কেন উঁচু কবর ভে'ঙ্গে ফেলবেন
কেন উঁচু কবর ভে'ঙ্গে ফেলবেন ⁉️ বিস্তরিত পোস্ট
.
.
.
উঁচু কবর ভে'ঙ্গে ফেলা সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাখ্যা।
ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন:
عَنْ أَبِى الْهَيَّاجِ الأَسَدِىِّ قَالَ قَالَ لِى عَلِىُّ بْنُ أَبِى طَالِبٍ أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ
“হযরত আবু হাইয়্যাজ আল-আসাদি থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন: হযরত আলি রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু আমাকে বলেছেন, আমি কি তোমাকে ওই কাজের জন্য পাঠাবো না, যে কাজের জন্য আমাকে হুযুর আলাইহিস সালাম পাঠিয়েছেন ?
কাজটি হচ্ছে- কোন ছবি বিনষ্ট করা ছাড়া রাখিও না এবং কোন উঁচু কবর রাখিও না, একে সমান করে দাও।”
-ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ, কিতাবুল জানায়িয, হাদিস নং- ২২৮৭
আরো একটি বর্ণনা এসেছে বুখারি শরিফে:
وَرَأَى ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا فُسْطَاطًا عَلَى قَبْرِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ فَقَالَ انْزِعْهُ يَا غُلَامُ فَإِنَّمَا يُظِلُّهُ عَمَلُهُ
“হযরত ইবনু উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হযরত আব্দুর রহমানের কবরের উপর তাঁবু দেখে বলেছিলেন- হে বৎস! একে সরিয়ে ফেল, কেননা তাঁর আমলই তাঁর উপর ছায়া দিচ্ছে।”
-ইমাম বুখারি, আস-সহিহ, কিতাবুল জনায়িয, বাবুল জারিদ ‘আলাল ক্ববর, ১/৪৫৭
এ হাদিস দু’টি থেকে বোঝা গেল যে, যদি কোন কবরের উপর ইমারত তৈরী করা হয় বা কোন কবরকে উঁচু করা হয়, তাহলে ভে'ঙ্গে দেয়া দরকার।
এর জবাব হলো- যেসব কবরকে ভেঙ্গে ফেলার জন্য হযরত আলি রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ওগুলো কাফিরদেরই কবর ছিল, মুসলমানদের নয়।
এর কয়েকটি প্রমাণ রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।
প্রথমতঃ হযরত আলি রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেছেন- আমি তোমাকে ঐ কাজের জন্য পাঠাচ্ছি, যেটার জন্য আমাকে প্রিয় নবীজি ﷺ পাঠিয়েছিলেন।
কিন্তু প্রিয় নবীজি ﷺ'র যুগে হযরত আলি রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু যেসব কবর ধ্বংস করেছিলেন, ওগুলো কিছুতেই মুসলমানদের কবর হতে পারে না।
কেননা, প্রত্যেক সাহাবার দাফন কার্যে নবীজি ﷺ অংশগ্রহণ করতেন। অধিকন্তু সাহাবায়ে কিরামও প্রিয় নবী ﷺ'র সাথে পরামর্শ ছাড়া কোন কাজ করতেন না। সুতরাং মুসলমানদের যা কবর ছিল, ওগুলো হয়তো নবী করীম ﷺ'র উপস্থিতিতে বা তাঁর অনুমতি সাপেক্ষে হয়েছিল। তাহলে ওগুলো আবার কোন্ মুসলমানদের কবর ছিল, যা অবৈধ হয়েছিল এবং ভেঙ্গে ফেলতে হলো?
অবশ্য ইহুদিদের কবর উঁচু করা হতো।
যেমন- বুখারি শরিফে মসজিদে নববি নির্মাণের বর্ণনা প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে-
فَأَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقُبُورِ الْمُشْرِكِينَ فَنُبِشَتْ
“নবী করীম ﷺ মুশরিকদের কবরসমূহের বেলায় হুকুম দিয়েছিলেন।
তখন ওগুলোকে উপড়ে ফেলা হয়েছিল।”
-ইমাম বুখারি, আস-সহিহ, কিতাবুস সালাত, আবওয়াবুল মাসাজিদ, হাদিস নং- ৪১৪
হযরত হাফিয ইবনু হাজার আসকালানি রহমতুল্লাহ আলাইহির ফাতহুল বারী শারহুল বুখারিতে লিখেন:
أي دون غيرها من قبور الأنبياء وأتباعهم لما في ذلك من الإهانة لهم
"নবীগণ ও তাঁদের অনুসারীদের কবরসমূহ বাদ দিয়ে, কেননা তাঁদের কবর উপড়ে ফেলাটা তাঁদের প্রতি অবমাননাকর হবে।”
-ইবনু হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারী শারহু সাহিহিল্ বুখারী: ১/৫২৪, দারুল মা‘রেফাহ্, বৈরুত, ১৩৭৯ হিজরি
উপরে উল্লেখিত হাদিস এবং এর ব্যাখ্যা দ্বারা বিরোধিতাকারীদের উত্থাপিত হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যা হয়ে গেল অর্থাৎ সে হাদিসে মুশরিকদের কবর ভেঙ্গে ফেলার কথা বলা হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ উক্ত হাদিসে কবরের সাথে ছবির কথাও উল্লেখ আছে।
কিন্তু মুসলমানদের কবরে তো ছবি থাকে না।
তাই কাফিরদের কবরই বোঝা যায়।
কেননা, ওদের কবরসমূহে মৃতব্যক্তির ছবিও দেয়া হয়।
তৃতীয়তঃ উল্লেখিত হাদিসে বলা হয়েছে ‘কবরকে জমিনের বরাবর করে দাও’,
কিন্তু মুসলমানদের কবরের বেলায় জমিন থেকে এক হাত উঁচু রাখা সুন্নাত।
এতে জমিনের সাথে মিলিয়ে দেয়া সুন্নাতের বরখেলাপ।
তাই মানতেই হবে যে, ওই কবরসমূহ কাফিরদেরই ছিল।
অন্যথায় আশ্চর্যকর মনে হবে যে, হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু উঁচু কবরসমূহ উপড়ে ফেলেছেন আর তাঁরই সন্তান মুহাম্মদ ইবনু হানাফিয়া হযরত ইবনু আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করলেন।
যদি কোন মুসলমানের কবর অতিরিক্ত উঁচুও হয়ে যায়, তবুও একে উপড়ে ফেলা উচিত নয়।
কেননা, এতে মুসলমানের অবমাননা হয়।
প্রথমেই উঁচু করো না। তবে যদি হয়ে যায়, তাহলে ভেঙ্গে ফেলো না। দেখুন, ছোট আকারে পবিত্র আল কুরআন ছাপানো নিষেধ (শামী, কিতাবুল কারাহিয়া দ্রষ্টব্য)।
কিন্তু যদি ছাপানো হয়ে গেল, তাহলে ফেলে দিও না, বা জ্বালিয়ে ফেল না। কেননা এতে পবিত্র আল কুরআন শরিফের অবমাননা বোঝায়।
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে- কবরের উপর বসা, ওখানে মলমূত্র ত্যাগ করা, জুতা পরে বা এমনি চলাফেরা করা নিষেধ।
কিন্তু আফসোস! পথভ্রষ্ট নজদি সরকার সাহাবায়ে কিরামের মাযারসমূহ ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে।
অথচ জিদ্দা শহরে খ্রিস্টানদের উঁচু উঁচু কবর নিয়মিত হচ্ছেই।
নবী করীম ﷺ ঠিকই বলেছেন:
يَقْتُلُونَ أَهْلَ الْإِسْلَامِ وَيَدَعُونَ أَهْلَ الْأَوْثَانِ
(তারা মুসলমানদেরকেই হত্যা করবে এবং মূর্তি পূজারীদেরকে ছেড়ে দিবে)।
-ইমাম বুখারি, আস-সহিহ, কিতাবুল্ আম্বিয়া, হাদিস নং- ৩১৬৬
প্রত্যেকের স্বজাতির প্রতি টান থাকে।
হযরত ইবনু উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর হাদিস প্রমাণ হিসেবে পেশ করা নিছক বোকামী বৈ কিছু নয়।
তিনি তো স্বয়ং বলেছেন: ‘মৃত ব্যক্তির ছায়ার জন্য তার আমলসমূহই যথেষ্ট।’
যার ফলে বোঝা গেল যে, মৃত ব্যক্তির ছায়ার জন্য যদি গম্বুজ বানানো হয়, তাহলে নাজায়িয।
তবে যিয়ারতকারীদের আরামের জন্যে বানানো হলে জায়িয।
বুখারি শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ উমদাতুল্ ক্বারী-তে হযরত ইবনু উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর এ হাদিসের প্রেক্ষাপটে উল্লেখিত আছে-
وهي الإشارة إلى أن ضرب الفسطاط إن كان لغرض صحيح كالتستر من الشمس مثلا للإحياء لا لإظلال الميت فقط جاز
"এ হাদিস দ্বারা ওইদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, বৈধ উদ্দেশ্যে তাঁবু টানানো অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির ছায়ার জন্য নয়, জীবিতদেরকে সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা করার জন্য জায়িয আছে।”
-আল্লামা ‘আইনি, ‘উমদাতুল্ ক্বারী শারহু সাহীহিল বুখারী, কিতাবুল জানায়িয, বাবুল জারিদ ‘আলাল ক্ববর, ১৩/৫৬
তাফসিরে রুহুল বায়ানে ২৬ পারা সুরা ফাতহের আয়াত-
اذ يبايعونك تحت الشجرة
-এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, কতেক অহংকারী লোক বলে যে- যেহেতু আজকাল লোকেরা আওলিয়া কিরামের কবরসমূহের তা‘যিম করে, তাই আমরা ওসব কবরসমূহ ভেঙ্গে ফেলবো, যাতে এসব লোকেরা বুঝতে পারে যে, আওলিয়া কিরামের কোন ক্ষমতা নেই।
তা না হলে উনারা নিজেদের কবরসমূহকে উচ্ছেদ করা থেকে রক্ষা করতেন-
فاعلم ان هذا الصنيع كفر صراح مأخوذ من قول فرعون على ما حكاه الله تعالى لنا فى كتابه القديم وقال فرعون ذوونى اقتل موسى وليدع ربه انى اخاف ان يبدل دينكم او ان يظهر فى الارض الفساد
"কিন্তু জেনে রাখ যে, এ ধরনের কাজ নিঃসন্দেহে কুফরি। এটা ফিরাউনের সে উক্তিরই প্রতিধ্বনি। (যেমন সে বলেছিল) ‘আমাকে ছেড়ে দাও। আমি মুসাকে কতল করব। সে ইচ্ছা করলে তার খোদাকে ডাকুক।
আমার ভয় হচ্ছে যে, সে তোমাদের ধর্মকে পালটে দেবে এবং পৃথিবীতে অরাজকতা সৃষ্টি করবে’।”
-আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান: ৯/৪২-৪৩, দারু ইহইয়াউত তুরাছ আল-আরাবী, বৈরুত
কেউ একবার আমাকে (হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমাদ ইয়ার খান নঈমি রহমতুল্লাহ আলাইহি'কে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, যদি আওলিয়া কিরাম ও সাহাবায়ে কিরামের কোন ক্ষমতা থাকতো, তাহলে নজদি-ওয়াহাবিদের থেকে নিজেদের কবরসমূহকে কেন রক্ষা করতে পারলো না? বোঝা গেল যে, এগুলো নিষ্প্রাণ। তাই তাঁদের সম্মান-অসম্মান আবার কিসের?
আমি এর উত্তরে বলেছিলাম, নবী করীম হুযুর ﷺ'র আগমনের আগে পবিত্র কা‘বা শরিফে ৩৬০টি মূর্তি ছিল এবং হাদিস শরিফে আছে যে, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে এক ব্যক্তি কা‘বা শরিফকে ভেঙ্গে ফেলবে। বর্তমান লাহোরের শহিদগঞ্জ মসজিদ শিখদের গুরুদুয়ারায় পরিণত হয়ে গেছে এবং হিন্দুস্থানে অনেক মসজিদ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তাহলে হিন্দুরা যদি বলে খোদার যদি শক্তি থাকতো, তাহলে আমাদের হাত থেকে তাঁর ঘরকে কেন রক্ষা করলো না? এর উত্তরে কী বলবেন ?
মহান আল্লাহ ﷻর ওয়ালিগণ বা তাঁদের মাযারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন তাঁদের খোদা প্রাপ্তির কারণেই করা হয়, কেবল ক্ষমতাবান বলে নয়, যেমন মসজিদসমূহ ও মক্কা শরিফের সম্মান করা হয়। পথভ্রষ্ট ইবনু সাউদ লানাতুল্লাহ অনেক মসজিদ ভেঙ্গে ফেলেছে।
যেমন- সাফা পাহাড়ের উপর স্থাপিত হযরত বিলাল রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর মসজিদ ইত্যাদি ইত্যাদি।
No comments