মাজারে ফুল ইত্যাদির উত্থাপিত আপত্তিসমূহ ও এর জবাব

দ্বিতীয় অধ্যায়

আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে উত্থাপিত আপত্তিসমূহ ও এর জবাব


প্রথম অধ্যায়ে উল্লেখিত তিনটি বিষয়ে বিরোধিতাকারীগণ নিম্নবর্ণিত আপত্তিসমূহ নানাভাবে উত্থাপিত করে থাকে।


১নং আপত্তি:- হুযুর ﷺ ইরশাদ ফরমান-


إِنَّ اللهَ لَمْ يَأْمُرْنَا أَنْ نَكْسُوَ الْحِجَارَةَ وَالطِّينَ.


-‘‘আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নির্দেশ দেননি যে,পাথরসমূহ ও মাটিকে কাপড় পরাতে।’’ ২০৪

{ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৩/১৬৬৬ পৃঃ হা/২১০৭, পরিচ্ছেদ: بَابُ لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلَا صُورَةٌ}


এর থেকে বোঝা যায় কবরসমূহের উপর গিলাফ বা চাদর চড়ান হারাম, কারণ ওখানেও পাথর ও মাটি আছে।


উত্তর : এ হাদীছ দ্বারা ঘরের দরজাসমূহে বিনা প্রয়োজনে অহংকারমূলক পরদা টাঙানোকে বোঝানো হয়েছে এবং তাও তকওয়া স্বরূপ বলা হয়েছে অর্থাৎ ঘরবাড়ী সজ্জিতকরণ তকওয়ার বরখেলাপ। ওই হাদীছের মধ্যেই সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে যে, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) ঘরের দেয়ালে পর্দা দিয়েছিলেন। হুযুর ﷺ ওটা ছিঁড়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন। তাই আওলিয়া কিরামের কবরসমূহে অর্পিত চাদরের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। কাবা শরীফে মূল্যবান কালো গিলাফ ও রসূলে পাকের রওযায় সবুজ গিলাফ রয়েছে। কাবা শরীফের গিলাফ হুযুরের যুগেই ছিল। তাই ওটা জায়েয হলে, কবরসমূহের চাদরও নিশ্চয় জায়েয হবে।


২নং আপত্তি:- কবরসমূহে ফুল অর্পন, চাদর চড়ান ও বাতি জ্বালানো ইসরাফ (অনর্থক) ও অপব্যয় মাত্র। তাই এগুলো নিষেধ। আওলিয়া কিরামের কবর সমূহে অনেক ফুল অর্পন ও বাতি জ্বালানো হয়ে থাকে। অথচ প্রয়োজনে মিটাতে একটি ফুল একটি বাতিই যথেষ্ট।


উত্তর : ইসরাফ অর্থ বেফায়দা পয়সা খরচ করা কিন্তু ওই সব ফুল, বাতি ও চাদরসমূহে কি ফয়দা রয়েছে, তা আমি প্রথম অধ্যায়ে আলোকপাত করেছি। সুতরাং এগুলোকে বেফায়দা বলা যাবে না, অপব্যয়ের অভিযোগও ভিত্তিহীন। আমরা কোর্তার উপর ওয়াজকোট পরি। আবার এর উপর আছকানও পরিধান করি, তাও মূল্যবান কাপড়ের হয়ে থাকে। অথচ একটি মামুলী কোর্তা দিয়ে কাজ চলে। তাহলে এটা অপব্যয় হলো কিনা? অনুরূপ ইমারত, সুস্বাদু খাদ্য, যানবাহন এবং অন্যান্য দুনিয়াবী আরামের জন্য যথেষ্ট ব্যয় করা হয়। অথচ এর থেকে ঢের কম খরচেও কাজ চলে।


কিন্তু এ গুলোকে অপব্যয় বলা যায় না। যেটাকে শরীয়ত হালাল বলেছে, ওটা সর্বক্ষেত্রে হালাল।


قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ.


-‘‘বলুন আল্লাহর সৌন্দর্যকে হারাম করেছে, যা মানুষের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।’’ ২০৫

{সূূরা আ’রাফ, আয়াত নং-৩২।}


৩নং আপত্তি:- মিশকাল শরীফের المسجد অধ্যায়ে আছে-


عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَائِرَاتِ الْقُبُورِ، وَالْمُتَّخِذِينَ عَلَيْهَا الْمَسَاجِدَ وَالسُّرُجَ.


-‘‘হুযুর ﷺ কবর যিয়ারতকারীদের কবরের উপর মসজিদ নির্মাণকারীদের ও বাতি প্রজ্জলনকারীদের উপর লানত দিয়েছেন।’’ ২০৬

{টিকাঃ

ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, ৪/৯৪ পৃঃ হা/২০৪৩, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৩/২১৮ পৃঃ হা/৩২৩৬, এ দুটি গ্রন্থের তাহকীকে আলবানী এটিকে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর ছাত্র ‘আবু ছালেহ (বাযাম) এর কারনে যঈফ বলেছেন। আসলেই মূলত হাদিসটি যঈফ, যার বিস্তারিত আলোচনা পাবেন ‘মাযার জিয়ারত সুন্নাত না পূজা?’ গ্রন্থে। খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/২৩০ পৃঃ হা/৭৪০}


এর থেকে বোঝা গেল কবরে বাতি জ্বালান মানে লানতের ভাগী হওয়া।


❏ ফতয়োয়ে আলমগীরীতে, বর্ণিত আছে:-


وَإِخْرَاجُ الشُّمُوعِ إلَى رَأْسِ الْقُبُورِ فِي اللَّيَالِيِ الْأُوَلِ بِدْعَةٌ كَذَا فِي السِّرَاجِيَّةِ.


-‘‘(দাফনের) প্রথম রাতে (সন্ধায়) কবরের মাথার সামনে বাতি নেয়া বিদ‘আত; যেমনটি সিরাজিয়া গ্রন্থে রয়েছে।’’ ২০৭

{নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে হিন্দীয়া, ৫/৩৫১ পৃঃ}


❏ ফতওয়ায়ে শামীর দ্বিতীয় খন্ড কিতাবুস সাওম এ বর্ণিত আছে-


أَمَّا لَوْ نَذَرَ زَيْتًا لِإِيقَادِ قِنْدِيلٍ فَوْقَ ضَرِيحِ الشَّيْخِ أَوْ فِي الْمَنَارَةِ كَمَا يَفْعَلُ النِّسَاءُ مِنْ نَذْرِ الزَّيْتِ لِسَيِّدِي عَبْدِ الْقَادِرِ وَيُوقَدُ فِي الْمَنَارَةِ جِهَةَ الْمَشْرِقِ فَهُوَ بَاطِلٌ.


-‘‘যদি কেউ কোন পীরবুযুর্গের কবরের উপর বা মিনারায় প্রদীপ জ্বালানোর উদ্দেশ্যে তৈল লানত করে, যেমন মহিলারা হুযুর গউছে পাকের নামে তৈল মানত করে এবং পশ্চিম মিনারায় জ্বালায় এগুলো সব বাতিল।’’ ২০৮

{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৩৯-৪৪০}


❏ কাজী ছানাউল্লাহ ছাহেব পানিপথী “ইরশাদুত্তালেবীন” গ্রন্থে লিখেছেন-


كه چراغاں كردن بدعت است پيغمبر خدا برشمع افروزا نزد قبر وسجده كنند گاں لعنت گفته.


-‘‘বাতি জ্বালান বিদআত। হুযুর ﷺ কবরের পার্শ্বে বাতি প্রজ্জলনকারী ও সিজদাকারীদের উপর লানত দিয়েছেন।’’ ২০৯

{কাজী ছানাউল্লাহ ছাহেব পানিপথী “ইরশাদুত্তালেবীন” গ্রন্থ}


❏ শাহ আবদুল আযীয ছাহেব তাঁর ফতওয়ার কিতাবের ১৪ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন-


واما ارتكاب محرمات از روشن كردن چراغها وملبوس ساختن قبور بدعت شنيعه اند.


-‘‘কিন্তু উরসসমূহে হারাম কাজ করা যেমন বাতি জ্বালান. ওসব কবরে গিলাফ চড়ান ইত্যাদি সবই বিদআতে সাইয়া।’’ ২১০

{শাহ আবদুল আযীয ছাহেব তাঁর ফতওয়ার কিতাবের ১৪ পৃষ্ঠা}


উপরোক্ত ইবরাতসমূহ দ্বারা পরিষ্কার বোঝা গেল মাযারসমূহে বাতি মাত্রই হারাম। হেরমাইন শরীফাইনে (মক্কা-মদীনা) বাতি জ্বালানোটা কোন দলীল হতে পারে না। কেননা, এটা খায়রুল কুরুনের (সাহাবী তাবেয়ীন ও তবে তাবেয়ীনের যুগ) পর চালু হয়েছে যার কোন গুরুত্ব নেই। তুর্কী সরকারই এটা চালু করেছে।


উত্তরঃ এ আপত্তিটা মূলতঃ ছয়টি আপত্তির সমষ্টি। এগুলোর বলে বলীয়ান হয়ে ভিন্নমত পোষণকারী অনেক গলাবাজী করে থাকে। তাই মনোযোগ সহকারে এবার জবাবটা শুনুল। আমি প্রথম অধ্যায়ে উলে­খ করেছি যে কোন কবরে বেফায়দা বাতি জ্বালানো নিষেধ, কারণ এটা অপব্যয় কিন্তু কোন ফায়দার উদ্দেশ্যে হলে, তখন জায়েয। চারটি ফায়দার কথা বর্ণনা করা হয়েছে- তিনটি সাধারণ মুসলমানদের কবরের বেলায় আর চতুর্থটি আওলিয়া, মাশায়িখ ও উলামায়ে কিরামের কবরসমূহের সম্মানের জন্য। ওই হাদীছে কবরে বাতি জ্বালানোর ব্যাপারে যেই নিষেধবাণী রয়েছে, তা বেফায়দা জ্বালানোর বেলায় প্রযোজ্য। যেমন


❏ মিশকাত শরীফের হাশিয়ায় (হাশীয়া প্রণেতা মেরকাত থেকে সংকলন করেছেন) ওই হাদীছের প্রেক্ষাপটে বর্ণিত আছে-


وَالنَّهْيُ عَنِ اتِّخَاذِ السُّرُجِ لِمَا فِيهِ مِنْ تَضْيِيعِ الْمَالِ.


-‘‘কবরসমূহে বাতি জ্বালান এজন্য নিষেধ, কারণ এতে অপব্যয় হয়।’’ মিরকাত শরহে মিশকাত ও অন্যান্য কিতাবে অনুরূপ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।


❏ হাদীকায়ে নদীয়া শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদীয়ার দ্বিতীয় খণ্ডের ৪২৯ পৃষ্ঠায় ওই হাদীছের উলে­খপূর্বক বর্ণনা করা হয়েছে-


اَىْ الَّذِيْنَ يَوْقِدُوْنَ السَّرُجَ عَلَى الْقُبُوْرِ عَبْثًا مِّنْ غَيْرِ فَائِدَة.


-‘‘সেসব লোকদের উপর লানত দিয়েছেন, যারা করবসমূহে অনর্থক বাতি জ্বালায়।’’

{আব্দুল গনী নাবলুসী, হাকিকাতুন নাদিয়াহ শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদীয়াহ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪২৯।}


❏ মিশকাত শরীফের الدفن অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-


أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ قَبْرًا لَيْلًا فَأُسْرِجَ لَهُ بِسِرَاجٍ.

-‘‘নবী করীম (ﷺ) এক রাত্রে লাশ দাফন করার উদ্দেশ্যে কবরস্থানে তশরীফ নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন তাঁর জন্য বাতি জ্বালানো হয়েছিল।’’ ২১৩

{ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৫/২৯৮ পৃঃ হা/১৫১৪, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৫৩৪ পৃঃ হা/১৭০৬, সনদটি সামন্য দুর্বল হলেও ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।}


দ্বিতীয়তঃ হাদীছ শরীফে আছে-


وَالْمُتَّخِذِينَ عَلَيْهَا الْمَسَاجِدَ وَالسُّرُجَ.

হুযুর ﷺ ওদের উপর লানত দিয়েছেন, যারা কবরের উপর মসজিদ তৈরী করেছে এবং বাতি জ্বালিয়েছে ২১৪

{টিকাঃ

ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, ৪/৯৪ পৃঃ হা/২০৪৩, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৩/২১৮ পৃঃ হা/৩২৩৬, এ দুটি গ্রন্থের তাহকীকে আলবানী এটিকে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর ছাত্র ‘আবু ছালেহ (বাযাম) এর কারনে যঈফ বলেছেন। আসলেই মূলত হাদিসটি যঈফ, যার বিস্তারিত আলোচনা পাবেন ‘মাযার জিয়ারত সুন্নাত না পূজা?’ গ্রন্থে। খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/২৩০ পৃঃ হা/৭৪০}


মোল্লা আলী কারী, শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী ও অন্যান্য ব্যাখ্যাকারীগণ ওই হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেছেন স্বয়ং কবরের উপর এভাবে মসজিদ তৈরী করা যে কবরের দিকে সিজদা দিতে হয় বা কবর মসজিদের দেয়ালের ভিতর পড়ে যায়, এ ধরনের মসজিদ তৈরী করা নিষেধ। কিন্তু যদি কবরের দেয়ালের ভিতর পড়ে যায়, এ ধরনের মসজিদ তৈরী করা নিষেধ। কিন্তু যদি কবরের পার্শ্বে বরকতের জন্য মসজিদ তৈরী করা যায়, তাহলে জায়েয। অর্থাৎ এ হাদীছে ব্যবহৃত علٰى শব্দটাকে তাঁরা হাকিকী (সঠিক) অর্থে প্রয়োগ করেছেন। যার ফলে স্বয়ং কবরের উপর বাতি জ্বালানোও নিষেধ বলতে বাধ্য। কিন্তু ঠিক কবরের উপর না হয়ে যদি আশে-পাশে হয়, তাহলে জায়েয, যেমন আমি গম্বুজ শীর্ষক আলোচনায় ব্যক্ত করেছি।


❏ অধিকন্তু প্রখ্যাত ‘হাদীকায়ে নদিয়া’ গ্রন্থে আল্লামা নাবলুসী (رحمة الله) এ হাদীছের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-


وَالْمُتَّخِذِينَ عَلَيْهَا اى على القبور يعنى فوقها.


অর্থাৎ ঠিক কবরের উপর বাতি রাখা। এর কারণ হচ্ছে বাতি হলো আগুন এবং কবরের উপর আগুন রাখা পাপ। ২১৫

{আব্দুল গনী নাবলুসী, হাকিকাতুন নাদিয়াহ শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদীয়াহ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪২৯।}


এ জন্যই ফকীহগণ কবরে শুকনা কাঠের তক্তা দিতে নিষেধ করেছেন। কেননা এর মধ্যে আগুনের প্রভাব রয়েছে। কিন্তু কবরের পার্শ্বে থাকলে, তা নিষেধ নয়। তদ্রুপ বাতি আগুন হওয়ার কারণেই নিষেধ করা হয়েছে কিন্তু কবরের তাযীমের জন্য নিষেধ করা হয়নি। এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে এ হাদীছে ব্যবহৃত علٰى শব্দটি মসজিদ ও বাতি উভয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু আপনারা উক্ত শব্দটি মসজিদের জন্য এক অর্থে আর বাতির জন্য অন্য অর্থে ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ মসজিদের ক্ষেত্রে হাকীকী অর্থে (অর্থাৎ ঠিক কবরের উপর) আর বাতির ক্ষেত্রে মেজাযী অর্থে (অর্থাৎ কবরের কাছে) ব্যবহার করেছেন। এতে হাকীকী ও মেজাযীর সংমিশ্রণ প্রকাশ পায়, যা অবৈধ। সুতরাং উভয় ক্ষেত্রে علٰى শব্দটি হাকীকী অর্থে প্রযোজ্য।


❏ মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতে এ হাদীছের প্রেক্ষাপটে মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) বলেন-


وَقَيْدُ " عَلَيْهَا " يُفِيدُ أَنَّ اتِّخَاذَ الْمَسَاجِدِ بِجَنْبِهَا لَا بَأْسَ بِهِ.


-‘‘এ হাদীছ ‘উপরের’ শর্তারোপ করা হয়েছে। যদ্বারা বোঝা গেল যে কবরের পার্শ্বে মসজিদ তৈরী করতে কোন বাধা নেই।’’ ২১৬

{মোল্লাল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ২/৬১৯পৃঃ হা/৭৪০}


علٰى শব্দ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, কবরের বরাবর পার্শ্বে মসজিদ তৈরী করা জায়েয। অনুরূপ একই শব্দ থেকে এটাই বোঝা গেল যে কবরের পার্শ্বে বাতি জ্বালানো জায়েয।


তৃতীয়তঃ আমি ‘গম্বুজ’ শীর্ষক আলোচনায় ফতওয়ায়ে শামী ও অন্যান্য কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছি যে, অনেক বিষয় সাহাবায়ে কিরামের যুগে নিষিদ্ধ ছিল কিন্তু বর্তমানে তা মুস্তাহাবে পরিণত হয়েছে। যেমন


❏ তফসীরে রূহুল বয়ানে ১০ম পারায় সুরা তওবার- ২১৭

{সূূরা তাওবাহ, আয়াত নং-১৮।}

إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ

আয়াতের তফসীরে লিখেছেন-


وَفِى الاِحْيَاءِ اَكْثَرُ مَعْرُوْفَاتِ هَذِهِ الْاعصار مُنْكَرَاتٌ فِى عَصْرِ الصَّحَابَةٍ.

-‘‘ইহইয়ায়ে উলুম গ্রন্থে ইমাম গাযযালী বলেছেন যে, এ যুগের অনেক মুস্তাহাব কাজ সাহাবায়ে কিরামের যুগে নাজায়েয ছিল।’’ ২১৮

{ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৯৯।}


❏ মিশকাত শরীফের কিতাবুল ইমারত ما على الولاة অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, হযরত উমর (رضي الله عنه) নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেন কোন মুসলমান বিচারক খচ্চরের উপর আরোহণ না করেন, চাপাতি-রুটি না খান, পাতলা কাপড় পরিধান না করেন এবং নিজের দরজা প্রয়োজনীয় সাক্ষাৎপ্রার্থীদের জন্য বন্ধ না করেন। এরপর বলেছেন-


فَإِنْ فَعَلْتُمْ شَيْئًا مِنْ ذَلِكَ فَقَدْ حَلَّتْ بِكُمُ الْعُقُوبَةُ.


-‘‘যদি তোমরা এর কোন কিছু কর, তাহলে তোমাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে।’’ ২১৯

{খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ২/১১০১, হা/৩৭৩০, ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৯/৪৯৩ পৃঃ হা/৭০০৯}


❏ একই মিশকাতের المسجدঅধ্যায়ে আছে -


عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا أُمِرْتُ بِتَشْيِيدِ الْمَسَاجِدِ.


-‘‘আমাকে উঁচু করে মসজিদ তৈরী করার নির্দেশ দেয়া হয়নি।’’  ২২০

{ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ১/১২২ পৃঃ  হা/৪৪৮, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/২২৪ পৃঃ  হা/৭১৮}


এর হাশিয়ায় আছে অর্থাৎ উঁচু করে মসজিদ তৈরী ও সাজসজ্জা করার নির্দেশ নেই।


❏ একই মিশকাতে আরও আছে-


عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ مَسَاجِدَ اللَّهِ.


-‘‘মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে বাঁধা দিও না।’’  ২২১

{সুনানে আবি দাউদ, আস-সুনান, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৫৫, হাদিস-৫৬৬, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}


কুরআন শরীফের যাকাতের হকদার আট শ্রেণী বলা হয়েছে। অর্থাৎ মুয়াল্লাফাতুল কূলুব (যুদ্ধকালীন সময়ে হুযুর ﷺকে সাহায্যকারী কাফির)কেও যাকাতের হকদার বলা হয়েছে। কিন্তু হযরত উমরর ফারুকের যুগে কেবল সাত শ্রেণীকে বহাল রাখা হয়েছিল, এবং মুয়াল্লাফাতুল কুলুবকে বাদ দেয়া হয়েছিল। (হিদায়া ও অন্যান্য কিতাব দেখুন) বলুন, এখনও কি আট শ্রেণী অটল আছে? এখন যদি বিচারকগণ সাদাসিদে অবস্থায় থাকেন, জনগণের কাছে কোন পাত্তা পাবে কি? কাফিরদের ঘর-বাড়ী, মন্দির যদি সুউচ্চ অট্টালিকা হয়ে থাকে আর আল্লাহর ঘর মসজিদ যদি নিচু, কাঁচা এবং মামুলী ধরনের হয়ে থাকে, তাহলে এতে ইসলামের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ পায়। আর বর্তমান যুগে মহিলারা মসজিদে গেলে, অনেক অঘটন ঘটবে। কোন কাফিরকে যাকাত দেওয়া বর্তমানে জায়েয নেই। এখন প্রশ্ন হলো এ সমস্ত বিধানবলীর কেন পরিবর্তন করা হলো? এ জন্যই যে ওগুলোর ইল­ত পরিবর্তন হয়ে গেছে। ওই সময়ে বাহ্যিক চাকচিক্য ছাড়াই মুসলমানদের অন্তরে আওলিয়া কিরাম ও কবরস্থানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিল। তাই তাদের জীবিত ও মৃত অবস্থা সাদাসিদে ছিল। কিন্তু বর্তমান দুনিয়াবী অবস্থা পরিবর্তন ও টিপ টপ হয়ে যাবার ফলে, ওইগুলোকে জায়েয ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন আগে নির্দেশ ছিল মাযারসমূহে আলোক সাজ্জা করো না। এখন জায়েয সাব্যস্ত হয়েছে।


❏ তফসীরে রুহুল বয়ানে -

إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ

আয়াতের প্রেক্ষাপটে বর্ণিত আছে যে, হযরত সুলায়মান (عليه السلام) বায়তুল মুকাদ্দাসের মিনারের উপর এমন আলোকসজ্জা করেছিলেন যে, বার মাইল দূরে বসে মহিলারা এ আলোতে সুতা কাটতো এবং অনেক সোনা-চাঁদি দ্বারা ওটাকে সজ্জিত করেছিলেন। বিরোধিতাকারীরা ফতওয়ায়ে আলমগীরীর যে ইবারত উদ্ধৃতি করেছে, তা ভুল। আসল ইবারত হচ্ছে-


وَإِخْرَاجُ الشُّمُوعِ إلَى رَأْسِ الْقُبُورِ فِي اللَّيَالِيِ الْأُوَلِ بِدْعَةٌ كَذَا فِي السِّرَاجِيَّةِ.


-‘‘(দাফনের) প্রথম রাতে (সন্ধায়) কবরের মাথার সামনে বাতি নেয়া বিদ‘আত; যেমনটি সিরাজিয়া গ্রন্থে রয়েছে।’’ ২২২

{নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে হিন্দীয়া, ৫/৩৫১ পৃঃ}


উক্ত ইবারতে দু’টি শব্দ লক্ষণীয় একটি إِخْرَاجُ অপরটি فِي اللَّيَالِيِ الْأُوَلِ এ শব্দদ্বয় দ্বারা সুস্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, তৎকালীন যুগে লোকেরা নতুন কবরে সন্ধ্যায় গিয়ে বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে আসতো। তারা মনে করতো যে এর ফলে মৃতব্যক্তি কবরে ভয় পাবে না। যেমন বর্তমান যুগে কতেক মহিলা চলি­শ দিন পযর্ন্ত কবরস্থানে মৃতব্যক্তির পার্শ্বে বাতি জ্বালায়। তারা মনে করে যে, প্রত্যেহ মৃতব্যক্তিদের রূহ কবরে আসে এবং অন্ধকার দেখলে ফিরে যায়। তাই বাতি জ্বালায়। এটা হারাম, কেননা, বিনা প্রয়োজনে তৈল খরচ বোঝায় এবং কুসংস্কারও বটে। এ ধরনের বাতি জ্বালানোকেই নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু উরসের বাতিতো আর এ নিয়তে হয় না। এবং রাতের শুরুতেও না। যদি উক্ত হাদীছের এ ভাবার্থ না হয়, তাহলে রাতের প্রারম্ভের শর্তারোপ কেন? শামীর ইবারত তো একেবারে সুস্পষ্ট। তিনিও উরস শরীফের বাতি জ্বালানকে নিষেধ করেন নি। তিনি বলেছেন যে, আওলিয়া কিরামের সান্নিধ্যলাভের প্রত্যাশা নিয়ে তাদের নামে বাতি জ্বালাবার মানত করা হারাম।


❏ দুররুল মুখতারে শামীর এ ইবারতের নিম্নরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন-


وَاعْلَمْ أَنَّ النَّذْرَ الَّذِي يَقَعُ لِلْأَمْوَاتِ مِنْ أَكْثَرِ الْعَوَّامِ وَمَا يُؤْخَذُ مِنْ الدَّرَاهِمِ وَالشَّمْعِ وَالزَّيْتِ وَنَحْوِهَا إلَى ضَرَائِحِ الْأَوْلِيَاءِ الْكِرَامِ تَقَرُّبًا إلَيْهِمْ فَهُوَ بِالْإِجْمَاعِ بَاطِلٌ.


-‘‘জানা দরকার যে, সাধারণ লোকেরা মৃতব্যক্তির নামে যে মানত করে এবং তাদের থেকে আওলিয়া কিরামের সান্নিধ্যে লাভের নামে যেই টাকা পয়সা, মোমবাতি বা তৈল ইত্যাদি করবে জ্বালানোর জন্য নেওয়া হয়, সর্বসম্মতভাবে বাতিল বলে গণ্য।’’ ২২৩

{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৩৯।}


স্বয়ং শামীর ইবারতেই আছে, لَوْ نَذَرَ যদি মানত করে এরপর শামীতে আরও বলা হয়েছে فَوْقَ ضَرِيحِ الشَّيْخِ শেখের কবরের উপর বাতি জ্বালান। ২২৪

{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৩৯।}


কবরের ঠিক জায়গাটাকে ضَرِيحِ বলা হয়। মুনতাখাবুল লুগাতে ضَرِيحِ কবরের গর্তকে বলা হয়েচে। আমি নিজেও ইতিপূর্বে উলে­খ করেছি যে স্বয়ং কবরের তাবুজের উপর বাতি জ্বালানো নিষেধ। অনুরূপ যদি কোন কবর নয়, এমনি কোন বুযুর্গের নামে কোন জায়গায় প্রদীপ রেখে জ্বালানো হয়। যেমন কতেক অজ্ঞ লোকেরা কতেক গাছে বা তাকে কারো নামে বাতি জ্বালায়, তাও হারাম। গাউছে পাকের নামে কোন পশ্চিমা মিনারে বাতি জ্বালাপনো বাতিল বলে যে বক্তব্যটি শামীতে আছে, তদ্বারা উপরোক্ত কথাটাই বোঝানো হয়েছে। গাউছে পাকের মাযার শরীফতো বাগদাদে অবস্থিত, অথচ এর জন্য বাতি জ্বালানো হচ্ছে সিরিয়ার মিনারে, এটাও বাতিল। সার কথা হলো আল্লামা শামী তিনটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন

(১) বাতি জ্বালানোর মানত করা, তাও আবার ওলীদের সান্নিধ্যলাভের নিয়তে,

(২) ঠিক কররের উপর বাতি জ্বালানো এবং

(৩) কবর ছাড়া কারো নামে বাতি জ্বালানো।

কিন্তু উরসের বাতি এ তিন বিষয়ের কোনটার পর্যায়ভূক্ত নয়।


মাসআলা:- কতেক অজ্ঞব্যক্তি কোন গাছ বা জায়গায় এ মেনে করে যিয়ারত করে ও বাতি জ্বালায় যে ওখানে অমুক বুযুর্গের আস্তানা আছে অর্থাৎ উনি ওখানে আসা যাওয়া করেন। এটা নিছক বাতুলতা মাত্র। তবে যদি কোন জায়গায় কোন বুযুর্গ কোন সময় বসেছিলেন বা ওখানে ইবাদত করেছিলেন, তাহলে ওই জায়গাটা বরকতময় মনে করে ওখানে ইবাদত করা জায়েয বরং সুন্নাত। বুখারী শরীফের ১ম খন্ড কিতাবুস সালাতে المسجد শীর্ষক আলোচনায় باب المسجد التى নামে একটি অধ্যায় দাঁড় করিয়েছেন। ওখানে উলে­খ করেছেন যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) রাস্তার ওই সমস্ত স্থানে নামায আদায় করতেন, যেখানে হুযুর ﷺ কোন সময় নামায পড়েছিলেন। এমনকি কোন কোন জায়গায় মসজিদ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু ভুলবশতঃ কিছু ব্যবধান স্থাপন করা হয়েছিল। তাই তিনি ওইসব মসজিদে নামায পড়তেন না বরং ওখানে পড়তেন, যেখানে হুযুর ﷺ নামায পড়েছিলেন।


فَلَمْ يَكُنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ يُصَلِّي فِي ذَلِكَ المَسْجِدِ، كَانَ يَتْرُكُهُ عَنْ يَسَارِهِ ২২৫


কেবল বরকত হাসিল করার জন্য এ রকম করেছিলেন। আজও কোন কোন হাজী সাহেবান গারে হেরায়, সেখানে হুযুর ﷺ ছয়মাস ইবাদত করেছিলেন, নামায আদায় করেন। সুতরাং খাজা আজমীরী ও অন্যান্য বুযুর্গানে কিরামের ইবাদতের স্থানসমূহে নামায আদায় করা, ওই স্থানগুলোর যিয়ারত করা এবং বরকতময় মনে করা সুন্নাতে সাহাবা দ্বারা প্রমাণিত।

{সহীহ বুখারী, কিতাবুস-সালাত, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৭০, হাদিস/৪৮৬}


মাসআলা:- আল্লাহর ওলীগণের নামে যে মানত করা হয়, তা শরীয়তের পরিভাষায় ব্যবহৃত নযর নয়। এটা কেবল শাব্দিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার অর্থ উপহার যেমন আমি আমার শিক্ষককে বললাম, এই আপনার (নযর) উপহার। এ ধরনের উপহার বা নযর সম্পূর্ণ জাযেয়। ফকীহগণ ওলীগণের নামে ওই ধরনের নযর বা মানতকে হারাম বলেন, যা শরীয়তের পরিভাষায় ব্যবহৃত হয়। এজন্যই تَقَرُّبًا إلَيْهِمْ বলা হয়েছে শরীয়তের পরিভাষায় ব্যবহৃত নযর বা মানত ইবাদত তুল্য, যা আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো জন্য মানাটা নিঃসন্দেহে কুফরী। কেউ বললেন, “হে হুযুর গাউছে পাক, আমার জন্য দুআ করুন। যদি আমি রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করি, তাহলে আপনার নামে ডেক পাকাবো।” এর ভাবার্থ আপনি আমার খোদা; এ রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করার পর আপনার এ ইবাদত করবো, এ রকম কখনো হতে পারে না। বরং এর ভাবার্থ হবে আমি আল্লাহর ওয়াস্তে পোলাও সদকা করবো এবং এর থেকে যে ছওয়াব পাওয়া যাবে তা আপনাকে বখশিশ করবো। যেমন কোন ব্যক্তি কোন ডাক্তারকে বললো, যদি অসুখ থেকে ভাল হয়ে যাই, তাহলে আপনাকে পঞ্চাশ টাকা নযরানা দেব। এতে কোন পাপ হতে পারে না।


❏ এ বক্তব্যটা ফতওয়ায়ে শামীর কিতাবুসসওমের اموات শীর্ষক আলোচনায় এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে-


بِأَنْ تَكُونَ صِيغَةُ النَّذْرِ لِلَّهِ تَعَالَى لِلتَّقَرُّبِ إلَيْهِ وَيَكُونَ ذِكْرُ الشَّيْخِ مُرَادًا بِهِ فُقَرَاؤُهُ


-‘‘নযর বা মানতটা আল্লাহর ইবাদতের অভিপ্রায়ে হয়ে তাকবে এবং বুযুর্গের কবরের কাছে অবস্থানরত ফকীরগণ এর হকদার হবে।’’ ২২৬

{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৩৯।}


এ ধরনের মানত মাত্রই জায়েয। এখানে সদকাটা হচ্ছে আল্লাহর নামে, ছওয়াবটা বখশিশ হচ্ছে শেখ বা ওলীর আ্মার নামে। আর ওই সদকার হকদার হচ্ছে ওলীর মাযারের খাদিমগণ ও ফকীরগণ। যেমন হযরত মরিয়ম (عليه السلام) এর জননী মানত করেছিলেন হে খোদা আমার পেটের বাচ্চাটা আপনার নামে মানত করছি। তাকে বায়তুল মুকাদ্দিসের খিদমতে নিয়োজিত করা হবে।


إِنِّي نَذَرْتُ لَكَ مَا فِي بَطْنِي مُحَرَّرًا ২২৭

{সূরা আলে ইমরান, আয়াত, ৩৫}


দেখুন, শরীয়তের দৃষ্টিতে আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো নামে শপথ করা নিষেধ। কিন্তু খোদ কুরআন করীম ও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়রুল্লাহর নামে শপথ করেছেন। যেমন কুরআন করীমে আছে -


وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ - وَطُورِ سِينِينَ.


ডুমুর ফুল, যায়তুন ও সিনাই পর্বতের শপথ ইত্যাদি  ২২৮

{সূূরা তীন, আয়াত নং-১২।}


এবং হুযুর ﷺ বলেছেন-


قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَفْلَحَ وَأَبِيهِ.


-‘‘ওর বাপের কসম, সে কৃতকার্য হয়েছে।’’  ২২৯

{সুনান আবি দাউদ, ৩/২২৩ পৃঃ  হা/৩২৫২, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৪১ পৃঃ  হা/১১}


এতে বোঝা গেল যে শরয়ী শপথের বেলায় শপথের সমস্ত আহকাম, কাফ্ফারা ইত্যাতি প্রযোজ্য হবে এবং এটা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে করা যাবে না। কিন্তু শাব্দিক শপথ, যা বক্তব্যের প্রতি কেবল জোর দেয়ার জন্য করা হয় তা গায়রুল্লাহর নামে জায়েয। মানতের বেলায়ও একই বক্তব্য প্রযোজ্য। একজন মানত করেছিলেন যে সে বায়তুল মুকাদ্দিসে বাতি জ্বালানোর জন্য তৈল পাঠাবে। হুযুর ﷺ ওকে সেই মানত পূর্ণ করার জন্য বলেছেন।


মিশকাত শরীফ النذور শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে, কোন ব্যক্তি মানত করেছিল:- আমি বুয়ানা নামক স্থানে উট যবেহ করবো। তখন হুযুর ﷺ ইরশাদ ফরমান:- যদি ওখানে কোন মূর্তি ইত্যাদি না থাকে, তাহলে মানত পূর্ণ করুন। কেউ মানত করেছিল বাইতুল মুকাদ্দিসে নামায পড়বে। তখন হুযুর ﷺ বললেন, মসজিদে হারামে নামায পড়ে নিন। এসব হাদীছ থেকে বোঝা গেল যে, সদকা খায়রাত মানত করার সময় কোন নির্দিষ্ট জায়গা বা ভিক্ষুকগোষ্ঠীর শর্তারোপ করা জায়েয। আওরিয়া কিরামের নামে নযম বা মানত করাটাও তদ্রুপ।


ফতওয়ায়ে রশীদীয়ার ১ম খন্ড الخطر والاباحة অধ্যায়ের ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে:- “মৃত ওলীগণের নামে যে মানত করা হয়, এর দ্বারা যদি তাঁদের আ্মার প্রতি ছওয়ার পৌঁছানো উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে জায়েয। কিন্তু যেই মানত নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে তাঁদের হয়ে থাকে, তা হারাম।” ২৩০

{রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৪।}


মিশকাত শরীফের مناقب عمر শীর্ষ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, কয়েকজন গৃহবধু মানত করেছিলেন যে, যদি হুযুর ﷺ উহুদের যুদ্ধে থেকে সহীহ সালামতে ফিরে আসেন তাঁরা তাঁর (ﷺ) সামনে দফ دف (এক প্রকার ঢোল) বাজাবেন। এখানেও নযর বা মানত শব্দটি প্রচলিত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, শরয়ী অর্থে নয়। অর্থাৎ হুযুর ﷺ সমীপে আনন্দের উপহার স্বরূপ দপ বাজাবেন। ২৩১

{ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৬২০, হাদিস-৩৬৯০।}


মোট কথা হয় ‘নযর’ শব্দটি আভিধানিক ও শরীয়তের পারিভাষিক এ দু’অর্থে ব্যবহৃত হয়। আভিধানিক অর্থে বুযুর্গানেদ্বীনের নামে মানত বা নযর করা জায়েয। যেমন তকওয়াফের দু’টি অর্থ আছে:- শাব্দিক, যার অর্থ হচ্ছে আশে-পাশে ঘোরা এবং শরীয়ী, যার অর্থ হচ্ছে কাবাকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করা। যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান -


وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيقِ.


-‘‘যেন পুরানো ঘরের তওয়াফ করে।’’  ২৩২

{সূূরা হাজ্জ, আয়াত নং-২৯।}


এখানে তওয়াফ শরয়ী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যত্র ইরশাদ করেছেন -


يَطُوفُونَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيمٍ آنٍ.


-‘‘ওরা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটা-ছুটি করবে।’’ ২৩৩

এখানে শাব্দিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

{সূরা আর-রাহমান, আয়াত নং-৪৪।}


৪। হযরত শাহ আবদুল আযীয ও কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী (رحمة الله) নিঃসন্দেহে দু’জন বড় যুগে বুযুর্গ আলিম ছিলেন। কিন্তু তাঁরা মুজতাহিদ ছিলেন না। যার ফলে তাঁদের কথা থেকে মাকরূহ তাহরীমী ও হারাম প্রমাণিত হয় না, এর জন্য স্বতন্ত্র শরয়ী দলীলের প্রয়োজন হয়। একজন আলিমের কথা থেকে মুস্তাহাব বা জায়েয প্রমাণ করা যেতে পারে। ওটাকেও মুস্তাহাব বলা হয়, যেটাকে আলিমগণ মুস্তাহাব মনে করে। কিন্তু মাকরূহ ও হারাম প্রমাণ করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দলীলের প্রয়োজন হয়। অধিকন্তু শাহ আবদুল আযীয ও কাজী সাহেব বাতি ও চাদরকে হারাম বলেছেন। অন্যদিকে আল্লামা শামী চাদর চড়ানোকে এবং তফসীরে রূহুল বয়ান ও হাদীকায়ে নদীয়ার রচয়িতাদ্বয় বাতি জ্বালানকে জায়েয বরং মুস্তাহাব বলেছেন। তাই এঁদের বক্তব্যই অধিক গ্রহণযোগ্য। আর শাহ সাহেব (رضي الله عنه) ও কাজী সাহেব (رحمة الله) এর বক্তব্যকে যদি গ্রহণ করি, তাহলে হারমাইন বিশেষ করে হুযুর পাক (ﷺ) এর রওযা মুবারককে বিদ্আত ও হারাম কাজের কেন্দ্র বলতে হয়, কেননা সেখানে গিলাফও চড়ানো হয় আর বাতিও জ্বালানো হয় এবং আজ পযর্ন্ত কোন আলিম বা ফকীহ এর প্রতিবাদও করেন নি। তাহলে কি তাঁরা সবাই বিদ্আতী বা গুমরাহ ছিলেন? তাই তাঁদের দু’জনের ফত্ওয়া কিছুতেই গ্রহণ করা যায় না।


❏ শাহ রফিউদ্দিন সাহেব তাঁর রচিত রিসালায়ে নুযুর পুস্তিকায় বলেছেন-


نزريكه ايں جا مستمل ميشود بر معنى شرعى است چه عرف آنست كه آنچه پيش بزرگاں مى برند نزرو نياز مى گويند.


-‘‘এখানে মানত বলতে শরয়ী বুঝানো হয়েছে কারণ জনসমাজে প্রসিদ্ধ এটাই যে বুযুর্গাণে কিরামের সামনে যা কিছু রাখা হয়, তা নযর নিয়ায বলে।’’


(৫) হারমাইন শরীফাইনের আলিমগণ কর্তৃক কোন বিষয়কে ভাল মনে করাটা মুস্তাহাব হওয়ারই প্রমাণ। এ পবিত্র যমীনে কখনও শিরক হতে পারে না। হাদীছ শরীফে আছে যে, শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে আহলে আরবের উপাসনা থেকে এবং পবিত্র মদীনা পাকের যমীন ইসলামের আশ্রয়স্থল এবং কাফির ও মুশরিকদের থেকে নিরাপদ। মিশকাত শরীফের حرم المدينة শীর্ষক অধ্যায় বর্ণিত আছে যে, মদীনা শরীফ পাপী লোকদেরকে এমনভাবে বের করে দেয়, যেমন কামারের ভাটি লৌহের মরিচা বের করে। অথবা কিছুদিন পর বা মৃত্যুর পর বের করে দেয়।


❏ জযবুল কুলুব’ গ্রন্থে শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী বলেন-


مواد نفى وابعاد شرو فساد است از ساخت عزت ايں بلده طيبه وخاصيت مذكوره دروے در جميع ازمان هويد است.


এর ভাবার্থ হচ্ছে মদীনা শরীফের পবিত্র যমীন সমস্ত পাপী তাপীকে বের করে দেয় এবং এ রীতি তথায় সবসময়ের জন্য বলবৎ আছে। সুতরাং মদীনা শরীফের আলিমদের অনুসৃত আমলকে হঠাৎ শিরক ও বিদআত বলে ফেলা মারাত্মক ভুল। এটাও তাদের ভুল ধারণা যে, তুর্কী শাসনামলে এ বাতি জ্বালানোর সূত্রপাত হয়েছে। প্রসিদ্ধ ইমাম নুর উদ্দিন সমহুদী (رحمة الله) ও জালাল উদ্দিন সয়ুতী (رحمة الله) এর ইন্তিকাল ৯১১ হিজরীতে হয় এবং ইমাম নুর উদ্দিন সমহুদী তাঁর কিতাব খুলাসাতুল ওয়াফা শরীফ ৮৯৩ হিজরীতে রচনা করেন। ওই কিতাবের চতুর্থ অধ্যায়ের ষোলতম পরিচ্ছেদে মদীনা শরীফের বাতির কথা উলে­খ করেছেন। যেমন-


وَأَمَّا مَعَالِيْقُ الْحَجْرَةِ الشَّرِيْفَةِ أَلَّتِى تَعَلَّقُ حَوْلَهَا مِنْ قَنَادِيْلِ الذَّهَبِ وَالفِضَّةِ وَنَحْوِهِمَا فَلَمْ أَقِفْ عَلٰى اِبْتَدَاءِ حُدُوْثِهِمَا.


-কিন্তু রওযা পাকের চারিদিকে সোনা-চান্দির যেসব আলোকবর্তিকা রয়েছে, তা কখন থেকে শুরু হয়েছে তা আমার জানা নেই।  ২৩৪

{সামহুদী, আল-ওফাউল ওফা বিআখবারি দারিল মুস্তফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৫৭}


এরপর তিনি লিখেছেন-


وَقَدْ أَلَفَ السُبْكِيْ تَألِيْفًا سَمَّاهُ تَنزَّل السَّكِيْنَةِ عَلٰى قَنَادِيْلِ الْمَدِيْنَةِ وَذَهَبَ فِيْهِ إِلَى جَوَازِهَا وَقْفِهَا وَعَدَمَ جَوَازَ صَرْفِ شَئٍ مِنْهَا لِعِمَارَةِ الْمَسْجِدِ.


অর্থাৎ ইমাম সুবকী (رحمة الله) তানাযযুলুস সকিনা আলা কনা দিলিল মদীনা নামক একটি কিতাব লিখেছেন। উক্ত কিতাবে তিনি বলেছেন যে রওযা পাকের এসব আলোকবর্তিকা জায়েয এবং এগুলোর ওয়াকফও বৈধ। কিন্তু ওসবের কোন কিছু মসজিদের জন্য ব্যয় করা যাবে না। ২৩৫

{সামহুদী, আল-ওফাউল ওফা বিআখবারি দারিল মুস্তফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৫৮}


আলহামদু লিল্লাহ, বিরোধিতাকারীদের আপত্তির পরিপূর্ণ উত্তর হয়ে গেল।


পাঞ্জাব, ইউ,পি,ও, কাথিওয়ার্ড এলাকায় সাধারণভাবে প্রচলিত আছে যে, পবিত্র রমযান মাসে খতমে তারাবীহ এর সময় মসজিদসমূহে আলোক সজ্জা করা হয়। কতেক দেওবন্দী একে শিরক ও হারাম বলে। এটা হচ্ছে তাদের ধর্মহীনতার পরিচায়ক।


❏ মসজিদের সৌন্দর্য হলো ঈমানের আলামত। তফসীরে রূহুল বয়ানে-

إنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ

আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে হযরত সুলায়মান বাইতুল মুকাদ্দিসে সতের শত বাতি জ্বালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। মসজিদে নববীতে প্রথম প্রথম খেজুর গাছের লাকড়ী জ্বালিয়ে আলোকিত করা হতো। পরে হযরত তমীম দারমী কিছু প্রদীপ রশি ও তৈল সংগ্রহ করে আনলেন এবং ওগুলোকে মসজিদে নববীর বীমের সাথে টাঙ্গিয়ে জ্বালিয়ে দিতেন। তা দেখে হুযুর ﷺ ইরশাদ ফরমান -


فَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ نَوَّرْتَ مَسْجِدَنَا نُوْرَ اللهُ عَلَيْكَ.


তুমি আমাদের মসজিদকে আলোকিত করেছ, আল্লাহ তোমাকে আলোকিত রাখুন।  ২৩৬

{ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪০০।}


❏ হযরত উমর (رضي الله عنه) ও যখন বাতি জ্বালালেন ও প্রদীপ টাঙিয়ে দিলেন, তখন হযরত আলী (رضي الله عنه) বলতেন -


فَلَمَّا رَأَها عَلِى كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهُ تزهر قَالَ نَوَّرْتَ مَسْجِدِنَا نَوَّرَ اللهُ قَبْرَكَ يَا اِبْنَ الْخَطَّاب.


হে উমর, তুমি আমাদের মসজিদকে আলোকিত করেছ। আল্লাহ যেন তোমার কবরকে আলোকিত করেন।  ২৩৭

{ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪০০।}


❏ তাফ্সীরে কবীরে إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছেন-


وَعَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَسْرَجَ فِي مَسْجِدٍ سِرَاجًا لَمْ تَزَلِ الْمَلَائِكَةُ وحملة العرش يستغفرون له مادام فِي الْمَسْجِدِ ضَوْؤُهُ

হুযুর ﷺ থেকে বর্ণিত আছে-যে কেউ মসজিদে বাতি জ্বালালে যতক্ষণ পযর্ন্ত এর আলো থাকবে, ততক্ষণ পযর্ন্ত ফিরিশতাগণ ও আল্লাহর আরশ বহনকারীগণ তার মাগফিরাতের দুআ করেন। ২৩৮

{ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী, তাফসিরে কাবীর, ১৬/১১}


❏ ফতওয়ায়ে রশিদীয়ার দ্বিতীয় খণ্ডে الخطر والاباحة শীর্ষক অধ্যায়ের ১১২ পৃষ্ঠায় স্বীকার করা হয়েছে যে হযরত উমর ফারুকের যুগে কতেক সাহাবায়ে কিরাম বাইতুল মুকাদ্দিসের আলোকসজ্জা দেখে এসে মসজিদে নববীতে নানা রকম বাতি জ্বালিয়ে ছিলেন। অতঃপর বাদশা মামুনুর রশিদ নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, মসজিদ সমূহে যেন ব্যাপক হারে বাতি জ্বালানো হয়।


মোট কথা হলো, মসজিদকে আলোকসজ্জিতকরণ আম্বিয়া, সাহাবা ও সাধারণ মুসলমানদের সুন্নাত।



No comments

Powered by Blogger.