হক্কানি ওলামা, আউলিয়া ও বুজুর্গানেদ্বীনের কবরের উপর মাজার নির্মান করা

#মাজার_নির্মান_করার_বিধান 
حكم بناء القباب على قبور العلماء والأولياء والصلحاء
হক্কানি ওলামা, আউলিয়া ও বুজুর্গানেদ্বীনের কবরের উপর মাজার নির্মান করা।
♥কাবা শরীফের মুছাল্লার ইমাম ও বিশ্ববিখ্যাত ফকিহ্ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী আল-হানাফী (رحمة الله عليه) তদীয় কিতাবে বলেছেন,
فبناء القباب على قبور العلماء والأولياء والصلحاء ووضع الستور والعمائم والثياب على قبورهم امر جائز إذا كان القصد بذلك التعظيم فى أعين العامة حتى لا يحتقروا صاحب هذا القبر 
"ওলামা, আউলিয়া ও বুজুর্গানেদ্বীনের কবরের উপর ইমারত তৈরী করা ও কাপড় দ্বারা কবরে গিলাফ দেওয়া জায়েয। যদি মানুষের মনে শ্রেষ্ঠতম ধারণা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হয়, যাতে লোকেরা ওই কবরবাসীকে নগণ্য মনে না করে।”
সুত্র: তাফসিরে রুহুল বয়ান, ৩য় খ-, ৪৮২ পৃ: সূরা তাওবার ১৮ নং আয়াতের তাফসিরে;) 

আল্লামা শায়েখ আব্দুল হাক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله عليه) বলেন: শেষ জামানায় মানুষ বাহ্যিক বেশ-বুষার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাবে। তাই মাসাইখ ও বুজুর্গানেদ্বীনের কবরের উপর ইমারত তৈরীর বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হয়। যেন মুসলমানদের আউলিয়াকেরাম প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি প্রকাশ পায়।”
সুত্র: শরহে শফরুস সাদৎ;

হিজরী ১১শ শতাব্দির মুজাদ্দিদ, বিশ^ বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله عليه) তদীয় কিতাবে বলেন:
وَقَدْ أَبَاحَ السَّلَفُ الْبِنَاءَ عَلَى قَبْرِ الْمَشَايِخِ وَالْعُلَمَاءِ وَالْمَشْهُورِينَ لِيَزُورَهُمُ النَّاسُ، وَيَسْتَرِيحُوا بِالْجُلُوسِ فِيهِ 
“পূর্বসুরী সালাফগণ ওলামায়ে কেরাম, মাশাইখগণ ও প্রসিদ্ধ ব্যক্তিগণের কবরের উপর ইমারত তৈরী করা জায়েয বলেছেন, যাতে লোকেরা যিয়ারত করে সেখানে বসে আরাম পায়।”
সুত্র: মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৪র্থ খ-, ১৫৬ পৃ: জানাযা অধ্যায়, দাফনিল মায়্যেত পরিচ্ছেদ ১৬৯৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;) 

♦বিখ্যাত ফকিহ্ আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله عليه) তদীয় ফাতওয়ার গ্রন্থে বলেছেন,
لَا يُكْرَهُ الْبِنَاءُ إذَا كَانَ الْمَيِّتُ مِنْ الْمَشَايِخِ وَالْعُلَمَاءِ وَالسَّادَاتِ 
"যদি মাইয়্যেত ওলামা, মাসাইখ বা সাইয়্যিদ বংশের কেউ হয় তবে তাঁর কবরের উপর ইমারত তৈরী করা মাকরুহ নয়।”
সুত্র: ফাত্ওয়ায়ে শামী, ৩য় খ-, ১৪৪ পৃ:

♦আমাদের অন্যতম ফকিহ্ আল্লামা হাছ্কাফী (رحمة الله عليه) বলেন,
وَلَا يُرْفَعُ عَلَيْهِ بِنَاءٌ. وَقِيلَ: لَا بَأْسَ بِهِ، وَهُوَ الْمُخْتَارُ 
"কবরের উপর ইমারত তৈরী করবে না, কেউ কেউ বলেছেন এতে অসুবিধা নেই বরং ইহাই উত্তম।”
সুত্র: দূর্রুল মুখতার, দাফন অধ্যায়;
★এখানে কবরে ইমারত তৈরী করার অভিমত পেশ করার পর وَهُوَ الْمُخْتَارُ (অহুয়াল মুখতার) ইহা উত্তম বলেছেন। সুতরাং মাসাইখ বা ওলামাগণের কবরের উপর ইমারত তৈরী করা উত্তম।

♦এ সম্পর্কে আল্লামা আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ তাহ্তাবী হানাফী (رحمة الله عليه) বলেন,
وقد اعتاد أهل مصر وضع الأحجار حفظا للقبور عن الإندارس والنبش ولا بأس به وفي الدر ولا يجصص ولا يطين وَلَا يُرْفَعُ عَلَيْهِ بِنَاءٌ. وَقِيلَ: لَا بَأْسَ بِهِ، وَهُوَ الْمُخْتَارُ
“মিশর বাসীরা কবরের উপর পাথর স্থাপন করেন যেন কবরটি বিলীন বা উচ্ছেদ না হয় এবং কবরের উপর যেন কেউ চলাফেরা বা ঘর-বাড়ি তৈরী না করে। কেউ কেউ এগুলো জায়েয বলেছেন আর এটাই উত্তম।”
সুত্র: হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারকিউল ফালাহ, ১ম খ-, ৪০৫ পৃ:
★এখানেও وَهُوَ الْمُخْتَارُ শব্দ দ্বারা কবর পাকা করা উত্তম বলেছেন। উসূলে ফিকাহ’র পরিভাষায় যে মাসয়ালার সাথে وَهُوَ الْمُخْتَارُ থাকে সেই মাসয়ালার উপর ফাতওয়া হয়েছে বুঝায়।

♦এ সম্পর্কে আল্লামা ইমাম আব্দুল ওয়াহ্হাব শারানী (رحمة الله عليه) তদীয় গ্রন্থে বলেন,
ومن ذلك قول الائمة ان القبر لايبنى ولا يجصص مع قول ابي حنيفة يجوز ذالك قال الاول مشدد والثانى مخفف 
“অন্যান্য ইমামগণের মতামত হল, কবরের উপর ইমারত তৈরী করা এবং চুনকাম করা যাবেনা। তা সত্তেও ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله عليه) এর বক্তব্য হচ্ছে কবর পাকা করা জায়েয। সুতরাং প্রথম উক্তিতে কঠোরতা ও দ্বিতীয় উক্তিতে নমনীয়তা প্রকাশ পায়।”
সুত্র: শারানী: মিযানুল কুবরা, ১ম খ-, ১৫৩ পৃ:

♦ছদরুশ শরীয়ত আল্লামা আমজাদ আলী আজমি (رحمة الله عليه) বলেন: 
মৃত ব্যক্তির চার পাশ, না হলে উপরের অংশ পাকা করে দিলে অসুবিধা নেই।
(বাহারে শরিয়ত,) 

★উপরে উল্লিখিত দলিল-আদিল্লাহ দ্বারা প্রমাণিত হয়, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তথা হক্কানী ওলামা, ফোজালা, ফুকাহা, ও আউলিয়ায়ে কেরামের কবর পাকা করাতে দোষের কিছুই নেই, বরং ইহা সর্বসম্মতিক্রমে মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে বিভিন্ন মাযহাবের ফকিহ্গণ একমত। আলহামদুলিল্লাহ। 

♥★এ বিষয়ে কিছু আপত্তি রয়েছে, হাদিসে কি কবর পাকা নিষেধ? হাদিস শরীফে আছে,
نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُجَصَّصَ الْقُبُورُ، وَأَنْ يُكْتَبَ عَلَيْهَا، وَأَنْ تُوطَأَ
“রাসূল (ﷺ) কবরে চুনকাম, ইমারত তৈরী করা ও কবরের উপর বসা নিষেধ করেছেন।” তাহলে রাসূল (ﷺ) নিষেধ অমান্য করে কবর পাকা করা কিভাবে জায়েয হল?
ইহার জবাব: মহান আল্লাহ ﷻর হাবীব (ﷺ) সর্বসাধারণের কবর ঢালাওভাবে পাকা করতে নিষেধ করেছেন, কিন্তু হক্কানী ওলামা-মাসাইখগণের কবর পাকা করতে নিষেধ করেননি, যা অন্যান্য ছহীহ্ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। 

ইত:পূর্বে আমরা কিছু হাদিস উল্লেখ করেছি, প্রয়োজনে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিন। দয়াল নবীজি (ﷺ) সাধারণভাবে কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন আবার স্বীয় পুত্র হযরত ইব্রাহিম (رضي الله عنه) এর মাজার শরীফে কাঁকর বা কঙ্কর স্থাপন করেছেন। এতে বুঝা যায় রাসূলে পাক (ﷺ)’র বংশধরের কবর পাকা করলে অসুবিধা নেই। রাসূল আকরাম (ﷺ) সাধারণভাবে কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন, আবার হজরত সিদ্দিকে আকবর আবু বকর (رضي الله عنه), হযরত ওমার (رضي الله عنه)সহ অনেক সাহাবীগণ কবর পাকা করেছেন ও কবর পাকা করে দেওয়ার জন্য ওয়াছিয়াত করেছেন। এতে প্রমাণিত হয় মহান আল্লাহ ﷻর হাবীব (ﷺ)’র বিশেষ উম্মতগণের কবর পাকা করা নিষেধ নয়। সকল হাদিস বিশ্লেষণ করে যুগের ইমাম, ফকিহ্ ও মুজাদ্দিদগণ খাছ বান্দাগণের কবর পাকা করা জায়েয বলে ফাতওয়া দিয়েছেন। যেমন বিখ্যাত ফকিহ্ ♦আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله عليه) তদীয় ফাতওয়ার গ্রন্থে বলেছেন,
لَا يُكْرَهُ الْبِنَاءُ إذَا كَانَ الْمَيِّتُ مِنْ الْمَشَايِخِ وَالْعُلَمَاءِ وَالسَّادَاتِ 
"যদি মাইয়্যেত ওলামা, মাসাইখ বা সাইয়্যিদ বংশের কেউ হয় তবে তাঁর কবরের উপর ইমারত তৈরী করা মাকরুহ নয়।”
সুত্র: ফাত্ওয়ায়ে শামী, ৩য় খ-, ১৪৪ পৃ:


♠ফকিহ্গণ কি কবর পাক করতে নিষেধ করেছেন? দ্বীনের ফকিহ্গণ কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন কেন? তারা কি আপনাদের উল্লিখিত দলিল গুলো জানতেন না?

♦জবাব: দ্বীনের কোন ফকিহ্ কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন তা আপনারা উল্লেখ করতে পারেননি। যেখানে হিজরী ১১শ শতাব্দির মুজাদ্দিদ আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رضي الله عنه), ১০ম শতাব্দির অন্যতম মুজাদ্দিদ আল্লামা শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী (رضي الله عنه), এমনকি ইমামে আজম আবু হানিফা (رضي الله عنه), বিখ্যাত হানাফী ফকিহ্ আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله عليه), দূর্রুল মোখতারের কাতিব আল্লামা শেখ আলাউদ্দিন হাছকাফী (رحمة الله عليه), আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী বরুছয়ী (رحمة الله عليه), বাদাউছ ছানায়ের মুছান্নিফ আল্লামা আলাউদ্দিন আবু বকর আল কাছানী (رحمة الله عليه), আল্লামা আমজাদ আলী আজমি (رحمة الله عليه), ১৪শ শতাব্দির মুজাদ্দিদ আল্লামা আহমাদ রেজা খাঁন বেরলভী (رحمة الله عليه)সহ অসংখ্য ফুকাহা ও মাশাইখগণ কবর পাকার পক্ষে ফাতওয়া দিয়েছেন। ৮ম ও নবম শতাব্দির মুজাদ্দিদ আল্লামা ইবনু হাজার আস্কালানী  (رضي الله عنه) ও আল্লামা ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়ূতী (رضي الله عنه) উভয়ের মাজার পাকা করা। চার মাযহাবের ইমামগণের মাজার পাকা করা। অসংখ্য নবীগণের মাজার পাকা করা। ৬ষ্ঠ শতাব্দির মুজাদ্দিদ আল্লামা ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله عليه), ৭শ শতাব্দির মুজাদ্দিদ আল্লামা ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (رحمة الله عليه), অষ্টম শতাব্দির মুজাদ্দিদ আল্লামা ইমাম তক্বী উদ্দিন সুবকী (رحمة الله عليه)সহ চার ত্বরিকার ইমামগণের মাজারসমূহ পাকা করা। 

♣তাহলে আপনারা কোন ফকিহ্’র কথা বলছেন? কোথাও মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর ও তার চেলাদের কথা বলছেন না’তো?
উচু কবর ভেঙ্গে সমান করে দাও, হাদিসের জবাব: হযরত হায়্যাজ আসাদী (رحمة الله عليه) বর্ণনা করেন, হযরত আলী (رضي الله عنه) আমাকে বললেন, 
أَلَا أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنْ لَا تَدَعَ تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ، وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا إِلَّا سَوَّيْتَهُ
“আমি তোমাকে ওই কাজের জন্য পাঠাব যে কাজের জন্য হুজুর (ﷺ) আমাকে পাঠিয়েছেন? কাজটি হল কোন ফটো বিনষ্ট করা ব্যতীত ছেড়ে দিবে না, আর কোন উঁচু কবর সমান করা ব্যতীত ছেড়ে দিবে না।” এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় কবর উঁচু এবং পাকা করা জায়েয নয়।
ইহার জবাব: যে সকল উঁচু কবর ভাঙ্গতে বলা হয়েছে সে গুলো ছিল ইহুদী ও নাছারাদের কবর, কোন মুসলমানের কবর ছিল না। ইতপুর্বে অন্য পোস্ট এ আলোচনা করেছিলাম। 

♦যেমন ছহীহ্ বুখারীতে হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর রেওয়ায়েতে উল্লেখ আছে, মসজিদে নববী তৈরী করার সময় সেখান থেকে উঁচু কবর ভাংতে, উঁচু টিলা সমান করতে ও সেখানের খেজুর গাছ কাটতে আদেশ দিয়েছেন। যেমন হাদিসের এবারতটুকু লক্ষ করুন, হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন,
كَانَتْ فِيهِ قُبُورُ المُشْرِكِينَ، وَكَانَتْ فِيهِ خِرَبٌ، وَكَانَ فِيهِ نَخْلٌ، فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقُبُورِ المُشْرِكِينَ فَنُبِشَتْ، وَبِالخِرَبِ فَسُوِّيَتْ، وَبِالنَّخْلِ فَقُطِعَ، 
“সেখানে মুশরীকদের কবর, উঁচু টিলা ও খেজুর গাছ ছিল। ফলে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) মুশরীকদের কবর ভাঙ্গতে, উঁচু টিলা গুলো সমান করতে ও খেজুর গাছ গুলো কাটতে আদেশ দিলেন।”
সুত্র: ছহীহ্ বুখারী, ৩৯৩২; ফাতহুল বারী, ৭ম খ-, ২৬৬ পৃ:

♦হাফিজুল হাদিস ইমাম ইবনু হাজার আস্কালানী (رحمة الله عليه) ও ইমাম বদরুদ্দিন আইনী হানাফী (رحمة الله عليه) তদীয় স্ব-স্ব কিতাবে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বলেছেন,
(قَوْلُهُ بَابُ هَلْ تُنْبَشُ قُبُورُ مُشْرِكِي الْجَاهِلِيَّةِ)
أَيْ دُونَ غَيْرِهَا مِنْ قُبُورِ الْأَنْبِيَاءِ وَأَتْبَاعِهِمْ لِمَا فِي ذَلِكَ مِنَ الْإِهَانَةِ لَهُمْ بِخِلَافِ الْمُشْرِكِينَ فَإِنَّهُمْ لَا حُرْمَةَ لَهُمْ
“অনুচ্ছেদ জাহেলীযুগে মুশরীকদের কবর উপড়ে ফেলা হয়েছিল?
অর্থাৎ নবী-রাসূলগণ ও তিনাদের অনুসারীদের কবর ব্যতীত অন্যদের কবর ভাঙ্গার কথা বলা হয়েছে, কেননা এরূপ করা তিনাদের অবমাননার সামিল। তিনারা মুশরীকদের বিপরীত আর মুশরীকদের আল্লাহর দরবারে কোন সম্মান নেই।”
সুত্র: আস্কালানী: ফাতহুল বারী, ১ম খ-, ৫২৪ পৃ:; আইনী: উমদাতুল ক্বারী, ৪র্থ খ-, ১৭২ পৃ:

♥মুসলমান সাহাবীদের কবর তৈরী করা হয়েছিল রাসূল (ﷺ)’র শিক্ষা মোতাবেক। এ জন্যে ওই কবরগুলো মুসলমানের হতে পারেনা। নাকি সাহাবীরা রাসূলের (ﷺ) শিক্ষার বিপরীত নিয়মে কবর তৈরী করতেন? (নাউজুবিল্লাহ) এমনকি মহান আল্লাহ ﷻর নবী (ﷺ)’র রওজা মুবারকও উঁচু ছিল, 

♦যেমন ছহীহ্ হাদিসে আছে,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي فُدَيْكٍ، أَخْبَرَنِي عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ بْنِ هَانِئٍ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ مُحَمَّدٍ قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى عَائِشَةَ فَقُلْتُ: يَا أُمَّاهُ اكْشِفِي لِي عَنْ قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصَاحِبَيْهِ فَكَشَفَتْ لِي عَنْ ثَلَاثَةِ قُبُورٍ لَا مُشْرِفَةٍ وَلَا لَا طئة مَبْطُوحَةٍ بِبَطْحَاءِ الْعَرْصَةِ الْحَمْرَاءِ. 
“হযরত কাশিম (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, একদা আমি মা আয়েশা (رضي الله عنه) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, ওহে মা! আপনি আমার জন্যে রাসূল (ﷺ) ও তাঁর দুই সাহাবীর মাজারদ্বয় উন্মোচন করুন এবং তিনি তাই করলেন। আমি দেখি ওই কবর শরীফ গুলো বেশী উঁচুও ছিলনা আবার নিচুও ছিলনা। কবর গুলোর উপর ময়দানের লাল কাঁকর বা কঙ্কর ছড়ানো ছিল।”
সুত্র: সুনানু আবী দাউদ, হাঃ নং ৩২২০; হাকেম: আল-মুস্তাদরাক, হাঃ নং ১৩৬৮; বায়হাক্বী: সুনানুল কুবরা, হাঃ নং ৬৭৫৮; মুসনাদু আবী ইয়ালা, হাঃ নং ৪৫৭১; বাগভী: শারহু সুন্নাহ, ৫ম খ-, ৪০২ পৃ:; মেসকাত শরীফ, ১৪৯ পৃ:; মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৪র্থ খ-, ১৬৯ পৃ:; আশিয়াতুল লুময়াত

♦এ বিষয়ে অপর রেওয়ায়েতে আছে, ইমাম ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله عليه) বর্ণনা করেছেন,
أَخْبَرَنَا أَبُو عَمْرٍو الْأَدِيبُ، أنبأ أَبُو بَكْرٍ الْإِسْمَاعِيلِيُّ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ عِمْرَانَ الْمَقَابِرِيُّ، ثنا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، ثنا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، ثنا سُفْيَانُ التَّمَّارُ قَالَ: رَأَيْتُ قَبْرَ النَّبِيِّ صَلَّى الله عَلَيهِ وَسَلَّمَ مُسَنَّمًا
"হযরত সুফিয়ান তাম্মার (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ)’র রওজা মুবারক উটের পিঠের মত কূজ দেখেছি।”
সুত্র: ছহীহ্ বুখারী, হাঃ নং ১৩৯০ নং হাদিসের শেষে; বায়হাক্বী: মারেফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হাঃ নং ৭৭২৯; বায়হাক্বী: সুনানুল কুবরা, হাঃ নং ৬৭৬০; মেসকাত শরীফ, ১৪৮ পৃ:; মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৪র্থ খ-, ১৫৪ পৃ:

♦এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ করুন,
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ قَالَ: ثنا أَبُو دَاوُدَ الطَّيَالِسِيُّ، عَنْ خَالِدٍ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنْ رَجُلٍ، قَالَ: رَأَيْتُ قَبْرَ ابْنِ عُمَرَ بَعْدَمَا دُفِنَ بِأَيَّامٍ مُسَنَّمًا
“আবী উসমান এক ব্যক্তি বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি আব্দুল্লাহ ইবনু ওমার (رضي الله عنه) কে দাফনের কিছুদিন পরে তিনার কবরকে উটের পিঠের ন্যায় কূজ উঁচু দেখেছি।”
সুত্র: মুছান্নাফু ইবনু আবী শায়বাহ, হাঃ নং ১১৭৩৭;

♦এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ করুন,
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ قَالَ: ثنا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ أَبِي حُصَيْنٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، قَالَ: رَأَيْتُ قُبُورَ شُهَدَاءِ أُحُدٍ جُثًى مُسَنَّمَةً
"হযরত শাবী (رحمة الله عليه) বলেন, আমি উহুদের যুদ্ধে শহিদদের মাজার সমূহ উটের পিঠের ন্যায় কূজ উঁচু দেখেছি।”
সুত্র: মুছান্নাফু ইবনু আবী শায়বাহ, হাঃ নং ১১৭৩৬;

♦ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله عليه) বলেছেন: কবর অধিক উঁচু হবে না আবার জমিনের সাথে সমানও হবেনা। ইমামে আজম আবু হানিফা (رضي الله عنه) বলেছেন: কবর এক হাত উঁচু করা সুন্নাত। যেমন হাফিজুল হাদিস ইমাম মহিউদ্দিন নববী (رحمة الله عليه) বলেছেন,
أَنَّ السُّنَّةَ أَنَّ الْقَبْرَ لَا يُرْفَعُ عَلَى الْأَرْضِ رَفْعًا كَثِيرًا وَلَا يُسَنَّمُ بَلْ يُرْفَعُ نَحْوَ شِبْرٍ وَيُسَطَّحُ وَهَذَا مَذْهَبُ الشَّافِعِيِّ وَمَنْ وَافَقَهُ وَنَقَلَ الْقَاضِي عِيَاضٌ عَنْ أَكْثَرِ الْعُلَمَاءِ أَنَّ الْأَفْضَلَ عِنْدَهُمْ تَسْنِيمُهَا وَهُوَ مَذْهَبُ مَالِكٍ
“সুন্নাত হল, কবরকে অধিক পরিমান উঁচু করবে না, বরং কবরের উপরিভাগকে এক বিঘত পরিমান উঁচু করবে, আর এটাই ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله عليه) এর মাযহাব। ইমাম কাজী ইয়াদ্ব (رحمة الله عليه) অধিকাংশ ইমামগণ থেকে উল্লেখ করেছেন যে, নিশ্চয় তাদের কাছে উত্তম হল কবরকে উটরে কূজের মত উঁচু করা, এটাই ইমাম মালেক (رحمة الله عليه) এর মাযহাব।”
সুত্র: নববী: শরহে মুসলীম, ৮ম খ-, ৮৪ পৃ:

♦এমনকি কবর জমিনের সাথে সমান করা সুন্নাতের খেলাফ, অথচ হজরত আলী (رضي الله عنه) এর হাদিসে বলা আছে কবর জমিনের সাথে সমান করে দেওয়ার জন্য, তাহলে কি হযরত আলী (رضي الله عنه) সুন্নাতের খেলাফ কাজ করেছেন? অবশ্যই না। সুতরাং স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হযরত আলী (رضي الله عنه) যে কবর গুলো ভাঙ্গতে নির্দেশিত হয়েছিলেন এগুলো ইহুদী-নাছারাদের কবর ছিল, নচেৎ অনেক সাহাবীদের মাজার উঁচু ছিল সেগুলো হজরত আলী (رضي الله عنه) ভাঙ্গলেন না। অতএব প্রমাণিত হল, মুসলমানের কবর জমিনের সাথে সমান করা সুন্নাতের খেলাফ, তাই যথানিয়মে মুসলমানের কবর উঁচু করা সুন্নাত। 

♥আরেকটি বিষয় লক্ষনীয় যে, কোন মুসলমানের কবরে আঘাত করা নাজায়েয ভাঙ্গাতো দূরের কথা। যেমন হাদিস শরীফে আছে, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম আহমাদ (رحمة الله عليه)সহ অন্যান্য ইমামগণ বর্ণনা করেছেন,
حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ سَعْدٍ يَعْنِي ابْنَ سَعِيدٍ، عَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كَسْرُ عَظْمِ الْمَيِّتِ كَكَسْرِهِ حَيًّا
"হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গা জিবীত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গার সমান।”
সুত্র: মুসনাদু আহমাদ, হাঃ নং ২৪৭৩৯; সুনানু আবী দাউদ, হাঃ নং ৩২০৭; সুনানু ইবনু মাজাহ, হাঃ নং ১৬১৬; মুসনাদু বাজ্জার, হাঃ নং ২৮৫; ছহীহ্ ইবনু হিব্বান, হাঃ নং ৩১৬৭; সুনানু দারা কুতনী, হাঃ নং ৩৪১৫; আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ৭ম খ-, ৯৫ পৃ:; শারহু সুন্নাহ, ৫ম খ-, ৩৯৩ পৃ:; বায়হাক্বী: মারেফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হাঃ নং ৭৭৫৫; মেসকাত শরীফ, ১৪৯ পৃ:; মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৪র্থ খ-, ১৭০ পৃ:; সনদ ছহীহ্।) 

♠অপর হাদিসে উল্লেখ আছে, ইমাম আহমাদ (رحمة الله عليه) বর্ণনা করেছেন,
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ إِسْحَاقَ، حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ، عَنْ بَكْرِ بْنِ سَوَادَةَ، عَنْ زِيَادِ بْنِ نُعَيْمٍ، وَعَنْ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ قَالَ: رَآنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَّكِئًا عَلَى قَبْرٍ فَقَالَ: لَا تؤذ صَاحب هَذَا الْقَبْر أَولا تؤذه. 
“হযরত আমর ইবনে হাযম (رضي الله عنه) বলেন, নবী করিম (ﷺ) আমাকে একটি কবরের সাথে হেলান দেওয়া দেখে বলেন, কবর বাসীকে (হেলান দেওয়ার মাধ্যমে) কষ্ট দিওনা।”
সুত্র: মুসনাদু আহমাদ, ৩৯ তম খ-, ৪৭৬ পৃ:; মেসকাত শরীফ, ১৪৯ পৃ:; মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৪র্থ খ-, ১৭৬ পৃ:;) হাফিজ ইবনু হাজার আস্কালানী  (رحمة الله عليه) এর সনদকে صحيح ছহীহ্ বলেছেন। (মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ৪র্থ খ-, ১৩১ পৃ:;)

♦ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله عليه) আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন,
وَأَخْرَجَ سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورِ بْنِ مَسْعُودٍ: أَنَّهُ سُئِلَ عَنِ الْوَطْءِ عَلَى الْقَبْرِ قَالَ: كَمَا أَكْرَهُ أَذَى الْمُؤْمِنِ فِي حَيَاتِهِ فَإِنِّي أَكْرَهُ أَذَاهُ بَعْدَ مَمَاتِهِ.
“সাঈদ ইবনু মানসুর ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় তাকে কবর পদদলিত করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তিনি বললেন: একজন ব্যক্তি জিবীত অবস্থায় যেমন সম্মান করা হয় তার ইন্তেকালের পরেও অনুরূপ সম্মান করা উচিৎ।”
সুত্র: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১৯৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়, বাব দাফনিল মাইয়্যেত

♥হযরত আমর ইবনে হাযম (رضي الله عنه) যে কবরে হেলান দিয়েছিলেন সেটা অবশ্যই জমিনের সাথে সমান ছিলনা, কারণ জমিনের সাথে সমান এমন কবরে হেলান দেওয়া যায় না। এখানেও প্রমাণিত হয়ে গেল সাহাবীদের কবর উঁচু করা ছিল আর তা রাসূলের (ﷺ) সম্মতিতেই। সুতরাং মহান আল্লাহ ﷻর হাবীব (ﷺ) নির্দেশ মোতাবেক মুসলমানদের কবরে আঘাত করা এবং মৃত ব্যক্তির গায়ে আঘাত করা উভয় নিষেধ। তাহলে হযরত আলী (رضي الله عنه) যে কবর গুলো ভেঙ্গেছেন সেগুলো অবশ্যই মুসলমানের কবর ছিলনা, কারণ মুসলমানের কবর ভাঙ্গাতো দূরের কথা সেখানে হেলান দিয়ে বসা পর্যন্ত নিষেধ।

No comments

Powered by Blogger.