  রাসূল (ﷺ)-এর বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞান কি হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর চেয়েও কম? (মায়াযাল্লা!)



৩নং আপত্তিঃ 


❏ ‘তিরমিযী’ শরীফের কিতাবুত তাফসীর-এর সূরা আনআমে আছে, হযরত মাসরূক (رضي الله عنه) হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যদি কোন ব্যক্তি বলেন যে,  রাসূল (ﷺ) স্বীয় প্রভুকে দেখেছেন বা কোন কিছু গোপন করেছেন, তবে সে মিথ্যাবাদী। আরও বলেছেন-


وَمَنْ زَعَمَ أَنَّهُ يَعْلَمُ مَا فِي غَدٍ، فَقَدْ أَعْظَمَ الفِرْيَةَ عَلَى اللَّهِ


অর্থাৎ- এবং যে কেউ বলে যে  রাসূল (ﷺ) আগামীকালের কথা বলতে পারেন, সে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করলো।’’

{তিরমিজীঃ আস-সুনানঃ কিতাবুত তাফসীর, সূরাঃ আনআম, ৫/২৬২ হাদিসঃ ৩০৬৮}


উত্তরঃ 

হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) এর এ তিনটি উক্তি থেকে বাহ্যিক অর্থে যা বুঝা যাচ্ছে, তা মূল বক্তব্য নয়। এ উক্তিসমূহ তিনি নিজের রায়ের উপর ভিত্তি করেই করেছেন। এ বিষয়ে কোন ‘মরফু’ হাদীছ (যা সনদের সূত্র হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) পর্যন্ত পৌঁছেছে। উপস্থাপন করেন নি, তিনি বরং কুরআনের আয়াতের উপর ভিত্তি করেই স্বীয় মতামত ব্যক্ত করেছেন।


❏ মহাপ্রভুকে দেখা সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) যে রিওয়ায়েতে পেশ করেছেন, এখন পর্যন্ত এ তথ্যটি মুসলিম সমাজে সর্বজন স্বীকৃত বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে।


❏ এ প্রসঙ্গে ‘মাদারেজুন নাবুওয়াত’ নসীমুর রিয়ায ইত্যাদি সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থাবলী ও আমার রচিত গ্রন্থ ‘শানে হাবীবুর রহমানের’ সূরা ওয়াননজমের’ ব্যাখ্যায় বর্ণিত তথ্যসমৃদ্ধ পর্যালোচনা দেখুন

(এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আমার 'প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন' বইটিতে ৪০টির বেশী হাদীস দেয়া হয়েছে- শহীদুল্লাহ বাহাদুর)।


❏ অনুরূপ, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) যে বলেছেন,  রাসূল (ﷺ) কোন কিছু গোপন করেন নি, তাঁর এ উক্তিতে প্রচারোপযোগী শরীয়তের নির্দেশাবলীর কথাই বলা হয়েছে । কেননা, খোদার অনেক নিগুঢ় রহস্য তো মানুষের নিকট ব্যক্ত করেননি।


❏ ‘মিশকাত শরীফ’ এর কিতাবুল ইলম’ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে হযরত আবু হুরাইয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছেঃ তিনি বলেছেন,  রাসূল (ﷺ)-এর নিকট থেকে আমি (হযরত আবু হুরাইরা) দু’ধরনের জ্ঞান লাভ করেছি, এক ধরনের জ্ঞান আমি প্রচার করেছি’ দ্বিতীয় ধরনেরটা যদি আপনাদের কাছে ব্যক্ত করি’ তাহলে আপনারা আমার গলা কেটে দিবেন।

{ক. বুখারীঃ আস-সহীহঃ ১/২১৬ পৃ. হাদিসঃ ১২০

খ. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ কিতাবুল ইলমঃ তৃতীয় পরিচ্ছেদঃ ১/৭০ হাদিসঃ ২৭১}

 

এ কথা থেকে বোঝা গেল যে, খোদার ভেদ সম্পর্কিত তথ্যাবলী অনুপযুক্ত ব্যক্তির কাছে উদঘাটন করা হয়নি। অনুরূপ, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) যে বলেছেন, ‘আগামীকালের কথা  রাসূল (ﷺ) জানতেন না’ একথার দ্বারা সত্ত্বাগত ভাবে না জানার কথাই বলা হয়েছে। অন্যথায়, তাঁর বক্তব্য অনেক হাদীছ ও কুরআনের আয়াতের বিপরীত প্রতিপন্ন হবে।  


❏ রাসূল (ﷺ) কিয়ামত, দাজ্জাল, ইমাম মাহদী (عليه السلام), ‘হাউজে কাউছার’, শাফায়াত, এমন কি হযরত হুসাইন (رضي الله عنه) এর শাহাদত বরণ, বদরের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে কাফিদের নিহত হওয়া ও তাদের নিহত হওয়ার স্থান ইত্যাদি সম্পর্কে খবর দিয়েছেন। আরও মজার ব্যাপার যে, যদি হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) এর উক্তির বাহ্যিক অর্থই গ্রহণ করা হয়, তাহলে তা ভিন্নমতাবলম্বীদের ধ্যান ধারণাও বিপরীত হয়ে যাবে। কেননা তারাও তো অনেক অদৃশ্য বিষয়ক জ্ঞানের কথা স্বীকার করে থাকেন, অথচ এখানে সে বিষয়ের সম্পূর্ণভাবে অস্বীকৃতিই জ্ঞাপন করা হচ্ছে। আজ আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার হবে, সূর্য উদিত হবে, রাত আসবে এগুলোও তো আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য ঘটনাবলীর জ্ঞানের সাথেই সম্পৃক্ত। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) অবশ্য হুযুরের স্বশরীরের মি’রাজের ঘটনাকেও অস্বীকার করেছেন। কিন্তু এর উত্তরে বলা হয় যে, মিরাজের ঘটনা তাঁর বিবাহের আগেই সংঘটিত হয়েছিল, যার জন্য এ বিষয়টি তাঁর জ্ঞানানুভূতিতে আসেনি।



৪নং আপত্তিঃ 

হযরত আয়েশা সিদ্দীকার (رضي الله عنه) গলার হার হারানো গিয়েছিল, জায়গায় জায়গায় তল্লাসী করানোর পরেও এর হদিস পাওয়া যায়নি। অবশেষে উটের নিচ থেকেই সেটি উদ্ধার করা হয়। যদি  রাসূল (ﷺ)-এর অদৃশ্য জ্ঞান থাকতো অনুসন্ধাকারী লোকদেরকে সে সময় কেন বললেন না যে, হার ওখানে আছে? অতএব বোঝা গেল যে, সে সম্পর্কে হযরত রাসূল (ﷺ) জ্ঞাত ছিলেন না।


উত্তরঃ 

এ হাদীছ থেকে তাঁর না বলাটাই বোঝা যায়, না জানার ব্যাপারটি প্রতীয়মান হচ্ছে না। আর না বলার পেছনে অনেক রহস্য থাকে। সাহাবায়ে কিরামদের কেউ কেউ চাঁদের হ্রাস বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মহান প্রতিপালক তা বলেন নি। তাহলে কি আল্লাহ তা’আলারও জানা ছিল না? খোদার ইচ্ছা ছিল, সিদ্দীকার (رضي الله عنه) হার হারিয়ে যাক, মুসলমানগণ ওটার তল্লাশী করতে করতে এখানে সাময়িক অবস্থান করুক, যুহরের সময় হোক; পানি পাওয়া না যাক। তখনই  রাসূল (ﷺ)-এর খেদমতে আরয করা হোক যে, তাঁরা এখন কি করবেন। এ প্রেক্ষাপটে আয়াত তায়াম্মুম নাযিল হোক। কিয়ামত পর্যন্ত ধরাপৃষ্ঠে আগমনকারী মুসলমানগণ একথাটি অনুধাবন করুক যে, তাঁরই বদৌলতে আমরা তায়াম্মুমের নির্দেশ পেলাম। যদি তখনই হারের কথা বলে দেয়া হতো, তাহলে ‘আয়াতে তায়াম্মুম’ নাযিল হতো কি জন্য? মহা প্রতিপালকের যে নয়ন কিয়ামত পর্যন্ত যাবতীয় অবস্থা অবলোকন করে, সেই নয়নের কাছে উটের নিচে চাপাপড়া কোন বস্তু গোপন থাকতে পারে কিভাবে? খোদা, মাহবুব আলাইহিস সালামের শান-মান অনুধাবন করার তৌফিক দান করুন।



━━━━━━━━━━━━━━━━
৫নং আপত্তিঃ 

❏ মিশকাত শরীফ الحو فى والشفاعة শীর্ষক অধ্যায়ে আছেঃ


لَيَرِدَنَّ عَلَيَّ أَقْوَامٌ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُونَنِي ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ فَأَقُولُ: إِنَّهُمْ مِنِّي. فَيُقَالُ: إِنَّكَ لَا تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ؟ فَأَقُولُ: سُحْقًا سحقاً لمن غير بعدِي


-‘‘হাউজে কাওছারের’ কিনারায় আমার কাছে এমন কোন কোন সম্প্রদায় আসবে, যাদেরকে আমি চিনি, আর তারাও আমাকে চিনে। অতঃপর আমার ও তাদের মাঝখানে দৃষ্টি প্রতিরোধক যবনিকা খাড়া করে দেয়া হবে। আমি তখন বলবো, এরা আমার লোক। এর প্রতুত্তরে বলা হবে, আপনি জানেন না, আপনার পরে তারা কি ধরনের নতুন নতুন কার্যাবলী উদ্ভাবন করেছে। অতঃপর আমি বলবো দূরে যাক, দূরে যাক সে ব্যক্তি, যে আমার পরে ধর্মকে পালটিয়ে দিয়েছে।’’

{ক. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ৪/৩১৯ হাদিসঃ ৫৫৭১

খ. বুখারীঃ আস-সহীহঃ ১১/৪৬৪ হাদিসঃ ৬৫৮৩

গ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ৪/১৭৯৩ হাদিসঃ ২৯০, ২৬

ঘ. ইবনে মাজাহঃ আস-সুনানঃ ২/১৪৩৯ হাদিসঃ ৪৩০৪}


এ থেকে বোঝা গেল যে,  রাসূল (ﷺ) কিয়ামতের দিন আপন পর, মুমিন ও কাফিরকে চিনবেন না। কেননা রাসূল (ﷺ) উক্ত ধর্মত্যাগীদের সম্পর্কে বলবেন, ‘এরা আমার সাহাবা, আর ফিরিশতাগণ বলবেন, আপনি জানেন না।’


উত্তরঃ 

রাসূল (ﷺ)-এর ওদেরকে সাহাবা বলার উদ্দেশ্য হবে তাদের প্রতি ব্যঙ্গ বিদ্রূপ প্রকাশ করা, অর্থাৎ বিদ্রূপের সুরে বলা হবে যে ওদেরকে আসতে দাও। ওরাতো আমার বড় অকপটে সাহাবা।’ আর ফিরিশতাগণের এরকম আরয করার উদ্দেশ্য হবে ওদেরকে সেকথা শোনায়ে বিষণ্ন করা। তা’ না হলে ফিরিশতাগণ ওদেরকে এ পর্যন্ত আসতে দিবেন কেন? যেমনঃ


❏ কুরআন করীমে আছে জাহান্নামী কাফিরকে বলা হবেঃ


ذُقْ اِنَّكَ اَنْتُ العَزِيْزُ الْكَرِيْمِ


অর্থাৎ- শাস্তির মজা বুঝ, তুমি তো মেহেরবান ও সম্মানের ব্যক্তি।  

{সূরাঃ দোখান, আয়াতঃ ৪৯, পারাঃ ২৫}


❏ হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) ও সূর্যকে দেখে বলেছিলেন- هَذَا رَبِّىْ (এই আমার প্রতিপালক)  

{সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ৭৭, পারাঃ ৭}


এখানে আর একটি প্রণিধানযোগ্য বিষয় হলো যে, এখন তো হাদীছ বর্ণনার সময়)  


❏ রাসূল (ﷺ) এ সম্পর্কিত ঘটনা সম্পর্কে অবগত এবং বলছেন। اَعْرِ فُهُمْ (আমি তাদেরকে চিনি।)


তাহলে কি সে দিন ভুলে যাবেন? উপরন্তু, কিয়ামতের দিন মুসলমানদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হবে। যেমন ওযুর সময় ধোয়া হয় এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সমূহ উজ্জ্বরূপে ভাস্বর হওয়া, মুখমন্ডল উজ্জ্বল হওয়া,


 يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوْهٌُ وَّتَسْوَدُّ وُجُوْهُ


❏ সেদিন অনেক চেহারা উজ্জ্বলরূপে প্রতিভাত হবে, আর অনেকের চেহারা কাল, মলিন দেখাবে।  

{সূরাঃ আলে ইমরানঃ আয়াতঃ ১০৬}


ডান হাতে আমলনামা থাকা, কপালে সিজদার চিহ্ন প্রতিভাত হওয়া ইত্যাদি।

(মিশকাত শরীফের কিতাবুস সালাম দেখুন)


আর কাফিরদের আলামত হবে বর্ণিত লক্ষণসমূহের উল্লটোটাই। সে সব লোকদেরকে ফিরিশতা কর্তৃক বাধা প্রদানই হবে। তাদের ধর্মত্যাগী হওয়ার বিশেষ আলামত, যেটির বিবরণ আজ (হাদীছ বর্ণনার দিন) দেওয়া হচ্ছে। এরপরেও কি কারণ থাকতে পারে যে, এতগুলো আলামত থাকা সত্ত্বেও  রাসূল (ﷺ) তাদেরকে চিনবেন না? আর এখানেতো রাসূল (ﷺ) জান্নাত ও দোযখবাসী লোকদের কথা বলে দিচ্ছেন, আশারায়ে মুবাশশারার জান্নাতবাসী হওয়ার শুভ সংবাদ দিচ্ছেন এবং দু’টো কিতাব সাহাবা কিরামকে দেখাচ্ছেন, যেখানে বেহেশতী ও দোযখীদের নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাহলে সেখানে না চেনার কি অর্থ হতে পারে?  রাসূল (ﷺ)-এর জ্ঞান সমগ্র সৃষ্টিকূলের জ্ঞানের চেয়ে অনেক বেশী। ফিরিশতারা যখন জানেন যে ওরা ধর্মত্যাগী। তাহলে হুযুর (ﷺ) সে বিষয়ে অনবিহিত থাকবেন কি করে?


❏ এ প্রসঙ্গে মহাপ্রতিপালক কি বলছেন দেখুনঃ


يُعْرَفُ الْمُجْرِمُوْنَ بِسِيْمَاهُمْ


-‘‘পাপীষ্ঠদেরকে তাদের লক্ষণসমূহ দ্বারা চিনা যাবে।’’

{সূরাঃ আর-রহমান, আয়াতঃ ৪১, পারাঃ ২৭}

আরও বলেনঃ


سِيْمَاهُمْ فِىْ وُجَوْهِهِمْ مِنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ


-‘‘তাঁদের (মুসলমানগণের) চেহারায় বিদ্যমান থাকবে সিজদার ফলে উদ্ভুত চিহ্নসমূহ।’’  

{সূরাঃ ফাতাহঃ আয়াতঃ ২৯, পারাঃ ২৬}


এখন বোঝা গেল যে, কিয়ামতের দিন নেক ও বদকার লোকদের আলামত সমূহ তাদের চেহারায় ভেসে উঠবে।


❏ মিশকাত শরীফ এর الخوص والشفاعة অধ্যায়ে আরও আছেঃ বেহেশতী মুসলমানগণ জাহান্নামী মুসলমানদেরকে বের করার জন্য জাহান্নামের দিকে যাবেন এবং জাহান্নামীদের কপালে সিজদার চিহ্নসমূহ দেখে (জ্বলে পুড়ে যথোপযুক্ত শাস্তি লাভের পর) বের করে নিয়ে আসবেন। ওদেরকে (বেহেশতী মুসলমান) আরও বলা হবেঃ


فَمَنْ وَجَدْ تُمْ فِىْ قَلْبِهِ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ مِّنْ خَيْرٍ فَاَخْرِ جُوْ هُ


-‘‘যার অন্তরে পরমাণুসমান ঈমান দেখবে, ওকেও বের করে নিয়ে যাও।’’

{ক. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ৪/৪৯০ পৃ. হাদিসঃ ৫৫৭৩

খ. বুখারীঃ আস-সহীহঃ ১৩/৪৭৩ হাদিসঃ ৭৫১০

গ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/১৮২ পৃ. হাদিসঃ ১৯৩

ঘ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/২৫৮ পৃ. হাদিসঃ ৩২৬}

 

এখন দেখুন! বেহেশতী মুসলমানগ দোযখী মুসলমানদের অন্তনির্হিত ঈমানের পরিচয় পাচ্ছেন। বরং তাঁরা এও জানেন যে, কার অন্তরে কোন স্তরের ঈমান রয়েছে, দীনার সমপরিমাণ, নাকি বালিকণা সমতুল্য। আর  রাসূল (ﷺ)-এর চেহারা দেখে বা অন্যান্য আলামত দেখেও জানবেন না? যে, এ মুসলমান, না কাফির। আল্লাহ, তাদেরকে উপলব্ধি করার শক্তি দান করুন।



৬নং আপত্তিঃ 

❏ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ‘কিতাবুল জানায়েযে’ হযরত উম্মুল আলা (رضي الله عنه) এর বর্ণিত রিওয়ায়েতে আছেঃ


وَاللهُ مَااَدْرِىْ وَاَنَا رَسُوْلُ اللهِ مَايَفْعَلُ بِىْ


খোদার কসম, আমি আল্লাহর রাসূল হয়েও জানি না আমার সঙ্গে কি ধরনের আচরণ করা হবে।

{বুখারীঃ আস-সহীহঃ ১/১৬৬ পৃ. হাদিসঃ}


এতে বুঝা গেল যে,  রাসূল (ﷺ) নিজের এ খবর জানেন না যে, কিয়ামতের দিন তাঁর সাথে কিরূপ আচরণ করা হবে।

উত্তরঃ এখানে তাঁর জ্ঞানের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়নি। বরং দিনরাত বা ধারণা ও অনুমান ভিত্তিক জ্ঞানের অস্বীকৃতিই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর বক্তব্য আচরণ করা হবে, কেননা, এর সম্পর্ক হচ্ছে ওহীর সাথে। তাই, হে উম্মুল ‘আলা, তুমি যে উছমান ইবন মযউন সম্পর্কে নিছক অনুমান করে তাঁর বেহেশতী হওয়ার সাক্ষ্য দিচ্ছ, তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা এ ধরনের অদৃশ্য বিষয়ের ব্রাপারে নবীগণও অনুমান বা আন্দাযের ভিতিতে কোন কথা বলেন না। এরূপ ভাষ্যগ্রহণ না করলে,


❏ মিশকাত শরীফের فضائل سيد المر سلين অধ্যায়ে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত যে, উল্লেখিত আছে- ‘আমি আদম সন্তানদের সরদার, সেদিন প্রশংসার ঝান্ডা (لواء الحمد) আমার হাতেই থাকবে। হযরত আদম (عليه السلام) ও সকল আদম সন্তান আমার পতাকাতলে অবস্থান করবেন।”  

ক. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ৪/৩৫৬ পৃ. হাদিসঃ ৫৭৬১

খ. তিরমিজীঃ আস-সুনানঃ ৫/৫৪৮ হাদিসঃ ৩৬৫১

গ. ইবনে মাজাহঃ আস-সুনানঃ ২/১৪৪০ পৃ. হাদিসঃ ৪৩০৮

ঘ. আহমদ ইবনে হাম্বলঃ আল-মুসনাদঃ ৩/২ পৃ.}

 

এ হাদীছটির সহিত আলোচ্য হাদীছের সমন্বয় সাধন হবে কি রূপে?



৭নং আপত্তিঃ 

❏ বুখারী শরীফের দ্বিতীয় খন্ডে ‘কিতাবুল মাগাযি’ এর হাদীছে ইফক’ অধ্যায়ে আছেঃ হযরত সিদ্দিকা (رضي الله عنه) কে অপবাদ দেয়া হয়েছিল। এ জন্য রাসূল (ﷺ) খুবই চিন্তিত হলেন বটে। কিন্তু ওহী অবতীর্ণ হওয়ার আগে পর্যন্ত রটানো ঘটনা সত্যাসত্য সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারলেন না। যদি রাসূল (ﷺ) অদৃশ্য বিষয়াবলীর জ্ঞানের অধিকারী হতেন, তাহলে এত বিষণ্নতা কেন? এতদিন যাবৎ নীরবতা অবলম্বন করলেনই বা কেন?

উত্তরঃ এখানেও না বলাটাই প্রতীয়মান হচ্ছে, না জানাটাই নয়। না বলার দ্বারা না জানাটাই প্রমাণিত হয় না। স্বয়ং আল্লাহ তা’আলাও অনেকদিন পর্যন্ত হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) এর নিষ্কলুষতা সম্পর্কিত নাযিল করেন নি। তাহলে কি আল্লাহরও খবর ছিল না? অধিকন্তু,


❏ বুখারী শরীফের উক্ত হাদীছেই আছেঃ


 مَاعَلِمْتُ عَلَى اَهْلِىْ اِلاَّ خَيْرًا


-আমি আমার সহধর্মিনীকে নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারিনী হিসেবে জানি।

{ক. বুখারীঃ আস-সহীহঃ কিতাবুল মাগাজীঃ ৪/৫২০ পৃ. হাদিসঃ ৩৯১০

খ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ৪/১৩৪ হাদিসঃ ২৭৭০

গ. তিরমিজীঃ আস-সুনানঃ ৩/১৮২ঃ কিতাবুল মাগজী}


এতে বোঝা যায় যে, ব্যাপারটি তাঁর জ্ঞাত ছিল, তবে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে তা প্রকাশ করেন নি। আর এতো হতেই পারে না যে, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) সম্পর্কে নবী  আলাইহিস সালাম খারাপ ধারণা পোষণ করেছিলেন। কেননা,


❏ আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদেরকে তিরস্কার করে বলেছেনঃ


لَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بِأَنْفُسِهِمْ خَيْرًا وَقَالُوا هَذَا إِفْكٌ مُبِينٌ


-‘‘মুসলমান নর-নারীগণ এ ঘটনা শোনার পর অন্তরে কেন ভাল ধারণা পোষণ করলো না, এবং সঙ্গে সঙ্গে কেন বলে দিল না যে, এটা সুস্পষ্ট দুরভিসন্ধিমূলক অপবাদ।’’

{সূরাঃ নূর, আয়াতঃ ১২, পারাঃ ১৮}

 

জানা গেল যে, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) এর কলুষতামুক্তি বিষয়ক আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার আগে থেকেই মুসলমানদের জন্য তাঁর সম্পর্কে ভাল ধারণা পোষণ করা ওয়াজিব ও খারাপ ধারণা পোষণ করা হারাম ছিল। আর নবী করীম (ﷺ) নিষ্পাপ বিধায় হারামের ছোয়া থেকে পবিত্র ছিলেন। তাই খারাপ ধারণা আদৌ পোষণ করতে পারেন না তিনি। তবে হ্যাঁ, সঙ্গে সঙ্গে هَذَا إِفْكٌ مُبِينٌ - (এটা স্পষ্ট রটানো অপবাদ) কথাটি বলে দেওয়া রাসূল (ﷺ) উপর ওয়াজিব ছিল না। যেহেতু এটা ছিল তাঁর নিজস্ব পরিবারের ব্যাপার।


এখন প্রশ্ন হলো, বিষন্নতা ও দীর্ঘকাল নীরবতা অবলম্বনের হেতু কি? চিন্তিত হওয়ার কারণ মা’আযাল্লাহ’, অজ্ঞানতা নয়। যদি কোন সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনয়ন করা হয়, আর অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেই জানেন যে, সে অভিযোগ ভিত্তিহীন, তথাপি তিনি নিজের মানহানির আশংকায় চিন্তিত, উদ্বিগ্ন থকেন। জনগণের মধ্যে এ গুজব ছড়িয়ে পড়ায় ছিল রাসূল (ﷺ) বিষণ্নতার মূল কারণ। যদি রাসূল (ﷺ) সংশি­ষ্ট আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার অপেক্ষা না করে সাথে সাথে হযরত আয়েশা (রাদিআল্লাহু আনহার) নিষ্কলংক হওয়ার কথা ঘোষণা করতেন, তখন মুনাফিকগণ স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্বের আর এক অপবাদ রটাতো; অপবাদের মাসআলা সমূহ মুসলমানদের অজানা থেকেই যেতো; অজানা থাকতো মামলা মুকাদ্দমা তদন্ত করার প্রক্রিয়া ও রীতিনীতি। অধিকন্তু, ধৈর্যধারণের জন্য হযরত সিদ্দীকাতুল কুবরা (رضي الله عنه) যে ছওয়াব লাভ করেছেন, তা থেকে বঞ্চিত হতেন। সুতরাং, এ দীর্ঘ নীরবতার পেছনে অনেক রহস্য রয়েছে, আর এতো আকাইদের একটি অনস্বীকার্য মাসআলা যে, নবীর স্ত্রী ব্যভিচারিনী হতে পারেন না।


❏ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ


الْخَبِيثَاتُ لِلْخَبِيثِينَ وَالْخَبِيثُونَ لِلْخَبِيثَاتِ


‘‘দুঃশ্চরিত্র নারীগণ দুঃশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য, আর দুঃশ্চরিত্র পুরুষগণ দুঃশ্চরিত্র নারীদের জন্য।’’

{ সূরাঃ নূর, আয়াতঃ ২৬, পারাঃ ১৮}


এ খবীছ দুঃশ্চরিত্র শব্দটি প্রয়োগ করে যেনার প্রতিই নির্দেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ নবীর স্ত্রী যেনাকারিনী হতে পারেন না। তবে হ্যাঁ, কাফির হতে পারেন। কুফর একটি জঘন্য অপরাধ বটে, কিন্তু ঘৃণ্য ও লজ্জাকর বিষয় নয়। প্রত্যেক ব্যক্তি এটিকে লজ্জাকর ব্যাপার মনে করে না। কিন্তু যেনাকে প্রত্যেকেই লজ্জাকর ও ঘৃণ্য আচরণ বলে ধরে নেয়। এজন্য নবীগণের স্ত্রীদের কখনো স্বপ্নদোষ হয় না।


❏ মিশকাত শরীফের ‘গোসল’ শীর্ষক আলোচনা দেখুন, যেখানে বর্ণিত আছে যে, হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه) বিস্ময়ে হতবাক হযে গিয়েছিলেন যখন তিনি শুনলেন যে নারীর স্বপ্নদোষ হয়। এ সম্পর্কে আমার রচিত কিতাব ‘শানে হাবিবুর রহমানে’ ব্যাপক পর্যালোচনা করা হয়েছে। এখন বলুন,  রাসূল (ﷺ)-এর আকীদা সম্পর্কিত এ মাসআলাটিও কি জানা ছিল না যে সায়্যিদুল আম্বিয়ার স্ত্রী হযরত সিদ্দীকা (رضي الله عنه) পবিত্র বিধায় তাঁর দ্বারা এ অপরাধ কিছুতেই সংঘটিত হতে পারে না? অধিকন্তু খোদার মর্জি ছিল যে, মাহবুব আলাইহিস সালামের প্রিয়তমার পবিত্রতার সাক্ষ্য স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা সরাসরি দিবেন এবং কুরআনের সংশি­ষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করে কিয়ামত পর্যন্ত সারা দুনিয়ার মুসলমানের মুখেই তাঁর পবিত্রতার কথা ঘোষণা করাতে থাকবেন। যেমন প্রত্যেক নামাযীই নামাযসমূহে তাঁর পবিত্রতার জয়গান গেয়ে থাকে।


রাসূল (ﷺ) নিজেই যদি তাঁকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করতেন” তাহলে এতগুলো তাৎপর্যমন্ডিত বিষয়াবলী প্রকাশ পেতো না। আসল কথা হলো, সে সম্পর্কে অবহিত নিশ্চয়ই ছিলেন তিনি, কিন্তু প্রকাশ করেন নি।

এখানে মজার ব্যাপার যে, হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর ব্যাপারেও যুলেখা অপবাদ রটিয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করেন নি, বরং একটি দুগ্ধপোষ্য শিশুর মাধ্যমে নিষ্কলুষ হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেছেন। হযরত মারিয়াম (عليه السلام) কেও অপবাদ দেয়া হয়েছিল। তখন দুগ্ধপোষ্য ‘রূহুল্লাহর’ মাধ্যমে তাঁর সতীত্বের বিষয়টি উদঘাটন করেছেন। কিন্তু মাহবুব আলাইহিস সালামের প্রিয়তমা স্ত্রীর যখন বদনাম রটলো, তখন কোন শিশু বা ফিরিশতার মাধ্যমে তার কলুষমুক্ত হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করান নি, বরং এর সাক্ষ্য দিয়েছেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ এবং এ সাক্ষ্যকে কুরআনের অবিচ্ছেদ্য অংশ পরিণত করে দিলেন, যাতে তা ঈমানের অন্যতম অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত হয় এবং হুযুর আলাইহিস সাল্লাম আল্লাহর নিকট কতটুকু প্রিয়, সে বিষয়টি সৃষ্টিকূরের নিকট প্রকাশ পায়।


বিঃ দ্রঃ- অজ্ঞতা جهل ভুলে যাওয়া, نسيان তৎক্ষণাৎ মনে না’আসা, ذهول এ তিনটি প্রায় সমার্থক শব্দের অর্থে কিছুটা পার্থক্য আছে। অজ্ঞতার অর্থ না জানা, ভুলে যাওয়ার অর্থ হলো কোন বিষয় সম্পর্কে জানার পর তা স্মৃতিতে না থাকা। আর ৩য় শব্দটির অর্থ হলো কোন বিষয় স্মরণে আছে কিন্তু সেদিক মনোযোগ নেই। ধরুন এক ব্যক্তি কুরআন পড়েনি, দ্বিতীয় ব্যক্তি তা হিফজ করে পরে ভুলে গেছে, তৃতীয় ব্যক্তি পূর্ণরূপে হাফিজে কুরআন। কিন্তু কোন এক সময় তাকে কোন আয়াত জিজ্ঞাসা করা হলো কিন্তু তিনি তা বলতে পারলেন না কেননা সেদিকে তার মনোযোগ ছিল না। এখানে প্রথমোক্ত ব্যক্তি কুরআন সম্পর্কে ‘অজ্ঞ’ جاهل দ্বিতীয় ব্যক্তি ‘স্মরণ শক্তিহীন’ ناسى আর তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছেন এমন এক ব্যক্তি যিনি অন্যদিকে নিবিষ্ট হওয়ার কারণে তৎক্ষণাৎ আলোচ্য বিষয়টি স্মরণ করতে অপারগ ذاهل আম্বিয়া কিরামগণ কোন কোন সময় বিশেষ কোন বিষয় ভুলে যেতে কিংবা তাদের স্মরণ না থাকতে পারে। কিন্তু এ ভুলে যাবার ঘটনাটি দীর্ঘস্থায়ী হয় না।


কুরআন করীমে সায়্যিদুনা হযরত আদম (عليه السلام) প্রসঙ্গে বলা হয়েছে فَنَسِىَ وَلَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا (তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, কিন্তু আমি তার মধ্যে কৃত কর্মের অটল প্রত্যয় পাইনি।)  

{সূরাঃ ত্বহা, আয়াতঃ ১১৫, পারাঃ ১৬}

 

লওহে মাহফুজের প্রতি হযরত আদম (عليه السلام) এর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল, তাঁর যাতীয় অনুষ্ঠিতব্য ঘটনাবলী তাঁর দৃষ্টির পরিধির মধ্যে ছিল। কিন্তু খোদার ইচ্ছায়, কিছুক্ষণের জন্য ওই সব ভুলে গিয়েছিলেন (স্মৃতিপটে জাগরুক ছিল না।)


❏কিয়ামতের দিন হাদীছবেত্তা, তাফসীরকারক ও ফিকহশাস্ত্রবিদ সহ সমস্ত মুসলমানগণ সুপারিশকারীর সন্ধানে নবীগণের (عليه السلام) কাছে গিয়ে বলবেনঃ


‘আপনি আমাদের সুপারিশ করুন’। কিন্তু কেউ না সুপারিশ করবেন, না শফীউলমুযনিবীন (ﷺ) এর সঠিক ঠিকানা বাতলে দেবেন। স্মৃতিচারণ করে বলবেন, হযরত নুহ (عليه السلام) এর কাছে যাও, ওখানে যাও, সম্ভবতঃ তিনিই তোমাদের সুপারিশ করবেন। অথচ দুনিয়াতে থাকালীন সবই এ আকীদাই পোষণ করতেন এবং এখনও করেন যে শফীউন মুযনিবীন হচ্ছেন- প্রিয় নবী হুজুর (ﷺ) এটাই হলো অন্যমনস্কতা।


ذهول অর্থাৎ ওই আসল কথাটি স্মৃতি পটে না থাকা। তদ্রূপ যদি  রাসূল (ﷺ) কোন সময় কোন বিষয় কিছু না বলেন, তাহলে তার কারণ হতে পারে যে বিষয়টির খেয়াল না থাকা। এতে তাঁর অজ্ঞানতা প্রতীয়মান হয় না। এরূপ আরও দৃষ্টান্ত দেখুন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন وَاِنْ كُنْتَ مِنْ قَبْلِهِ لِمَنَ الْغَا فِلِيْنَ (যদিওবা এর আগে আপনি হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর ঘটনার ব্যাপারে গাফিল তথা অমনোযোগী ছিলেন।  

{সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ৩, পারাঃ ১২}


এ আয়াতে দেখুন, ‘গাফিল’ (অমনোযোগী) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। রব তা’আলা এখানে জাহিল’ (অজ্ঞ) শব্দ বলেন নি। ‘গাফিল’ ওই ব্যক্তিকে বলা হয়, যে সংশি­ষ্ট ঘটনা সম্পর্কে অবহিত, কিন্তু জ্ঞাত বিষয়ের দিকে মনোযোগী নয়।


❏ প্রসিদ্ধ ফার্সী কাব্যগ্রন্থ ‘গুলিস্তা’য় উল্লেখিত আছেঃ কেউ হযরত ইয়াকুব (عليه السلام) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ


زمصرش يو ئے پير اہن سندى

چرادر چاه كنعانش نه ديدى


আপনি সুদূর মিসর থেকে হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর জামার খুশবু পেলেন, কিন্তু ‘কানআনের’ (বর্তমান লেবানন রাষ্ট্রের অন্তভুর্ক্ত) কূপে থাকতে তাঁকে (হযরত ইউসুফ (عليه السلام)) দেখলেন না কেন? প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ


بگفت احوال مابرق جهان است

دمے پيداوديگردم نہاں است ،

گہے بر طارم اعلى نشينم ،

گہے برپشت پائے خود نه بينم


অর্থাৎ- তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা হচ্ছে বিদ্যুৎ চমকানোর মত- চমক দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর মুহূর্তেই দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। কোন সময় সর্বোচ্চ আসনে আসীন হই, আবার কখনো নিজের পায়ের উপরিভাগও দেখতে পাই না। কুরআনী আয়াত থেকে জানা যায় যে, হযরত ইয়াকুব (عليه السلام) এর জানা ছিল যে, কানআনের চাঁদ মিসরেই আলো বিতরণ করছেন। তিনি বলেছেনঃ


وَاَعْلَمُ مِنَ اللهِ مَا لاَ تَعْلَمُوْنَ


অর্থাৎ- খোদার পক্ষ থেকে আমি ওইসব বিষয়ে জ্ঞাত, বা তোমাদের জানা নেই।

{সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ৮৬, পারাঃ ১৩}

 

❏ তাফসীরে ‘রূহুল বয়ানে’ দ্বাদশ পারার আয়াত

{সূরাঃ হুদ, আয়াতঃ ২৫, পারাঃ ১২}

 

وَلَقَدْ اَرْ سَلْنَا نُوْحًا اِلَى قَوْمِهِ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখিত আছে যে, আল্লাহ তা’আলার কাছে তাঁর প্রিয়জনদের কান্নাকাটি খুবই পছন্দনীয়। হযরত নুহ (عليه السلام) এত অধিক কান্নাকাটি করেছেন, যার জন্য ‘নুহ’ নামকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ক্রন্দনকারী। হযরত ইয়াকুব (عليه السلام) এর কান্নাকটির বাহ্যিক উপলক্ষ ছিল হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর বিচ্ছেদ। আসলে এ কান্নাকাটিই ছিল সম্মান ও মরতবার সুউচ্চ আসনে আসীন হওয়ার কারণ। সুতরাং, সে কান্না হযরত ইউসুফ (عليه السلام) সম্পকে অনবহিত থাকার কারণে ছিল না, বরং আসল কথাই হচ্ছে- اَلْمَجَازُ قِنْطَرَةُ الْحَقِيْقَةِ.

(‘মাজায’ হচ্ছে ‘হাকীকতের’ সেতু সদৃশ।) অর্থাৎ- বাহ্যিক অপ্রকৃত অবস্থার মাধ্যমে প্রকৃত অবস্থায় উপনীত হওয়া যায়।


❏ সুবিখ্যাত ‘মছনবী’ শরীফে আছেঃ


عشق ليلى نيست ايں كار نست

حسن ليلى عكس رخسار نست

خوش بيايد نالئه شب ہاے تو

ذوقہادر ام بيار بهاے تو


অর্থাৎ লায়লার প্রতি ইশক মহব্বতই আসল ব্যাপার নয়, লায়লার সৌন্দর্য্যের মধ্যে দিয়েই প্রকৃত প্রেমাস্পদের চেহারার প্রতিচ্ছবি উদ্ভাসিত। মজনুনের হাহুতাশ, কান্নাকাটি থেকে আসল প্রেমাস্পদই আনন্দানুভূতি লাভ করে, শ্বাশ্বত প্রেমের রসাস্বাদন করে।


হযরত ইউসুফ (عليه السلام) তাঁর ভাই বিন ইয়ামীনকে বাহানা করে মিসরে আটকে রেখেছেন। তাঁর ভাইয়েরা ফিরে এসে শপথ করে বললেন এবং তাদের বক্তব্যের সমর্থনে মিসরগামী কাফেলাভুক্ত লোকদের সাক্ষ্যও পেশ করলেন যে, বিন ইয়ামীনকে মিসরে রাজবন্দী হিসেবে আটক করা হয়েছে। কিন্তু তিনি (হযরত ইয়াকুব (عليه السلام)) বললেনঃ


بَلْ سَوَّ لَتْ لَكُمْ اَنْقُسُكُمْ اَمْرًا


অর্থাৎ- তোমরা বরং এক মনগড়া বাহানা উপস্থাপন করছ।

{ সূরাঃ ইউসূফঃ আয়াতঃ ১৮, পারাঃ ১২}

 

অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন- ইউসুফ (عليه السلام) কে আমার ছেলেরাই আমার থেকে পৃথক করেছে এবং বিন ইয়ামীনকেও আমার সন্তান তথা হযরত ইউসুফ (عليه السلام) বায়ানা করেই আটকে রেখেছেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, আসল ঘটনাটা সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত ছিলেন। পক্ষান্তরে বাহ্যিকভাবে একথাই বোঝা যায় যে, হযরত ইয়াকুব (عليه السلام) এর দু’সন্তান বিন ইয়ামীন ও য়াহুদা মিশরে রয়ে গেছেন। কিন্তু, তিনি (হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম) ফরমাচ্ছেনঃ


عَسَى اللهُ اَنْ يَّاتِيَنِىْ بِهِمْ جَمِيْعًا


অর্থাৎ- অদূর ভবিষ্যতে আল্লাহ তা’আলা সে তিনজনের সাথে আমার মিলন ঘটাবেন।  

{সূরাঃ ইউসূফঃ আয়াতঃ ৮৩, পারাঃ ১৩}


এ তৃতীয়জন ছিল কে? এ তৃতীয়জন হযরত ইউসুফ (عليه السلام) ইতো ছিলেন। আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করুন, যখন যুলেখা হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর নিকট ঘরের দরজা বন্ধ করে অসৎ উদ্দেশ্যে চরিতার্থ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন, তখন ঐ বন্ধ ঘরে হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর কাছে হযরত ইয়াকুব (عليه السلام) উপস্থিত হয়ে দাঁতের মাঝে আঙ্গুলী দাবিয়ে ইশারা-ইঙ্গিতে ব্যক্ত করলেন ‘কখনই না, হে বৎস! এ ঘৃণ্য কাজ তোমাকে শোভা পায় না। তুমি ‘একজন নবীর সন্তান।’


❏ এ বিস্ময়কর ঘটনাকে কুরআন শরীফ এভাবে ব্যক্ত করেছেঃ


وَهَمَّ بِهَا لَوْ لاَاَنْ رَّىَ بُرْهَانَ رَبِّهِ


তিনি যুলেখার প্রতি আকৃষ্ট হতেন, যদি না তিনি খোদার এ দলিল দেখতেন।

{সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ২৪, পারাঃ ১২}

 

আরও স্মর্তব্য যে, হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর ভাইয়েরা খবর দিলেন যে, তাঁকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু পুত্রের সার্ট দেখে ও বাঘের খবরের ভিত্তিতে ওদের মিথ্যা বলার বিষয়টি তাঁর জানা হয়ে গিয়েছিল। বাঘ আরয করছিল ‘আমাদের জন্য নবীগণের মাংস ভক্ষণ হারাম।’ (তাফসীরে খাযেন ও ‘রূহুল বয়ানে’ সূরা ইউসুফের তাফসীর দেখুন।) পুত্রদের এ লোমহর্ষক খবরের পরেও প্রিয় সন্তানের সন্ধানে তিনি জঙ্গলে গেলেন না কেন? বোঝা যায় যে তিনি উক্ত বিষয়ে অবহিত ছিলেন, কিন্তু রহস্য উদঘাটন করেন নি। তিনি জানতেন, তাঁর প্রিয় সন্তানের সাথে সাক্ষাত হবে। অনুরূপ, হযরত ইউসুফ (عليه السلام) ও অনেক সুযোগ পেয়েও নিজের বাপকে নিজের খবর দেননি। বোঝা যায়, হুকুমের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। এখন ভেবে দেখুন, হযরত ইয়াকুব (عليه السلام) নিজের সন্তানদের প্রতিটি কর্মকান্ড অবলোকন করলেন, আর  রাসূল (ﷺ) হযরত সিদ্দীক আকবর (رضي الله عنه) এর পূত পবিত্র কন্যা হযরত সিদ্দীকার (رضي الله عنه) অবস্থা সম্পর্কে বুঝি অনবহিতই ছিলেন! যাঁকে আল্লাহ তা’আলা এত কিছু দিয়েছেন, তাঁকে এমন সংযম ও ধৈর্য শক্তিও দিয়েছেন, যাতে রাসূল (ﷺ) দেখেও খোদার ইচ্ছা বতিরেকে গোপন তথ্য ফাঁস না করেন। اَللهُ اَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ (আল্লাহ এ বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞাত যে তার রিসালাতের দায়িত্ব কোথায় বা কাকে অর্পণ করা হবে।

{সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ১২৪, পারাঃ ৮}

 

আমার এ বক্তব্যটুকু স্মরণ রাখলে ইনশাআল্লাহ অনেক কাজে আসবে।

৮নং আপত্তিঃ 

হাদীছ শরীফে আছে- হুযুর আলাইহিস সাল্লাম তাঁর কোন স্ত্রীর ঘরে মধু পান করেছেন। এতে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) আরয করলেন, হে আল্লাহর হাবীব, আপনার পবিত্র মুখ থেকে মুগফুরের (এক ধরনের গাছ নিঃসৃত আঠাযুক্ত পানীয়) গন্ধ আসছে। তখন রাসূল (ﷺ) ফরমান ‘আমিতো মুগফুর ব্যবহার করিনি, মধুই পান করেছি’। এরপর হুযুর নিজের জন্য মধুকে হারাম করে ফেললেন।


❏ এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল হলো,


 لِمَ تُحَرِّمُ مَا اَحَلَّ اللهُ لَكَ


(আল্লাহ যা’ আপনার জন্য হালাল করেছেন, তা কেন হারাম হিসেবে গণ্য করছেন?)  

{সূরাঃ তাহরীম, আয়াতঃ ১, পারাঃ ২৮}


বোঝা গেল যে, তাঁর নিজের মুখ থেকে কোন গন্ধ বেরুচ্ছে কিনা সে খবরও তাঁর ছিল না।

{ক. মুসলিম, আস-সহীহ, ২/১১০০ হাদিসঃ ১৪৭৪

খ. আবু দাউদঃ আস-সুনানঃ ৩/৩৩৪ হাদিসঃ ৩৭১৪}

 

উত্তরঃ 

এর উত্তর সেই আয়াতের মধ্যেই রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে

 تَبْتَغِىْ مَرْ ضَاتَ اَزْوَا جِكَ

(হে হাবীব, আপনার এ হারাম করাটা আপনার অজান্তে সম্পন্ন হয়নি, বরং হারাম করছেন আপত্তি উত্থাপন কারিনী স্ত্রীগণের সন্তুষ্টির জন্যে।)  

{সূরাঃ তাহরীম, আয়াতঃ ১, পারাঃ ২৮}


অধিকন্তু, নিজের মুখের গন্ধ অদৃশ্য বিষয়াদির অন্তভুর্ক্ত নয়। তা বাহ্যিক ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য, যা যে কোন সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ব্যক্তিমাত্রই অনুভব করে থাকে। দেওবন্দীগণ নবীগণের ইন্দ্রিয়কেও অপরিপূর্ণ ও খুতযুক্ত বলে ধরে নিয়েছেন নাকি?


❏ তাঁদের ইন্দ্রিয়ের শক্তি সম্পর্কে মওলানা রুমী (رحمة الله) বলেছেন-


نطق آب ونطق خاك ونطق گل

ہست محسوس از خواس اہل دل

فلسفى گو منكر حنّانه است

ازحواس اولياء بيگانه است


(মাটি কাদা ও পানির ভাষা রূহানী শক্তি সম্পন্ন লোকেই বুঝতে পারেন। দার্শনিকগণ ‘উসতুনে হান্নানার’ বিলাপকে অস্বীকার করেন বটে, তবে ওলীগণের ইন্দ্রিয় জ্ঞান সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই।)



৯নং আপত্তিঃ 

নবী (ﷺ) যদি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী হতেন তাহলে খায়বরে বিশ মিশানো মাংস খেলেন কেন? আর যদি জেনে শুনেই খেয়ে থাকেন, তাহলে এটা আত্মহত্যার অপচেষ্টা, যা নবীর ক্ষেত্রে কল্পনাও করা যায় না।


উত্তরঃ 

সে সময় হুজুুর আলাইহিস সালামের একথা জানা ছিল যে, মাংসে বিষ মিশ্রিত আছে, আর এও জানা ছিল যে, খোদার হুকুমে রাসূল (ﷺ) উপর সে বিষ কার্যকরী হবে না। একথাও জানা ছিল যে, মহামহিম প্রভুর ইচ্ছা যে তিনি বিষ খান, যাতে ওফাতের সময় বিষের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায় ফলস্বরূপ শাহাদাত জনিত ওফাতের ভাগী হন। তাই প্রতিপালকের ইচ্ছায় সন্তুষ্ট থাকাই ছিল তাঁর একমাত্র কাম্য।



১০নং আপত্তিঃ 


রাসূল (ﷺ) যদি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী হতেন, তাহলে তাঁর চোখে ধুলা দিয়ে সত্তরজন সাহাবায়ে কিরামকে নিয়ে গিয়ে ‘মাউনা’ নামক স্থানে কূপবাসী মুনাফিকগণ নির্মমভাবে শহীদ করলো কিরূপে? তাঁদেরকে কেন তিনি এ বিপদের মুখে ঠেলে দিলেন?


উত্তরঃ 

রাসূল (ﷺ)-এর এ খবর ছিল যে ‘বেরে-মাউনা’ বাসীগণ মুনাফিক ছিল এবং এও তাঁর জানা ছিল যে, এরা ঐ সত্তরজন সাহাবাকে শহীদ করবে। কিন্তু একই সাথে এও তাঁর জানা ছিল যে, খোদার ইচ্ছাও ছিল তাই; এবং সে সত্তরজনের শাহাদাতের সুনির্দিষ্ট সময় এসেছে। তিনি জানতেন যে খোদার ইচ্ছায় রাজী থাকাটাই হলো বান্দার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) খোদার ইচ্ছার মর্জি মাফিক স্বীয় আদরের নন্দনকে যবেহ করার উদ্দেশ্যে ছুরি নিয়ে প্রস্তুত হয়েছিলেন। এটা কি নিরীহ সন্তানের প্রতি জুলুম ছিল? কখনই না, বরং খোদার ইচ্ছাতেই নিজের ইচ্ছাকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। আচ্ছা, এখন বলুন, আল্লাহর নিশ্চয় এ খবর ছিল যে মাংসের মধ্যে বিষ মিশ্রিত আছে, বেরে মাউনা’বাসী মুনাফিকগণ সত্তরজন সাহাবীকে শহীদ করবে। তিনি তৎক্ষণাৎ ওহী নাযিল করে কেন সে অনভিপ্রেত দুর্ঘটনাদ্বয় প্রতিরোধ করলেন না? আল্লাহ ও কি বেখবর ছিলেন? আল্লাহ সকলকে বোধ শক্তি দান করুন।


No comments

Powered by Blogger.