ইলমে গায়েবের প্রাসঙ্গিক কুরআনের আয়াতের বিবরণ)
প্রথম পরিচ্ছেদ
(প্রাসঙ্গিক কুরআনের আয়াতের বিবরণ)
(১) قُلْ لَا أَقُولُ لَكُمْ عِنْدِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ
-‘‘আপনি বলে দিন, ‘আমি তোমাদের নিকট বলছি না যে আমার কাছে আল্লাহর ধন ভান্ডার এবং এও বলছি না যে, আমি গায়ব জানি।’’
{সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ৫০}
তাফসীরকারকগণ এ আয়াতের চার ধরনের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
প্রথমতঃ এ আয়াতটি সত্ত্বাগত ইলমে গায়বের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন।
দ্বিতীয়তঃ পূর্ণ ইলমে গায়বকে অস্বীকার করা হয়েছে।
তৃতীয়তঃ বিনয় ও নম্রতা প্রকাশের জন্য এ রকম বলা হয়েছে।
চতুর্থতঃ এ আয়াতের মর্মার্থ হলো আমি দাবী করছি না যে, আমি গায়ব জানি। অর্থাৎ ইলমে গায়বের দাবীদার হওয়ার ব্যাপারটিই অস্বীকার করা হয়েছে স্বয়ং ইলম গায়বের অস্বীকৃতি নয়। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থাবলী পর্যালোচনা করে দেখতে পারে।
❏‘তাফসীরে নিশাপুরী’তে এ আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে লিখা হয়েছে-
يَحْتَمِلْ اَنْ يَّكُوْنَ وَلاَ اَعْلَمُ الْغَيْبَ عَطْفًا عَلَى لاَاَقُوْلُ لَكُمْ اَىْ قَلَ لاَّ اَعْلَمُ الْغَيْبَ فَيَكُوْنُ فِيْهِ دَلاَلَةٌُ عَلَى اَنَّ الْغَيْبَ بِالْاِسْتِقْلاَلِ لاَيَعْلَمُهُ اِلاَّاللهُ.
-‘‘এ আয়াতের এও হতে পারে যে, لَااَعْلَمُ বাক্যটি সংযোজক অব্যয় واو এর মাধ্যমে لَااَقُوْلُ لَكُمْ বাক্যটির সহিত সম্পর্কযুক্ত। এতে অর্থ দাঁড়ায়ঃ হে মাহবুব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনি বলে দিন যে আমি গায়ব জানি না। তখন গায়ব বলতে সত্ত্বাগত ইলমে গায়বই বোঝা যাবে, যা আল্লাহ ছাড়া আর কারো আয়ত্বে নেই।’’
{ইমাম নিশাপুরীঃ তাফসীরে নিশাপুরীঃ ৬/১১০ পৃ.}
❏‘তাফসীরে বায়যাবী’তে এ আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে-
لَا اَعْلَمُ الْغَيْبَ مَالَمْ يُوْحَ اِلَىَّ اَوْلَمْ يَنْتَصِبْ عَلَيْهِ دَلِيْلٌُ
-‘‘আমি গায়ব জানিনা, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার প্রতি ওহী নাযিল হয়, বা এ ব্যাপারে কোন দলীল প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়।’’
{কাজী নাসিরুদ্ধীন বায়যাভীঃ তাফসীরে বায়যাভীঃ ২/৪১০ পৃ.}
এও হতে পারে যে এ আয়াতে সম্পূর্ণ জ্ঞানের অস্বীকৃতির কথাই ব্যক্ত করা হয়েছে।
❏‘তাফসীরে কবীরে’ এ আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে-
قَوْلُهُ لَااَعْلَمُ الْغَيْبَ يَدُلُّ عَلَى اِعْتِرَ افِهِ بِاَنَّهُ غَيْرُ عَالِمٍ بِكُلِّ الْمَعْلُوْ مَاتِ.
-‘‘আমি গায়ব জানি না’ কুরআনে উল্লেখিত এ ফরমান দ্বারা হুযুর আলাইহিস সালামের এ কথারই স্বীকারোক্তির প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী নন।’’
{ইমাম ফখরুদ্ধীন রাজীঃ তাফসীরে কবীরঃ ২/১১৪ পৃ.}
অথবা, এরূপ উক্তি বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করার জন্য করা হয়েছে।
❏‘তাফসীরে খাযেনে’ এ আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে-
وَاِنَّمَا نَفَى عَنْ نَفْسِهِ الشَّرِيْفَةِ هَذٍهِ الْاَشْيَاءَ تَوَاضُعًا لِلَّهِ تَعَالَى وَاِعْتِرَافًا لِلْعُبُوْدِيَةِ فَلَسْتُ اَقُوْلُ شَيْئًا مِنْ ذَلِكَ وَلاَ اَدَّعِيْةِ
-‘‘হুযুর আলাইহিস সালাম নিজের পবিত্র সত্ত্বা সম্পর্কে এ সকল বিষয়ের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন। এটা এ জন্য যে, এতে আল্লাহর নিকট তাঁর অনুনয়- বিনয় ও স্বীয় বন্দেগীর স্বীকারোক্তি প্রকাশ পায়। অর্থাৎ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি ওসব ব্যাপারে কিছু বলছি না, এবং কোন কিছুর দাবীও করছি না।’’
{ইমাম খাযেনঃ লুবাবুত তা’ভীলঃ ২/১৮০ পৃ.}
❏তাফসীরে ‘আরাইসুল বয়ানে’ উল্লেখিত আছে-
وتواضع حين اقام نفسه مقام الانسانية بعد ان كان اشرف خلق الله من العرش الى الثرى واطهر من الكرو بين والروحانيين خضوعا لجبروته وخشو عا لملكوته
-‘‘হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের সত্ত্বাকে মানুষের নির্ধারিত স্তরে রেখে বিনয়ভাবে প্রকাশ করেছেন। অথচ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হচ্ছেন ‘আরশ থেকে পাতাল পর্যন্ত সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। ফিরিশতা এমনকি ‘রূহানীয়ীন’ নামক ফিরিশতাগণের চাইতেও অধিক পবিত্র। আল্লাহর মহান প্রতাপ ও প্রতিপত্তির সামনে অনুনয়-বিনয় ও তাঁর মহান ইলমে গায়বের দাবী সম্পর্কেই অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন- “আমি ইলমে গায়বের অধিকারী বলে দাবী করছি না।”
❏তাফসীরে ‘নিশাপুরীতে’ আছে-
اَىْ لَااَدَّعِىُ الْقُدْرَةَ عَلَى كُلِّ الْمَقْدُوْرَاتِ وَالْعِلْمَ بِكُلِّ الْمَعْلُوْ مَاتِ
-‘‘আমি দাবী করছি না যে, আমি সবকিছু করার সামর্থ রাখি, কিংবা সমস্ত কিছু জানি।’’
{{ইমাম নিযামুদ্দীন নিশাপুরীঃ তাফসীরে নিশাপুরীঃ ৬/১১২ পৃ.}
❏‘তাফসীরে কবীরে’ একই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে-
اَىْ لاَاَدَّعِىُ كَوْنِىْ مَوْصُوْفًا بِعِلءمِ اللهِ وَبِمَجْمُوْعِ هَذَيْنِ الْكَلاَمَيْنِ حَصَلَ اَنَّهُ لاَيَدَّعِىُ الْاِلَهِيَّةَ
-‘‘আমি আল্লাহর জ্ঞানে গুণান্বিত হওয়ার দাবী করি না। আয়াতের দু’অংশকে একত্রিত করলে সারমর্ম হয়, হুযুর আলাইহিস সালাম খোদা হওয়ার দাবী করেন না।’’
{ইমাম ফখরুদ্দীন রাজীঃ তাফসীরে কবীরঃ ৪/৫৩৮ পৃ.}
❏‘তাসফীরে রূহুল বয়ানে’ এ একই আয়াতের তাফসীরে আছে-
عَطْفً عَلَى عِنْدِىْ خَزَائِنُ اللهِ وَلاَمُذَكِّرَةٌُ لِلنَّفِىْ اَىْ وَلاَ اَدَّعِىُ اَنِّىْ اَعْلَمُ الْغَيْبَ مِنْ اَفْعَالِهِ تَعَالَى عَلىَ اَنَّهَا عِنْدِىْ وَلَكِنْ لاَّ اَقُوْلُ لَكَمْ فَمَنْ قَالَ اِنَّ نَبِىَّ اللهِ لَايَعْلَمُ الْغَيْبَ فَقَدْ اَخْطَاءَ فِيْمَا اَصَابَ
অর্থাৎ- عِنْدِىْ خَزَ ائِنَ اللهِ বাক্যটির সাথেই وَلاَ اَعْلَمُ الْغَيْبَ বাক্যটির সম্বন্ধ রয়েছে। এবং لاَ অক্ষরটি এখানে অতিরিক্ত অস্বীকৃতির স্মারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ আমি আল্লাহর কার্যকালাপ সমূহের অদৃশ্য বিষয়াদি জানার এ বলে দাবী করি না যে, আল্লাহর ধনভান্ডার সমূহ তো আমার কাছে আছে, কিন্তু আমি তা’ বলি না।’ সুতরাং, যে ব্যক্তি বলে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গায়ব জানতেন না, সে এ আয়াতের গুঢ় মর্মার্থ অনুধাবনে ভুল করেছে, যদিও সে বাহ্যিক দিক থেকে আয়াতের শাব্দিক অর্থ ঠিকই করেছে।’’
{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ রুহুল বায়ানঃ ৩/৪৫ পৃ.}
❏‘তাফসীরে মাদারিকে’ এ আয়াতের শব্দ বিন্যাস প্রসংগে বলা হয়েছে-
وَمَحلُّ لاَ اَعْلَمُ الْغَيْبَ النَّصْبُ عَطْفًا عَلَى مَحَلِّ عِنْدِىْ خَزَ ائِنُ اللهِ لاَنَّهُ مِنْ جُمْلَةِ الْمُقُوْلِ كَاَنَّهُ قَالَ لاَاَقُوْلُ لَكُمْ هَذَا الْقَوْلَ وَلاَهَذَا الْقَوْلَ وَلاَ اَعْلَمُ الْغَيْبَ
অর্থাৎ- عِنْدِىْ خَزَ ائِنُ اللهِ বাক্যটির শব্দ বিন্যাসগত অবস্থানের সহিত সংযোজক অব্যয়ের মাধ্যমে সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় وَلاَ اَعْلَمُ الْغَيْبَ বাক্যটি ‘খবর’ বিশেষ। কেননা, لاَاَقُوْلُ এরপরে যে কথাটি বলা হয়েছে, সে কথাটিরই অন্তভুর্ক্ত হচ্ছে وَلاَ اَعْلَمُ الْغَيْبَ বাক্যটিও। অর্থাৎ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেন একথাই বলেছেন, আমি তোমাদের কাছে না এটা বলছি, না, ওটা কোনটাই বলছি না।’’
{ইমাম নাসাফীঃ তাফসীরে মাদারিকঃ ১/৩৬৫ পৃ.}
❏‘তাফসীরে নিশাপুরী’তে আছে-
اَىْ قَلْ لاَاَعْلَمُ الْغََيْبَ فَيَكُوْنُ فِيْهِ دَلاَلَةٌُ عَلَى اَنَّ الْغَيْبَ بِاِسْتِقْلاَلٍ لاَ يَعْلَمُ اِلاَّ اللهُ
-‘‘বলুন, ‘আমি গায়ব জানি না’ এখানে ‘গায়ব’ বলতে সত্ত্বাগত ও স্বয়ং সম্পূর্ণরূপে ‘গায়ব’ জানার কথাই বোঝানো হয়েছে, যেভাবে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।’’
{ইমাম নিশাপুরীঃ তাফসীরে নিশাপুরীঃ ৬/১১০ পৃ.}
একটি সূক্ষ্ম তাৎপর্যঃ এ আয়াতের দু’জায়গায় لاَاَقَوْلُ ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম لاَاَقَوْلُ পর দু’টি বিষয়ের কথা উল্লেখিত আছে। (১) ‘আমি বলছি না, যে আমার কাছে আল্লাহর ধনভান্ডার আছে।’ এবং (২) ‘এও বলছি না যে আমি গায়ব জানি’ দ্বিতীয় لاَاَقَوْلُ পর মাত্র একটি বিষয়ের উল্লেখ আছে। তা হলো ঃ ‘আমি বলছি না যে, আমি ফিরিশতা।’ এর তাৎপর্য হলো প্রথমোক্ত দু’টি বিষয়ে শুধু দাবীর অস্বীকৃতিই জ্ঞাপন করা হয়েছে, কিন্তু কথিত বিষয়টির স্বীকৃতি পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে ২য় لاَاَقَوْلُ দ্বারা দাবী ও দাবী করার বিষয় উভয়টি সম্পর্কে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ আমার কাছে আল্লাহর ধনভান্ডারও আছে, এবং আমি গায়বও জানি, কিন্তু এগুলো ধারক বলে দাবী করি না।
❏‘মিশকাত শরীফে’ فَضَائِلِ سَيِّدُ اْلمُرْسَلِيْن শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত উকবা বিন আমের (রা.) হতে বর্ণিত আছে-
أُعْطِيتُ مَفَاتِيحَ خَزَائِنِ الْأَرْضِ
-‘‘আমাকে পৃথিবীর যাবতীয় ধনভান্ডারের চাবি সমূহের অর্পণ করা হয়েছে।’’
{ক. খতিব তিবরিযীঃ মিশকাতঃ ৪/৩৫৪পৃ. হাদিসঃ ৫৯৫৮, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন।
খ. বুখারীঃ আস্-সহীহঃ ৬/১২৮ হাদিসঃ ২৯৭৭
গ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/৩৭১ পৃ. হাদিসঃ ৫২২৬
ঘ. নাসায়ীঃ আস-সুনানঃ ৬/৩ পৃ. হাদিসঃ ৩০৮৭
ঙ. আহমদঃ আল-মুসনাদঃ ২/২৬৪ পৃ.}
ইলমে গায়ব সম্পর্কিত হাদীছ সমূহ ইতিপূর্বে উল্লে করেছি। এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন “আমি আসলে ফিরিশতাও নই এবং ওটার দাবীও করছি না।” এ অন্তনির্হিত তাৎপর্য না হলে لاَاَقُوْلُ বাক্যটি একবার ব্যবহার করাই যথেষ্ট ছিল, দু’জায়গায় কেন বলা হলো? যদি আমার বর্ণিত ব্যাখ্যা সমূহের আলোকে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করা না হয়, তাহলে এ আয়াতটি ভিন্নমতাবলম্বীদেরও মতের বিপরীত হবে। কেননা, ইলমে গায়বের কিয়দংশ তারাও স্বীকার করেন। অথচ এ আয়াতে সম্পূর্ণরূপে বিষয়টির অস্বীকার করা হচ্ছে। অধিকন্তু, এখানে لَكُمْ দ্বারা কাফিরদের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ বলা হয়েছে হে কাফিরগণ, আমি তোমাদের কাছে বলছি না যে, আমার কাছে ধনভান্ডারসমূহ আছে। তোমরা চোর। চোরের কাছে ধনভান্ডারের কথা বলা যায় না। যাতে তোমরা শয়তানের মত গোপন রহস্যাবলী চুরি করতে না পার। আল্লাহ তা’আলা আসমানের উপর শয়তানের যাওয়ার পথে এ জন্যই প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন যে, সে চোর। তবে হ্যাঁ, একথা হযরত সিদ্দীক আকবর (রাদিআল্লাহু আনহু) এর কাছে বলা যাবে যে, ‘আমাকে আল্লাহর ধনভান্ডারের চাবিসমূহ অর্পণ করা হয়েছে’ আবার এখানে عِنْدِىْ শব্দের উল্লেখ করে এ কথাই বোঝানো হয়েছে, যে ধনভান্ডার আমার হাতে নেই আমার কর্তৃত্বাদীনে আছে। কেননা, ধনভান্ডার ভান্ডার রক্ষকের কাছে ও মালিকের মালিকানাধীনেই সুরক্ষিত থাকে। আমিতো ভান্ডার রক্ষক নই (আমি বরং মালিক)। দেখেন নি, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইঙ্গিতে মেঘ বৃষ্টি বর্ষণ করেছে, তাঁরই মুবারক অঙ্গুলিগুলো হতে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়েছে?
(২) وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ
-‘‘যদি আমি গায়ব জানতাম তাহলে প্রভূত কল্যাণ পুঞ্জীভূত করতাম।’’
{সূরাঃ আ’রাফ, আয়াতঃ ১৮৮, পারাঃ ৯}
তাফসীরকারগণ এ আয়াতেরও তিনটি ভাবার্থ ব্যক্ত করেছেন- (এক) হুযুর আলাইহিস সালামের এ উক্তিটা হচ্ছে বিনয় জ্ঞাপক। (দুই) এখানে আল্লাহর জানা যাবতীয় বিষয়ের জ্ঞানের অস্বীকৃতি জ্ঞাপনই মূল উদ্দেশ্য; (তিন) সত্ত্বাগত ও স্বয়ং সম্পূর্ণ জ্ঞানের অস্বীকারই এখানে ব্যক্ত হয়েছে।
❏আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাজী (রহ.) তার ‘নাসীমুর রিয়াদ্ব’ নামক গ্রন্থের এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন-
قَوْ لُهٌ وَلَوْ كُنْتُ اَعْلَمْ اَلغيْبَ فَاِنَّ الْمُنْفِىَّ عِلْمُهُ مِنْ غَيْرِ وَ اسِطَة وَاَمَّا اِطِّلاَعُهُ عَلَيْهِ الْسَلاَمُ بِاِعْلاَمِ اللهِ تَعَالَى فَاَمْرٌُ مُتَحَقُّقُ بِقَّوْلِهِ تَعَالَى فَلاَ يُظُهِرُ عَلَى غَيْبِهِ اَحَدًا اِلاَّمَنِ ارْتَضَى مِنْ رَّسُوْلِ
-‘‘অদৃশ্য বিষয়াদির সমর্থন এ আয়াতের وَلَوْ كُنْتَ اَعْلَمَ الْغَيْبَ পরিপন্থী নয়। কেননা, এখানে মাধ্যম বিহীন অর্জিত অদৃশ্য জ্ঞানকেই অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ কর্তৃক জানানোর ফলশ্রুতিতে হুযুর আলাইহিস সালামের গায়ব জানার বিষয়টি যথার্থরূপে প্রতিষ্ঠিত সত্য। কারণ, আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- فَلاَ يَظْهَرُ عَلَى غَيْبِهِ (আল্লাহর নিজের অদৃশ্য বিষয়াদি কারো নিকট প্রকাশ করেন না।) এখানে আল্লাহর জানা যাবতীয় বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞানের অস্বীকৃতিই জ্ঞাপন করা হয়েছে।’’
{ইমাম শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাজীঃ নাসীমুর রিয়াদ্ধঃ ৩/১৫০ পৃ.}
❏‘শরহে মওয়া কিফে’ আল্লামা মীর সৈয়দ শরীফ (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বলেছেন-
اَلْاِطِّلاَعُ عَلَى جَمِيْعِ الْمُغَيِّبَاتِ لاَيُجِبَ لِلنَّبِىِّ وَلِذَا قَالَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ لَوَكُنْتُ اَعْلَمُ الْغَيْبَ (الاية) وَجَمِيْعَ مُغَيِّبَاتٍ غَيْرُ مُتَنَا هِيَةٍ
অর্থাৎ- নবীর জন্য সমস্ত গায়ব সম্পর্কে অবহিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এ জন্যেই নবী করীম আলাইহিস সালাম ইরশাদ করেছেন- وَلَوْ كُنْتُ اَعْلَمُ الْغَيْبَ الاية আর, সমস্ত অদৃশ্য বিষয় হলো অসীম, সীমাবদ্ধতার গন্ডী বহির্ভুত। অথবা, এরূপ উক্তি অনুনয় বিনয় প্রকাশের নিমিত্তে করা হয়েছে।
❏‘সাবী’ হাশিয়ায়ে জালালাইনে এ আয়াত প্রসঙ্গে লিখা হয়েছে-
اِنْ قُلْتَ اَنَّ هَذَا يَشْكِلُ مَعَ مَاتَقَدَّمَ مِنْ اَنَّهُ اُطُّلِعَ عَلَى جَمِيْعِ مُغَيِّبَاتِ الدُّنْيَا وَالْاَخِرَةِ فَالْجَوَابُ اَنَّهُ قَالَ ذَالِكَ تَوَاضُعًا
-‘‘যদি আপনারা বলেন, এ আয়াতটি পূর্বোলেখিত বক্তব্যের (হুযুর আলাইহিস সালামকে) সমস্ত দ্বীনী ও পার্থিব অদৃশ্য বিষয় সমূহ অবহিত করা হয়েছে। বিপরীত তাহলে এর উত্তর হবেঃ এ উক্তিটা করা হয়েছে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশের নিমিত্তে।’’
{ইমাম সাভীঃ তাফসীরে সাভীঃ ২/১৮৫পৃ.}
❏‘তাফসীরে খাযেনে’ এ আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতেই ‘জুমাল-হাশিয়ায়ে জালালাইন’ থেকে উদ্ধৃতি করা হয়েছে-
فَاِنْ قُلْتَ قَدْ اَخْبَرَ النَّبِىُّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ عَنِ الْمُغَيِّبَاتِ قَدْ جَاءَتْ اَحَادِيْثُ فِى الصَّحِيْحِ بِذَالِكَ وَهُوَ مِنْ اَعْظَمِ مُعْجِزَاتِهِ فَكَيْفَ الْجَمْعُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ قَوْلِهِ لَوْ كُنْتَ اَعْلَمَ الْغَيْبَ قُلْتَ يَحْتَمِلَ اَنْ يَّكُوْنَ قَالَهُ تَوَاضُعًا وَّاَدبَا وَالْمَعْنَى لاَاَعْلَمُ الْغَيْبَ اِلاَّاَنْ يُطْلِعَنِى اللهُ عَلَيْهِ وَيُقَدِّرَهُ لِىْ وَيَحْتَمِلُ اَنْ يَّكُوْنَ قَالَ ذَلِكَ قَبْلَ اَنْ يُّطْلِعَهُ اللهُ عَلَى الْغَيْبِ فَلَمَّا اَطْلَعَهُ اللهُ اَخْبَرَ بِهِ
-‘‘আপনারা হয়তো প্রশ্ন করবেন, হুযুর আলাইহিস সালাম অনেক অদৃশ্য বিষয়ের খবর দিয়েছেন। এ সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীছও বর্ণিত আছে এবং ইলমে গায়ব হলো হুযুর আলাইহিস সালামের এক বড় মুজিযা। তাহলে এ সমস্ত কথা এবং উক্ত আয়াত لَوْكُنْتَ اَعْلَمُ الْغَيْبَ এর মধ্যে কিভাবে সামঞ্জস্য বিধান করা হবে? এর উত্তরে আমি বলবোঃ হতে পারে যে, এখানে বিনয় ও নমত্রার খাতিরে তিনি এরূপ বলেছেন এবং এর অর্থ হচ্ছে খোদার পক্ষ থেকে অবহিত হওয়া ছাড়া আমি গায়ব জানি না। এও হতে পারে যে, এ উক্তিটা ইলমে গায়বের অধিকারী হওয়ার আগেই করা হয়েছিল। যখন আল্লাহ তা’আলা হুযুর আলাইহিস সালামকে ইলমে গায়ব দান করেন, তখনই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গায়বের খবর দিয়েছেন।’’
{ক. ইমাম খাযেনঃ তাফসীরে খাযেনঃ ২/২৮০ পৃ.
খ. জুসাল ফতহাতে ইলাহিয়্যাত তাফসীরে জুমালঃ ৩/১৫৮ পৃ.}
❏‘আল্লামা সুলাইমান জুমাল (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ‘ফুতুহাতে ইলাহিয়া’ নামক হাশিয়ায়ে জালালাইনের’ ২য় খন্ডের ২৫৮ পৃষ্ঠায় অনুরূপ কথাই বলেছেনঃ
اَىْ قُلْ لاَّاَعْلَمُ الْغَيْبَ فَيَكُوْنُ فِيْهِ دَلاَلَةٌُ عَلَى اَنَّ الْغَيْبَ بِالْاِسْتِقْلاَلِ لاَيَعْلَمُ اِلاَّاللهُ
অর্থাৎ বলে দিন, আমি গায়ব জানি না। অতএব, আয়াত থেকে ইহাই বোঝা যায় যে, সত্ত্বাগতভাবে গায়বী বিষয়াদি নাজানার কথাই ব্যক্ত হয়েছে। অর্থাৎ সত্ত্বাগতভাবে খোদা ব্যতীত আর কেউ গায়বী বিষয়াদি জানে না।
{আল্লামা সুলাআমিান জুমালঃ ফতহাতে ইলাহিয়্যাহঃ ২/২১৭ পৃ.}
❏তাফসীরে সা’বীতে এ আয়াতের তাফসীরে আছে-
اَوْ اَنَّ عِلْمَهُ بِالْمُغَيَّبِ كَلاَّ عِلْمٍ مِنْ حَيْثَ اَنَّهُ لاَقُدْرَةَ لَهُ عَلَى تَغَيْرِ مَاقَدَّرَ اللهُ فَيْكُوْنُ الْمَعْنَى حِيْنَئِذٍ لَوْكَانُ لِىْ عِلْمٌُ حَقِيْقِىٌُّ بِاَنْ اَقْدِرَ عَلَى مَااُرِيْدُ وُقُوْعَهً لَاَسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ
-‘‘হুযুর আলাইহিস সালামের গায়ব জানাটা না জানার মতই। কেননা, আল্লাহ তা’আলা যা’ কিছু নির্ধারণ করেছেন, তা পরিবর্তন করার ক্ষমতা তাঁর নেই। তখন এ আয়াতের অর্থ হবে যদি আমি ইলমে হাকীকীর অধিকারী হতাম, যাতে আমার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে প্রভূত কল্যাণ পুঞ্জীভূত করতে পারতাম।’’
{ইমাম সাভীঃ তাফসীরে সাভীঃ ২/৩০৭ পৃ.}
এ তাৎপর্যটা খুবই যুক্তিযুক্ত। কেননা, এ আয়াতের অর্থ হলো যদি আমি গায়ব জানতাম, তাহলে প্রভূত কল্যাণ লাভ কারতাম, এবং আমাকে কোন কষ্ট পেতে হতো না। শুধু কোন বিষয় সম্পর্কে জানাটা কল্যাণ লাভের ও বিপদ থেকে বাঁচার বিশেষ ক্ষমতা না থাকে। আমার জানা আছে যে, বার্ধক্য আসবে, তখন আমাকে অনেক বার্ধক্যজনিত কষ্ট সহ্য করতে হবে। কিন্তু বার্ধক্য প্রতিরোধ করার কোন শক্তি আমার নেই। আমি আজ জানতে পারলাম যে, কয়েক দিন পর খাদ্য শস্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আমার কাছে আজ এত টাকা নেই যে, এক সঙ্গে বেশী পরিমাণ খাদ্যশস্য খরিদ করে রাখতে পারি। বোঝা গেল যে, কল্যাণ লাভ ও বিপদ থেকে বাঁচার ব্যাপারটি জ্ঞান ও ক্ষমতা উভয়টির উপর নির্ভরশীল। এ আয়াতে কুদরতের উল্লেখ নেই। তাই ‘ইলমে গায়ব’ বলতে ঐ ‘ইলমকেই বোঝানো হয়েছে, যা কুদরত বা শক্তি সামর্থ্যের সহিত সম্পৃক্ত। অর্থাৎ সত্ত্বাগত জ্ঞান, যা খোদা হওয়ার জন্য অত্যাবশ্যকীয়, যার সাথে কুদরতের সহাবস্থান অপরিহার্য। আয়াতের এ অর্থ গ্রহণ না করলে এর অন্য কোন অর্থই বিশুদ্ধ হয় না। কেননা উক্ত সাপেক্ষ বাক্যটিতে (আয়াতে) পূর্বগ ও অনুগের মধ্যে কোন সামঞ্জস্য থাকছে না, যা না হলে ‘কিয়াস’ সঠিক হয় না।
দেওবন্দীরা এ আয়াতের অর্থ করেন এরূপঃ যদি আমি গায়ব জানতাম, তাহলে প্রভূত, কল্যাণ সঞ্চয় করতাম এবং আমার উপর কোন বালামুসীবত আসতো না। কিন্তু যেহেতু আমার কাছে কল্যাণও নেই এবং মুসীবত থেকে বাঁচাও নেই, সেহেতু আমি গায়ব জানি না।
আমরাও আয়াতের এ ধরণের অর্থ করতে পারি, ভেবে দেখতে পারেন। “যদি আমার কাছে মঙ্গলজনক কিছু থাকে এবং আমি মুসীবত থেকে রক্ষা পাই, তাহলে জেনে নাও যে, আমার ইলমে গায়বও আছে।” আমার কাছে মঙ্গলজনক অনেক কিছুতো আছেই।
যেমন- কুরআনই প্রমাণ করে-
وَمَنْ يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا
-‘‘যাকে জ্ঞান বিজ্ঞান ও দর্শন দান করা হয়েছে, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়েছে।
{সূরাঃ বাক্বারা, আয়াতঃ ২৬৯, পারাঃ ৩}
অন্যত্র বলা হয়েছে اِنَّااَعْطَيْنَكَ الْكَوْثَرَ অর্থাৎ- আমি আপনাকে অনেক কিছু দিয়েছি।
{সূরাঃ কাউসার, আয়াতঃ ১}
আর এক জায়গায় আছে يُعَلِّمُهُمُ الْكِتَبَ وَالْحِكْمَةَ অর্থাৎ- তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন।
{সূরাঃ মায়েদা, আয়াতঃ ৬৭, পারাঃ ৬}
এ ছাড়া আমি বিপদাপদ থেকে তো নিরাপদ।
কেননা, আল্লাহ তা’আলা ফরমাচ্ছেনঃ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ অর্থাৎ- আল্লাহ আপনাকে লোকদের হাত থেকে রক্ষা করবেন।
সুতরাং, আমার ইলমে গায়বও আছে। এ আয়াত তো ইলমে গায়েবের প্রমাণবহ, এখানে ইলমে গায়েবের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হচ্ছে না।
❏তাফসীরে রুহুল বয়ানে এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছেঃ-
وَقَدء ذَهَبَ بَعْضُ الْمَشَائِخُ اِلَى اَنَّ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ كَانَ يَعْرِفُ وَقْتَ السَّاعَةِ بِاِعْلاَمِ اللهِ وَهُوَ لاَيُنَافِى الْحَصْرَ فِى الْاَيَةِ كَمَا لاَيَخْفَى
অর্থাৎ- কোন কোন মাশায়িখ এ কথাও বলেছেন যে, নবী আলাইহিস সালামের আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের বদৌলতে কিয়ামতের সুনির্দিষ্ট সময় জানাছিল। তাঁদের এ উক্তি এ আয়াতের حصر বা সীমাবদ্ধতার (ইলমে গায়ব একমাত্র আল্লাহরই সহিত সীমাবদ্ধ।) পরিপন্থী নয়, ইহা সুস্পষ্ট।
{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ১০/৩৮৭ পৃ.}
(৩) وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ
-‘‘তাঁরই কাছে রয়েছে গায়বের চাবিসমূহ। একমাত্র তিনিই ঐগুলো সম্পর্কে জ্ঞাত।’’
{সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ৫৯, পারাঃ ৭}
তাফসীরকারকগণ বলেছেন ‘মাফাতিহুল গায়ব’ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ দ্বারা হয়তো ‘গায়বের ভান্ডার’ বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ খোদার জানা সবকিছুর জ্ঞান। কিংবা আয়াতে অদৃশ্যকে দৃশ্যমান বা সম্মুখে হাজির করার তথ্য বস্তু সমূহের সৃষ্টির সামর্থ থাকার প্রতি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। কেননা, চাবির কাজ হলো তালা খুলে বাহিরের জিনিস ভিতরে ও ভিতরের জিনিস বাহিরে আনা-নেওয়া। অনুরূপ অদৃশ্যকে দৃশ্যমান ও দৃশ্যমানকে অদৃশ্য করার অর্থাৎ সৃষ্টি ও মৃত্যু প্রদানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর কাছেই আছে।
❏তাফসীরে কবীরে এ আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে লিখা হয়েছেঃ
فكذلك هاهنا الْحَقُّ سُبْحَانَهُ لَمَّا كَانَ عَالِمًا بِجَمِيعِ الْمَعْلُومَاتِ عَبَّرَ عَنْ هَذَا الْمَعْنَى بِالْعِبَارَةِ الْمَذْكُورَةِ....وَعَلَى التَّقْدِيرِ الثَّانِي الْمُرَادُ مِنْهُ الْقُدْرَةُ عَلَى كُلِّ الْمُمَكِنَاتِ
-‘‘যেহেতু আল্লাহ তা’য়ালাই তাঁর জ্ঞাত যাবতীয় বিষয়ের জ্ঞান রাখেন, তাই সে কথাটিই তিনি উক্ত ভাষায় ব্যক্ত করেছেন। আয়াতের দ্বিতীয় লক্ষ্যার্থ হলো সম্ভবপর সবকিছু করার সামর্থ থাকা। এই কথাটুকু ব্যক্ত করার জন্য বলা হয়েছে- তাঁর কাছেই আছে অদৃশ্য বিষয়াদির চাবিসমূহ।”
{ইমাম ফখরুদ্দীন রাজীঃ তাফসীরে কবীরঃ ১৩/১০পৃ.}
❏‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে’ এ আয়াতের তাৎপর্য বিশেষণে লিখা হয়েছেঃ
وَقَلَمُ تَصْوِيْرِهاَ الَّذِىْ هُوَ مِفْتَاحٌُ يُفْتَحُ بِهِ بَابُ عِلْمِ تَكْوِيْنِهَا عَلَى صُوْرَتِهَا وَكُوْنَهَا هُوَ الْمَلَكُوْتُ فَبِقَلَمِ مَلَكُوْتٍ كُلِّ شَيْئٍ يَكُوْنُ كُلُّ شَيْئٍ وَقُلَمُ الْمَلَكُوْتِ بِيَدِاللهِ لِاَنَّ الْغَيْبَ هُوَ عِلْمُ التَّكْوِيْنِ
-‘‘ঐ সমস্ত বস্তুর নক্শা তৈরী করার কলম, যেটি এমন একটি চাবি, যদ্বারা সেই সমস্ত বস্তুর সৃষ্টির দ্বার উন্মুক্ত করা হয় (ঐ সমস্ত বস্তুর যথোপযুক্ত আকৃতিতে)। উহাই হচ্ছে ‘মালাকুত’। সুতরাং, প্রত্যেক বস্তুই তার মালাকুতের কলম দ্বারাই অস্তিত্ব লাভ করে। আর মালাকুতের কলম হচ্ছে আল্লাহর হাতে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই এখানে ‘গায়ব’ বলতে কোন কিছু সৃষ্টি করার জ্ঞানকে বোঝানো হয়েছে।’’
{.আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ৩/৫৭ পৃ.}
❏‘তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতের ব্যাখ্যা বলা হয়েছেঃ
لِاَنَّ اللهَ تَعَالَى لَمَّا كَانَ عَا لِمَّا بِجَمِيْعِ الْمَعْلُوْمَاتِ غَبَّرَ هَذَ الْمَعْنَى بِهَذَا الْعِبَارَةِ وَعَلَى التَّفْسِيْرِ الثَّانِىْ يَكُوْنُ الْمَعْنَى وَعِنْدَهُ خَزَائِنُ الْغَيْبِ وَالْمُرَادُ مِنْهُ الْقَدْرَةُ الْكَامِلَةُ عَلَى كُلِّ الْمُمْكِنَاتِ
-‘‘আল্লাহ তা’আলা যে সর্ববিষয়ে জ্ঞানী, এ আয়াতের দ্বারা সেই কথাটাই তিনি বর্ণনা করেছেন। ২য় তাফসীর মতে এর অর্থ হবে আল্লাহর কাছে গায়বের ভান্ডার রয়েছে। এর মর্মার্থ হলো সম্ভবপর প্রত্যেক কিছুর উপর তার পরিপূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে।’’
{ইমাম খাযেনঃ তাফসীরে খাযেন, ২/২১৮পৃ.}
অথবা, এ অর্থও হতে পারে যে, আল্লাহ তা’আলার প্রদত্ত জ্ঞান ছাড়া কেউ গায়বের চাবিসমূহ সম্পর্কে জানতে পারবে না।
❏তাফসীরে ‘আরায়েসুল বয়ানে’ আছেঃ
قَالَ الْحَرِيْرِىُّ لاَيَعْلَمُهَا اِلاَّهُوَ وَمَنْ يُّطْلِعُهُ عَلَيْهَا مِنْ خَلِيْلٍ وَحَبِيْبٍ اَىْ لاَيَعْلَمُهَا الْاَوَّلُوْنَ وَالْاَخِرُوْنَ قَبْلَ اِظْهَارهِ تَعَالَى ذَلِكَ لَهُمْ
-‘‘আল্লামা হারীরী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বলেন, ঐ সমস্ত চাবি সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা এবং তার প্রিয় বান্দাগণ (যাঁদেরকে তিনি অবহিত করেছেন) ছাড়া আর কেউ জানে না। অর্থাৎ পূর্বব র্তী ও পরব র্তী প্রিয় বান্দাগণ আল্লাহ কর্তৃক জ্ঞাত করার আগে সেগুলো সম্পর্কে জানতেন না।’’
❏‘তাফসীরে ‘ইনায়াতুল কাযী’তে এ আয়াত সম্পর্কে উল্লেখিত আছেঃ
وَجْهُ اخْتِصَا صِهَابِهِ تَعَالَى اَنَّهُ لاَيَعْلَمُهَا كَمَاهِىَ اِبْتِدَاءً اِلاَّهُوَ
-‘‘গায়বের চাবিসমূহ খোদার সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত হওয়ার কারণ হলো এগুলো আদিতে যেরূপে ছিল সে সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কেউ জানে না।’’
{ইমাম বায়যাভীঃ ইনীয়াতুল কাযী আলা তাফসীরে বায়যাভীঃ ৪/৭৩ পৃ.}
এ আয়াতের ভাবার্থ আমি যা’ বর্ণনা করেছি তা’ যদি গ্রহণ করা না হয়, তা’হলে এ আয়াতটি বিরুদ্ধমতাবলম্বীদেরও মতের বিপরীত হবে। কেননা, তারাও আংশিকরূপে গায়ব এর জ্ঞান স্বীকার করেন, অথচ এ আয়াত ইলমে গায়বকে পরিপূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়েছে।
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
No comments