চার মাজহাবের অভিমত
এ বিষয়ে চার মাজহাবের অভিমত,
হানাফী মাজহাব: ইমাম মুহাম্মদ ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন:
قَالَ مُحَمَّدٌ: أَحَبُّ إِلَيْنَا أَنْ تَجْمَعَ رِجْلَيْهَا فِي جَانِبٍ، وَلَا تَنْتَصِبَ انْتِصَابَ الرَّجُلِ
-“আমাদের নিকট মহিলাদের নামাজে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হল, উভয় পা এক পাশে মিলিয়ে রাখবে, পুরুষের মত এক পা খাড়া করে রাখবে না।” (ইমাম মুহাম্মদ: কিতাবুল আছার, হাদিস নং ২১৮)
মালেকী মাজহাব: মালেকী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ফকিহ্ আল্লামা আবুল আব্বাস আল কারাফী র. ইমাম মালেক ( رَحْمَةُ الله عليه) এর মত উল্লেখ করেছেন:-
وَأَمَّا مُسَاوَاةُ النِّسَاءِ لِلرِّجَالِ فَفِي النَّوَادِرِ عَنْ مَالِكٍ تَضَعُ فَخِذَهَا الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى وَتَنْضَمُّ قَدْرَ طَاقَتِهَا وَلَا تُفَرِّجُ فِي رُكُوعٍ وَلَا سُجُودٍ وَلَا جُلُوسٍ بِخِلَافِ الرَّجُلِ
-“নামাজে মহিলারা পুরুষের মত কিনা এ বিষয়ে ইমাম মালেক ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকে বর্ণিত আছে যে, মহিলারা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। রুকু, সেজদা ও শেষ বৈঠক কোন সময়ই প্রশস্ততা অবলম্বণ করবেনা, পক্ষান্তরে পুরুষের পদ্ধতি ভিন্ন।” (যখিরাতুল কারাফী, ২য় খন্ড, ১৯৩ পৃ:)
হাম্বলী মাজহাব:
فَأَمَّا الْمَرْأَةُ فَذَكَرَ الْقَاضِي فِيهَا رِوَايَتَيْنِ عَنْ أَحْمَدَ إحْدَاهُمَا، تَرْفَعُ؛ لِمَا رَوَى الْخَلَّالُ، بِإِسْنَادِهِ عَنْ أُمِّ الدَّرْدَاءِ، وَحَفْصَةَ بِنْتِ سِيرِينَ أَنَّهُمَا كَانَتَا تَرْفَعَانِ أَيْدِيَهُمَا. وَهُوَ قَوْلُ طَاوُسٍ، وَلِأَنَّ مَنْ شُرِعَ فِي حَقِّهِ التَّكْبِيرُ شُرِعَ فِي حَقِّهِ الرَّفْعُ كَالرَّجُلِ، فَعَلَى هَذَا تَرْفَعُ قَلِيلًا. قَالَ أَحْمَدُ: رَفْعٌ دُونَ الرَّفْعِ. وَالثَّانِيَةُ: لَا يُشْرَعُ؛ لِأَنَّهُ فِي مَعْنَى التَّجَافِي، وَلَا يُشْرَعُ ذَلِكَ لَهَا، بَلْ تَجْمَعُ نَفْسَهَا فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ وَسَائِرِ صَلَاتِهَا.
-“তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে কি উঠাবেনা এ বিষয়ে কাজী আয়্যাজ র. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকে দুটি অভিমত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত অনুযায়ী হাত তুলবে। কেননা খাল্লাল হজরত উম্মে দারদা ও হজরত হাফছা বিনতে সীরিন থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন, তারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাঊছের বক্তব্যও তাই। উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে ও তার সাথে হাত উঠানোর নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে এ হিসেবে মহিলারাও হাত উঠাবে, তবে সামান্য। দ্বিতীয় মত এই যে, মহিলাদের জন্য হাত উঠানোর হুকুম নেই। কেননা হাত উঠালে কোন অঙ্গকে ফাক করতেই হয়, অথচ মহিলাদের জন্য এ বিধান দেওয়া হয়নি। বরং তাদের জন্য নিয়ম হল রুকু ও সেজদাসহ পুরো নামাজ নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে।” (আল মুগনী লি’ইবনে কুদামা, ১ম খন্ড, ৩৪০ পৃ:)
শাফেয়ী মাজহাব:
قَالَ الشَّافِعِيُّ: وَقَدْ أَدَّبَ اللَّهُ تَعَالَى النِّسَاءَ بِالِاسْتِتَارِ وَأَدَّبَهُنَّ بِذَلِكَ رَسُولُهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأُحِبُّ لِلْمَرْأَةِ فِي السُّجُودِ أَنْ تَضُمَّ بَعْضَهَا إلَى بَعْضٍ وَتُلْصِقَ بَطْنَهَا بِفَخِذَيْهَا وَتَسْجُدَ كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا وَهَكَذَا أُحِبُّ لَهَا فِي الرُّكُوعِ وَالْجُلُوسِ وَجَمِيعِ الصَّلَاةِ أَنْ تَكُونَ فِيهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا
-“আল্লাহ পাক মহিলাদের পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তার রাসূল ()ও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দনীয় হল, সেজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গকে মিলিয়ে রাখবে। পেট উড়–র সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং সেজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের চ‚ড়ান্ত হেফাজত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাজে এমনভাবে থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাজত হয়।” (ইমাম শাফেয়ী: কিতাবুল উম্ম, ১ম খন্ড, ১৩৮ পৃ:)
উল্লেখিত দালায়েলের আলোকে বলা যায়, হাদিসে রাসূল, সাহাবা ও তাবেঈদের ফাতওয়া ও আছারের মত চার মাজহাবের ইমামগণ প্রত্যেকেই পুরুষ ও নারীদের নামাজের কিছুনা কিছু পার্থক্যের কথা বলেছেন। মুসলীম উম্মাহর অনুসৃত উপরোক্ত কেউ-ই বলছেন না, মহিলাদের নামাজ পুরুষের নামাজের অনুরূপ।
নারী পুরুষের নামাজের পার্থক্যের কথা শুধু চার মাজহাবের ইমামগণ ও তাদের অনুসারীরা বলেছেন বিষয়টি এরূপ নয়, বরং লা-মাজহাবীদের কোন কোন আলিমও বিষয়টির কথা স্বীকার করেছেন। যেমন মাও: আব্দুল জব্বার গযনভী তার ‘ফাতওয়ায়ে গযনভিয়া’ গ্রন্থে। মাও. আলী মুহাম্মদ সাঈদ তার ‘ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদিস’ গ্রন্থে। মাও. আব্দুল হক্ব হাশেমী মুহাজেরে মক্কী-তো এ সম্পর্কে আলাদা পুস্তিকা লিখেছেন। মুহাদ্দেছ আমীর ইয়ামানী তার ‘সুবুলুছ ছালাম’ গ্রন্থে। সময়ের লা-মাজহাবীদের সবচেয়ে বড় আলিম নবাব সিদ্দিক হাছান খান তার ‘আওনুল বারী’ গ্রন্থে নারী-পুরুষের নামাজের পার্থক্যের পক্ষেই তাদের মত ব্যক্ত করেছেন।
আল্লাহ পাক তাদেরকে ছহীহ্ জ্ঞাণ দান করুন। আমিন!
No comments